
নিউ ইয়র্কের মহান মঞ্চে দাঁড়িয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ঘোষণা দিলেন, নারীদের জন্য দৈনিক কর্মঘণ্টা হবে মোটে পাঁচ ঘণ্টা। বাহ! এ তো শুধু মানবিকতা নয়, এ যেন 'স্বর্গীয় ইনসেনটিভ'—এক দিনে দুটো শিফটের মাইনে! ভাবতে পারছেন? মা-লক্ষ্মীরা পাঁচ ঘণ্টা কাজ করেই ঘরে ফিরবেন, বাকিটা সময় দেবেন "জাতীয় কল্যাণমূলক কাজ"-এ, অর্থাৎ ঘর মোছা, রান্না করা আর পরের প্রজন্মকে "আদর্শ নাগরিক" হিসেবে গড়ে তোলা।
নারী নেত্রীরা অবশ্য এই 'ঐতিহাসিক সুবিধা'কে 'ঘরবন্দি করার কূটকৌশল' বলে ফুঁসে উঠেছেন। তাঁরা কেন বুঝছেন না? এটা তো নারীকে অফিসের স্ট্রেস থেকে মুক্তি দিয়ে রাজার হালে গৃহবধূ বানানোর অফার! পাঁচ ঘণ্টা কাজ করলে কোনো নিয়োগকর্তা একজন নারীকে আট ঘণ্টা কাজ করা পুরুষের চেয়ে কম বেতন দিতেই পারেন না, কারণ পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে তো মহিলারা আট ঘণ্টার সমান কাজ ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে শেষ করে ফেলবেন, তাই না ?
নিয়োগকর্তার জন্য এটা তো লটারি! খরচ কম, আউটপুট বেশি। আর যখন পদোন্নতি আসবে, তখন বসেরা অবশ্যই ভাববেন: "যে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করেও টিকে আছে, সে নিশ্চয়ই আট ঘণ্টা কাজ করার পুরুষের চেয়েও বেশি সুপার-পাওয়ারফুল। কিন্তু পদোন্নতিটা পুরুষকেই দিই, কারণ সে তো রাতেও কল ধরবে!"—এভাবেই গড়ে ওঠে সেই চমৎকার 'ম্যাটারনাল ওয়াল'। ধন্যবাদ, জামায়াত! আপনারা নারীকে গৃহিণী-দেবতা বানিয়ে দিলেন।
এদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসে ফেসবুকে সরাসরি সিক্সার মারলেন। তিনি বললেন, "আমরা এমন যেকোনো পশ্চাৎমুখী ধারণা প্রত্যাখ্যান করি, যা নারীর সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে।" কাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তা আর বলতে হয় না। তিনি জানালেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করবে, সরকারি অফিসে ধাপে ধাপে ডে-কেয়ার চালু করবে, বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক ডে-কেয়ার ব্যবস্থা করবে এবং ডে-কেয়ার রাখা নিয়োগকর্তাদের কর-সুবিধা দেবে। বাহ! এ তো শুধু সিক্সার নয়, এটা যেন জিডিপি-বুস্টার মিসাইল ।
তারেক রহমান ডে-কেয়ারকে 'দয়াদাক্ষিণ্য' নয়, বরং 'সামাজিক-অর্থনৈতিক অবকাঠামোর অপরিহার্য অংশ' হিসেবে উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, সড়ক যেমন বাজারকে সংযুক্ত করে, তেমনি ডে-কেয়ার নারীদের কর্মজীবনে সংযুক্ত করে। জামায়াত বলছে, "নারীরা কম কাজ করো, বাড়িতে বেশি থাকো।" আর বিএনপি বলছে, "নারীরা পুরো কাজ করো, আমরা তোমাদের সাপোর্ট দেব।" জামায়াত নারীকে দুর্বল ভাবছে, বিএনপি নারীকে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দেখছে।
তবে এখানেই গল্পের শেষ নয়, কারণ এটা রাজনীতি, ক্রিকেট নয়। তারেক রহমানের এই প্রস্তাব শুনে মনে হচ্ছে, বিএনপি এবার সত্যিই নারী ক্ষমতায়নের দিকে এগোচ্ছে। তাদের লক্ষ্য সহজ: এমন একটি আধুনিক, গণমুখী বাংলাদেশ গড়া, যেখানে কোনো নারীকে তার পরিবার ও ভবিষ্যতের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে না হয়। এই একটি সংস্কার নাকি দেশের জিডিপিতে এক শতাংশ পর্যন্ত যোগ করতে পারে: এমন ঘোষণা শুনে আন্তর্জাতিক মহলে হাততালি পড়ার কথা। বিএনপি এখানে খুবই স্মার্ট। তারা জামায়াতের ভুলটা ধরেছে এবং সেটার বিপরীতে দাঁড়িয়ে নিজেদের একটা প্রগতিশীল ইমেজ তৈরি করার চেষ্টা করছে। এটা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত বুদ্ধিমানের কাজ।
জামায়াত যেটা বলেছে, সেটা নিঃসন্দেহে একটা 'নো বল', এবং সবাই সেটা ধরে ফেলেছে। আম্পায়াররা (নারী নেত্রীরা, বিশেষজ্ঞরা) সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছেন: "নো বল !" জামায়াত অন্তত সৎ—তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তাদের দৃষ্টিতে নারীর স্থান ঘরে। কিন্তু বিএনপির সিক্সার? সেটা এখনো বাতাসে ভাসছে। ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করতে লাগবে বিপুল বাজেট, নিখুঁত পরিকল্পনা, প্রশিক্ষিত জনবল এবং কঠোর মনিটরিং। সবচেয়ে বড় কথা, লাগবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
ক্ষমতায় গেলে সবার আগে যেটা ভুলে যায় দলগুলো, সেটা হলো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। প্রশ্নটা শুধু এটাই , এই 'অর্থনৈতিক জাদুকরের বাক্স' কি সত্যি সত্যি জাদু দেখাবে, নাকি নির্বাচনের পরদিন এই প্রতিশ্রুতি ফাইলবন্দি হয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো ড্রয়ারে ঢুকে যাবে? আমরা আশা করি, 'ট্রিলিয়ন-ডলার অর্থনীতি'র স্বপ্নে বিভোর বিএনপি এই সিক্সারকে যেন ভোটের পরের দিন মনে রাখে।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




