(একজন বিবাহিত পুরুষ বলছি!) অনুবাদ --
সেই রাতে যখন বাড়ি ফিরে এলাম... আমার স্ত্রী রাতের খাবার পরিবেশন করছিল, আমি তার হাত ধরে বললাম, তোমাকে কিছু কথা বলার আছে । সে চুপচাপ বসে খাবার খেয়ে নিলো। আবারও আমি ওর চোখে আঘাতের চিহ্ন পর্যবেক্ষণ করেছিলাম । হঠাৎ কিভাবে মুখ ফুটে বলবো তা জানতাম না । কিন্তু আমি কী ভাবছি, সেটা ওকে জানতেই হবে !
ডিভোর্স চাই । আমি শান্তভাবে প্রসঙ্গটি তুলেছিলাম । সে আমার কথা শুনে মনে হয়নি বিরক্তবোধ করছে, তার বদলে সে নরম স্বরে জিজ্ঞেস করল, কেন? আমি ওর প্রশ্ন এড়িয়ে গেলাম। এতে সে রাগান্বিত হলো । সে হাতের চামচটি ফেলে দিয়ে আমার দিকে চেঁচিয়ে উঠল, তুমি তো মানুষ নও! সেই রাতে আমরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলিনি । সে কাঁদছিল । আমি জানতাম সে জানতে চায় আমাদের বিয়েতে কি হয়েছিলো । কিন্তু আমি তাকে সন্তোষজনক কোন উত্তর দিতে পারিনি; সে আমার হৃদয়কে ভেঙে দিয়েছে 'জেনের' কাছে। আমি ওকে আর ভালবাসি না । আমি শুধু তাকে একটি গভীর অপরাধবোধ সঙ্গে বেঁধে ফেলেছি !
আমি বিবাহবিচ্ছেদের একটি খসড়া চুক্তি তৈরি করলাম, যাতে আমার স্ত্রী আমাদের ঘর, আমাদের গাড়ীর মালিক এবং আমার কোম্পানীর 30% শেয়ারের মালিকানা পাবে। সে তখন তা ছিঁড়ে টুকরো করে ফেলে । যে মহিলা আমার সঙ্গে জীবনের দশ বছর কাটিয়েছিলেন,সে তখন অচেনা হয়ে গিয়েছিলো । আমি তার নষ্ট সময়, সম্পদ এবং শক্তির জন্য দুঃখিত কিন্তু আমি যা বলেছিলাম তা ফিরিয়ে নিতে পারলাম না। আমি এখন জেন'কে ভালবাসি । পরিশেষে সে আমার সামনে জোরে কেঁদেছে, যা আমি আশা করেছিলাম । আমার কাছে ওর আর্তনাদ আসলে এক ধরনের মুক্তি । তালাকের ধারণাটি যে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাকে আচ্ছন্ন করেছিল, তা এখন বরং আরো শক্ত এবং স্পষ্ট মনে হয়েছে ।
পরের দিন খুব দেরিতে বাড়ি ফিরে এসে ওর টেবিলে কিছু একটা লেখা দেখতে পেলাম। আমি রাতের খাবার না খেয়ে সোজা ঘুমাতে গিয়েছিলাম এবং খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কারণ আমি জেনে'র সাথে একটা ঘটনাবহুল দিনের পর ক্লান্ত ছিলাম । যখন ঘুম ভাঙালো তখন টেবিলের উপর লেখাটা দেখতে পেলাম কিন্তু আমি কোন তোয়াক্কা না করো মুখ ঘুরিয়ে আবারো ঘুমিয়ে ছিলাম । সকালে সে তার বিবাহবিচ্ছেদের শর্ত উপস্থাপন করেছে: সে আমার কাছ থেকে কিছু চায়নি, কিন্তু তালাকের আগে এক মাসের নোটিশ দরকার ছিল। সে অনুরোধ করেছে যেন এই এক মাসে আমরা উভয়েই যতটা সম্ভব একসাথে স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য সংগ্রাম করি । তার কারণ ছিল সহজ: আমাদের ছেলের এক মাসের মধ্যে পরীক্ষার সময় এবং ছেলেটাকে আমাদের ভাঙ্গা বিয়ের জন্য বিপর্যস্ত করতে চায়নি । এটা আমার কাছে অমায়িক ছিল । কিন্তু তার আরো কিছু শর্ত ছিল, সে আমাকে স্মরণ করতে বলেছিল,কিভাবে আমি আমাদের বিবাহের প্রথম দিনে তাকে ব্রাইডাল রুমে নিয়ে গিয়েছিলাম? সে অনুরোধ করেছে যে এই একমাস সময়কাল ধরে আমি তাকে আমাদের শোবার ঘর থেকে সামনের দরজা পর্যন্ত নিয়ে যেতে । আমি ভেবেছিলাম সে পাগল হয়ে যাচ্ছে । শুধু আমাদের শেষ দিনগুলো একসঙ্গে সহনীয় করতে আমি তার অদ্ভুত অনুরোধ গ্রহণ করি।
আমি জেন'কে আমার স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদের অবস্থার কথা বলেছি । . সে জোরে হেসেছিলো তার কাছে মনে হয়েছিল অবাস্তব শর্ত ।
সে যে কৌশলই প্রয়োগ করুক না কেন, তাকে বিবাহবিচ্ছেদের মুখোমুখি হতেই হবে 'জেন' দাঁতচেপে বললো ।
আমার বিবাহ বিচ্ছেদের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার পর থেকে আমার স্ত্রীর সাথে কোন শারীরিক সম্পর্ক ছিল না । আমি যখন প্রথম দিন তাকে রুম থেকে বের করলাম, তখন আমরা দু ' জনেই নীরব হয়ে গেলাম । আমাদের ছেলে পেছনে পিছনে হাততালি দিতে লাগলো , বাবা আম্মাকে তার কোলে ধরে রেখেছে । ছেলের কথাগুলো শুনে অজানা যন্ত্রণা অনুভব করতে লাগলাম। বেডরুম থেকে বসার ঘর, তারপর দরজার কাছে আমি তার সঙ্গে দশ মিটার আমার কাঁধের উপর ভর দিয়ে হেঁটে গেলাম। সে চোখ বন্ধ করে নরম গলায় বললো; আমাদের ছেলেকে ডিভোর্সের কথা বলবেন না । আমি, কিছুটা বিচলিত বোধ করলাম । আমি ওকে দরজার বাইরে নামিয়ে দিলাম । সে কাজের উদ্দেশ্য যাবার জন্য বাসের অপেক্ষা করতে লাগলো। । আমি একাই গাড়ি চালিয়ে অফিসে এলাম । দ্বিতীয় দিনে আমরা দুজনেই অনেক বেশি সহজে অভিনয় করেছি । সে আমার বুকের উপর ঝুঁকে পরে আমি ওর ব্লাউজের সুগন্ধি পাচ্ছিলাম । বুঝতে পারলাম, অনেক দিন ধরে এই মহিলার দিকে এমন সাবধানী চোখে তাকাইনি । আমি বুঝতে পারলাম সে আর তরুণী নয় । তার মুখে সূক্ষ্ম বলিরেখা ছিল, তার চুল ধূসর হয়ে গেছে! আমাদের বিয়ে তার পাওনাকড়ি আদায় করে নিয়েছে । এক মিনিটের জন্য আমি ভাবছিলাম আমি তার সাথো কি করেছি? চতুর্থ দিনে যখন আমি তাকে উঠিয়ে দিলাম, তখন আমার একটা অন্তরঙ্গতা ফিরে আসার অনুভূতি অনুভব করলাম । এই সেই মহিলা, যে জীবনের দশ বছর আমাকে দিয়েছে । পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিন বুঝতে পারলাম, আমাদের আন্তরিকতার বোধ আবারও জন্ম নিয়েছে। আমি জেনকে এ কথা বলিনি । দিনের পর দিন তাকে বহন করা সহজ হয়ে ওঠে । হয়তো প্রতিদিনের ওয়ার্কআউট আমাকে আরও শক্তিশালী করেছে । সে এক সকালে কী পরবেন সেটা বাছাই করছে কিন্তু সে বেশ কিছু ড্রেস পরে চেষ্টা করেছিল কিন্তু একটা উপযুক্ত ড্রেস খুঁজে পায়নি । তখন সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আমার সব ড্রেস বড় হয়ে গিয়েছে ! আমি হঠাৎ বুঝতে পারলাম যে সে এত রোগা হয়ে গেছে, সেই কারণেই আমি তাকে আরও সহজে বহন করতে পারি । হঠাৎ তা আমাকে বড্ড আঘাত করলো... সে হৃদয়ে এত যন্ত্রণা ও তিক্ততা চাপা পড়ে আছে। আমি অর্ধচেতন আবস্থাতে আমি তার কাছে পৌঁছে গিয়ে তার মাথা ছুঁয়ে দিলাম । আমাদের ছেলে এই মুহূর্তে এসে বলল, বাবা, এটা ' ই সময় মা-কে বাইরে বয়ে নিয়ে যেতে হবে । আমার ছেলের কাছে তার বাবা যেভাবে তাার মাকে নিয়ে যেতে দেখে তাই যেন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছিল । আমার স্ত্রী ছেলের কাছাকাছি এসে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে । আমি মুখ ফিরিয়ে ছিলাম কারণ আমি ভয় পেয়েছি এই শেষ মিনিটে আমি হয়তো আমার মন পরিবর্তন করতে পারি । আমি তখন ওকে আমার কোলে ধরে, শোয়ার ঘর থেকে হেঁটে, বসার ঘরের ভিতর দিয়ে, হলরুমে নিয়ে গেলাম । আমি অনুভব করলাম তার হাত আমার ঘাড়ে নরম ও স্বাভাবিকভাবে ঘিরে রেখেছে । আমিও তার শরীর শক্ত করে ধরে রেখেছি; ঠিক যেন ছিল আমাদের বিয়ের দিন । কিন্তু তার অনেক হালকা ওজন আমাকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছে । শেষ দিনে, যখন আমি তাকে আমার কোলে ধরে রেখেছি আমি খুব কমই হাঁটতে পারছিলাম। আমাদের ছেলে স্কুলে চলে গিয়েছে । আমি তাকে শক্ত করে ধরে বললাম, আমি খেয়াল করিনি যে আমাদের জীবনের অন্তরঙ্গতা কমে গেছে ।
আমি দ্রুত অফিস চলে যাবার জন্য...ঘরের দরজাটা বন্ধ না করেই দ্রুত গাড়িতে চড়ে বসি । আমি ভয় পেয়েছিলাম যে, কোন কালক্ষেপণ যদি শেষ সময়ে আমার মনের ভেতর কোন পরিবর্তন এনে দেয়.....
আমি উপরে হেঁটে গেলাম । জেন দরজা খুলে দিলে আমি ওকে বললাম, সরি, জেন, আমি ডিভোর্স আর চাই না । সে আমার দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হয়, তারপর আমার কপাল ছুঁয়ে বলে তোমার কি শরীরে জ্বর এসেছে? আমি মাথা থেকে তার হাত সরিয়ে বললাম, দুঃখিত, জেন, আমি তালাক দেবো না । আমার বিবাহ জীবন বিরক্তিকর ছিল সম্ভবত কারণ আমার স্ত্রী এবং আমি আমাদের জীবনের মূল্য দেইনি তার কারণ এই নয় যে আমরা একে অপরকে আর ভালোবাসি না। এখন আমি বুঝতে পারছি যে, যেহেতু আমি বিয়ের দিন তাকে আমার বাড়ীতে নিয়ে যাই, তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি তাকে ধরে রাখা উচিৎ। জেনকে হঠাৎ মনে হলো জাগ্রত হতে চলছে । সে আমাকে জোরে চড়-থাপ্পড় মেরে তারপর দরজা বন্ধ করে কান্নায় ফেটে পড়ে । আমি নীচে হাঁটলাম এবং গাড়ি চালাতে লাগলাম। যাবার সময় ফুলের দোকানে আমি আমার স্ত্রীর জন্য ফুলের তোড়া অর্ডার করলাম । বিক্রেতা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কার্ডে কী লিখব । আমি মুচকি হেসে লিখেছিলাম, "আমি তোমাকে প্রতিদিন সকালেবাইরে নিয়ে যাবো যতক্ষণ না মৃত্যু আমাদেরকে আলাদা করে" । সেই সন্ধ্যায় আমি বাড়িতে পৌঁছলাম, আমার হাতে ফুল, মুখে হাসি, আমি সিঁড়ি দিয়ে দৌড়েছি, শুধু বিছানায়-ঘরে আমার স্ত্রীকে খুঁজে বের করার জন্য।
" মৃত" একটি মৃত শরীর !
আমার স্ত্রী কয়েক মাস ধরে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছিল আর আমি জেনের সাথে খেয়ালী ভালোবাসায় ব্যস্ত ছিলাম । আমার স্ত্রী জানত যে সে খুব তাড়াতাড়ি মারা যাবে এবং যদি আমরা বিবাহ বিচ্ছেদেরব দিকে যাই তবে আমার ছেলের উপর যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে তা থেকে সে আমাকে রক্ষা করতে চেয়েছিলো, । — অন্তত, আমাদের ছেলের চোখে —-আমি ভালোবাসার স্বামী... ।
আমাদের জীবনের ক্ষুদ্র ঘটনা যা আমাদের জীবনে সত্যিই বড় ব্যাপার।
অট্টালিকা বা বাড়ি, গাড়ি, সম্পত্তি, ব্যাঙ্কে টাকা এগুলো সুখের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে কিন্তু নিজেদের মধ্যে সুখ দিতে পারে না । তাই স্ত্রীর বন্ধু হওয়ার সময় খুঁজুন এবং একে অপরের জন্য ওই সামান্য জিনিসগুলি করুন যা অন্তরঙ্গতা গড়ে তোলে । একটি সত্যিকারের সুখী বিবাহ এখনও আছে ! এই শেয়ার বা হৃদয়ের আদানপ্রদান না করলে কিছুই হবে না । যদি তা করেন, তবে একটি বিয়েকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন. জীবনে বেশির ভাগ ব্যর্থ মানুষ যখন হাল ছেড়ে দেয় তখন উপলব্ধি করতে পারেনি যে তারা সাফল্যের কত কাছাকাছি ছিলো। তুমি বুঝতে পারবেনা কি জিনিস তুমি হারিয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত না তা তোমার কাছ থেকে হাতছাড়া হয়ে যায় !
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৫