somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের সেনারা থাকুক দুধে-ভাতে

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কতদিন হয়ে গেল। উদভ্রান্তের মতো ছুটছি তো ছুটছি। কিছুটা কান্তও কি হইনি? হয়েছি। তবুও ভুলতে পারিনা। ভুলতে পারিনা সেই দিনের কথা। এখনও বা’ পায়ে ব্যথা অনুভব করি। তার চেয়েও যে জ্বালা প্রতিনিয়ত আমাকে দগ্ধ করে। এর নাম ‘অন্তর্জ্বালা’।

২২ আগস্ট, ২০০৭ খৃস্টাব্দ। সেদিন ছাত্র-শিক্ষক-সাংবাদিকদের ওপর হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার দেশপ্রেমিক (!) সেনারা। ২১ আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর সারা দেশেই বিুব্দ ছাত্র-জনতার দ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। আমাদেরও দ্রোহের স্বর বিদ্রোহে কেঁপে উঠেছিল সেদিন।

তারপর অনেক কিছুই হয়েছে। ২০০৭ এর ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি হয়। দু’দিন পর জারি আসে জরুরি মতা অধ্যাদেশ ২০০৭। এর ৫ ধারার দোহাই দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয় সভা-সমাবেশ, মিছিল, অবরোধ, বক্তৃতা, বিবৃতি, বিক্ষোভের উত্তেজক কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্য বা সংবাদ প্রকাশ; সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক সংবাদ, সম্পাদকীয়, উপ সম্পাদকীয়, কার্টুন প্রকাশ বা আলোচনা অনুষ্ঠান স¤প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়। ৬ ধারায় নিষিদ্ধ করা হয় সরকার বা সরকারি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে উস্কানিমূল বক্তব্য বা কাজে বাধা দেওয়া, সরকারের কার্যক্রম নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র বা কার্টুন আঁকা, প্রকাশ, প্রদর্শন বা প্রচার এবং কুশপুত্তলিকা তৈরি বা দাহ ইত্যাদি।

শুধু তাই নয়, এ দুই ধারার মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সব ধরনের গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল সেদিন।

তারপর ১১ জানুয়ারি। আর তারপরের প্রায় দুই বছরের শাসনামলের চিত্র আমরা সবাই জানি, সবার চোখেই ভাসে। শেষমেশ নির্বাচনের তারিখ এলো, জরুরি বিধিমালা ২০০৭ এর ৫ ও ৬ ধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে। দেশপ্রেমিক সেনাদের ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তবে...তবে এবং তবে। যে কথা বলতে এই লেখা শুরু করেছিলাম তা আর বলা হলো না। বলা হয়নি বলে বলবো না, তা কিন্তু নয়। বলবো এবং বলছি...।

আমাদের এই দেশপ্রেমি সেনারাও কারো বাবা, কারো ভাই, কারো স্বামী কিংবা ছেলে। তাদের ভরসার কেন্দ্র। নাদিশার (কল্পিত নাম) কাছেও তার কর্নেল বাবা একটা ভরসার নাম। তার আদর্শ। অমি যতবার এই মেয়েটার কাছে সেনাবাহিনী নিয়ে বিষদগার করেছি ততবারই তার ভর্ৎসনার শিকার হয়েছি। আমার সব কথাই শুনতে রাজি এই মেয়েটা, শুধু তার বাবা বাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু নয়।

যাক, বলছিলাম ২২ আগস্টের কথা। সেদিন রাত আটটার পর দেশে কারফিউ বলবৎ হয়। তবে সরকারের তরফ থেকে পত্রিকা অফিসগুলোতে নির্দেশনা আসে, সাংবাদিকরা তাদের পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেখালে কোন সমস্যা নেই।

আমিও দেখিয়েছিলাম। তখন রাত ৯টা কি সাড়ে ৯টা। ধানমন্ডি ২৭ এর নন্দনের অপরদিকে আমাদের অফিস। কাজ করি দিনের শিফটে। তবে ছাত্র-জনতা বিক্ষেভের কারণে সেদিন ফিরতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। অফিসের গাড়ির জন্য আমরা চারজন, আমি, ক্রীড়া রিপোর্টার মাসুদ পারভেজ, সনৎ বাবলা আর পল্টু ভাই অপো করছি। র‌্যাব, পুলিশের কয়েকটা ভ্যান আমাদের ক্রস করে চলে যায়। তখনও আমরা নিজেদের নিরাপদই ভাবছি। গলায় ঝোলানো দাসত্বের পরিচয়পত্রটা (ইদানিং এটি ফ্যাশন হলেও সেকেলে; এক সময় দাশদেরও লোহার পাতে খোঁদাই করে নম্বর লিখে তা ঝুলিয়ে দেওয়া হতো) ঝুলিয়ে গর্বই হচ্ছিল। সাই সাই করে আর্মির গাড়িগুলো নিজেদের যতই অতিক্রম করছে ততই গর্বটা বুক ফেটে বেরিয়ে পড়ার উপক্রম।

আমরা দাঁড়িয়ে আছি। চারজন। আটটা হাত, চারজোড়া চোখ, ২০৬গুণ৪টা হাড়। এখনও সেই হাড়ে ব্যথা অনুভূত হয়।
হঠাৎ আর্মির একটা ভ্যান আর সামনে একটা জিপ এসে থামে। অফিসার বেরিয়ে আসেন জিপ থেকে। বললেন, হোয়াট ইজ দিস?

আমি দাসত্বের কার্ডটা দেখিয়ে বললাম- আমরা সাংবাদিক। অফিসের গাড়ির জন্য অপো করছি।

অফিসার বললেন- সো হোয়াট।

এই ‘সো হোয়াট’ বলার পর ভ্যান থেকে নেমে এলো আরও ক’জন দেশপ্রেমিক কয়েকজন সৈনিক। গুণতে পারিনি। অফিসারের হাতে মোটা লাঠি।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রথম আঘাতটা এলো। তাও আমার ওপরই (বাড়িয়ে বলছি না)। হাটুর চার ইঞ্চি উপরে। রক্ত জমে কালো দাগ হয়ে গেছে সেই জায়গাটায়। আমি তখনো দাঁড়িয়ে আছি। এরমধ্যেই বাবলা দা আর পল্টু ভাই ভোঁ দৌড় দিয়েছেন। কেবল আছি আমি আর মাসুদ পারভেজ।

স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে মাসুদ পারভেজ যতোটা না নাদুস-নুদুস আমি ততোটাই রোগা-কঙ্কাল। এক আঘাতেই আমার প্রাণ যায় যায়। দ্বিতীয় আঘাতটাও একই জায়গায়। আমার আর তখন দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থা নেই। তবুও দৌড়ে পালিয়েছিলাম সেদিন। ঈশ্বর হয়তো আমার পায়ে অতিরিক্ত আরও দুইটা পা লাগিয়ে দিয়েছিলেন! একটু সামনে এগিয়ে শুধু শুনলাম মাসুদ পারভেজের চিৎকার। আমার কানে এখনো সেই চিৎকারের শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়।

তার পরের খবর সবাই জানেন। মাসুদ ভাই বিবিসিতে সাাৎকারে সব বলেছিলেন। আরও কত শত জনের নির্যাতনের কথা আমরা জানি। শুনেছি।

গতকাল যখন শুনলাম দেশপ্রেমিক সেনাদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে তখন থেকেই অন্যরকম একটা কষ্ট আমার হৃদয়ে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে।

ওরা ফিরে যাচ্ছে। অথচ তাদের যোগ্য প্রাপ্য আমরা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। সিভিল সোসাইটিতে এসব বন্য আনসিভিলিয়ানদের হাজারবার ভর্ৎসনা করি। চপটাঘাত করি তাদের চিন্তায়। তাদের অস্তিত্বে।


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×