somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার শিক্ষিকার কথা....

২৮ শে জুন, ২০১১ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিনি শুধু আমার শিক্ষিকাই নন, পারিবারিক ভাবেও আমাদের অনেক কাছের একজন মানুষ....একজন অত্যন্ত ভাল ও আন্তরিক প্রকৃতির মানুষ। শুধু তাই নয়, তার কাছেই আমার লেখাপড়ার হাতে-খড়ি। আমি জানি, আমার জীবলে তার অবদানের প্রতিদান কোন কিছু দিয়েই পূরণ করা যাবেনা....তারপরও তার প্রতি কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্ব্বরুপ তারই একটি লেখা আজ ব্লগে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো.....লেখাটি হুবহু নিম্মে তুলে ধরলাম ......

" হে অতীত, তুমি হৃদয়ে আমার কথা কও, কথা কও "

আজ দীর্ঘকাল পর পুরোনো দিনের কত কথাই না মনে পড়ছে । আমার অতীতকে বলা যায় স্ব্বর্ণযুগ। সেই সময়গুলো কেবল আনন্দে আর সুখেই কাটতো আমাদের পারিবারিক জীবন। যথাসময়ে আমরা ভাইবোনেরা স্কুলে ভর্তি হই। আমার ভাইবোনেরা বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী। আমার স্কুলে বিজ্ঞান পড়বার সুযোগ না থাকায় আর্টস এ পড়াশোনা করি । শিক্ষিত পিতা উৎসাহ দিলেন। তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করেছিলেন। তিনি বললেন, "ঠিক আছে....একজন তো আমার লাইনে আসুক । কারণ দর্শন শাস্ত্র সকল বিদ্যার গুরু "।

আমি আজ দার্শনিক তত্ত্ব কথায় যাবোনা । কেবল আমার সেই একটি আনন্দপূর্ণ ঘটনাটি তুলে ধরতে চাই। যথাসময়ে এম,এ ফাইনাল পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলাম। পরীক্ষাগুলো মোটামুটি ভালই হলো। তবুও অন্তরের শংকা দুর হয়না ।

তখনকার দিনে আমাদের বাসার দরজার নীচে দিয়ে হকার পত্রিকা নিয়ে যেতো। সেই সময় একটি মজার ঘটনা ঘটেছিলো। আমার ছোট ভাই, যিনি বর্তমানে একজন শল্য চিকিৎসক ( অষ্ট্রেলিয়াতে বসবাসরত), তার সাথে কোন একটা কারণে ( এখন মনে নাই) কথা বলতামনা বেশ ক'দিন । সে প্রথমে খবরের কাগজটি হাতে পায় । কাগজ খুলে দ্যাখে দর্শন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। তাতে প্রথম শ্রেনীতে বেশ কয়েক জনের সাথে আমার নাম - কাজী ফিরোজা ওমর বানু - ও আছে। সে তো আনন্দে আত্মহারা....ভুলে গ্যালো তার সাথে আমার আড়ীর কথা । দৌড়ে এসে বললো, " আপু, এই যে তোমার রেজাল্ট দিয়েছে....দ্যাখো....তুমি প্রথম শ্রেনী পেয়েছো "।

খবর শুনে বড় ভাই খাটে বসে সংগীত চর্চা করছিলেন, তিনি থামলেন....এবং কাগজ দেখে আমাকে অভিনন্দন জানালেন। আমার মেজো ভাই ও ছোট বোন দৌড়ে এলো , আম্মা রান্নাঘর থেকে এলেন। সবাই আমাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানালো । আম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন । আনন্দধারা বইতে থাকলো আমাদের বাসায় ।

এমন সময় আমার আব্বা, যিনি একজন স্কুল শিক্ষক হওয়ায় একটি ক্লাসে পড়িয়ে অপর ক্লাসে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে প্রিন্সিপাল সাহেব ডেকে বললেন, " পত্রিকা দেখেছেন স্যার ? আজ আর আপনাকে ক্লাস নিতে হবেনা । বাসায় যান, আপনার মেয়ে এম.এ তে ভাল রেজাল্ট করেছে, আজ আপনার সবচেয়ে আনন্দের দিন"। আব্বার আদর অনেক পেয়েছি, তবে সেদিনের আদর টা আজও ভীষন মনে পড়ে। আব্বা তখনই বাসায় এসে আমার মাথাটা তার বুকে নিয়ে অনেক আদর করলেন এবং খুব খুশী হয়ে আমার জন্য দোয়া করলেন ।

আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী সবাই এই সংবাদে আমাকে অনেক অভিনন্দন জানালো । অনেকে মিষ্টি নিয়ে দ্যাখা করতে এলেন । বাসাতেও একই আয়োজন । কিছুক্ষন পর আব্বার উপদেশ মতো আমি ডিপার্টমেন্টে গ্যালাম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সালাম করতে এবং ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য দোয়া নিতে ।

সেই সুখময় স্মৃতির কথা কি ভোলা যায় ? সে দিনগুলোর কথা মনে করে আজও পথ চলি । আমার অতীত, সব পাবার অতীত, মা-বাবা'র শ্রম, ভাইবোনের ভালবাসা, আত্মীয়-স্বজনের আশীর্বাদ, বন্ধু-বান্ধবের শুভাকাংখা আমাকে বারবার ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই সুদূর অতীতে । কবি গুরুর ভাষায়,

" আমি যাহা দেখিয়াছি, আমি যাহা পাইযাছি
এ জনম সই
জীবনের সব শূন্য, আমি যাহে ভরিয়াছি
তোমার তা কই ?"


আমি আশা করবো, আমার জীবনের এই ছোট্ট আনন্দ ঘটনা যদি ভবিষ্যতে আমার পরবর্তী প্রজন্মের কাউকে উৎসাহিত করে ভাল করে পড়াশোনা করবার এবং পরীক্ষায় ভাল ফলাফল লাভ করবার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়, তবে সার্থক হবে আমার এই লেখা । সবাইকে ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ.......

(আগে) কাজী ফিরোজা ওমর বানু
(পরে) ফিরোজা রশীদ
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×