somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গৌতম বুদ্ধ ও তার জীবন দর্শন

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গৌতম বুদ্ধ, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা। তার জন্ম বর্তমান ভারত-নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন নেপালের লুম্বিনি গ্রামে। পিতৃপ্রদত্ত বাল্যনাম সিদ্ধার্থ গৌতম। পরবর্তীতে আধ্যাত্মিক সাধনা ও জীবন নিয়ে নিজস্ব জ্ঞান-উপলব্ধির পর বুদ্ধ নামটি তিনি নিজেই গ্রহণ করেন। তাছাড়া যোদ্ধাজাতি শাক্য সম্প্রদায়ের সন্তান হওয়ায় তাকে শাক্যমুনিও বলা হয়। তার জন্ম ও মৃত্যু সাল অনিশ্চিত হলেও তা ৫৬৩ - ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে মনে করা হয়। তবে কেউ কেউ খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ বা ৪১০ সালকে তার মৃত্যু সাল হিসেবে গণ্য করেন। আক্ষরিক অর্থে বুদ্ধ বলতে একজন জ্ঞানপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত, জ্ঞানী, জাগরিত মানুষকে বোঝায়। উপাসনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং পরম জ্ঞানকে বোধি বলা হয়। সেই অর্থে যে কোনো মানুষই বোধপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত এবং জাগরিত হতে পারে। সিদ্ধার্থ গৌতম এইকালের এমনই একজন 'বুদ্ধ'।

এবার নজর দেই তার ব্যক্তিজীবনের দিকে। গৌতম ছিলেন ছোট্ট একটি রাজ্যের রাজপুত্র। তার জন্মের সময়ই পন্ডিতেরা তার মধ্যে ভবিষ্যতে একজন অসাধারন জ্ঞানী অথবা পরাক্রমশালী শাসক হয়ে উঠবার চিহ্ন দেখতে পান। তার পিতাও তাকে একজন পরাক্রমশালী যোদ্ধা ও শাসক হিসাবেই দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার মধ্যে খুব অল্প বয়সেই ধ্যানের প্রতি আগ্রহ দেখা যায় যা তাকে পরবর্তীতে একজন ধার্মিক দার্শনিকে পরিণত করে। পিতার ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে খুব অল্প বয়সেই তিনি বিয়ে করেন। তার বিয়ে সমন্ধে অবশ্য দুধরনের মত আছে। প্রথম মত অনুসারে ১৬ বছর বয়সে তিনি একটি প্রতিযোগিতায় তার স্ত্রীকে লাভ করেন। আর একটি মত অনুসারে ২৮ বছর বয়সে তাকে সংসারের প্রতি মনযোগী করার জন্য তার পিতামাতা তাকে রাজকন্যা যশধরার সাথে বিয়ে দেন। অতঃপর পুত্র রাহূল জন্মগ্রহণ করে। তিনি নিজের এই নিশ্চিন্ত বিলাসী ক্ষয়িষ্ণু জীবন যাপনে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। বুঝতে পারেন কি অন্তঃসারশূণ্য তার এই জীবন। তাই পুত্র রাহূলের বয়স যখন মাত্র ৭ দিন তখন গৌতম বুদ্ধ যাবতীয় মানবীয় বন্ধন ছিন্ন করে শান্তি আর পুর্নজন্মের শিকল হতে মুক্তির খোঁজে সংসার ত্যাগ করেন। বিশ বছর বয়সে তার পিতা গৌতম বুদ্ধ বুদ্ধত্ব অর্জন করে কপিলাবস্তু তে ফিরে আসলে পুত্র পিতার কাছ থেকে দীক্ষিত হয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুতে পরিণত হন।

বৌদ্ধ ধর্ম গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত একটি ধর্ম বিশ্বাস এবং জীবন দর্শন আর এর ধর্মগ্রন্থের নাম "ত্রিপিটক"। এটি মূলত বুদ্ধের নিজস্ব দর্শন এবং উপদেশের সংকলন। এটি কোরান বা বাইবেলের মত ঈশ্বরপ্রদত্ত ধর্মগ্রন্থ নয়। বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান অনুশাসন হিসাবে এটিকে গণ্য করা যায়। বুদ্ধ কোনো গ্রন্থের মাধ্যমে তার উপদেশাবলি রেখে যাননি। তার মৃত্যুর পরে শিষ্যরা উপদেশগুলো ত্রিপিটক আকারে সংরক্ষন করেন। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে শিষ্যরা গৌতম বুদ্ধকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করার অনুরোধ তিনি তা অস্বীকার করে তাদেরকে অধ্যবসায়ের সাথে মুক্তির জন্য কাজ করে যেতে বলেন।

বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায়। বাসনা সর্ব দুঃখের মূল। বৌদ্ধমতে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য। বুদ্ধ দুঃখের কারণ, দুঃখ দূর করার উপায় সমন্ধে উপদেশ দিয়েছেন। তার মতে জীবন দুঃখপূর্ণ। দুঃখের হাত থেকে কারও নিস্তার নেই। জন্ম, জরা, রোগ, মৃত্যু সবই দুঃখজনক। আর বাসনাই হল সব দুঃখের মূল। মাঝে মাঝে যে সুখ আসে তাও দুঃখমিশ্রিত। অবিমিশ্র সুখ বলে কিছু নেয়। নিবার্ণ লাভে এই দুঃখের অবসান। বাসনার নিস্তারের মাঝে অজ্ঞানের অবসান। এতেই পূর্ণ শান্তি। বুদ্ধ পরকাল সমন্ধে বিশদ ব্যাখা না দিলেও পরকালের অস্তিত্ব অস্বীকার করেননি। দেহ কি আত্মা হতে অবচ্ছিন্ন বা মৃত্যুর পর আত্মা থাকে কিনা, এইসব প্রসংগ তিনি এড়িয়ে গেছেন।

এবার একটা গল্প শোনা যাক; অবশ্য সত্যিও হতে পারে। সাধারনত প্রত্যেক ধর্মেই কিছু গল্প থাকে। সত্য-মিথ্যা যাই হোক কথিত আছে, একদিন রাজকুমার সিদ্ধার্থ বেড়াতে বের হলে ৪ জন ব্যাক্তির সাথে তার সাক্ষাত হয়। প্রথমে তিনি একজন বৃদ্ধ মানুষ, অতঃপর একজন অসুস্থ মানুষ এবং শেষে একজন মৃত মানুষকে দেখতে পান। তিনি তার সহিস চন্নকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে চন্ন তাকে বুঝিয়ে বলে যে এটিই সকল মানুষের নিয়তি। আবার আরেকদিন তিনি চন্নকে নিয়ে বের হলেন। এবারে তিনি দেখা পেলেন একজন সাধুর, যার মাথা মুড়ানো এবং হলুদ রং এর জীর্ন পোশাক পরা। চন্নকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে উনি একজন সন্নাসী, যিনি নিজ জীবন ত্যাগ করেছেন মানুষের দুঃখের জন্য। সেদিন রাত্রেই ঘুমন্ত স্ত্রী, পুত্র, পরিবারকে নিঃশব্দ বিদায় জানিয়ে তিনি প্রাসাদ ত্যাগ করেন। সাথে নিলেন চন্নকে। প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে বনের শেষ সীমায় পৌছে তিনি থামলেন। তলোয়ার দিয়ে কেটে ফেললেন তার লম্বা চুল। অতঃপর চন্নকে বিদায় জানিয়ে যাত্রা শুরু করলেন আলোকের খোঁজে, মাত্র ২৯ বছর বয়সে। দুঃখ ও দুঃখের কারণ সমন্ধে জানতে সিদ্ধার্থ যাত্রা অব্যাহত রাখেন। প্রথমে তিনি আলারা নামক একজন সন্নাসীর কাছে যান। তার উত্তরে সন্তুষ্ট হতে না পেরে তিনি যান উদ্দক নামক আর একজনের কাছে। কিন্তু এখানেও কোনো ফল পেলেন না। এভাবে কিছু দিন যাবার পর তিনি মগধের উরুবিল্ব নামক স্থানে একটি গাছের নিচে ধ্যান শুরু করেন। কঠোর সাধণার ফলে তার শরীর ক্ষয়ে যায়। কিন্তু এ তপস্যায় তিনি ভয়, লোভ ও লালসাকে অতিক্রম করে নিজের মনের উপর সম্পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে সক্ষম হলেন। সহসা তিনি বুঝতে পারলেন এভাবে আলোকলাভ হবেনা। তিনি তাই আবার খাদ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন। সুগত নাম্নী এক নারীর কাছ হতে তিনি এক পাত্র দই আহার করলেন। অতঃপর তিনি নদীতে স্নান করে পুনরায় ধ্যাণে বসেন। অবশেষে কঠোর তপস্যার পর তিনি আলোকপ্রাপ্ত হলেন। তিনি দুঃখ, দুঃখের কারন, প্রতিকার প্রভৃতি সমন্ধে জ্ঞান লাভ করলেন।

বুদ্ধের মৃত্যুর পরে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার হয়। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কোরিয়া সহ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে এই ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী রয়েছে।
২৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×