আমাদের দেশের বিখ্যাত হুজুর সাইদাবাদী একবার ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রধান ব্যক্তি প্রবীর ঘোষকে বলেছিলেন, "আল্লাহর অনুভব হয় বিশ্বাসে, যুক্তিতে নয়। পূর্বে লোকের আল্লাহে বিশ্বাস ছিল। তাদের অভাব ছিল না; কোন অতিথি বাড়িতে আইলে আনন্দ পাইত। খাওয়াইয়া আনন্দ পাইত। এখন অতিথি দ্যাখলে লোকের মুখ ভারী হয়। আজকাল মানুষের আল্লাহে বিশ্বাস নাই বইল্যাই অভাব ঘোচে না। আল্লাহে বিশ্বাস নাই বইল্যাই ক্ষ্যাতে আর সাবেক ফসল ফলে না, পুকুর-খাল-বিলে সাবেক মাছ পড়ে না। আল্লাহে বিশ্বাস নাই বইল্যাই খোদার গজবে প্রত্যেক বছর মারামারি। হজরত সোলেমান নবী সিংহাসনে বইস্যা পারিষদ সহ শূণ্যে ভ্রমণ করতেন কিসের জোরে? এই আল্লাহে বিশ্বাসের জোরেই।"
প্রবীর ঘোষ উত্তরে বলেন, "এপার বাংলায় বা ওপার বাংলায় বিঘে প্রতি যে পরিমাণ ফসল হয়, তার বহুগুণ বেশি ফসল হয় ইউরোপের প্রতিটি দেশে, আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়ায়, এমনকি এই মহাদেশের জাপানেও। ওরা কেউই আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। তবু আল্লায় বিশ্বাসী দু'বাংলার মুসলিম চাষীদের চেয়ে বেশি ফসল ফলায়। এমন কি মজা হল এই যে, ইউরোপে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাসহীন ব্যক্তিরা সংখ্যাগুরু হওয়া সত্ত্বেও ঐসব দেশে বিপুল সংখ্যক আস্তিক অধ্যুষিত এলাকয় দু'বাংলার চেয়ে ফসল উৎপাদন অনেক বেশি এবং মহামারীর সংখ্যাও অনেক কম। এর কারণ, বিজ্ঞানকে ওসব দেশ কৃষিকাজে ও শরীরবিজ্ঞানে বেশি বেশি করে কাজে লাগিয়েছে। উৎপাদনহীনতা, অভাব, শোষণ, রোগ, মহামারি-এর কোনটির জন্যই ঈশ্বরজাতীয় কোন কিছুতে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সামান্যতম ভূমিকা নেই।"
এরপর প্রবীর ঘোষ হুজুরকে প্রশ্ন করেন, "হুজুর সাহেব, আপনি মক্কায় গিয়েছেন?"
- "হ্যাঁ, হুজুর সাহেবের তৎপর উত্তর।"
- "কিসে গিয়েছিলেন? জাহাজে না প্লেনে?"
- "প্লেনে।"
- "কেন, প্লেনে যেতে গেলেন কেন? আপনি আল্লাহ প্রিয় ভক্ত। আপনি আল্লাহে পরম বিশ্বাসী, কেন এই বিশ্বাস রাখলেন না, আপনি চাইলে চোখের নিমেষে আল্লাহ আপনাকে মক্কায় পৌছে দেবেন? বেশ তো, সেই সময় যদি অমন সোজা কথাটা মনে নাই পড়ে থাকে, এবার বাংলাদেশে ফেরার সময় আল্লাহের কাছে আবেদন রাখুন না, সপারিষদ আপনাকে চোখের নিমেষে ঢাকায় পৌছে দেবার। এতে বিশ্বাসের ক্ষমতার পরীক্ষা নেবার পাশাপাশি প্লেনের ভাড়া ও সময় দুই-ই বাঁচবে।"
তারপরও কিন্তু হুজুর সাইদাবাদী প্লেনেই ঢাকা ফিরেছেন। আল্লাহে বিশ্বাসের ক্ষমতার দৌড় হুজুর সাহেবের ভাল মতই জানা আছে। মুখে যা বলেন, সে কথায় আদৌ বিশ্বাস করেন না।
[উপরোক্ত আলাপচারিতা প্রবীর ঘোষের বই থেকে সংগৃহীত]
_______________________
যারা প্রবীর ঘোষ-কে চেনেন না তাদেরকে বলছি, প্রবীর ঘোষ কলকাতা কেন্দ্রিক ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রধান। বিগত কয়েক বছরে একের পর এক ভন্ড ধর্মগুরুদের জারিজুরি ফাঁস করে দিয়ে তাদের যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এমনকি কোন ধর্মগুরু তাকে কোন অলৌকিক ঘটনা দেখাতে পারলে তাকে ৫০,০০০ ডলার আর্থিক পুরস্কার প্রদান সহ নিজে আস্তিক হয়ে যাবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। এবং আজ পর্যন্ত কেউ তাকে পরাস্ত করতে পারেননি।
উইকিপিডিয়ায় প্রবীর ঘোষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন