ধরুন একজন ব্যক্তি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন।তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কি করবেন?তিন হয়তো বলবেন, জানি না।অর্থাৎ বোঝা গেল এই ব্যক্তি যিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন এক্ষেত্রে তার কোন উদ্দেশ্য নেই।আবার ধরুন একজন ব্যক্তি হাটতে হাটতে একটা রাস্তার মোড়ে এসে দাড়ালেন।এমন সময় তার পাশ কেটে যাওয়া একজন পথিককে তিনি জিজ্ঞেস করলেন এই রাস্তা কোথায় গিয়েছে, ভাই?পথিক জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোথায় যাবেন?তখন ঐ ব্যক্তি বললেন, আমি জানি না।পথিক তখন বলবেন আপনি যেকোন স্থানেই যান, কোন সমস্যা হবে না।এখানে লোকটার কোন উদ্দেশ্য নেই। তার কাজ এখানে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করে না কারন তার কোন গন্তব্য নেই।আবার ধরুন,একজন বিল্ডার একটা বিল্ডিং করবেন আর সেজন্য মাটিতে গর্ত করছেন।এখন একজন এসে তাকে জিজ্ঞেস করলেন,এই বিল্ডিং কত তলা হবে, ভাই? বিল্ডার বললেন,জানা নেই।অর্থাৎ এখানে বিল্ডারের নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য নেই।
আবার ধরুন, একটা কুকুর সব সময় গাড়ি দেখলেই তাড়া করে।প্রতিবেশী এক লোক একদিন এই কুকুরের মালিককে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা আপনার কুকুরটা গাড়ি দেখলেই শুধু তাড়া করে ব্যপার কি?কুকুরের মালিক বললেন আমার কুকুরটা গাড়ি দেখলেই তাড়া করে এটা বড় কথা না, আমার চিন্তার ব্যাপার হলো সে গাড়ি ধরতে পারলে কি করবে? দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরাও এই কুকুরটার মতো কিংবা গন্তব্যহীন ঐ লোকটার মতো আমাদের এই জীবনটাকে পার করে দিচ্ছি।
আবার ধরুন আপনার কোন বন্ধুকে আপনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছো কেন?সে বলবে কারন আমার বাবা বলেছে। আপনি কোন ছাত্রকে যদি জিজ্ঞেস করেন, তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছো কেন?সে তখন বলবে কারন আমার বন্ধু এই বিষয়ে পড়ছে তাই।অর্থাৎ ছাত্রটা তার বন্ধুর উদ্দেশ্যকে না বুঝেই নকল করছে। আর এই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্রের মতোই আমরা অন্যকে নকল করার চেষ্টা করি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে না বুঝেই। এখন মূল আলোচনায় আসিঃ
আমাদের এই জীবনের মূল উদ্দেশ্য কি?
পৃথিবীতে এই যে আমাদের অস্তিত্ব এটার উদ্দেশ্যটা কি? আপনার কি মনে হয় আপনি কিংবা আপনার পরিচিত কেউ এই প্রশ্নটার সঠিক উত্তর দিতে পারবেন?উত্তর হবে না।তাহলে কি আলবার্ট আইন্সটাইন কিংবা হুমায়ুন আহমেদ এর উত্তর দিতে পারবেন? অবশ্যই এরও উত্তর হবে না।তাহলে কি দার্শনিকগন এর সঠিক উত্তর দিতে পারবেন?এরও উত্তর হবে না। জীবনের উদ্দেশ্য কি তার উত্তর দিতে পারবেন কেবল তিনিই, যিনি জীবন নামক বস্তুটাকে সৃষ্টি করেছেন।আর তিনি হলেন আমাদের স্রষ্টা সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আ'লামিন।
সূরা আল-জারিয়াত, আয়াত ৫৬ তে উল্লেখ আছেঃ
জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে।
এখানে ইবাদাত বলতে,গোলামী করা কিংবা উপাসনা করা কিংবা মহান স্রষ্টার বিধি-নিষেধ মেনে চলা।সর্বোত্তম প্রভু মহান আল্লাহ্ বলেছেন,পাঁচটি স্তম্ভ মেনে চলতে হবে।তাওহীদ, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত।এই কাজগুলোর যে কোনটি যদি আপনি করে থাকেন তাহলে আপনি আল্লাহর ইবাদাত করছেন।যদি চুরি, প্রতারনা, মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকেন তবে আপনি আল্লাহর ইবাদত করছেন। এক কথায় আপনি যদি নিজের ইচ্ছা আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলেন তবে আপনি আল্লাহর ইবাদত করছেন। আর মানুষের সব কাজকেই ইবাদাতের ক্যাটাগরিতে রাখা যায় যদি তিনি দুটো শর্ত মেনে চলেন।
১। আমরা যে কাজগুলো করবো তা কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।
২। আর যে কাজটা করবেন তা হলো সুন্নাত অনুযায়ী যেভাবে আমাদের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবী হযরত মুহ'ম্মদ (সঃ) করে গেছেন।
যদি এই শর্ত অনুযায়ী কাজ করেন তবে আপনার সব কাজকেই ইবাদত বলে গন্য করা হবে।
যখন আপনি কোন যন্ত্রপাতি কিনেন সেটার সাথে দেখবেন একটা ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়াল দেয়া থাকে।আর মানুষকে যদি আপনি একটা ম্যাশিন ভাবেন তাহলে আপনিও মানবেন মানুষ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল মেশিন।আপনার কি মনে হয় না যে এই ম্যাশিনেরও একটা ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়েলের প্রয়োজন আছে?আর মানবজাতির জন্য সর্বশেষ ও চূড়ান্ত ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়াল হচ্ছে আল-কোরআন।
ইসলামের ডায়েরী থেকে বলছি_৩(প্রথম ভাগ)।
মাহমুদুর রহমান।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০০