মহান সৃষ্টিকর্তা কেন চান আমরা তার ইবাদত করি?
কেন তাকে আল্লাহু আকবার বলতে হবে, কেন সুবাহা'ন আল্লাহ বলতে হবে?
মহান আল্লাহর প্রশংসা না করলে কি চলবে না?
সূরা ফাতির আয়াত ১৫তে উল্লেখ আছেঃ
হে মানুষজাতি তোমরা তো আল্লাহ্ তা'লার মুখাপেক্ষী, তিনি সকল অভাবমুক্ত, সকল প্রশংসা তার।
আল্লাহ্ তা'লা আমাদেরকে তার প্রশংসা করতে বলেন এটা কিন্তু আল্লাহ তা'লার উপকারের জন্য নয়। এতে উপকারটা আমাদেরই।আমরা যখন বলি আল্লাহু আকবার এতে কিন্তু তার কিছু যায় আসে না। কারন তিনি এমনিতেই সর্বশক্তিমান। তবে আল্লাহ্ চান আমরা তার প্রশংসা করি কারন তিনি মানুষের সাইকোলোজিটা জানেন।আমরা যখন বিখ্যাত জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিদের প্রশংসা করি তখন স্বাভাবিকভাবেই আমরা তাদের উপদেশগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি। যেমন ধরুন আপনি একটা ১০০ তলা বিল্ডিং তৈরি করবেন।এখন আপনি কি একজন রাজমিস্ত্রির কাছ থেকে পরামর্শ নিবেন নাকি যিনি পৃথিবীর সেরা একজন বিল্ডার তার? উত্তর হবে পৃথিবীর সেরা বিল্ডারের।কারন তিনি একজন গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব। একইভাবে মহান আল্লাহ্ চান আমরা যেন তার প্রশংসা করি কারন তিনি সবচেয়ে মহান।তিনি সবকিছু জানেন, তিনি মহান জ্ঞানী। একইভাবে আমরা যখন জানি তিনি জ্ঞানী তখন তার সবগুলো কথা মেনে চলার চেষ্টা করি। যদি আমরা না মানি তিনি সবচেয়ে জ্ঞানী, সব কিছুর খবর রাখেন, সব কিছু জানেন তাহলে তার কথাগুলো মেনে চলার সম্ভাবনা কম।তাই আল্লাহ্ চান আমরা তার প্রশংসা করি।এতে আমাদেরই উপকার হচ্ছে। তাই আল্লাহ্ বলেন,
হে মানুষজাতি তোমরা তো আল্লাহ্ তা'লার মুখাপেক্ষী, তিনি সকল অভাবমুক্ত, সকল প্রশংসা তার।
মনে করেন,এক দম্পতি একটা সন্তান জন্ম দিলো।তারপর সেই সন্তানকে খুব যত্ন করে বড় করলো।এখন সন্তান প্রাপ্ত বয়স্ক।সে ভালো একটা কম্পানিতে চাকুরী করে কিন্তু তার বাবা মায়ের খোজ খবর রাখে না।এমন সন্তানকে আপনি কি বলবেন?
নিঃসন্দেহে অমানুষ, অসভ্য,অকৃতজ্ঞ ইত্যাদি।আপনি মানবেন যদি আপনার বাবা-মা আপনাকে বড় করে যাবতীয় সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে কিন্তু বড় হয়ে আপনি তাদের খোজ খবর না রাখেন তাহলে আপনি অমানুষের চেয়ে কম কিসের?যদি এই কথাটা মেনে নেন তাহলে সে সকল মানুষদেরকে আপনি কি বলবেন যারা স্রষ্টার প্রতি অকৃতজ্ঞ?মহান আল্লাহ্ তা'লা তো শুধু আমাদেরকেই সৃষ্টি করেন নি বরং আমাদের পিতা-মাতাদেরকেও।আপনার কি মনে হয় না মহান আল্লাহকেও আমাদের উচিৎ কৃতজ্ঞতা জানানো? আমাদের কি তার প্রতি অনুগত থাকা উচিৎ না?
অথচ, আমাদের মধ্যে কত জন্য মহান আল্লাহকে তার মহানুভবতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানায়? মহান আল্লাহ্ আমাদের জীবন দান করেছেন, দান করেছেন এই পৃথিবীর সমগ্র নিয়ামত। একবার চিন্তা করুন আমরা যদি কয়েকদিন পানি না পান করি তবে আমরা মারা যাবো।আমাদের মধ্য কতজন এই পানির জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়?আপনি জানান? এছাড়াও আছে বাতাস।বাতাসের কথা একবার ভাবুন যা না থাকলে আমরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যেতাম আর এই বাতাসের জন্য আমরা কি মহান আল্লাহকে কৃতজ্ঞতা জানাই?
সুরা ইব্রাহীন আয়াত ৩৪ এর মধ্যে মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
তোমরা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ গননা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না আর মানুষ অবশই অতিমাত্রায় জালিম ও অকৃতজ্ঞ।
সুরা আদিয়াতে ৬-৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেন,
মানুষ অবশ্যই তার প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ এবং নিশ্চয়ই সে নিজেই এর ওপর সাক্ষী।
ধরুন একজন ব্যক্তি যিনি বিনামূল্যে খাদ্য দান করছেন।এখন একজন অসহায় যদি তার থেকে খাদ্য না নেয় এতে যে ব্যক্তি বিনামূল্যে খাদ্য দান করছেন তার কিছু যাবে আসবে না।ক্ষতিটা হবে কিন্তু সেই ব্যক্তির যিনি খাদ্য নেয়া থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।কিন্তু সেই
অসহায় ব্যক্তি যদি খাদ্য নিতেন তাহলে কিন্তু যিনি খাদ্য ফ্রিতে দান করছেন তিনি বেশ খুশী হতেন।মহান আল্লাহ্ তা'লার দয়া পৃথিবীর সব দয়া থেকেও অনেক উপরে। বলা হচ্ছে তিনি রিজিক দান করেন। যখন কেউ আল্লাহর ইবাদত করেন মহান আল্লাহ্ তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন।মহান আল্লাহ্ তা'লার প্রশংসা করলে উপকার হবে মানুষের, উপকার হবে সকল সৃষ্টির।
এখন যদি আপনি নিজেকে অপরাধী মনে করেন তাহলেও আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন।পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ্ অনেকবার একথা বলেছেন,
ওয়াল্লাহু গফুরুর রহী'ম।
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ন এবং পরম দয়ালু।
আর যখন আপনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন তিনি সন্তুষ্ট হবেন।
তবে সূরা নিসায় উল্লেখ আছে
যদি আল্লাহ্ চান তিনি যেকোন গুনাহ ক্ষমা করতে পারেন তবে তার সাথে শিরক বা শরীক করা কিংবা তার সমকক্ষ মানে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করবেন না।
অর্থাৎ যদি কেউ শিরক করে সেটাই সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ। আপনি যদি মুশরিক অবস্থায় মারা যান; মরার আগে যদি অনুতপ্ত না হন; যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা না চান মহান আল্লাহ্ কখনওই ক্ষমা করবেন না আপনাকে।
ইসলামের ডায়েরী থেকে বলছি-৩(দ্বিতীয় ভাগ)
মাহমুদুর রহমান।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৬