somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই পড়া নিয়ে কিছু ভাবনা

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কালারপোল স্কুলে যখন পড়তাম তখন বই পড়ার খুব শখ ছিল। স্কুলে লাইব্রেরি বলতে দুই আলমারি বই। নির্দিষ্ট কোন লাইব্রেরিয়ান ও ছিল না। একজন স্যার এর কাছে ছিল আলমারির চাবি। প্রতি বৃহস্পতিবারে ক্লাস শেষে স্যার আমাদের বই দিতেন। একজন একটা করে বই নিতে পারত। প্রতি সপ্তাহে একটা বইয়ে আমার পোষাতো না। আমি স্যারের হয়ে সবাই কে বই দিতাম। রেজিষ্টার খাতায় নাম লিখে রাখতাম।কেউ বই জমা দিলে নাম কেটে রাখতাম। এসব কাজের বিনিময়ে আমি মাঝে মাঝে দুইটা বই নেয়ার সুযোগ পেতাম। বাসায় এসেই ভাত খেতে খেতেই শুরু করে দিতাম গল্পের বই পড়া। সময় ছিল সীমিত। সন্ধ্যা হলেই বসতে হত পড়ার বই নিয়ে। বিকেল বেলায় চলে যেতাম মাদরাসার সামনে । কর্ণফুলীর তীরে মাদরাসার সিড়িতে বসে বসে হারিয়ে যেতাম জুল ভারন, ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস, জাফর ইকবাল বা তিন গোয়েন্দার জগতে। ছোট মামার বেশ ভালই বইয়ের সংগ্রহ ছিল। সেখানে ছিল আমার পড়ার উপযোগি এবং অনুপযোগী অনেক বই। মামা ডেইরি ঘরে দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকত, বই পড়ত। আমরা বেশ কিচ্ছুক্ষণ অনুনয় করার পরে হয়ত ঢুকতে পারতাম। ঘেঁটেঘুটে বের করতাম আমার পড়ার উপযোগি কোন বই। হুট করে মাসুদ রানা কিংবা সেবা রোমান্টিক কোন বই হাতে উঠে আসলে মামা মুচকই হেসে বলত , এই বই পড়ে তুমি মজা পাবে না। আমিও বুঝে নিতাম, এটা আপাতত আমার পড়ার উপযোগি না। পরে অবশ্য সেসব বই ও আমি পড়েছি। একটা সময় ছোট মামার বিশাল সংগ্রহের একচ্ছত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এসে পড়ে আমার হাতে। আমার বইয়ের আরেকটা উৎস ছিল নানুভাইয়ের সুতার ফ্যাক্টরি। সুতার ভেতরের কাগজের নালি বানানোর জন্য ফ্যাক্টরিতে প্রচুর কাগজ কেনা হত। শ শ কেজি। নতুন কাগজের লট আসলেই আমি ছুটে যেতাম ফ্যাক্টরিতে। সেখানে সেবা প্রকাশনির কত বই যে পেয়েছি তাঁর ইয়ত্তা নেই। শখানেক কেজি থেকে আমি কেজি দুয়েক তুলে নিলে কোন সমস্যাই হত না। একটা সমস্যা অবশ্য ছিল। অনেক বইয়েরই প্রথমদিকের পাতা বা শেষের দিকের পাতা থাকত না। তাই অনেক কাহিনিরই শুরু বা শেষটা অজানা রয়ে যেত। তবু পড়তে ভাল লাগত। এখন ভাবি, তখন হয়ত বই পড়া ছাড়া কোন অপশন ছিল না বলেই বইগুলো পড়া হয়েছিল। সব ধরনের বই পড়া হত। অন্তন চেকভের কাশ্তানকা থেকে শুরু করে কাশেম বিন আবু বকরের ফুটন্ত গোলাপ, সেবা রোমান্টিক , গোলাম মোস্তফার বিশ্বনবী কিংবা চট্টগ্রামে বৌদ্ধজাতির ইতিহাস – সব।
কেউ যদি এখন আমায় জিজ্ঞেস করে যে ছোট বেলার কোন অভ্যাসটিকে আমি মিস করি , তবে সেটা নিঃসন্দেহে বই পড়া। সব ধরনের বই পড়া। ফেসবুক, ইউটিউব , মুভি এসব দেখে এখন হয়ত সময় কাটে। কিন্তু বই পড়ে সে চিন্তার খোরাক পাওয়া যেত সেটা এসবে পাওয়া যায় না। আজ জানলাম বিশ্ব বই দিবস বলে নাকি একটা দিবস আছে। আমার জন্য সেই সময় টাতে প্রতিটা দিনই ছিল বই দিবস। দুপুরে ভাত খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে বই, রাতে বিটিভির নাটকের বিজ্ঞাপন বিরতিতে বই সব কিছুতেই ছিল আমার বই। গল্পের বই । নানা রকম বই। আমি যদি আজ দুকলম লিখতে পারি , একটু খানি মুক্ত চিন্তা করতে পারি, ন্যায় অন্যায় কে আলাদা করতে পারি তবে সেটার পুরো কৃতিত্ব আমার পড়া বিভিন্ন বইয়ের। ভাল মন্দ সব রকম বইয়ের। তাই আমার মনে হয় আমরা যদি আমাদের সমাজে কিছুটা ভাল পরিবর্তন আনতে চাই তবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শুধু বই পড়তে দেয়া উচিত। টেকনলজির ব্যবহার আমরা আগে পরে শিখে নিতে পারব। কিন্তু যেই সময়টাতে বই পড়া উচিত তখন অন্য কিছু করলে পরে হয়ত আর সেই বইগুলো পড়া হয়ে উঠবে না
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:৩৯
১৫টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×