somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা মানুষ সারাদিন কতটুকু পানি খাবে ??

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




শত ব্যস্ততার মাঝেও অনেকে দৈনিক আট গ্লাস পানি পানের অভ্যাস ধরে রাখেন। মানুষের মাঝে এ ধারণা পোক্ত হয়ে গেছে দৈনিক আট গ্লাস পানি পান করলে তা দেহ থেকে টক্সিন (বিষ) তাড়ায়, চামড়ার আর্দ্রতা রক্ষা করে, হজম শক্তি বাড়ায়। এক কথায়, স্বাস্থ্যের প্রভূত উপকার করে। কিন্তু সত্যিই কি একজন মানুষকে দৈনিক আট গ্লাস পানি গিলতে হবে? বিজ্ঞান বলছে, এভাবে রুটিন করে দৈনিক আট গ্লাস পানি গেলার দরকারই নেই।

অবশ্য দৈনিক আট গ্লাস পানি পানের ধারণাটি প্রায় দুশো বছরের পুরনো। দৈনিক আট গ্লাস পানি পানের তত্ত্বটির কথা অনেক ডাক্তারও প্রেসক্রাইব করেন। তাদের বলয়ে এটা এইট ইন্টু এইট থিউরি নামে পরিচিত। এটার ব্যাখ্যা হল, সুস্থ থাকতে হলে একজন মানুষকে দৈনিক(এইট ইন্টু এইট) বা ৬৪ আউন্স পানি পান করতে হবে।

বিজ্ঞান এখন জোর গলায় দাবি করেছে, এইট ইন্টু এইট থিউরির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল ‘জার্নাল অব দ্য আমেরিকান সোসাইটি নেফ্রোলজি’ জোর দিয়ে বলেছে, ‘দৈনিক আট গ্লাস পানি পানের উপকারিতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাড়তি পানি অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। দৈনিক আট গ্লাস পানি পানের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা নিয়ে যেসব কথা চালু রয়েছে, ওগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এইট ইন্টু এইট থিউরি একটি সায়েন্টিফিক মিথ ছাড়া কিছু নয়।’

বিজ্ঞানী ড্যান নিগুয়ানো ও স্ট্যানলি গোল্ডফার্ব লিখেছেন, ‘জাস্ট অ্যা ওয়াটার’ বা ‘বেশি করে পানি খাও’ স্লোগানটি স্বাস্থ্য সচেতন যে কোনো মানুষকে পানি খেতে উৎসাহ দেয়। কিন্তু বাড়তি পানি কিভাবে কিডনির ফাংশনসহ অন্যান্য প্যাথলজিক্যাল ভ্যারিয়েবলসে ভূমিকা রাখে, তার বুদ্ধিগ্রাহ্য কোনো প্রমাণ নেই। দৈনিক আট গ্লাস পানি পান করলেই তা দেহ থেকে ঘামের আকারে টক্সিন বের করে দেয়-এ ধারণার প্রমাণ কেউ দিতে পারবেন কি? উষ্ণ ও শুষ্ক পরিবেশে দেহে পানির চাহিদা বাড়ে। যারা প্রচণ্ড কায়িক পরিশ্রম করেন, তাদের দেহেও পানির বাড়তি চাহিদা থাকবে। কয়েকটি রোগের ক্ষেত্রেও এ চাহিদা বাস্তব।’

কিন্তু একজন সুস্থ মানুষকে কেন বাড়তি পানি পান করতে হবে। তারা বলেছেন, কিডনি দেহ থেকে নানা পন্থায় টক্সিন তাড়ায়। এগুলির মধ্যে গ্লুমেরুলার ফিলট্রেশন, টিউবুলার সিক্রেশনসহ নানা ধরনের বিপাকীয় প্রক্রিয়া অন্যতম। পানিকে যদি দেহ থেকে বিষ তাড়াতেই হয় তাহলে বাড়তি পানিকে অবশ্যই কিডনির এ জটিল নিঃসরণ প্রক্রিয়া বা মেকানিজমের মাধ্যমেই অগ্রসর হতে হবে। অথচ বাড়তি পানি কিডনির জিএফআর-কে (গ্লুমেরুলার ফিলট্রেশন রেট) প্রভাবিত করে। সোজা কথায়, বাড়তি পানি কিডনির জিএফআরকে কমিয়ে দেয়।’

১৭৯৬ সালে এইট ইন্টু এইট থিউরি চালু হয়। জার্মানির ড. ক্রিস্টোফ উইলহেম হাফল্যান্ড তার ‘ম্যাক্রোবায়োটিক’ গ্রন্থে এ তত্ত্ব দেন। বইটির ভূমিকায় বলা হয়েছে, ‘প্রুশিয়ার রাজার একজন জেনারেল দৈনিক সাত থেকে আট গ্লাস পানি খেতেন। এ কারণে তিনি ৮০ বছর বয়সেও একজন যুবকের চেয়েও প্রাণবন্ত ছিলেন।’

বইটি ১৮৪৩ সালে ইংরেজিতে অনূদিত হয়। উনবিংশ শতকে হাইড্রোথেরাপির প্রচলন বেড়ে যাওয়ায় ইউরোপ জুড়ে দৈনিক আট গ্লাস পানি পানের হুজুক সৃষ্টি হয়। হুজুকটা পরে পুরো পৃথিবী অধিকার করে নেয়। মজার ব্যাপার হল, কোনো বিজ্ঞানী এ তত্ত্বটি চালু করেছেন বলে প্রমাণ নেই।

অথচ দৈনিক আট গ্লাস পানি পানের তত্ত্বটি এই গ্রহবাসীর মেধা-মননে এতোটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, তারা এখন সব সময় সাথে পানির বোতল রাখার চেষ্টা করে। যে কেনো জায়গা এবং যে কোনো সময় তারা নির্দ্বিধায় পানি পান করে- দেহে চাহিদা থাকুক আর নাই থাকুক।

মেরিকার কিডনি স্পেশালিস্ট হেইনজ ভেলটিন তার এক গবেষণাপত্রে লিখেছেন ‘সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষও শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিয়েছে ‘সঙ্গে পানির বোতল রেখো। ক্লাসে বসেও পানি পানে বাধা নেই।’ তিনি মন্তব্য করেন ‘এটা বিশ্বা

স করা খুবই কঠিন যে বিবর্তন প্রক্রিয়া মানবদেহে অব্যাহত পানি-ঘাটতি সৃষ্টি করে রেখেছে, যার কারণে বাধ্যতামূলকভাবে মানুষকে তরল পদার্থ গিলতেই হবে’।

তিনি লিখেছেন ‘দৈনিক কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পানের ধারণাটির পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং বিশে¡র বিভিন্ন দেশের প্রবীণরা দৈনিক কি পরিমাণ পানি খাচ্ছেন, তা নিয়ে পরিচালিত একাধিক জরিপ পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানিই খাচ্ছেন।’

মার্কিন এই কিডনি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে একটু বেশি পানি পানের পরামর্শ দেয় হয়। যেমন কিডনিতে পাথর জমলে, বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যধিক পরিশ্রমের কাজ করলে, বিমানে দূর পাল্লার সফরে গেলে অথবা বেশি গরম অনুভূত হলে বেশি পানি পানের পরামর্শ দেয়া হয়। অথচ এসব ব্যতিক্রমের বাইরে আমরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি খাচ্ছি’।

তিনি বলেন, কারো কিডনি অতিরিক্ত পানি নিঃসরণ করতে না পারলে তার দেহে পানি-বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এই জাতীয় সমস্যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে অজানা কিছু নয়। বরং পানি বিষ-ক্রিয়ার কারণে ক্রীড়াবিদদের মানসিক বৈকল্য, এমনকি মৃত্যুর ঘটনারও প্রমাণ রয়েছে।’

তিনি তার গবেষণা পত্রে দেহের স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় বেশি পানি পানের কারণে সৃষ্ট চারটি অসুবিধার কথা উল্লেখ করেছেন। ক. দীর্ঘদিনের অভ্যাসে এটা দেহে পানি-দূষণ ঘটাতে পারে। খ. বার বার প্রশ্রাবের বেগ চাপে যা অশোভন ও প্রশ্ন সৃষ্টি করতে পারে। ঘ. দৈনিক আট গ্লস পানি না করতে পারলে মনে অস্বস্তি জাগে।

মানুষ পানির পাশাপাশি কফি, চা, দুধ, জুস, সফট ড্রিংকস, বিয়ার ও ফলমুল খায়। এগুলোও দেহের জন্য তরল পদার্থ। আবার মানুষের খাবারের মাঝেও পানির অংশ কম নয়। ডেলটিন তার গবেষণাপত্রে আক্ষেপ করে লিখেছেন ‘সমস্যা হচ্ছে পানি পানের সুপারিশটি এখন বিশ¡জনীন হয়ে গেছে। অথচ আমি মানুষকে সতর্ক করে বলতে চাইছি, সাধারণ পানিও দেহের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে; এমনকি মারাত্মকও।’

তিনি তার গবেষণায় হাইপোনেট্রিমেনিয়া বা পানি-বিষক্রিয়ার একাধিক মেডিক্যাল রেফারেন্স দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৬ বছরের একজন বালিকা, যিনি জীবনে প্রথম বার Ecstasy নামের ড্রাগ নিয়েছেন। এই ড্রাগ দেহে পানির তীব্র তৃষ্ণার অনুভূতি জাগায়।

ভেলটিনের মতে, স্বাভাবিক অবস্থায় এন্টিডিউরেটিক হরমোনের (এডিএইচ) নিঃসরণ হয়ে অথবা তৃষ্ণার অনুভূতি জেগে মানবদেহে প্রাকৃতিক নিয়মে পানির ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। এ কারণে মানবদেহে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দেখা দেয়ার বহু আগেই তৃষ্ণার অনুভূতি জাগে।

ডক্টর ভেলটিন আমেরিকার নিউ হ্যামশায়ারের ডার্টমাউথ মেডিক্যল স্কুলের ফিজিওলজি বিভাগের কিডনি বিশেষজ্ঞ। তিনি তার গবেষণার সিদ্ধান্তে লিখেছেন ‘আমরা সম্ভবত এখন বেশি পানি খাচ্ছি এবং তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি।’

বেশি করে পানি খান, সুস্থ থাকুন :)
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×