somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ঃ মুরগীর ফার্মঃ আমার কিছু কথা

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আমি যখন চোখ বুঁজে একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তী হলাম তার পেছনে একটাই কারন ছিল- বিশ্ববিদ্যালয়টির নামের সাথে উদারনৈতিক শব্দটার সংযুক্তি। আমি কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তী হবার জন্য অপেক্ষা করে থাকিনি (কারন আমার এর আগে অনেক সময় কেটে গেছে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়েই)। বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটা আমি ব্যাপক অর্থে নিয়েছি। কিন্তু পড়তে এসে বুঝতে পেরেছি এ শুধু চাকর তৈরীর প্রতিষ্ঠান মাত্র। অথবা বলতে পারি “কোচিং সেন্টার”।

জ্ঞান, বোধ, চেতনারা কোন গন্ডী মানে না, কোন প্রতিষ্ঠানের কাঁটাতারে বন্দী থাকে না। পৃথিবীর বেশীর ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু চাকর উৎপাদন করে। আমি নিজেও এই কারখানার কাঁচামাল। যদিও আমি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার তোয়াক্কা করি না! কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার অনেক অনেক স্বপ্ন ছিল।



এবার আমি যে প্রতিষ্ঠানে পড়ি (!) সেটা নিয়ে কিছু কথা বলছি।

কিছুদিন আগে একটা অনলাইন জরিপে আমার মতামত জানিয়েছলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে। কিন্তু আমি জানি আমার মতামত চাপা পড়ে থাকবে হাজারটা মতের ভীড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টার ডাকনাম ইউল্যাব। আমি মিথ্যা না বলার চেষ্টা করি সবসময়। ভার্সিটির দারোয়ানের সাথে যে আচরন করি একই আচরন করি শিক্ষকদের সাথে। সকল পরিচিতদের সাথে সমান ভাবে কথাবলি, বেশীরভাগ সময় একা একা থাকি, বই পড়ি (যদিও আমি চরম আড্ডাবাজ!)। ক্লাশে আমি কারো জন্য পাশের চেয়ারটি সংরক্ষন করিনা, আমার জন্যও কেউ করেনা। যে কারো পাশে বসে সমান আনন্দ পাই।

ইউল্যাবে এসে আমি কয়েকজন মহান মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। তারা শিক্ষক হিসেবে অসাধারন, মানুষ হিসেবেও। তাদের সাথে আমার পরিচয় আমার জীবনের সুন্দর অর্জনগুলির একটি। পাঠ্য বিষয়ের বাইরে তাদের কাছে যা কিছু পেয়েছি (তাদের আচরনে, চিন্তায়, স্নেহে, সততায়, প্রেমে, জ্ঞানে...) তা আমার ভার্সিটি জীবনে প্রান এনে দিয়েছে। তাদের নাম উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করছিনা, তাদের অনেকে এখনো ইউল্যাব এ আছেন, অনেকে অন্য কোথাও চলে গেছেন।



সব শিক্ষক সমান নয়। কিছু কিছু শিক্ষক আছেন যারা শুধু পড়ে পড়ে পড়ে পড়ে জ্ঞানী হয়েছেন, তা তাদের আচরনেই বোঝা যায়। নতুন কিছু তারা গ্রহন করতে পারে না। সিলেবাসের বাইরে তারা ভিন্নভাবে ভাবেন না। তাদের প্রতিটি আচরন মাপা।

আমি ভাবি শিক্ষক হবেন সবথেকে কাছের, সবথেকে উদার, সবথেকে সুন্দর আর ভালো, তাহলেই ছাত্র ছাত্রীরা ভালো কিছু পাবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি দেখে শিক্ষক নিয়োগ করেন আমি জানি না। সার্টিফিকেট দেখে? চেহারা দেখে? কি দেখে?



আমি মনে করি শিক্ষক নিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। একজন শিক্ষকই পারেন একজন শিক্ষার্থীর জীবন পাল্টে দিতে। তাই, কর্তৃপক্ষের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে... এ বিষয়ে নজর দিন।



মুরগীর ফার্ম

প্রাইভেট ভার্সিটিকে অনেকে মুরগীর খামার বলে থাকেন!! সম্ভবত এক শারীরিক আয়তনের প্রেক্ষিতেই তারা এ ধরনের মন্তব্য করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা এরকম আরো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেগুলো আছে সেগুলো প্রাইভেট এর থেকে আয়তনে হাজার গুন বড়। তাদের শত শত শিক্ষক (তাদের কেউ আবার প্রাইভেটে পার্টটাইমার!), হাজার হাজার স্টুডেন্ট। বিশাল খোলামেলা পরিবেশ। তবুওতো পাবলিকের হাজার হাজার স্টুডেন্টদের মাঝে অতি অল্প ক’জন প্রকৃত শিক্ষিত হয়, কেউ কেউ হয় সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ খুনী! কার চারিত্রিক মানিবিক বৈশিষ্ট্য কেমন হবে তা কখনো কোন প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দিতে পারে না। পাবলিকে পড়ে যেমন সত্যিকারের “মানুষ” হওয়া যায়, প্রাইভেটে পড়েও “সত্যিকারের মানুষ” হওয়া যায়।

তবুও কেন “প্রাইভেট” মুরগীর খামার?

কারন, ভার্সিটি প্রশাসন। তারা হাজারটা অর্থহীন নীতিমালা তৈরী করে রেখেছে (সব প্রাইভেট এর কথা জানি না)।

আমি গান গাই। নিজেদের জন্যই গাই। আজ ভার্সিটির (ইউল্যাব) ক্যাম্পাস বি’র গ্যারেজে বসে গান গাচ্ছিলাম, সাথে ছিল এক ছোটভাই-বন্ধু।

হঠাৎ একজন সিকিউরিটির লোক এসে আমাকে বলল (গান থামিয়ে দিয়ে) এখনে গান গাওয়া যাবে না। আমি কষ্ট পেলাম। গান-ই তো গাচ্ছি! তাও গাওয়া যাবে না।

আমি বললাম কেন যাবেনা। গান গাওয়াটা কি অন্যায়?

তিনি বললেন সমস্যা আছে। ক্লাসের সমস্যা হবে।

(যদিও ক্লাশরুমে শব্দ পৌঁছনোর কোনই সম্ভাবনা নেই। ক্লাশ্রুম তিন তলায়, আমি গাইছিলাম গ্রাউন্ড ফ্লোরে!!)

আমি বললাম কি সমস্যা? কোন নীতিমালা আছে নাকি?

তিনি বললেন, দাড়ান, স্যারের সাথে কথা বলে আসি।

আমি বললাম চলেন আমও যাবো।

তারপর আমরা এডমিনের একজন অফিসারের কাছে গেলাম। তার কাছে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলাম। বললাম প্রয়োজন হলে প্রক্টর বা ভিসি স্যারের সাথেও কথা বলতে রাজি আছি।

এডমিন আমাকে বললেন আপনার আইডি কার্ড রেখে যান, আমি পড়ে জানিয়ে দিব কি কি আইন আছে!!

একথা শুনে আমিতো অবাক!! বলেন কি ভদ্রলোক!! রীতিমতো হুমকি!!

তারপর আমি যখন তাকে আরো ভালোভাবে অনুরোধ করলাম তখন এডমিনের কর্মকর্তা আমাকে লিখিত সংবিধান দেখালেন। সেখানকার একটা বাক্য মার্ক করে দিলেন “ক্যাম্পাস এ, পাঁচ তলার ক্যাফেটেরিয়ায় বাজনা হারাম, ক্যাম্পাস বি’র আন্ডার গ্রাউন্ডের খেলার কক্ষ ব্যাতিত অন্য কোথাও বাদ্য যন্ত্র বাজানো নিষেধ (তার মানে গানও নিষেধ!)”।

আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে হাসি মুখে চলে এলাম।

আমি আর ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট জায়গা ব্যাতিত গান করবো না এমনটি মানতে আমার খুব কষ্ট হয়! গান কি এমন খারাপ জিনিস?

আজ বিকেলে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে ইউল্যাব একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে (একেবারে সাদামাটা, মনে হচ্ছিল শোকসভা!)। আমি সেখানে আরো তিনজনের সাথে জাতীয় সংগীত গেয়েছি। কায়সার স্যার, মান্নান স্যার অসাধারন কিছু কথা বলেন। সবশেষে কথা বলতে আসেন ইউল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক ভি সি কাজী শাহেদ স্যার। তিনি প্রথমেই আক্ষেপ তার দুঃখ প্রকাশ করেন স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে এতো কম মানুষের উপস্থিতি দেখে। বিশাল অডিটরিয়ামের প্রায় অর্ধেকের বেশিই ফাঁকা!!! অথচ সাধারন অনুষ্ঠানে, নাচে গানে অডিটরিয়ামে মানুষের জায়গা হয় না! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যতো স্টুডেন্ট তার দশভাগের একভাগ যোগ দিলেও অডিটরিয়ামে জায়গা হতো না। আফসোস!!

শাহেদ স্যার চমৎকার কিছু কথা বলেন। আমি আগে থেকেই তার লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম, আজ তার কথা শুনে তাকে আমার ভীষন ভালোলেগে গেল। অনুষ্ঠানে তিনিই ছিলেন সবথেকে সিনিয়র। সবার সাথেই পারিবারিক একটা পরিবেশ বজায় রেখে, কোন ফর্মালিটির ধারের কাছে না গিয়ে অকপট ভাবে কথা বলে গেলেন। তিনি বললেন, পড়াশুনা করতে করতে যারা অস্থির তারা কখনো বদলায় না, তাদের মাঝে কোন নতুন কিছু স্থান পায় না। তার অর্থ হুক্কুর পাইর‍্যা পড়লে কিচ্ছু লাভ নাই। ফার্স্ট হওয়াটা বড় অর্জন নয়। পড়ালেখার পাশাপাশি অনেক কিছু করতে হয়। জীবনকে যাপন করতে হয় নানা ভাবে।

শাহেদ স্যার, আপনি দেখে যান, আপনার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র গান গাইলে তাকে আইন দেখানো হয়, হুমকি দেওয়া হয় ভদ্রভাবে। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ভালো মানুষ শিক্ষক রয়েছেন তারা হয়তো এসব কিছুই জানেন না, জানার সুযোগ পান না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্টরা কবিতা করবে, গান করবে, উৎফুল্ল থাকবে, স্বাধীনতার সুখ পাবে, মাথা উঁচু কবে বাঁচতে শিখবে। তা কি পারছে??????

এজন্যই মানুষ একে মুরগীর খামার বলে। আমিও বুঝলাম তারা খব একটা ভুল বলে না। প্রাইভেট ভার্সিটি ফার্মের মুরগী উৎপাদন করার ব্রত নিয়েছে।

আমি এমন বিদ্যালয় চাই না। এর থেকে আমার গ্রামের ভাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় কোটি কোটি গুন ভালো ছিল, কোটি গুন লিবারেল ছিল। আমার হাইস্কুল ছিল আমার মহান বিশ্ববিদ্যালয়।

শ্রদ্ধেয় শাহেদ স্যার, এখনো সময় আছে। আপনার স্বপ্ন আপনি চাইলেই পূরন করতে পারবেন। আপনার প্রতি আমার ভালবাসা তুচ্ছ করে দেখবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটাকে সার্থক করুন...মহিমান্বিত করুন। মুরগীর খামারে আমাদের ভালো লাগেনা। আমাদের গাইবার অধিকার নিশ্চিত করতে হাত বাড়ান। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি, কোচিং সেন্টারে নয়।
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×