আমাদের বাসায় এক মহিলা ছিল আম্মাকে সাহায্য করত বিভিন্ন কাজে , ফজিলার মা । সমস্যা হল সে কানে কম শুনত ,কথা বলত জোরে । তারপরেও ভালই চলছিল সব কিছু তাকে নিয়ে ।
আমাদের প্রতিবেশী ছিলেন মানবদরদী , সাধারন মানুষের সাথে মিশে থাকা মনি সিংহ ।আমি ছোট ছিলাম ,ওনার গুরুত্ব ঠিক বুঝতাম না , তবে ওনার বিষয়ে আলাপ হলে জুড়ে দিতাম আমাদের সুন্দর দাদু মনি সিংহ ।
ছেলের বিয়েতে গেলেন , ফিরে এসে খাওয়ালেন আঙুর ।
আমাদের ওই বাসাতেই পদধূলি পড়েছে তাঁর সুযোগ্য সহধর্মিনী নির্মলা সিংহের ,খুব অমায়িক ছিলেন উনি । তবে দূর্ভাগ্য আমাদের যে সেখানে থাকতেই উনি মারা যান সম্ভবত: সড়ক দুর্ঘটনায় , একা রেখে যান বৃদ্ধ মনি সিংহকে ।
আম্মা প্রতিবেশী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের ফজিলার মাকে বুঝিয়ে রাজী করায় মনি সিংহের বাসায় কাজ করতে । ফজিলা বা তার বোন হাজেরা আমাদেরটা সামলাবে এমন কথা হল ।
কাজ শুরু করলো ফজিলার মা সেখানে ; তখন শুরু হল ফজিলার মায়ের চিৎকার চেঁচামেচি আম্মার সাথে প্রতিদিন একবার অন্তত: । তার অভিযোগ ,উনি কানে কম শোনেন ( নিজেরটা আর বলে না ), জোরে কথা বলতে হয় । কানে কম শোনেন দুজনেই ,তার প্রমান আমাদের কান দুটো ; ফজিলার মা বলছে চিৎকার করে , ভাত হয়ে গেছে , উনি অবশ্য তার থেকে একটু কম ভলিয়্যুমে বললেন ,ভাত হয়েছে ? আমরা উপর থেকে দুষ্টুমী করতাম যে আমরা কেন দুজনের কথা পৌছে দেই না দুজনের কাছে । কতবার দেখেছি আম্মাকে ফজিলার মাকে শান্ত করতে , মহিলা ভাল ছিল --আম্মার কথা শুনত বেশ । মনি সিংহের বাসার একটা শিলিং ফ্যান ছিল যেটা চালু করলে শব্দ হত বিকট , পাল্টাবার পয়সা উনার হিসেবে হয়তো ছিল না ।
তারপর কতদিন হয়ে গেল ,জ্বলজ্বলে আছে সে সব দিন । টুটুলের (ছেলে )সুন্দর মুখচ্ছবি বিয়ের ছবিতে ,পাশে বউ ; আমার বড়বোন বলল রুনা লায়লার মত দেখতে বউ ,আম্মা ভেবেছেন বউ যে টুটুলের মত ফর্সা না সেটা বুঝিয়েছেবড়'পা । বললেন আর কখনো কারো চেহারা নিয়ে কথা বলবে না ,বলার মত কিছু না থাকলে চুপ করে থাকবে ।
আপনারা জানেন হয়তো ,মনি সিংহ জমিদার পরিবারের ছেলে হয়ে সাধারন মানুষের কথা ভেবে নিজেদের জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন ।তার অমর মানবতাবোধের কাছে মাথা নত করি ।
( আজ তপন বাগচীর ---বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও কমরেড মণি সিংহ লেখাটি পড়ে এ সব মনে এল , এ লেখার ছবিতে দেখেছি কানে শোনার যন্ত্রের তার , মনে এল কত কি ,তাই লিখে ফেলা এ সব কথা ) ।