somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপিকা , অষ্টম পর্ব ।

০৪ ঠা জুন, ২০১০ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সপ্তম পর্ব Click This Link

একটা ঘোলাটে পরিস্থিতির আপাত: অবসান হয়েছে । দুই ভাইয়ের পরিবারে স্বস্থি নেমে এসেছে ।
সানোয়ার সাহেব অপেক্ষাকৃত লাভজনক একটা বিষয়কে সামাল দিতে পারছিলেন না । ছোট ভাই আনোয়ারের ক্লীন ইমেজ কাজে লাগাতে চান । তাই আনোয়ার যখন তার ফার্মের আটকে যাওয়া কাগজ পত্র পরিচিত সেক্রেটারী ড: জাহিদকে বলে ছাড়িয়ে দিতে রাজী হলেন তখন সানোয়ার সাহেব রাজী হলেন তার শর্ত মানতে । আনোয়ারের শর্ত ছিল তাদের দুই ভাইয়ের অন্তত: প্রথম সন্তানের বিয়ে এ বাড়ীতে হবে । তারপর ফ্ল্যাট করবার জন্য যা করা হয় হবে ।
রুমানা মাকে বোঝায় যত দেরীতে বিয়ে দেবে প্রথম সন্তানকে তত ভাল । বেশীদিন থাকা যাবে । রিমির অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট চাই । সে একটু অখুশী । রাকিব বলে আগে রিমিকে বিয়ে দিয়ে দিতে ছোট হলেও । তার পর ফ্ল্যাট উঠে যাবে সানোয়ার সাহেবের । রাকিব কটাক্ষ করে শোনায় রিমিকে , ' সানোয়ার সাহেব নৌকা , ধানশিস , দাড়ি পাল্লা কোন প্রতীক চেনেন না , টাকা মার্কায় ভোট পড়ে ওনার প্রতিবার । উনি সুবিধাবাদী তোষামোদি পার্টির এক নিষ্ঠ কর্মী । এবার সুবিধা না করতে পেরে ছোট ভাইয়ের শরনাপন্ন হয়েছে ।' ওর মা চোখ রাঙায় । রাকিব হাসে ।

লীনার ব্যস্ততা লেখা পড়ায় বাড়ছে দিনে দিনে । এর মধ্যে দীপুর জন্মদিন চলে আসলো । লীনা দীপুর কাছে জানতে চায় কি গিফট চায় সে । লীনা কয়েকবার জিজ্ঞেস করাতে জানায় লীনা শাড়ি পরে আসলে তার জন্য অনেক বড় গিফট পাওয়া হবে ।
শুভদিনে লীনা শাড়ি পরে ক্লাসে এসেছে , একসাথে চাইনীজে গিয়েছে । সারা দিন একসাথে ছিল ওরা সব ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা । বিকেলে বাড়ি ফিরেছে লীনা । সন্ধ্যায় এস এম এস পেলো , " সারাদিন তোমাকে অনেক ভাল লাগছিল দেখতে , কাছে ছিলে । এখন খারাপ লাগছে । কিছু ভাল লাগছে না " । দীপু লিখেছে । লীনার মনটাও উদাস হয়ে যায় । সতর্ক হয় সে । এমনি করে যখন তখন এস এম এস , কখন কে দেখে ফেলে ।
পরদিন ক্লাসে গিয়ে দীপুকে বলে , " এমন করে কেউ ? যদি অন্য কারো চোখে পড়ত !" দীপু বলে , " চেষ্টা করবো আর না করতে আমনি "।

এদিকে দীপুর জন্য ডলির আগ্রহে ভাটা পড়ে নি এখনও । ক্লাসের প্রায় সবাই লীনা দীপুর ব্যাপারটা জানে । ডলি জেনেও মেনে নিতে পারে না । ও দীপুর জন্য মরিয়া । নজরদারীটাও বেড়ে গেছে দীপুর উপর । সেই তার বড় বোনের বান্ধবী রুমানাকে জানায় , ' লীনা যে প্রেম করছে ক্লাসমেটের সাথে জানেন ? একসাথে চাইনীজে যাচ্ছে ।'
রুমানা তার চাচাতো বোন লীনাকে জানে , তার প্রেম করাতে ডলি কেন এতটা রিয়্যাক্ট করছে বুঝতে পারে না । জিজ্ঞেস করে , ' কার সাথে ? কেমন ছেলেটা ?'
ডলি দীপুকে বিশেষ ভাবে পছন্দ করে এবং তার চোখে দীপুর কোন তুলনা নেই । অথচ সেই ডলি বলে , ' কি জানি আজকের দিনের ছেলে পিলে , বাইরে থেকে কি আর বোঝা যায় । লীনা আপনার চাচাতো বোন , শুনেছি এক পরিবারে থাকেন । ভাবলাম সাবধান করে দেই । '

রুমানা বাসায় আসে দু:শ্চিন্তা নিয়ে । লীনাটা এত ভাল । ওকে যদি ঠকায় সেই ছেলে সবাই কষ্ট পাবে ওরা । রাতে মাকে কথাটা বলে যা শুনেছে যা ভেবেছে সে । মিসেস রেহানা ওকে শান্ত করেন বুঝিয়ে যে লীনা তেমন নির্বোধ নয় যে কারো ফাঁদে পা দেবে । ভিতরে ভিতরে নিজে অস্বস্থিতে ভোগেন । মেয়েটাকে যে তিনি ভাল বাসেন তার মায়ের মত । দুটো দিন খেয়াল করেন লীনাকে । কখন যে মেয়েটির চোখে মুখে এত রঙ লাগল উনি খেয়াল করেন নি । রুমানার কথা মিথ্যে নয় । ভালবাসলে মেয়েদের মধ্যে যে একটা ইত:স্তত ভাব চলে আসে সেটা দেখে মুগ্ধ হন । আবার সতর্ক হন । উনি লীনাকে শুধু ভালবাসেন তা নয় উনি লীনার চাচী । লীনা জানে এবং বিশ্বাস করে তার এই চাচী তাকে অন্তর দিয়ে ভালবাসেন , রুমানা রিমি তাকে হিংসা করে যে ভালবাসার কারনে সে মিথ্যে নয় ।

লীনাকে চাচী সময় দিতে বলেন । অফিসে ডেকে পাঠান একা । লীনা একটু বিস্মিত হয়েছিল প্রথমে । পৌছে যায় নির্ধারিত সময়ে । ছোটখাট আপ‌্যায়ন শেষে চাচী বলেন , ' আমি শুনেছি ক্লাসের একজন সহপাঠির সাথে তোর ভাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে যেটা আমার কান পর্যন্ত এসেছে তোর প্রেম পরিচয়ে । নট ব্যাড । হতেই পারে । লীনা , আমি আমার মেয়েদের থেকেও তোকে অন্য চোখে দেখি , সেটা তোর অজানা নয় । ছোটবেলায় আমার মা মারা গিয়েছেন অনেকবার মনে হয়েছে তুই আমার সেই মা । তুই বয়সে ছোট আমার কিন্তু তোর অনুভূতিপ্রবন এই মনটা অনেক দামী । চাই না কেউ সুযোগ নিক । আমার বিশ্বাস তুই যদি কোন ছেলেকে পছন্দ করে থাকিস সে আমাদের সবার পছন্দ হবে । তবু কিছু কথা বলবার ছিল । যদি মনে করিস আমার এসব বলা সাজে তাহলে বলবো ।'

লীনা ওর চাচীর দিকে চোখ তুলে তাকায় । বলে , ' বলো চাচী । তুমি যা বলবে আমি জানি সে আমার মঙ্গলের জন্য । বলো তুমি কি বলবে ।'

চাচী , ' তোকে আমি আমরা অনেক উঁচু একটা অবস্থানে দেখতে চাই । সব গুরুজনেরা তেমনটি চান । সেই সাথে আমি আরো চাই আমার নিজের জীবনে যা কিছু ব্যর্থতা ছিল বা আছে তোর মধ্যে সে সবের সফলতা । মেয়েদের অনেক লিমিটেশন , অনেক বাঁধা । আমাদের সমাজে শুধু নয় শুধু এদেশে নয় সর্বত্র সংসারে কি সমাজে মেয়েদের ছাড় দিতে হয় । একজন পুরুষ যখন তোর ভাই বাবা ছেলে চাচা বা মামা তখন তার ভূমিকা যতখানি ইতিবাচক দেখবি সেটা টেকে না যখন সে স্বামী । একজন পুরুষ যখন স্বামী হয় তখন সে স্ত্রী নামক প্রানীর কাছে তার পুরুষত্ব বজায় রাখতে দৃঢ় সংকল্প থাকে । দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া দেখবি বিয়ের পর মেয়েরা তাদের সংসারের সামন্জস্য বহাল রাখতে দুই পায়ের জায়গায় তিন পায়ে দৌড়ুচ্ছে । তোর চাচার কথা না হয় বাদ দিলাম , সে আমাকে কেন পৃথিবীর কোন মানুষকে তার সমতুল্য ভাবে না । তোর বাবা দেখেছিস কতখানি ভালবাসে তোর মাকে । ওদের দেখে সত্যি ভাল লাগে আমার । অথচ দেখ তোর মাকে কলেজের চাকরীতে যখন চিটাগং বদলী করা হোল সে সংসারে সুখ শান্তির জন্য বদলী ঠেকাতে না পেরে চাকরী ছাড়ল । সেটা কি কোন পুরুষ করে । অহরহ করছে মহিলারা । ঠিক আছে এতে যদি শান্তি মেলে । আমি চাই , তুই আগে নিজের জন্য একটা শক্ত অবস্থান তৈরী কর । সেটা তোর মায়ের জন্যেও প্রয়োজন । তিন বোনের মধ্যে তুই বড় । তোর দায়িত্ব আছে এ সংসারে । তোর বড় চাচার দাম্ভিক ভাব কতটা আহত করে তোর বাবা মাকে জানিস । ওদের জন্য আমার খারাপ লাগে । তোর পছন্দের ছেলেটি থাকল এক সময়ে আমরা তোর সাথে ওর বিয়ে দেব । তার আগে তুই নিজের ভবিষ্যৎকে গুছিয়ে নেয় । এসব কথা হয়তো এখন না বললে হত । বলে দিলাম , তুই ভাবতে থাকবি । আবেগ মানুষকে ভাসিয়ে অনেক সময় দিক্ হারা করে । সে ভাবনাও মনে আছে আমার । তোর বয়সটাও দেখতে হবে । '

লীনা অধোবদনে শুনে গেল সে । জানে চাচী তাকে হেয় করবার জন্য কিছু বলার চেষ্টা করেনি । তার ভাবনার উপযু্ক্ত খোরাক যুগিয়ে দেবার জন্য
এসব বলেছে ।
মিসেস রেহানা আরো কি সব ভেবে রেখেছিল বলবে বলে । মেয়েটাকে দেখে কেমন মায়া মায় লাগছে ।
বললেন , ' চল নিমার্কেট ঘুরে বাসায় যাই ছুটির পর । টেইলার্সে কাপড় আছে নেব । তোকে আইসক্রিম খাওয়াবো । কাপড় নিবি ? থ্রি পীস ?'
লীনা বলে , ' লাগবে না । বাসায় চল । '
লীনা বুঝতে পারে এমন সব কঠিন কথা ওকে বলে চাচীর মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে ।
এক সাথে বেরিয়ে আসে অফিস থেকে দুজনে । সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে মিসেস রেহানা লীনার কাঁধে ভর দিয়ে । লীনার মনে হয় তার কাঁধে অনেক দায়িত্ব । কিছু ভালবাসার কিছু সম্পর্কের কিছু টানাপোড়েনের ।

চলবে....

নবম ও দশম অধ্যায় Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৮
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×