সপ্তম পর্ব Click This Link
একটা ঘোলাটে পরিস্থিতির আপাত: অবসান হয়েছে । দুই ভাইয়ের পরিবারে স্বস্থি নেমে এসেছে ।
সানোয়ার সাহেব অপেক্ষাকৃত লাভজনক একটা বিষয়কে সামাল দিতে পারছিলেন না । ছোট ভাই আনোয়ারের ক্লীন ইমেজ কাজে লাগাতে চান । তাই আনোয়ার যখন তার ফার্মের আটকে যাওয়া কাগজ পত্র পরিচিত সেক্রেটারী ড: জাহিদকে বলে ছাড়িয়ে দিতে রাজী হলেন তখন সানোয়ার সাহেব রাজী হলেন তার শর্ত মানতে । আনোয়ারের শর্ত ছিল তাদের দুই ভাইয়ের অন্তত: প্রথম সন্তানের বিয়ে এ বাড়ীতে হবে । তারপর ফ্ল্যাট করবার জন্য যা করা হয় হবে ।
রুমানা মাকে বোঝায় যত দেরীতে বিয়ে দেবে প্রথম সন্তানকে তত ভাল । বেশীদিন থাকা যাবে । রিমির অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট চাই । সে একটু অখুশী । রাকিব বলে আগে রিমিকে বিয়ে দিয়ে দিতে ছোট হলেও । তার পর ফ্ল্যাট উঠে যাবে সানোয়ার সাহেবের । রাকিব কটাক্ষ করে শোনায় রিমিকে , ' সানোয়ার সাহেব নৌকা , ধানশিস , দাড়ি পাল্লা কোন প্রতীক চেনেন না , টাকা মার্কায় ভোট পড়ে ওনার প্রতিবার । উনি সুবিধাবাদী তোষামোদি পার্টির এক নিষ্ঠ কর্মী । এবার সুবিধা না করতে পেরে ছোট ভাইয়ের শরনাপন্ন হয়েছে ।' ওর মা চোখ রাঙায় । রাকিব হাসে ।
লীনার ব্যস্ততা লেখা পড়ায় বাড়ছে দিনে দিনে । এর মধ্যে দীপুর জন্মদিন চলে আসলো । লীনা দীপুর কাছে জানতে চায় কি গিফট চায় সে । লীনা কয়েকবার জিজ্ঞেস করাতে জানায় লীনা শাড়ি পরে আসলে তার জন্য অনেক বড় গিফট পাওয়া হবে ।
শুভদিনে লীনা শাড়ি পরে ক্লাসে এসেছে , একসাথে চাইনীজে গিয়েছে । সারা দিন একসাথে ছিল ওরা সব ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা । বিকেলে বাড়ি ফিরেছে লীনা । সন্ধ্যায় এস এম এস পেলো , " সারাদিন তোমাকে অনেক ভাল লাগছিল দেখতে , কাছে ছিলে । এখন খারাপ লাগছে । কিছু ভাল লাগছে না " । দীপু লিখেছে । লীনার মনটাও উদাস হয়ে যায় । সতর্ক হয় সে । এমনি করে যখন তখন এস এম এস , কখন কে দেখে ফেলে ।
পরদিন ক্লাসে গিয়ে দীপুকে বলে , " এমন করে কেউ ? যদি অন্য কারো চোখে পড়ত !" দীপু বলে , " চেষ্টা করবো আর না করতে আমনি "।
এদিকে দীপুর জন্য ডলির আগ্রহে ভাটা পড়ে নি এখনও । ক্লাসের প্রায় সবাই লীনা দীপুর ব্যাপারটা জানে । ডলি জেনেও মেনে নিতে পারে না । ও দীপুর জন্য মরিয়া । নজরদারীটাও বেড়ে গেছে দীপুর উপর । সেই তার বড় বোনের বান্ধবী রুমানাকে জানায় , ' লীনা যে প্রেম করছে ক্লাসমেটের সাথে জানেন ? একসাথে চাইনীজে যাচ্ছে ।'
রুমানা তার চাচাতো বোন লীনাকে জানে , তার প্রেম করাতে ডলি কেন এতটা রিয়্যাক্ট করছে বুঝতে পারে না । জিজ্ঞেস করে , ' কার সাথে ? কেমন ছেলেটা ?'
ডলি দীপুকে বিশেষ ভাবে পছন্দ করে এবং তার চোখে দীপুর কোন তুলনা নেই । অথচ সেই ডলি বলে , ' কি জানি আজকের দিনের ছেলে পিলে , বাইরে থেকে কি আর বোঝা যায় । লীনা আপনার চাচাতো বোন , শুনেছি এক পরিবারে থাকেন । ভাবলাম সাবধান করে দেই । '
রুমানা বাসায় আসে দু:শ্চিন্তা নিয়ে । লীনাটা এত ভাল । ওকে যদি ঠকায় সেই ছেলে সবাই কষ্ট পাবে ওরা । রাতে মাকে কথাটা বলে যা শুনেছে যা ভেবেছে সে । মিসেস রেহানা ওকে শান্ত করেন বুঝিয়ে যে লীনা তেমন নির্বোধ নয় যে কারো ফাঁদে পা দেবে । ভিতরে ভিতরে নিজে অস্বস্থিতে ভোগেন । মেয়েটাকে যে তিনি ভাল বাসেন তার মায়ের মত । দুটো দিন খেয়াল করেন লীনাকে । কখন যে মেয়েটির চোখে মুখে এত রঙ লাগল উনি খেয়াল করেন নি । রুমানার কথা মিথ্যে নয় । ভালবাসলে মেয়েদের মধ্যে যে একটা ইত:স্তত ভাব চলে আসে সেটা দেখে মুগ্ধ হন । আবার সতর্ক হন । উনি লীনাকে শুধু ভালবাসেন তা নয় উনি লীনার চাচী । লীনা জানে এবং বিশ্বাস করে তার এই চাচী তাকে অন্তর দিয়ে ভালবাসেন , রুমানা রিমি তাকে হিংসা করে যে ভালবাসার কারনে সে মিথ্যে নয় ।
লীনাকে চাচী সময় দিতে বলেন । অফিসে ডেকে পাঠান একা । লীনা একটু বিস্মিত হয়েছিল প্রথমে । পৌছে যায় নির্ধারিত সময়ে । ছোটখাট আপ্যায়ন শেষে চাচী বলেন , ' আমি শুনেছি ক্লাসের একজন সহপাঠির সাথে তোর ভাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে যেটা আমার কান পর্যন্ত এসেছে তোর প্রেম পরিচয়ে । নট ব্যাড । হতেই পারে । লীনা , আমি আমার মেয়েদের থেকেও তোকে অন্য চোখে দেখি , সেটা তোর অজানা নয় । ছোটবেলায় আমার মা মারা গিয়েছেন অনেকবার মনে হয়েছে তুই আমার সেই মা । তুই বয়সে ছোট আমার কিন্তু তোর অনুভূতিপ্রবন এই মনটা অনেক দামী । চাই না কেউ সুযোগ নিক । আমার বিশ্বাস তুই যদি কোন ছেলেকে পছন্দ করে থাকিস সে আমাদের সবার পছন্দ হবে । তবু কিছু কথা বলবার ছিল । যদি মনে করিস আমার এসব বলা সাজে তাহলে বলবো ।'
লীনা ওর চাচীর দিকে চোখ তুলে তাকায় । বলে , ' বলো চাচী । তুমি যা বলবে আমি জানি সে আমার মঙ্গলের জন্য । বলো তুমি কি বলবে ।'
চাচী , ' তোকে আমি আমরা অনেক উঁচু একটা অবস্থানে দেখতে চাই । সব গুরুজনেরা তেমনটি চান । সেই সাথে আমি আরো চাই আমার নিজের জীবনে যা কিছু ব্যর্থতা ছিল বা আছে তোর মধ্যে সে সবের সফলতা । মেয়েদের অনেক লিমিটেশন , অনেক বাঁধা । আমাদের সমাজে শুধু নয় শুধু এদেশে নয় সর্বত্র সংসারে কি সমাজে মেয়েদের ছাড় দিতে হয় । একজন পুরুষ যখন তোর ভাই বাবা ছেলে চাচা বা মামা তখন তার ভূমিকা যতখানি ইতিবাচক দেখবি সেটা টেকে না যখন সে স্বামী । একজন পুরুষ যখন স্বামী হয় তখন সে স্ত্রী নামক প্রানীর কাছে তার পুরুষত্ব বজায় রাখতে দৃঢ় সংকল্প থাকে । দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া দেখবি বিয়ের পর মেয়েরা তাদের সংসারের সামন্জস্য বহাল রাখতে দুই পায়ের জায়গায় তিন পায়ে দৌড়ুচ্ছে । তোর চাচার কথা না হয় বাদ দিলাম , সে আমাকে কেন পৃথিবীর কোন মানুষকে তার সমতুল্য ভাবে না । তোর বাবা দেখেছিস কতখানি ভালবাসে তোর মাকে । ওদের দেখে সত্যি ভাল লাগে আমার । অথচ দেখ তোর মাকে কলেজের চাকরীতে যখন চিটাগং বদলী করা হোল সে সংসারে সুখ শান্তির জন্য বদলী ঠেকাতে না পেরে চাকরী ছাড়ল । সেটা কি কোন পুরুষ করে । অহরহ করছে মহিলারা । ঠিক আছে এতে যদি শান্তি মেলে । আমি চাই , তুই আগে নিজের জন্য একটা শক্ত অবস্থান তৈরী কর । সেটা তোর মায়ের জন্যেও প্রয়োজন । তিন বোনের মধ্যে তুই বড় । তোর দায়িত্ব আছে এ সংসারে । তোর বড় চাচার দাম্ভিক ভাব কতটা আহত করে তোর বাবা মাকে জানিস । ওদের জন্য আমার খারাপ লাগে । তোর পছন্দের ছেলেটি থাকল এক সময়ে আমরা তোর সাথে ওর বিয়ে দেব । তার আগে তুই নিজের ভবিষ্যৎকে গুছিয়ে নেয় । এসব কথা হয়তো এখন না বললে হত । বলে দিলাম , তুই ভাবতে থাকবি । আবেগ মানুষকে ভাসিয়ে অনেক সময় দিক্ হারা করে । সে ভাবনাও মনে আছে আমার । তোর বয়সটাও দেখতে হবে । '
লীনা অধোবদনে শুনে গেল সে । জানে চাচী তাকে হেয় করবার জন্য কিছু বলার চেষ্টা করেনি । তার ভাবনার উপযু্ক্ত খোরাক যুগিয়ে দেবার জন্য
এসব বলেছে ।
মিসেস রেহানা আরো কি সব ভেবে রেখেছিল বলবে বলে । মেয়েটাকে দেখে কেমন মায়া মায় লাগছে ।
বললেন , ' চল নিমার্কেট ঘুরে বাসায় যাই ছুটির পর । টেইলার্সে কাপড় আছে নেব । তোকে আইসক্রিম খাওয়াবো । কাপড় নিবি ? থ্রি পীস ?'
লীনা বলে , ' লাগবে না । বাসায় চল । '
লীনা বুঝতে পারে এমন সব কঠিন কথা ওকে বলে চাচীর মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে ।
এক সাথে বেরিয়ে আসে অফিস থেকে দুজনে । সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে মিসেস রেহানা লীনার কাঁধে ভর দিয়ে । লীনার মনে হয় তার কাঁধে অনেক দায়িত্ব । কিছু ভালবাসার কিছু সম্পর্কের কিছু টানাপোড়েনের ।
চলবে....
নবম ও দশম অধ্যায় Click This Link