somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেয়া পাতায় নৌকা ভাসানোর দিনগুলো

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পিতল মাজা ঝকঝকে দুপুর গ্রামের এক বিয়ে বাড়ি , কলাগাছ কেটে বানানো বিয়ের গেট , বর যাত্রী আসবার সময় হয়েছে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কনের চাচা , রোদ এর তীব্রতায় দূরে দেখতে সমস্যা হচ্ছে চোখের উপর হাত দিয়ে চেষ্টা করছেন দেখতে কতদূর , পাশে পাঞ্জাবীর এক কোনা ছোট্ট হাত এর মুঠোয় চেপে পায়ের কাছে দাড়িয়ে আছে বাবা র সাথে একটি মেয়ে , তার সমস্ত মনোযোগ বাবার মুখে , কি করেন বাবা ...।

আমার শৈশব সবচাইতে প্রিয় স্মৃতি এটা , এই দৃশ্য ছাড়া ওই সময় এর আর কোন স্মৃতি নেই .

শৈশব এর সুরু টা ছিল পদ্মার পাড় লৌহজং এর হসপিটাল আবাসন এ , নিজস্ব সম্পদ এর মাঝে সিলভার এর একটা ছোট পানির কলস ছিল , পদ্মার জল আনতে যাবার আনুমতি ছিল না , পানি আনতে যেতাম টিউব ওয়েল এ , ভীষণ ভয় পেতাম পাশে ছিল ব্যাচেলর ডাঃ দের আবাস , পানি আনতে গেলেই মজা করে আমার কলসি কেড়ে নিত , আর আমিও ওদের কাউকে দেখলেই কলসি ফেলেই দে ছুট ।।


হসপিটাল এর নির্মাণ কাজ এর জন্য একপাশে কিছু লাল ইট স্তূপ করে রাখা ছিল, আশে পাশে কোথাও আমাকে খুজে না পেলে ,মা - সবার আগে ওখানে খুজতেন ,যথারীতি দেখা যেত কেউ দেখে ফেলার আগে, যতটা সম্ভব মুখে পুরে লাল ইট কড়মড় করে খাচ্ছি
একদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে বিছানায় আপুদের কে পেলাম না এক ছুটে বাইরে এসে দেখি সবাই গল্প করছিল আমি যেতে আমাকে দেখিয়ে মা বললেন ওর ঘুমানোর বালিশ এর সমান , জিজ্ঞেস করলাম কি ? পাশের চাচী মজা করে বললেন, তুমি জানো না, তোমার জন্য এনেছে দেখে এসো , আমি দৌড়ে গেলাম যেয়ে দেখি লম্বায় আমার আব্বুর সমান একটা মাছ ধরে এনেছে জেলেরা , সেটার ডিম এর সাইজ আমার পিলো র সমান , সেই মাছ কলোনির সবাই মিলে ভাগ করে নিয়েছিল ।

পদ্মা পাড় থেকে আব্বা মানিকগঞ্জ ট্রান্সফার হলেন, আমাদের বাসা টা ছিল স্কুল এর খেলার মাঠ শেষ সীমানায় বড় ভাই বোন কে দেখতাম ক্লাস এর ঘণ্টা বাজলে এক দৌড়ে চলে যেত , আমাদের ছিল দুইটা তিতির মুরগী , একদিন রাতে শিয়াল একটাকে নিয়ে যায় অনেক কেঁদেছিলাম তিতির এর জন্য ।

মানিকগঞ্জ এর আমার জীবন অনেক অনেক সপ্নের কিছু ছবি আঁকা আছে , যা আমার ধূসর সময়গুলো কে রঙধনু তে বদলে দেয় :)

আমি আর আমার মেজো বোন ছিলাম পিঠা পিঠে বয়স এর ,সারাদিন দুইজন ঘুরে বেড়াতাম সাথে থাকতো আমার চাইতে অল্প ছোট পাসের বাসার একমাত্র ছেলে, আপুর স্কুল এর কোন এক বন্ধু তাকে বলেছে, ওর বাসায় না গেলে, চির জন্মের আড়ি , বন্ধু হারানো চলবে না, কোন দিকে বাসা সেটা জানে, কিন্তু কোথায় বাসা সেটা জানা নাই ;) তাই বলে তো থেমে থাকা চলবে না, সকালে খেলতে নেমে আমরা যাত্রা শুরু করলাম ...
হাঁটতে হাটতে অনেক দূর চলে গেলাম, বাসা খুজে না পেয়ে তিন জন বাড়ির পথ ধরলাম কিছুক্ষন চলার পর দেখলাম আমাদের সাথে ধীরে ধীরে একটা রিকশা চলছে ,আমাদের নাম শুনতে পেলাম, ভাল করে খেয়াল করে দেখি রিকশা তে ওই পিচ্চির মামা আর আমার ভাইয়া বসে আছেন , হারান বিজ্ঞপ্তি তে মাইকে আমাদের কে খোঁজা হচ্ছে :|
পরের দৃশ্য নাই বা বললাম :P

চুমকি আপু রা ছিলেন ৩ বোন এক ভাই ওদের বাসার ৪নং মেয়ে ছিলাম আমি,আপু র কাছেই আমার হাতে খরি হয়েছিল অ, আ, ক, খ এর , এই মমতাময়ী কে আমি একদিন অনেক কাঁদিয়েছিলাম , ১৬ এর কুচকাওয়াজ দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন উনার পুতুল কে সাজিয়ে , আচল ধরা আমি , কোথায় দেখলাম গোলাপি রঙ এর চকলেট বিতরণ করছে সবাই কে ,এর পর পা এর সাথে পা মিলিয়ে চলে গিয়েছিলাম অন্য এক এলাকায় ।
আমার তিতির গুলো এখন আমাকে কর্কশ কণ্ঠে তাদের ভালবাসা প্রকাশ করে ,আমার গোলাপি ,লাল চিনির চকলেট গুলো মোহনীয় রঙ এর যাদুতে অচেনা কোথাও হারাবার ষড়যন্ত্র করতে ইশারা দেয় ।

আমার লাল ইট এর পুরনো বাসা আমাকে টানে , অনেক দিন আমি চোখ বুজে হারিয়ে যাই স্কুল এর খোলা সবুজ মাঠ এ ।

আমার আব্বা ছিলেন গান পাগল , কোন দিন সন্ধায় হয়ত আমাদের বাসায় সবাই বসে যেতেন , কিরন চন্দ্র রায় ছিলেন বয়সে বেশ কিছু ছোট আব্বা র চাইতে , আর উদাত্ত কণ্ঠের " মনে যারে চায় গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরতাম .".. প্রান ভরে ঘুমাতাম, শক্তি সঞ্চয় এর করে নিতাম পরদিন সকাল জীবন যুদ্ধে র জন্য ।সমস্ত দিন খেলা, যুদ্ধের চাইতে কম তো নয় ;)

[sb]আহ শৈশব আমার আমার কেয়া পাতায় নৌকা ভাসানোর দিন গুলো [/sb]
৭২টি মন্তব্য ৭২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×