বারান্দার কাঁচ সরিয়ে কিছু রাতচরা পাখির দেখা পেলাম, অশ্রাব্য উচ্চারণে ঘেউ ঘেউ করে চলছে বাস্তভিটা হারানোর ভয়ে দিশেহারা কিছু কুকুর। ওরা থামলেই সুনসান বাতাসের সাথে শুকনোপাতার অভিসারের কথকতা, বাকি শুধু পানি পানের ঢকঢক। তুমুল এই বর্ষা টা ঠোঁটে মুখে ছুঁয়ে দেখার আগেই তাল পাকা গরমের অস্তিত্ব টের পেলাম, যদিও ভাদ্রের গরম ঘামের প্রতিটি ফোটায় থাকে পায়েপায়ে আশ্বিনের ডাক। সে বড্ড তুমুল কোমল পেলব এক অনুভব।
বিছানার দিকে এগুতেই নিস্তব্ধতা কে কেটেকেটে এক ঘেয়ে কান্নার সুর! সে বড্ড অভিমানের বেদনা মাখা। কান পাতলাম সে বেদনার সুরে, পাশে ফিসফিসিয়ে কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছে! এবারে তো শুধু কান পাতলে হচ্ছে না, মুখফোনের আলোয় দেখি বেশ একটু অভিমানের স্বরে ম্যাক কে সান্ত্বনা দিচ্ছে কমপ্যাক। কাঁদিসনে বোন মনে হচ্ছে তোর ও আদরে আহ্লাদে থাকার দিন শেষ। আমাকে দেখ কত বছর থেকে এই বাক্সে চুপচাপ এক কোনায় পরে আছি সেই দিল্লির দিনগুলো মনে করে। আমি ই ছিলাম প্রথম ভালোবাসা। কত রাত কেটেছে ম্যাডাম এর সাথে ব্লগে, নিউজ পেপারে, ফেসবুকে। এখন ও ডি তে পছন্দের সব গান, মুভি সজিয়ে নিয়ে অপেক্ষায় আছি।
- পাশেই নরম চোখে সনি ভায়ো সম্মতি জানালো, কমপ্যাক বু যেদিন কোমায় চলে গেলো তার দুদিন পর এনেছিল আমাকে, শুধু মাত্র বেশ দেখার মত স্ক্রিনের জন্য, অখন্ড অবসরে মুভি দেখবে বলে। কত মুভি ই না দেখিয়েছি, কোরিয়ান, উর্দু, হিন্দি , মালায়ালাম, ইংলিশ বাংলা। স্টোরেজ ঘুরে সেসব ই কেবল। এখন ও সবচেয়ে বেশি ছবি গান কবিতা আমার কাছেই রয়ে গেছে। আমার দোষ ছিল একদিন হাত পিছলে ফ্রন্ট কভার এর হাড্ডি ভেঙে ফেলি। এরপর ই অবহেলা শুরু ......।
- এবারে কান্নার দমক আরও বেড়ে গেলো ম্যাক এর, তারমানে কি আমাকে ও ভুলে যাবে ম্যাডাম!!! আমার বয়স তো মাত্র এক বছর ? তোমরা তো পাঁচ বছর করে ম্যা’ম কে কাছে পেয়েছ। না জানি কবিতা গুলো কতটা মিস করছে উনাকে! আহা রে না লেখা কবিতারা তোমাদের জন্য আমার আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে। সব নষ্টের গোঁড়া ঐ ফোন; ওর সাথে ই সব মিতালী এখন ম্যাডামের।
মুচকি হেসে বিছানার দিকে এগুলাম, সত্যি ই তো কতদিন হয় ল্যাপটপ থেকে ব্লগিং করা হয় না। গান শোনা, মুভি দেখা তো সেই কবেই ভুলে গেছি, লিখতে ও বসা হয় না আর পছন্দের ল্যাপটপে। দেশে ফিরে গুছিয়ে বসার আগেই করোনা কাল এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিলো। মনের ভিতরে না লিখতে পারার অভিমান হিমালয় ছোঁয়া। মাথায় শব্দের রেশমি ডোর গুলো কাটিম ছেড়ে রঙবেরঙ এর পাখনা মেলে গোলুইয়া বসিয়েছে। আনন্দের শব্দের রঙ উজ্জ্বল বেগুনী, মিঠেল গোলাপি আর গাঢ় সবুজ!! কস্টেরা নিয়েছে ধুসর রেশম। ভালোবাসারা সব রঙা শব্দেই ভালোবেসে মিশে আছে। শব্দ রেশমেরা এতটাই মিলেমিশে আছে যে কাউকেই আলদা হতে দিচ্ছে না, কবিতার কলাপাতা সুতো ধরে লিখতে বসি মাঝ লাইনে হলদে পরী স্মৃতিকথা সুতো চলে আসে। ঝট খুলে খুলে এগুতেই ঢেউ খেলে গল্পের সোনালি ডানার নার্গিস!! যাচিত অযাচিত সকল শব্দের তুমুল সুবাসে শব্দতন্তু আমি ভুলে যাই শব্দ সুঁইয়ের ফোঁড়ে ফোঁড়ে নকশী বোনা। মোদ্দা কথায় রাইটার্স ব্লকে পরে আছি আজকাল।
প্রচলিত এর প্রবাদ আছে, পৃথিবীর সকল জাতির দু হাত আর বাঙালী’ র ডান, বাম আর অজুহাত। তাই নিজের বাঙাল পরিচয়ের প্রমাণ স্বরূপ এত লম্বা ব্লগ বিরতির অজুহাত নিয়ে হাজির হলাম। বর্তমানে দেশের সব চাইতে চর্চিত টপিক খিচুড়ি কে সম্মান জানিয়ে খিচুড়ি লেখা নিয়ে। এখন পাঠক রাই বলতে পারবেন, “ আমার ও কি খিচুড়ির প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশ যাওয়া উচিত” ?
শেষ করছি ব্রিটিশ আমলের একটি অজুহাত দিয়ে ...
লিটেল লিটেল বউজ্জা মাছ
ডাজমাটের তরকারি
ইটিং করিতে মাই
হইলো দেরী”।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৪৫