somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চৈত্র সংক্রান্তি থেকে পহেলা বৈশাখ বহমান আনন্দধারা।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চৈত্র মাসের বাতাসে যে সুগন্ধা হওয়ার দোলন সে ব্যাপারটার প্রশান্তি অনন্য! মাঝ দুপুরের তপ্ততা, নুয়ে আসা বিকেলে আচমকা দুরন্ত দুষ্ট ঝড়, অথবা সন্ধ্যার আজানের ঘরে ফেরার ব্যস্ত ধ্বনি। সব মিলিয়ে মাসের শেষ সংক্রান্তির দিন শুরু হয়, হৃদয় মনে এক ঝাঁক হাওয়ার ঝাঁপটা নিয়ে। ছোটবেলায় চৈত্র সংক্রান্তির সকাল আসত পহেলা বৈশাখের মায়ের হাতের সাদা পোলাউ আর মুর্গির ঝোলের আনন্দে। কারন মা দাদীদের বিশ্বাস বছরের পয়লা দিন ভালো খাইলে, সারা বচ্ছর ভালো খাওন যাইব "। নিমপাতা কাঁচা হলুদ বাটায় গোছল করায় যেমন সারা বছর খোস পাঁচড়া থেকে মুক্ত থাকবার একটা প্রতীকী ব্যাপার ছিল।

আজ সংক্রান্তি সবজি নিরামিষ দিন, সকালের নাস্তার পর শুরু হত শাক বা সবজী সংগ্রহ, আমাদের মফঃস্বলের আঙিনায় তখন ও বেঁচে ছিল কিছু বন বাদাড়। বেশির ভাগ মায়ের কেনা, কিন্তু কিছু বনজ সবজী ও চাই। খুঁজে আনতাম ঘেঁটুকচু বা কচুপাতা, গুনেগুনে সব টোকানো (কুড়িয়ে আনা) দিতেন মা। আদা রসুন বাটা সাথে শুকনা মরিচ তেজপাতা পাঁচফোড়নের, ফোড়নের জমে যেত এই নিরামিষ আর গরম সবজীতে ছড়ানো ঘি। ফেসবুকে আয়েশ করে লেখার কোন দরকার নাই যে আমার নিরামিষ ভালো লাগত, এক ছটাক গিমা শাক/ উস্তাভাজি/ পাটের শাক খেতে জীবনের উপর দিয়ে যেত। সবজী নিরামিষ হবে ভাতের পাতের শুরুতে অল্প অথচ সেদিন কিনা সেটাই মেইন ডিস! সে জন্যেই পরেরদিন পহেলা বৈশাখের সাদা পোলাউয়ের ঘ্রাণ শুঁকে সোনামুখ করে খেয়ে নিতাম। আজকাল তো সেসব নিয়ম মেনে কিছু করা হয় না। তবে সজনে ডাটার ঝোল, সরষের তেলে ভাজা মরিচ, পাটশাকে দারুণ জমে যাবে আজকে।

শুক্রবার দিনের অর্ধেক কাটালাম, নিউ নিউ মার্কেটের বই দোকান, নীলক্ষেত হকারস মার্কেটে এ ঘুরেঘুরে। মাত্রই ফুরিয়ে যাওয়া রমজান মাস যেমন ছিল প্রশান্তির, বেশ তীক্ষ্ণ রোদ উঠবার পর ও তেমই লাগলো সেদিন। হয়ত সাথে নস্টালজিয়া ছিলো বলে গরমের তীব্রতা টের পাইনি, তবুও বৈশাখ সবসময়ই আমার কাছে এসো হে বৈশাখ বলে আহ্লাদ করার মত। বৈশ্বিক পরিবর্তিত আবহাওয়ায় গ্রীষ্ম কেমন যায় সেটুকু অনুমান ও করা যাচ্ছে না যদিও। তবে নগরবাসী যারা জীবনে আম বাগানের ছায়ায় গ্রীষ্মের ছোঁয়া না পেয়েছেন, তাদের কাছে অনেক শৈল্পিক অনুভব অধরা।

পুরানো ঢাকাময় শৈশবে হালখাতার প্রস্তুতি দেখছি সংক্রান্তির দিনে, স্কুল কলেজ দিন এই সময়গুলো কেটে যেত বর্ষবরণের প্রস্তুতি অনুষ্ঠানে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন তো আজকালের চলতি সবকিছুর শুরুর সময় কালে কাটিয়েছি। কাঁচের চুড়ি হাতে কাসুন্দি মাখা আমের ভর্তা, আলতা পায়ে রুপার নূপুর , লালপেড়ে গরদ গায়ে বেলেফুলের স্নিগ্ধতা। চৈত্রের শেষদিন মাঝ রাতে চড়ক পূজার কাঁচনাচুনী' রা আসত পাশের বাসায়, কিন্তু কোনদিন ই দেখতে পারি নাই ঘুমের যন্ত্রণায়, সকালে উঠে গল্প শোনা আর আফসোস। এ লেখায় যদি পদ্মা পাড়ের " গলুইয়া " নিয়ে না লিখি তাহলে আমার শৈশবের সেই গলুইয়া মেলায় যাওয়ার অপেক্ষার গল্পটুকু বাদ রয়ে যাবে। চড়ক পূজা এর আদি উৎসব কিন্তু আমাদের জন্য ছিল তিল কদমা, মাটির পুতুল চুড়ির উৎসব, কড়াই থেকে তোলা গরম রসগোল্লা আর বাসায় ফেরা মাটির বাসনকোসনের সম্ভার নিয়ে।

পান্তাভাতে আলু ভর্তা, ডিম ভাঁজা কাঁচা পেয়াজ লংকায়/ শুকনো মরিচের যে অমৃত স্বাদ বাঙালি মাত্রই তার চরম ফ্যান। কিন্তু যে আমলে ফ্রিজ ছিল না, নষ্ট হবার ভয়ে পানি দিয়ে রাখা পান্তাভাত খেতে হত, সে নিশ্চয়ই বিলাস দ্রব্য নয়। এই ইলিশ পান্তার নব্য বিলাসিতা আমার ব্র্যান্ড না। বরং অঢেল ইলিশের মৌসুমে বাজার থেকে আনা ইলিশ মাছের বেঁচে যাওয়া অংশ, পরেরদিন রান্নার জন্য রেখে দেয়া মাছ নুন হলুদে জ্হালকা সেদ্ধ করে রাখা ইলিশের তরকারির সাথে, পান্তা ভাতের যে ক্যামেস্ট্রি সে আমার ঢের বেশি প্রিয়। বিক্রম্পুইরাদের এই ইলিশের পানিখোলা' র জি আই নিয়ে রাখা এখন সময়ের দাবী।

গত জুলাই আন্দোলন পরবর্তী এ বছর নববর্ষ এসছে আমাদের দুয়ারে নব আনন্দ বার্তা নিয়ে " নববর্ষের ঐক্যতান, ফ্যাসিবাদের অবসান"।
বাঙালির পহেলা বৈশাখ, ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উত্সব। নববর্ষ বৈসাবি উৎসবে বাংলাদেশ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মেতে উঠি উৎসবে। তবে বাসা থেকে বের হবার আগে অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নিতে যেন ভুল না হয়।
সবাই কে চৈত্র সংক্রান্তি আজ এবং পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ !

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শুধুমাত্র কিতাবের এলেমে কেউ আলেম হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৪



সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দূরে কোথাও

লিখেছেন মোহাম্মদ সজল রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:১০



যদি দেখ ল্যাম্প পোস্টের গায়ে রঙিন
অক্ষরে লেখা নিখোঁজ সংবাদ
কিংবা লেখা আছে সন্ধ্যান চাই

মনে রেখো ততক্ষণে হারিয়েছ
রহস্যের অতল গহ্বরে
যেখানে আমি আগন্তুক
অজানা এক পরিচয়

পোষ্টারের বাম পাশে অস্পষ্ট -
ছবিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×