somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

''মোষ্ট ওয়েলকাম''-বিগ বাজেট ঢালিউড চলচ্চিত্র

২৩ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছবির নাম – মোষ্ট ওয়েলকাম
পরিচালনা – অনন্য মামুন
প্রযোজনা - এম এ জলিল অনন্ত
অভিনয়ে - এম এ জলিল অনন্ত, বর্ষা, বাপ্পারাজ, রাজ্জাক, স্নেহা উল্লাল ও প্রমুখ

২০১২ এর এই রোজার ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে মোট ৬টি চলচ্চিত্র। এরমধ্যে সাকিব খানই অভিনয় করেছেন ৪টি ছবিতে যা ছিল গতানুগতিক। তবে এবারের ঈদের সবচেয়ে ব্যায়বহুল ছবির নাম মোষ্ট ওয়েলকাম। ছবিটির প্রযোজনা আর প্রধান চরিত্রে অভিনয়ে ছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রে নতুন অ্যাকশান হিরো হিসেবে আবির্ভূত এম এ জলিল অনন্ত।

অনন্তের আগের ছবিগুলোতে (খোঁজ দ্য সার্চ, হৃদয় ভাঙা ঢেউ, দ্য স্পিড) তার মুনসুন ফিল্মসের ব্যানার থেকে বেশ কয়েকজন নামি পরিচালক ছবি বানিয়েছেন। এবার এ ছবিটি পরিচালনার ভারটা ছিল অর্ধশতাধিক ছবির কাহিনীকার অনন্য মামুনের উপর। ছবিটির বাজেট ছিল প্রায় ১৬ কোটি টাকা (মতান্তরে ৮ কোটি) !

ছবির কাহিনীর দিকে তাকালে দেখা যায় আরিয়ান (অনন্ত) দুদকের সৎ অফিসার যে দুর্নিতীবাজদের বিরুদ্ধে মাঠে নামে। ওদিকে পুলিশ সমাজের মানুষের নিরাপত্তা আর সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় মানুষ গিয়ে দারস্থ হয় মুশকিল আসান বাবার মাজারে। মাজারের এক বাক্সে সবাই তাদের সমস্যার কথা লিখে ফেলে দেয় আর মাজারের খাদিম (রাজ্জাক) সেগুলোকে নিয়ে এক মুখোশধারী সুপারহিরোর কাছে দ্বায়িত্ব দেয় সমস্যাগুলো সমাধানের। এই সুপারহিরো একে একে দুর্নিতীবাজ খারাপ লোকদের সাইজ করে আর তাদের সবার উদ্দেশ্যে প্রথমবার একটি ডায়লগ ছেড়ে যায় : "যারা ভালো হতে চায় তাদেরকে মোস্ট ওয়েলকাম, আর যারা চায়না তাদের গুড বাই" ! এক ডায়লগেই কাজ হাসিল হতে দেখা যায়, সবাই মাজারে এসে তাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়। এই ডায়লগ থেকেই হয়তোবা ছবির নাম মোষ্ট ওয়েলকাম রাখা হয়েছে।

নতুন এই সুপারহিরোর পরিচয়ের সাস্পেন্স রক্ষায় একদমই মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে পারেননি ডেবুট্যান্ট পরিচালক অনন্য মামুন। ছবির মাঝপথেই খাদিমের সাথে সেই মুস্কিল আসান বাবার সুপারহিরোর কথোপকথনে দর্শক দেখতে পায় এই সুপারহিরো আর কেউ নয়, আমাদের ছবির নায়ক আরিয়ান।

ওদিকে অসৎ ব্যাবসায়ী মিজু আহমেদ তার ভাস্তে মিশা সওদাগর (সিনেমায় তাদের নামটা এ-বি-সি-ডি টাইপ কি ছিল তা ঠিক খেয়াল নেই) এর দুর্নিতী দিয়ে কামানো কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করে দুদক অফিসার আরিয়ান। এই টাকার শোধ নিতে এ-বি-সি-ডি (মিজু আহমেদ) তার মেয়ে বর্ষাকে আরিয়ানের পিছনে লেলিয়ে দেয়। শুরু হয় বর্ষা কতৃক আরিয়ানকে ইভটিজিং (!) থুরি অ্যাডামটিজিং।
বর্ষার এই অ্যাডামটিজিং কিছুটা হলেও কাজে দেয়। ওদিকে মিশা সওদাগর মুশকিল আসান বাবার সুপারহিরোকে ধরতে এক নতুন ফাঁদ পাতে। ফাঁদে পাড়া দিয়ে ধরাও পরে এ সুপারহিরো। এভাবে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জিরো সাসপেন্সে ছবিটি শেষ হয়।

ছবিটির কাহিনী তামিল চলচ্চিত্র শিভা দ্য সুপার হিরো (বিক্রম, শ্রেয়া সারান) থেকে প্রায় পুরোটাই অনুপ্রানিত বলে মনে হয়েছে। মোষ্ট ওয়েলকাম, শিভা দ্য সুপার হিরোর অফিসিয়াল রিমেক কিনা তা জানা নেই আমার।

ওদিকে বলিউড অভিনেত্রী স্নেহা উল্লাহকে দিয়ে একটি আইটেম সং এ অভিনয় করানো হলেও ছবির প্রমোশনে তার নাম সবচেয়ে বেশী এসেছে। ভারতীয় অভিনেত্রী এনে এত রাকঢাক পিটিয়ে তাকে স্ক্রিনে শুধুমাত্র ৫ মিনিট দেখিয়ে ছবির দর্শক বাড়ানোর স্ট্রাজেটিটা পছদ হয়নি আমার।

তবে এ ছবির গানগুলো বেশ সুন্দর ছিল। গানের চিত্রায়ন খুব বেশী ভালো না লাগলেও আরেফিন রুমি-ন্যান্সির পড়েনা পলক, মিলার আমার মন দরিয়াতে এবং ছবির টাইটেল ট্রাকটি বেশ শ্রুতিমধুর ছিল।

অনন্ত জলিলের আগের ছবিগুলোর মত এবারের ছবিতেও তার ভাষাগত সমস্যা প্রকটভাবেই থেকে গেছে যা ছবিটার মান অনেকটা হলেও কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে গানের দৃশ্য ছাড়াও ছবির অন্যান্য দৃশ্যেও দেশী-বিদেশী লোকেশনের কন্টিনিউটি ছাড়া যথেচ্ছা মিক্সআপ মনে অযাচিত ভাবনার উদ্রেগ করে। ছবির কিছু কিছু অ্যাকশান দৃশ্য খেলো বলে মনে হলেও এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই।



উল্লেখ্য বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মনপুরার পরে এটি দ্বিতীয় চলচ্চিত্র যার টিকিট সংগ্রহের জন্য হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায় ছবিটি কতটা ব্যবসাসফল।

সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রটি সাকিব খানের গতানুতিক ঢালিউড ছবির স্বাদের বাইরে আলাদা কিছু দিয়ে নিম্নবিত্ত দর্শকদের বিপুল বিনোদন দিতে পারলেও মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তদের বিনোদন দানে মোষ্ট ওয়েলকাম ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে গেছে। তবে আশা রাখি এখান থেকেই ভালো কিছুর শুরু হবে। বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে আবারো সোনালী দিন ফিরে আসুক। দেশের হলগুল সংস্কার এবং চলচ্চিত্রগুলো তাদের কাজের মান উন্নয়নের মাধ্যমে অচিরেই দেশের সব শ্রেনীর দর্শককে হলে ফিরিয়ে আনবে, দেশের মানুষের প্রতিটা ছুটিতে সিনেমা হল হবে লোকে লোকারন্য, এ আশা দেশের সকল চলচ্চিত্রপ্রেমীর।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:০৬
৩০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার সন্ধান, যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫



কেউ একজন জানতে চেয়েছেন ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়? বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম বাংলাদেশে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×