somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

''চিত্রা নদীর পারে''- একটি পরিপূর্ণ অর্থের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছবির নাম : চিত্রা নদীর পারে
চিত্রনাট্য-পরিচালনা : তানভীর মোকাম্মেল
শ্রেষ্টাংশে : মমতাজউদ্দীন আহমেদ, আফসানা মিমি, তৌকির আহমেদ, রওশন জামিল, সুমিতা দেবী, আমীরুল ইসলাম এবং অন্যান্য।
মুক্তির সাল : ১৯৯৯


সময়টা ১৯৪৭, তৎকালীন পুর্ব পাকিস্থানের ছোট্ট জেলা নড়াইল। শশীভূষণ সেনগুপ্ত নামের এক হিন্দু উকিল (মমতাজউদ্দীন আহমেদ) থাকতেন তার বিধবা বোন অনুপ্রভা (রওশন জামিল), এবং দু’টি ছোট ছেলে-মেয়ে মিনতি ও বিদ্যুৎকে নিয়ে। বাড়ির পাশেই বয়ে চলা নদী চিত্রা। ততদিনে শুরু হয়ে গেছে হিন্দু-মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে দেশভাগ। পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দেশ ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। এ অবস্থায় শশীভূষণের উপরেও দেশত্যাগের চাপ আসতে শুরু করে, কিন্তু তিনি বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে পরদেশে পাড়ি না জমানোর সিদ্ধান্তে অনড়। কিন্তু তার ছোট ছেলে বিদ্যুৎ মুসলমান বন্ধুদের দাড়া উৎপীড়িত হয়ে কোলকাতা চলে যাবার বায়না শুরু করে। অগত্যা বিদ্যুৎকে পড়াশোনার জন্য কোলকাতা পাঠিয়ে দেন শশীভূষণ। এরপর কিছু সময় কেটে যায়।

১৯৬৪ সাল, শশীভূষণের মেয়ে মিনতি (আফসানা মিমি) ততদিনে বড় হয়ে গেছে। ছোট বেলার খেলার সাথী বাদলের (তৌকীর আহমেদ)সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মিনতির। বাদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে মার্শাল’ল বিরোধী আন্দোলনে। একদিন মিছিলে পুলিশের অতর্কিত গুলিতে মারা যায় বাদল। এরমধ্যে চারিদিকে শুরু হয়ে যায় হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।

সেই দাঙ্গার শিকার হন শশীভূষণের বিধবা ভাতিজি বাসন্তী। ধর্ষিত হয়ে চিত্রা নদীর পাড়ে আত্মাহুতি দেয় সে। ঘটনাটি শশীভূষণকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। অসুস্হ শশীভূষণ সেই চিত্রা নদীর পাড়েই তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নিয়তির নির্মম পরিহাসে অবশেষে দেশ ছেড়ে কোলকাতায় পাড়ি জমায় শশীভূষণের মেয়ে মিনতি ও বিধবা বোন অনুপ্রভা।



বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল তার সুনিপুন হাতে নির্মান করেছেন এ ছবিটি। শিল্পী নির্বাচন, এবং সেই যুগের চিত্র সার্থকভাবে তুলে আনতে পরিচালক যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। প্রতিমা বিসর্জন, মুড়ির টিন বাস, মার্শাল’ল বিরোধী
আন্দোলনের প্লাকার্ড, উত্তম-সুচিত্রার ছবির রিকশাযোগে প্রচারণা, চিত্রা নদীর বুকে পালতোলা নৌকা এসবকিছুই আমাদেরকে দেশ বিভাগের পরের তৎকালীন পুর্ব পাকিস্থানের সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।

প্রধান চরিত্রসমূহে স্বভাবজাত পাগলাটে ধাঁচের মঞ্চ কাপানো অভিনেতা মমতাজউদ্দীন আহমেদের নির্লিপ্ত অভিনয় ছিল দেখার মত। সাথে এক পশলা বৃষ্টির মত ছবিতে স্নিগ্ধতা ছড়িয়েছে তৌকীর আহমেদ এবং বিশেষত আফসানা মিমি। রওশন জামিল, সুমিতা দেবী, আমীরুল ইসলাম, রামেন্দ্র মজুদারের চরিত্রগুলো অপ্রধান হলেও প্রত্যেকে বেশ ভালো অভিনয় করেছেন।

চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন, শিল্প নির্দেশক উত্তম গুহ ও পোশাক পরিকল্পনায় থাকা চিত্রলেখা গুহ যথেষ্ঠ প্রশংসার দাবীদার। ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন সৈয়দ সাবাব আলী আরজু।

তবে ছবিটির কিছু কিছু দৃশ্যায়নে অসংগতি চোখে পড়েছে। ১৯৪৭ এ রওশন জামিলের বয়স আর ১৯৬৪ এর বয়স একই মনে হয়েছে। তাছাড়া নড়াইল অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা(বৃহত্তর খুলনার ভাষা) বড়দের মুখে বলতে শোনা গেলেও মিনতি, বাদলের ছেলেবেলায় ওদেরকে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে শোনা গেছে। যদিও পরবর্তীতে এরা বড় হলেও এদের ভাষা শুদ্ধই বজায় থেকেছে। আর চিত্রা নদীর কিছু লংশর্ট দেখানোর খুব দরকার ছিল। দর্শক হিসেবে এটি খুব মিস করেছি।

চিত্রা নদীর পারে ১৯৯৯ সালে ৭টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করে। ক্যাটগরিগুলো হলে- শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ গল্প, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য, শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশনা, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ মেকআপ। ।এছাড়া ব্রিটিশ ফিল্ম ইনিষ্টিটিউটের করা সর্বকালের সেরা ১০ বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের সমালোচক ও দর্শকপ্রিয়তা উভয় ক্যাটাগরিতেই রয়েছে এ ছবিটি।

বাংলাদেশী চলচ্চিত্র হওয়া উচিত এমনি। কে বলেছে বানিজ্যিক ছবি মানেই পাত্র-পাত্রীর দৌড়-ঝাপ-নাচা-গানা-ক্লাইমেক্সে ভরপুর হতে হবে। দেশ যেহেতু গতানুগতিক বানিজ্যিক ছবি নির্মানে বারংবার ব্যর্থ হচ্ছে সেক্ষেত্রে এমন অফ ট্রাককেই মূলধারা বানিয়ে নেয়া উচিত, এমন ধারার চলচ্চিত্র হিসেবে আদর্শ ধরা যেতে পারে চিত্রা নদীর পারে ছবিটিকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ২:১৫
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×