somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মে দিবস ও বাংলাদেশ

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“গাহি তাহাদের গান-
ধরণীর হাতে দিল যারা আনি' ফসলের ফরমান।
শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি-তলে
ত্রস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভ'রে ফুলে-ফলে!
বন্য শ্বাপদ-সঙ্কুল জরা-মৃত্যু-ভীষণা ধরা
যাদের শাসনে হল সুন্দর কুসুমিতা মনোহরা।
যারা বর্বর হেথা বাঁধে ঘর পরম অকুতোভয়ে
বনের ব্যাঘ্র ময়ূর সিংহ বিবরের ফণী ল'য়ে।”

জাতীয় কবি কাজী নজরুল এর এই কবিতাটি শুধু যে শ্রমজীবী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা তা নয়, এটি বনিক-মালিক সম্প্রদায়ের জন্য একটা সতর্ক বানীও বটে।

“আর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস” কথাটি শুনলেই মনের মধ্যে উকি দেয় ১৮৮৬ সালের মে মাসের যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকদের আট ঘন্টা কর্ম দিবসের জন্য হে মার্কেটের সামনে আন্দোলন আর তাদের উপর গুলি বর্ষণের ও নিহতের কথা।
১৯ শতকের প্রথম দিক থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকরা ছিল লাঞ্চিত, , নির্গীহিত, নির্যচিত, আর অবহেলিত। তারা সপ্তাহে ৬ দিন ১২-১৪ ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য ছিল। এতটা পরীশ্রম একজন মানুষের পক্ষে করা অসম্ভব ছিল। অনিয়ন্ত্রিত মালিক শ্রেণি ও দালাল শ্রেণি শ্রমিকদের উপর করতে অমানুষিক নির্যাতন। নির্যাতিত সে শ্রমিক সম্প্রদায় তাদের দাবি-দাওয়া বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে করতে থাকে। এসব নির্যাচিত শ্রমিকেরা বুঝতে পারে যে, একটি শক্তিশালী সংগঠন ও আন্দোলন ছাড়া এর সমাধান সম্ভব নয়। তাই তারা ১৮৮০-৮১ সালে “Federation of Organized Trades and Labour Union of the United States and Canada” গঠন করে যা পরবর্তীতে ১৮৮৬ সালে American Federation of Labour নাম ধারন করে। এ সংগঠনের মাধ্যেমে ১৮৮৪ সালে তারা ৮ ঘন্টা কর্মদিবস দাবী করে এবং ১৮৮৬ সালে ১লা মে পর্যন্ত মালিকদেরকে সময় সীমা বেঁধে দেয়। কিন্তু, মালিকপক্ষ তাদের এ প্রস্তাব অনায়েসে খারিজ করে দেয়।

এদিকে ১লা মে এগিয়ে আসছিল। কিন্তু শ্রমিক সম্প্রদায় তাদের মধ্যকার অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে আন্দোলনের প্রস্ততি নিচ্ছিল, অন্য দিকে সরকারও তাদের প্রতিহত করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে থাকে যার অংশ হিসেবে তারা বিপুল পরিমান পুলিশ ও প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করে ছিল। বিভিন্ন বনিক সম্প্রদায়ও সরকারকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিল। ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রে ৩,০০০০০ শ্রমিক আন্দোলন করছিল, শুধ শিকাগো শহরেই ছিল ২০০০০ শ্রমিক এবং তা বেড়ে ১০০০০০ এ উন্নীত হয়েছিল। পরবর্তীতে ৩ লা মে শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে মিছিলের জন্য শ্রমিকরা জড়ো হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়, পুলিশ পাল্টা গুলি বর্ষণ করে ১০-১২ জন শ্রমিককে নিহত করে।

১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। উল্লেখ্য, ১৮৯১ সালের আন্তর্জাতিক দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। এবং বিশ্বে ৮০টি দেশ এ ১লা মে কে আর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এ দিবসটি পালন করে না ।

যদিও বাংলদেশ অন্য ৮০টি দেশের সাথে ১লা মে “মে দিবস” উৎযাপন করে, তথাপি বর্তমানে বাংলাদেশে শ্রমিকদের কি অবস্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের শ্রমিকরা কি তাদের অধিকার ভোগ করতে পারছে? তারা যদিও ৮ ঘন্টা কাজ করে কিন্তু তাদের পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক কি যথেষ্ট? তাদের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কি মানসম্মত? তারা কি বর্তমানে মালিকপক্ষ দ্বারা অত্যাচার শিকার হচ্ছে না? নারী-পুরুষের বেতন কাঠামো কি একই রকম? শ্রমিকরা কি তাদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ? যদি তাই হত তবে তাজিন ফ্যাশন বা রানা প্লাজার মত দুর্ঘটনা কিভাবে ঘটে? বাংলাদেশে এমন অনেক শ্রমিক আছে যাদের কাজ করা ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই, এবং অনেক শ্রমিক আছে যারা কাজের উপযোক্তই না। আমরা কি এসব অতি বৃদ্ধ এবং শিশু শ্রমিকদের জন্য কোন ব্যবস্থা করতে পারি না?
যদি আমরা এসব প্রশ্নে উত্তর খুজে বের করতে পারি তবে আমরা নিজে থেকেই বুঝতে পারব বাংলাদেশে শ্রমিকদের অবস্থা কি রকম?

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১২:২৩
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×