somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বছর বছর ধরে পাঠ্যবইয়ে ফররুখ আহমদের বিখ্যাত ‘পাঞ্জেরি’ কবিতার ভাবার্থগত চাতুর্যময় বিকৃতি

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিনি এক ব্যতিক্রমী কবি। তার নিজস্ব অভিনব, অভূতপূর্ব ঘরানায় তিনি শুধু একজন মৌলিক কবিই নন, তিনি সৌন্দর্যের কবি, শিশুদের নিষ্পাপত্বের গুনমুগ্ধ কবি, প্রকৃতি ও প্রকৃতির স্রষ্টার কবি এবং সবকিছুকে ছাপিয়ে মানবতার কবি। খুব কম বাঙালী শিশুই আছে, যাদের কবিতার হাতেখড়ি ‘ফররুখ আহমদ’কে দিয়ে হয়নি। মানবতার উৎস অনুসন্ধানে একসময় বামপন্থী আন্দোলনে যোগ দেয়া এই কবি তার গন্তব্য চিনতে পেরেছিলেন। তিনি সম্পূর্ণ ইসলামিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তাকে ইসলামী পুনর্জাগরনের কবি বলা হয়। কিছু দুষ্টলোক তাকে নির্দিষ্ট মতাদর্শের কবি বলে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু তিনি হলেন সকল নিপীড়িত জাতির কবি, সব মজলুমদের উত্তোরণকামী কবি। তাকে নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ ভাবাটা চরম মূর্খামি, তার নিয়মিত একনিষ্ঠ পাঠকরা সেটা ভালই জানেন। ইসলামিক ভাব ধারণ করেও কখনো কোন সম্প্রদায় বা তাদের জীবনদর্শনকে কখনো কটাক্ষ করেননি বরং ইসলামকে শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, সম্পূর্ণ মানবতার মুক্তিদাতা হিসেবে দেখেছেন।
‘পাঞ্জেরি’ তার এক বিখ্যাত কবিতা। এটা তার ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’তে সংকলিত হয়।
এইচএসসির পাঠ্যবইয়ে ‘পাঞ্জেরি’ শব্দের প্রতীকী অর্থ করা হয়েছে ‘জাতির পথপ্রদর্শক’। এ অর্থ ধরে পড়লে কবিতা সম্পূর্ণভাবে বোঝা যাবেনা। কিন্তু যদি ‘পাঞ্জেরি’ শব্দের প্রতীকী অর্থ ধরেন ‘মুসলিম জাতির পথপ্রদর্শক’, তাহলে কবিতাটি সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হবে আপনার কাছে। আসলে কবি তার কবিতায় বৈশিষ্ঠ্যমূলকভাবেই তৎকালীন অনগ্রসর আর হতাশ বাঙালি মুসলিম সমাজকে উজ্জীবিত করতেই এই কালজয়ী কবিতাটি লিখেছিলেন। পাঠ্যবইয়ে কোন এক অজ্ঞাত কারনে ‘মুসলিম’ শব্দটা এড়িয়ে কবিতার আসল উদ্দেশ্য আর ভাবকে বিকৃত করা হয়েছে। এই মহান কবির কবিতার বিকৃতি কিভাবে করা হয়েছে বুঝতে কবিতাটি আপনাকে দুইবার পড়তে হবে। একবার ‘পাঞ্জেরি’ অর্থ ‘জাতির পথপ্রদর্শক’ ধরে, আরেকবার ‘মুসলিম জাতির পথপ্রদর্শক’ ধরে। পাঠ্যবইয়ে ‘জাতি’ বলতে পরিষ্কারভাবে ‘বাঙালি জাতি’কেই বোঝানো হয়েছে।
------------------------------------------------------------
----------------------------------------------------
পাঞ্জেরি
ফররুখ আহমদ
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
দীঘল রাতের শ্রান্ত সফর শেষে
কোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে?
এ কী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর বা’ব
তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব
অস্ফুট হয়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয়ভেরী।
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি।
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
বন্দরে বসে যাত্রীরা দিন গোনে,
বুঝি মৌসুমী হাওয়ায় মোদের জাহাজের ধ্বনি শোনে,
বুঝি কুয়াশায়, জোছনা- মায়ায় জাহাজের পাল দেখে।
আহা, পেরেশান মুসাফির দল।
দরিয়া কিনারে জাগে তকদিরে
নিরাশার ছবি এঁকে!
পথহারা এই দরিয়া- সোঁতায় ঘুরে
চলেছি কোথায়? কোন সীমাহীন দূরে?
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
একাকী রাতের ম্লান জুলমাত হেরি!
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
শুধু গাফলতে শুধু খেয়ালের ভুলে,
দরিয়া- অথই ভ্রান্তি- নিয়াছি তুলে,
আমাদেরি ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি
দেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী।
মোদের খেলার ধুলায় লুটায়ে পড়ি।
কেটেছে তাদের দুর্ভাগ্যের বিস্বাদ শর্বরী।
সওদাগরের দল মাঝে মোরা ওঠায়েছি আহাজারি,
ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দনধ্বনি আওয়াজ শুনছি তারি।
ও কি বাতাসের হাহাকার,- ও কি
রোনাজারি, ক্ষুধিতের!
ও কি দরিয়ার গর্জন,- ও কি বেদনা মজলুমের!
ও কি ধাতুর পাঁজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরী।
পাঞ্জেরি!
জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রূকুটি হেরি,
জাগো অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রূকুটি হেরি!
দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরি, কত দেরি!!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×