somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগিংয়ের বৈষয়িক উপকারিতা পাবার সহজ উপায়

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার নাম অর্জুন। আমি নাস্তিক। সামহোয়্যার ইন, ইষ্টিশনসহ আরো কয়েকটা ব্লগে নিয়মিত ব্লগিং করি আর ফেইসবুকেও সামান্য লেখালেখি করি। লেখার বিষয় হল বাংলাদেশীদের ধর্মান্ধতা আর তার পরিণাম। প্রথমদিকে আমি ভার্চুয়াল জগতে নিজেকে ‘সনাতনী’ বলে পরিচয় দিতাম। পরবর্তীতে কয়েকটা ব্লগের সেক্যুলার বড় ভাইদের সাথে পরিচয় হয়, তারা নাস্তিকতা ও ধর্মান্ধতা বিষয়ে লেখালেখি করতেন। লেখাগুলি খুবই ভাল লাগত, বিশেষ করে যখন ওরা ইসলামের নবীকে নিয়ে লিখতো। আমি তাজ্জব হয়ে ভাবতাম এই মুসলমানের ঘরের ছেলেগুলো তাদেরই নবীদের নিয়ে এসব কথা কীভাবে লেখে! তাদের লেখা পড়ে শান্তি পেতাম। মুসলমানরা আমাদের পূর্বপুরুষদের অনেক জ্বালাতন করেছিল, স্বাভাবিকভাবেই তাদেরকে আমরা সনাতনীরা খুব ভাল চোখে দেখিনা। কিন্তু কী আর করার, থাকছি তো ওদের দেশেই। বাধ্য হয়ে আমরা এই মনোভাব সবসময় লুকিয়ে রাখি। আমি একদিন কয়েকটা ব্লগের সন্ধান পেলাম যেখানে দেখি অনেক মুসলিম আইডি থেকেই ওদের নবীকে পঁচানো হচ্ছে। চমকে গেলাম, এতদিন তো এরকম কিছু একটাই খুঁজছিলাম! পরে অবশ্য বুঝলাম এদের লিডে আছেন আমারই স্বধর্মীয় কয়েকজন দাদা, তবে কাজের দিক দিয়ে এক্স-মুসলিমরা দাদাদের ছাপিয়ে গেছে। লেখালেখি শুরুর পর যখন নাস্তিক বড়ভাইদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ল, তখন তাদের কাছে জানলাম যে ব্লগের অধিকাংশ ব্লগারদেরই অনেকগুলো আইডি। কিছু আইডি থেকে তারা কিছুটা সংযতভাবে মুসলমানদের সমালোচনা করেন, কিছু আইডি থেকে তারা মুসলমানদেরকে ধুয়ে দেন, অনেক গালিগালাজও করেন। প্রথমদিকে গালিগালাজ ব্যাপারটায় কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও আস্তে আস্তে অন্যান্য অ্যাকটিভিষ্টদের দেখাদেখি আমিও এই কাজ শুরু করলাম। ফেসবুকে সমমনা এক বড়ভাই এই গালিগুলোর গুরুত্ব বোঝালেন। তিনি আমাকে এব্যাপারে চটি সাইটগুলোর সাহায্য নিতে বললেন। আমাদের মধ্যে সব ব্যাপারেই খোলাখুলি আলাপ হত, তাকে বললাম এই ব্যাপারে আমার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। এভাবেই আমার মুসলিমবিরোধী ব্লগিয়ের ক্যারিয়ার শুরু। কয়েক বছর ব্লগিংয়ের অভিজ্ঞতায় আর সিনিয়রদের ব্লগ, কমেন্ট বিতর্ক দেখে দেখে আমার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। এগুলো এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করব:
১/ কয়েকটা নির্দিষ্ট যুক্তির ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।
২/ মুসলিম ডিফেন্স ব্লগারদেরকে কোন সময় প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া যাবেনা, উল্টা ওদেরকে প্রশ্ন করে নাজেহাল করার চেষ্টা করতে হবে।
৩/ প্রত্যেকটা পোষ্টেই ইসলামকে আক্রমণ করতে হবে, সূক্ষভাবে হোক বা সরাসরি। এই ট্রিক ব্যবহার করলে খুব তাড়াতাড়ি হিট হবার সম্ভাবনা আছে। কারণ মুসলমানগুলা ক্ষেপে যাবে আর অনেক মূর্খই কমেন্টে গালিগালাজ শুরু করবে। এতে আমাদেরই লাভ। যত গালিওয়ালারা কমেন্ট করে, তাদের কমেন্টের জন্যে আমাদের পোষ্ট দ্রুত শেয়ার হতে হতে ফেসবুকের বড় একটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, আর ব্লগে অনেক আলোচিত হয়। এভাবেই ওরা গালি দিয়ে কমেন্ট করে আমাদেরকে প্রচার করে।
৪/ নবীকে পঁচানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যে রেফারেন্সের ক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণির ঐতিহাসিকদের মতামতই গ্রহণযোগ্য। এরা মুসলমানদের নবীতে বিদ্বেষ পোষণ করে, সুতরাং আমাদের বন্ধু। এদের রেফারেন্স দিয়ে সরল মুমিনকে ভড়কানো যায়।
৫/ সবসময় গ্রাম্য হুজুরদের কথাকে নিয়ে স্যাটায়ার লিখতে হবে। মুসল্লীদের মাথায় একটা ধারণা প্রবেশ করিয়ে দিতে হবে যে “তোদের ধর্ম ক্ষ্যাত, গোঁড়া, সেকেলে”। এই অস্ত্রটাই ব্যাপকভাবে শহুরে ছেলেদের ব্রেনওয়াশে ফলপ্রসুভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
৬/ যারা মোটামুটি ইসলামের ব্যাপারে ধারণা রাখে কিন্তু বিজ্ঞানের ব্যাপারে ভাল জ্ঞান রাখে না, তাদের ব্রেনওয়াশে কাজ করবে বৈজ্ঞানিক টার্ম। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ডারউইনের আর হালের ডকিন্সসহ বিবর্তনঘেঁষা বিজ্ঞানীদের রেফারেন্স কাজে দিবে।
৭/ যারা ইসলাম আর বিজ্ঞান উভয়ের ব্যাপারে জ্ঞান রাখে অর্থাৎ জোকার নায়েকপন্থী, ওদের ব্যাপারে সবচাইতে বেশী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এদের হাতে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা বেশী, যদি ‘পিছলানো বিদ্যা’ জানা না থাকে!
‘পিছলানো বিদ্যা’ হল একটা বিশেষ কৌশল। যদি আমরা মুক্তমনারা ইসলামিষ্টদের কাছে ধরা খাই, তাহলে এই কৌশল ব্যবহার করি। এটার কার্যকারিতা নির্ভর করবে নাস্তিক/সেক্যুলার/মডারেট/মুক্তমনা যাই-ই বলুন না কেন সে কতটা টপিকের বাইরে ইসলামিষ্টকে ঘোরাতে পারে তার উপর।
৮/ একটা গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হল মুক্তমনাদের সবসময় নিজেকে ‘জ্ঞানী’ ভাবতে হয় আর এই ধারণাটা প্রতিপক্ষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হয়। ফলস্বরুপ, ইসলামিষ্ট ব্লগার বা ফেসবুক বিতার্কিকরা হীনমন্যতায় ভুগবে। এটা ম্যাজিকের মত কাজ করে। মুক্তমনাদের কমেন্টগুলো হবে ব্যাঙ্গাত্মক।
৯/ একটা মূলনীতি সবসময় মনে রাখতে হবে। মুসলিমগুলাকে ফেসবুক/ব্লগের যেখানেই পান প্রশ্ন করুন আর প্রশ্ন করতেই থাকুন। ওর উত্তরের দিকে মনোযোগ দেয়ার কোন দরকার নাই। ওকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেবেন না। নাহলে ব্যাটা জোকার নায়েক নাস্তিককে যেভাবে প্রশ্ন করতে বলেছে সেভাবে জেরা শুরু করলে আপনার ভাগ্য খারাপ। পিছলিয়ে পালিয়ে আসা ছাড়া উপায় নাই।
১০/ মুসলমানগুলাকে নাস্তিক করতে না পারেন, মনে সন্দেহ ঢুকানোর জন্য যা যা করা লাগে, করবেন।
১১/ তারপরও ইসলামবিরোধীতায় ইসলামিষ্টদের সাথে যুক্তিতর্কে পেরে না উঠলে নিজের ব্লগ বা নিজের ওয়ালে হলে বিরোধীর কমেন্ট মুছে দেবেন। আর সেটা সম্ভব না হলে আমাদের চটি সাইট পড়ার অভিজ্ঞতা বা সিনিয়রদের ইসলামিষ্টদেরকে দেয়া পূর্বের গালিগুলো নির্মমভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
তাতে আপনার লাভ? আপনার লাভ হল আন্তজার্তিক সম্মাননার আশা করতে পারেন, যদি সেই পর্যায়ে যান। ভাগ্য ভাল থাকলে বিদেশের সিটিজেনশীপ পেয়ে যেতে পারেন। ‘মানবতাবাদী ব্লগার/লেখক’ উপাধি পাওয়া তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এভাবেই আপনার উদ্দেশ্য সফল হবে।
আমরা মুক্তমনা নাস্তিক সনাতনীরাও একই উদ্দেশ্যে ব্লগিং ফেইসবুকিং করি। কিন্তু আমাদের জন্য মঞ্জীল অনেক কঠিন। পশ্চিমারা আমাদের ইসলামবিরোধী প্রচারণাকে কমই মূল্য দেয়। কিন্তু মুসলমানদের বিশ্বাসকে চড়া দামে কেনে। ওরা ধরেই নেয় যে হিন্দুরা ইসলামবিদ্বেষী হবেই। মুসলিম থেকে নাস্তিক হওয়া মুক্তমনাদের বাজার দর বেশী। তারাই পশ্চিমা বাজারে বেশী বিকোয়। কাজেই বিদেশে গিয়ে সচ্ছলতার সাথে বসবাস করতে বা আন্তজার্তিক সম্মানোনা পেতে অথবা উভয় স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে মোল্লাদের তুলোধুনা শুরু করুন আর দেশে-বিদেশে ‘মানবতাবাদী’ খেতাব জিতে নিন। কাজে একটু রিস্ক থাকলেও আপনার বিদেশযাত্রা বা অর্থভাগ্য শুভ হলেও হতে পারে। এই ছিল আমার নিজের গল্প আর বক্তব্য। বেষ্ট অফ লাক !
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×