somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রক্তপিপাসু ছাড়পোকা
আমরা বড়ই আজিব প্রাণী , আমরা মানুষরা কি চাই ? আমরা সবাই সুখ চাই ।। কারো সুখ টাকাতে , কারো সুখ নারীতে , কারো স্বাধীনতায় , আমার সুখ কিসে তার সন্ধানে আজ আমি সোডিয়াম লাইটের এই লাল নীল শহরে আজো সিগারেট হাতে হাতরে বেড়াই ।।

'ATLANTIS' THE LOST CITY

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আটলান্টিস
রহস্যনগরী বা রহস্যঘেরা এক স্বপ্নপুরী। আকারে নাকি মহাদেশের মতোই বিশাল ছিল। বিস্ময়করভাবে উন্নত। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিক্ষায়-কৃষ্টিতে, ঐশ্বর্যে-সামরিক শক্তিতে অতুলনীয়। ফুলে-ফলে ভরা ছিল এর উর্বর মাটি। দলবদ্ধ হাতিরা ঘুরে বেড়াত আটলান্টিসের গভীর অরণ্যে। খনিগুলো ভরা ছিল সোনা, রুপা, আর তামার আকরিকে।

এর দক্ষিণে আটলান্টিসের রাজারা গড়ে তুলেছিলেন অনুপম এক শহর। তার নামও আটলান্টিস। একের পর এক সাজানো জলপথ আর স্থলপথ দিয়ে ঘেরা ছিল এই শহর। আর এই নগরের প্রধান আকর্ষণ ছিল রাজপ্রাসাদটি। ছোট্ট একটি টিলার উপর গড়ে তোলা হয়েছিল এই সুরম্য প্রাসাদ। প্রাসাদ ঘিরে ছিল তিনটি খাল। প্রাসাদ চত্বরের একেবারে কেন্দ্রে ছিল একটি মন্দির।

এই মন্দিরে নিয়মিত বসতেন আটলান্টিসের মহাক্ষমতাধর রাজা এ্যাটলাস আর তার নয় ভাই । পাঁচ-ছয় বছর পর পর তারা আসতেন এখানে। তাদের গায়ে থাকতো কালো রংয়ের পবিত্র পোশাক। প্রথমে দেবতাদের উদ্দেশ্যে বুনো ষাঁড় বলি দিতেন তারা। দেবতাদের তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতেন ষাঁড়ের রক্ত। আর তারপর শুরু হত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় আলোচনা। সবশেষে আলোচনার সারসংক্ষেপ লিখে নেওয়া হত সোনার ফলকে আর তা সংরক্ষণ করা হত পরের বৈঠকের জন্য।

এই রাজাদের সুশাসনে দীর্ঘদিন সুখে-শান্তিতে বসবাস করে আটলান্টিসবাসী। আর তারপর একদিন হঠাৎ ধ্বংস হয়ে যায় আটলান্টিস। আকস্মিক দুর্বিপাকে নিমেষে গায়েব হয়ে যায় আটলান্টিসের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ। শক্তিশালী ভূমিকম্প দু-টুকরো করে দেয় আটলান্টিসকে। পাহাড় সমান ঢেউ এসে ভাসিয়ে দেয় আটলান্টিসের নগরগুলোকে। ভেসে যায় ক্ষেত-খামার আর বন-বনানী।

সবার শেষে যে ভূমিকম্পটি হয়েছিল, সেটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। আর সেই ভূমিকম্প মহাদেশটিকে ডুবিয়ে দেয় সাগরতলে। মাত্র একদিন একরাতের মধ্যে গোটা মহাদেশ বিলীন হয়ে যায় সাগরের গভীরে।

কিংবদন্তীর এই বিশাল দ্বীপ আটলান্টিক মহাসাগরে তলিয়ে যাওয়ার পর আর দেখা যায়নি কোনো দিন। এরও প্রায় নয় হাজার বছর পর প্রথমবারের মতো আটলান্টিসের গল্প বলেন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো।

তখন এসব খটমট বই খটমট ভাষায় লেখা হত না; নাটকের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলাই রীতি ছিল। এই নাটকগুলোকে বলা হত ‘ডায়ালগ’। প্লেটোর প্রথম ডায়ালগটির নাম ‘রিপাবলিক’। পরবর্তীতে তিনি আরও দুটি ডায়ালগ রচনা করেন— কাক ‘টিমিউস’ এবং ‘ক্রিটিয়াস’। এ দুটি ডায়ালগেই তিনি বিশদভাবে বর্ণনা দেন আটলান্টিসের। তবে ক্রিটিয়াসের বর্ণনায়ই আটলান্টিসের ছবি সবচেয়ে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সেই বর্ণনা অনেকটা এরকম।

সে একদম সৃষ্টির শুরুর দিকের কথা। দেবতারা তখন পৃথিবী ভাগাভাগি করে নিচ্ছিলেন। এসময় সাগরদেবতা পসাইডন ভাবলেন, তিনি নেবেন বিশাল এক মহাদেশ আর তার চারপাশে ছড়িয়ে থাকা কতগুলো দ্বীপ। যেমনি ভাবা, তেমনি কাজ। তার ছিল পাঁচ জোড়া যমজ সন্তান। প্রথম সন্তানের নাম রাখেন এ্যাটলাস। এই বিশাল ভূ-খণ্ডের নামও রাখলেন এই এ্যাটলাসের নামেই— আটলান্টিস। রাজা পসাইডন আটলান্টিসকে মোট দশ ভাগে ভাগ করলেন। সবচেয়ে বড় আর ভালো অংশটির প্রধান বানালেন এ্যাটলাসকে।

কেবল প্লেটোই যে এই হারিয়ে যাওয়া আটলান্টিসের বর্ণনা দিয়েছেন, তা কিন্তু নয়। পরে আরও অনেকেই এর উল্লেখ করেছেন। যেমন মাদাম বাভাৎস্কি।
রাশিয়ান এই মহিলা ছিলেন অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি আটলান্টিস নিয়ে আস্ত একটি বই-ই লিখেছেন— ‘দ্য সিক্রেট ডকট্রিন’।

দুই খণ্ডের বইটিতে লেখক প্রাচীন আটলান্টিসকে উল্লেখ করেন হারিয়ে যাওয়া লেমুরীয় সভ্যতার উত্তরসুরী হিসেবে। মাদাম বাভাৎস্কি ও তার অনুসারীরা বিশ্বাস করতেন, সৃষ্টির শুরুতে সাতটি মূল জাতি ছিল। আর লেমুরীয়রা তাদের মধ্যে তৃতীয়। দক্ষিণ গোলার্ধ জুড়ে ছিল তাদের মহাদেশ। কথাও বলতে পারত না তারা। তবে তাদের চোখ ছিল তিনটি। তাদের এই তিন নম্বর চোখের এক বিশেষ ক্ষমতা ছিল। সেই ক্ষমতার মাধ্যমেই তারা যোগাযোগ করত একে অপরের সঙ্গে। বাভাৎস্কির মতে, আটলান্টিসবাসীরা এই লেমুরীয়দেরই বংশধর, চতুর্থ মূল জাতি। লাখ লাখ বছর আগে ডুবে যায় লেমুরীয়দের মহাদেশ। উত্তর আটলান্টিকে কেবল জেগে ছিল সামান্য একটু অংশ। পরবর্তীতে সেখানেই গড়ে ওঠে আটলান্টিস সভ্যতা। একদিন ডুবে যায় সেটিও।


অস্ট্রিয়ার দার্শনিক রুডলফ স্টাইনারও বলে গেছেন আটলান্টিসের কথা। তিনি গবেষণা করে দেখান, আটলান্টিসবাসীরা উড়তেও শিখেছিল। তবে ওদের আকাশযানগুলো এখনকার পৃথিবীতে ওড়ার উপযোগী নয় মোটেও। কারণ, তখনকার দিনে বাতাস ছিল অনেক ঘন আর ভারি।


আটলান্টিসকে নিয়ে লিখেছেন উইলিয়াম স্কট-এলিয়ট-ও। আর তার বর্ণনা প্লেটোর চেয়েও নিখুঁত। দিব্যজ্ঞান পেয়েছিলেন তিনি। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তার বই ‘দ্য স্টোরি অফ আটলান্টিস’। ওই বইয়ের তিনি লিখেছেন, আটলান্টিস শাসন করত এক শ্রেণীর অভিজাত মানুষ। তাদের সমাজ ছিল সর্বগ্রাসী, সর্বনাশা। সব কিছুকেই নিজেদের আয়ত্তে নিতে চাইত তারা। প্রযুক্তির দিক থেকেও উৎকর্ষতা লাভ করেছিল আটলান্টিয়ানরা। ঘণ্টায় একশ মাইল গতিতে চলতে পারে এমন উড়োজাহাজ আবিষ্কার করেছিল তারা। আর সেই উড়োজাহাজ চালান হত ‘ভ্রিল’ নামের এক ঘরনের জ্বালানি দিয়ে। যার সঙ্গে মিল আছে আজকের জেট ফুয়েলের।

পরে ১৯০৪ সালে প্রকাশিত হয় তার আরেক বই ‘দ্য লস্ট লেমুরিয়া’। ১৯২৫ সালে দুইটি বই একত্র করে প্রকাশ করা হয় ‘দ্য স্টোরি অফ আটলান্টিস এন্ড দ্য লস্ট লেমুরিয়া’ নামে।

এরপর গড়িয়ে যায় বেশ কিছুদিন। এরপর আবার আটলান্টিস নিয়ে কথা বলেন ড. জার্মেন স্প্যানুথ।
তিনি ১৯৫৩ সালে জানান, প্লেটো মাদাম বাভাৎস্কি আর স্কট-এলিয়ট যে আটলান্টিসের কথা বলেছেন, তা সত্যিই আছে। তিনি ইউরোপের মূল ভূখণ্ড এবং ব্রিটেনের মাঝামাঝি উত্তর সাগরে অভিযান চালান। আশানুরূপ সাফল্যও পান। তাঁর অনুসন্ধানী দলের এক ডুবুরি সাগরতলের ত্রিশ ফুট নিচে বিস্ময়কর এক দেয়াল খুঁজে পায়। দেয়ালটি ১,০১২ গজ বৃত্তাকার সীমানা ঘিরে রয়েছে। প্রায় দশটা ফুটবল মাঠের সমান। আড়াআড়ি ৩২৮ গজ।
সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে ডুবুরিরা পরে আরও কিছু জিনিস নিয়ে আসে। এক ডুবুরি নিয়ে আসে চকমকি পাথর। ড. স্প্যানুথের ধারণা, এগুলো সবই আটলান্টিসের কোনো রাজপথের ভগ্নাংশ। আর চকমকি পাথরটি সম্ভবত ব্যবহৃত হত হাতিয়ার হিসেবে।এই অভিযানে অবশ্য নিশ্চিত করে প্রমাণ হয় না যে, উত্তর সাগরের এই ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিসই। তবে সম্ভাবনাটুকুও তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না,

১৯৬৮ সালে এগার ক্যাচি তার বই On Atlantis এ দাবি করেন ,তিনি মিসরের নীলনদ এবং স্ফিংসের মুরতির মাঝে Hall of records আবিস্কার করেন , যা তিনি দাবি করেন আটলান্টিস এর ধংসাবশেষ।
আসলেই কি আটলান্টিসের অস্তিত্ব ছিল?? এই নিয়ে Maxine Asher ১৯৭৩ সালে ইউপিআই (United Press International) এবং আরো কিছু বিখ্যাত সংস্থাকে জানান তার অনুসন্ধান দলের স্কুবা ডাইভাররা সমুদ্রের তলদেশ থেকে আটলান্টিসের নিদর্শন উদ্বার করতে সক্ষম হয়েছেন।এই নিদর্শন গুলোর মাঝে ছিল প্লুটোর ব্যাখা করা সর্পিল রাস্তা আর স্তুম্ব।
তিনি বলেন-
"The divers had found evidence of roads and large columns , some with concentric spiral motifs , in the exact place descrived by the Greek philosipher Plato.This is probably the greatest in world history."
কিছু কিছু ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতত্তবিদরা বিশ্বাস করে ,আটলান্টিসের অস্তিত্বের কারন মায়া পুরাণেও আছে, তারা এক প্রলয়ের পর তাদের মাঝখানের সমুদ্রের দেশ থেকে এখানে আসে ।

১৯৭০ সালে Dr. Ray Brown বাহামাসের কাছ থেকে কিছু ধাতব বস্তু এবং ক্রিস্টাল আবিষ্কার করে , যার মধ্যে দিয়ে শক্তি প্রবেশ করিয়ে তা বহুগুনে বাড়ানো যায় ।
বিভিন্ন পুরোনো যেসব ম্যাপ আছে তাতে আটলান্টিস নামের ভুখন্ড দেখানো হয়েছে , সবচেয়ে আকৃষ্টকর তথ্য হল কলম্বাস আমেরিকা যাবার পথ অনুসন্ধানের জন্যে যে প্রাচীন গ্রিক ম্যাপ ব্যবহার করেছিলেন তাতে আটলাণ্টিসের ভুখন্ড দেখানো হয়েছে। (কলম্বাস হলেন আমেরিকা মহাদেশের আবিস্কারক ,নিচে তার ম্যাপের ছবি দেওয়া আছে)
মায়া, মিশর , আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপের পুথিতে এবং পুরাণে সমুদ্র মাঝের ভুখন্ডের সাথে বানিজ্যের কথা আছে।
১৯৭৭ সালে Ari Marshall তার বাহামা দ্বিপপুঞ্জে ১৫০ ফিট পানির নিচে একটি বিশাল পিরামিড খুজে পান যা প্রায় ৬৫০ ফিট দীর্ঘ।আর রহস্যময় ব্যাপার হচ্ছে পিরামিডের চারিপাশের পানির বর্ণ সবুজ , যেখানে একই গভীরতায় অন্য পাশের পানির রঙ কালো।
Heinrich Schilemann ট্রয় নগরীর ধংসাবেশ আবিস্কার করেন । ফলে ট্রয় নগরীর কাহিনীর কিছু প্রমান পাওয়া যায় যা আগে মিথ(myth) হিসেবে ভাবা হত। তিনি তার অভিযানের মধ্যে পাওয়া কিছু জিনিসের মাঝে একটা ব্রোঞ্জের বাক্স পায় , যাতে কিছু ধাতব বস্তু খুজে পান।বাক্সে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী - আটলান্টিসের রাজা ক্রোনোসের পক্ষ থেকে ট্রয়ের রাজা প্রিয়ামের জন্যর উপহার।

আটলান্টিসের গল্পঃ সোলনের মতে আটলান্টিসের ইতিহাস সূচনা হয় পৃথিবীর শুরুর দিকে। এটা সে সময় যখন পৃথিবীতে বিচরণ ছিল অমর দেবতাদের। তাঁরা সমগ্র পৃথিবীকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিলেন। দেবতা পসেডিয়ানের ভাগে পড়েছিল আটলান্টিস, যে ভুখন্ড কিনা লিবিয়া এবং এশিয়ার মিলিত ভূখন্ডের চেয়েও বৃহৎ ছিল। তিনি স্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন একজন সাধারণ মানবীকে নাম ক্লিয়েটো এবং এই ক্লিয়েটোর মাধ্যমেই পত্তন ঘটে আটলান্টিসের রাজপরিবারের।
দেবতা পসেডিয়ান তাঁর প্রিয়তমা পত্নী ক্লিয়েটোর জন্য দ্বীপের ঠিক মাঝখানে পাহাড়ের উপর গড়েন এক সুরম্য অট্টালিকা। সেই অট্টালিকাটিকে সুরক্ষিত করার জন্য তিনি ওটার চারপাশে গড়ে তোলেন পাঁচটি জল ও স্থলের চক্র। সৃষ্টি করলেন উষ্ণ এবং শীতল পানির ঝরনা। অর্থাৎ ভবিষ্যত নগরায়নের সব ব্যবস্থা তিনি সম্পন্ন করে রাখেন।
ক্লিয়েটোর কোল আলো করে আসে দেবতা পসেডিয়ানের পাঁচ জোড়া সন্তান। এটলাসকে, যিনি ছিলেন প্রথম জোড়ার প্রথম জন, তার পিতা এ সমগ্র ভূখন্ডের রাজা হিসেবে নিয়োগ করেন। তাঁর অন্য সন্তানেরা হন রাজকুমার এবং তাদেরকে দ্বীপটির বিভিন্ন অংশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটলাসেরো অনেকগুলো সন্তান ছিল এবং রাজমুকুট বংশ পরম্পরায় জেষ্ঠ্য সন্তানের মাথাতেই উঠত।
বহু বছর ধরেই আটলান্টিসের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং উন্নয়নশীল। অধিবাসীদের অধিকাংশ চাহিদাই দ্বীপের খনি, চাষের জমি এবং বন থেকেই মিটে যেত। অবশিষ্টাংশ রপ্তানী হত দ্বীপটির বাইরে থেকে।
দেবতা পসেডিয়ান আটলান্টিসের জীবনযাত্রাকে সুশৃঙ্খল জন্য কিছু আইন তৈরী করেন। কোন একক শাসক নয় বরং দশ জনের এক শাসকগোষ্ঠি পরিচালনা করত এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে (এটলাস এবং তার বাকি নয় জন ভাই, যারা পরাক্রমশীলতার সাথে রাজত্ব করেছিলেন)। শাসকচক্রের সব সদস্য নিয়মিত মিলিত হত দেবতা পসেডিয়ানের মন্দিরে। সেই প্রাচীন বৈঠকের শুরুতে তারা একে অপরকে সম্ভাষন করতেন। তারপর একটি তেজী ষাঁড়কে ধরে প্রথমে সেটাকে হত্যা করে রক্ত সংগ্রহ করা হত এবং পরবর্তীতে ষাঁড়টিকে স্বর্গের দেবতাদের উদ্দেশ্যে পুরানো হত আগুনে । ষাঁড়ের রক্ত ওয়াইনের সাথে মিশিয়ে কিছুটা ছিটানো হত আগুনের উপর। আর বাকি ওয়াইনের স্থান হত দশটি স্বর্ণ পাত্রে। প্রত্যেকে সেই পাত্র আগুনের সামনে উচিয়ে পিতৃদেব প্রদত্ত আইন সঠিকভাবে পালনের শপথ করতেন। শপথ গ্রহণ ও পাণীয় পানের পর স্বর্ণ পাত্রগুলো উৎসর্গ করা হত মন্দিরে।
এভাবে ভালই কাটছিল দিন। বিচক্ষণ পসেডিয়ানের প্রদর্শিত পথে আটলান্টিস হয়ে উঠছিল স্বর্গের জন্যেও ইর্ষণীয়। কিন্তু পসেডিয়ানের বংশধরদের রক্তে যে মানুষেরও সংমিশ্রণ ছিল, আর মানুষ যে ভুলেরই সমার্থক। তারা যখন ধীরে ধীরে পসেডিয়ানের নিয়মকানুন ভুলে যেতে বসল তখনই শুরু হল বিপত্তি। বেশির ভাগ শাসকই সাধারণ মানুষকে বিয়ে করল। তাদেরর আচরণ হয়ে উঠতে লাগল নির্বোধের মত। তাঁরা দেবতাদের কথা ভুলে হয়ে উঠতে লাগল স্বেচ্ছাচারী ও ক্ষমতালোভী। লালায়িত হতে লাগল আরো বৃহৎ ক্ষমতার জন্য।
দেবরাজ জিউস উপর থেকে সবই পর্যবেক্ষণ করলেন...... দেখলেন কিভাবে মানুষেরা কিভাবে দেবতাদের অনুশাসন ভুলে হয়ে উঠেছে শয়তানের দাস। অলিম্পাসে বসল দেবতাদের বৈঠক আর ঘোষিত হল আটলান্টিসের ভাগ্য......... এরপরের ইতিহাস সবারই জানা।




আটলান্টিয়ানদের প্রযুক্তিঃ

আটলান্টিয়ানদের প্রুযুক্তি, জ্ঞান এবং ধ্যানধারণা অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতা থেকে ভিন্ন ধরনের ছিল। তারা চতুর্মাত্রিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ের উপর পারদর্শী ছিল। সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় প্রযুক্তিগত ভাবে আটলান্টিয়ানরা অনেক উন্নত ছিল। ধারনা করা হয় কিছু কিছু ব্যাপারে তারা এখনকার পৃথিবীর চেয়েও অগ্রগামী ছিল।
তাদের অর্জিত প্রযুক্তির মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হল ‘আবহাওয়া নিয়ন্ত্রন’, যার দ্বারা তারা প্রচুর খাদ্যশস্য উৎপাদনে সক্ষম ছিল। তারা পুরো বছরই প্রচুর খাদ্যশস্য উতপাদন করত। কোন কিছুরই অভাব ছিলনা তাদের। দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র, ক্ষুদা ইত্যাদি তাদের স্পর্শ করতনা। কিন্তু এত প্রাচুর্যের মধ্যে থেকেও তাদের জীবনটাকে একঘেয়ে লাগতে শুরু করল। জীবনে পরিবর্তন আনতেই তারা অভিযান করে নতুন কিছু জানার নেশায়।
ভূতাত্ত্বিক ঘটনা যেমন অগ্নুৎপাত, জলোচ্ছ্বাস এসব কিছু তারা প্রভাবিত করত বলে ধারনা করা হয়। কিন্তু একসময় তারা তাদের চিত্তবিনোদনের জন্য অগ্নুৎপাত, জলোচ্ছ্বাস, লাভার ঝর্না এসব ইচ্ছেমত পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকল। ধারনা করা হয় যে এভাবে একসময় তারা ভূতাত্ত্বিক এসব বিষয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং ধ্বংসের মুখে পরে।
আটলান্টিয়ানদের মধ্যে ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের ব্যবহার বেস ব্যাপক ভাবে ছিল। তারা ক্রিস্টাল এর প্রতিসরণ, বিবর্ধন এবং সংগ্রহণ ক্ষমতার উপর প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছিল। ক্রিস্টাল এর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি কোন শক্তিকে বিবর্ধিত করে। এটি এর ভেতর দিয়ে গমনকারী শক্তিকে বিবর্ধিত করে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে নিয়ে আসে এবং এরপর তাকে স্থানান্তরিত বা ট্রান্সমিট করে বা বিক্ষিপ্ত করে। অপর একটি অনুরূপ ক্রিস্টালকে সংগ্রাহক বা রিসিভার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরপর সেই রিসিভার ক্রিস্টালটি ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে যা অপর একটি ক্রিস্টালে শক্তি স্থানান্তর করে। আটলান্টিয়ানরা এমন একধরনের ক্রিস্টালের তৈরি বিশাল পিরামিডগুলোকে শক্তি নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করত।। বিষয়টা একটু গভিরভাবে ভেবে দেখুন। যখন পৃথিবীর একপ্রান্ত শক্তির উৎসের দিকে মুখ করে থাকে তখন ঐ প্রান্তের পিরামিডটি শক্তিটিকে বিবর্ধিত করে দূরবর্তী এবং সঠিক গননার মাধ্যমে স্থাপিত আরেকটি পিরামিডে শক্তি ট্রান্সমিট করে যা রিসিভার হিশেবে কাজ করে। এভাবে পর্যায়ক্রমে তারা শক্তি স্থানান্তরিত এবং ব্যবহার করত। এ পদ্ধতিতে যখন কোন পিরামিডে শক্তির ঘাটতি হয় তখন অপর পিরামিডগুলো তার প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। খুবই সহজ সরল এবং কার্যকরী পদ্ধতি। কিন্তু নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে না চলায় পরে এ পদ্ধতি তাদের ধংসের কারন হয়েছিল।
ধারনা করা হয় এক বিশেষ ধরণের বিভিন্ন মাপের এবং আকৃতির ক্রিস্টাল ব্যবহার করতো। কিছু ক্রিস্টাল প্রায় ২৫ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট ব্যাসের এবং এর ১২ টি তল ছিল। এসব ক্রিস্টালকে শক্তি সংগ্রহ এবং স্থানান্তরের কাজে ব্যবহার করা হতো।এছাড়াও ছিল ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা ছোট ছোট বিভিন্ন বর্ণের ক্রিস্টাল।
এসব ক্রিস্টাল বড় ক্রিস্টাল গুলোর সাহায্যকারী হিশেবে কাজ করত। বড় ক্রিস্টাল গুলোর শক্তি ব্যবহার করে ছোট ক্রিস্টাল গুলো দ্বারা আটলান্টিয়ানরা কোয়ান্টাম হিলিং, মেডিটেশন, মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়ন, যোগাযোগ, পরিবহন , Dematerialization ইত্যাদি কাজ করতো। এভাবে তারা আধ্যাত্মিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং চতুর্মাত্রিক জ্ঞান অর্জন করেছিল। ক্রিস্টালের শক্তির উৎস ছিল সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, পৃথিবীর নিজস্ব গ্রিড ইত্যাদি। Edgar Cayce আটলান্টিয়ানদের রহস্যময় কিছু ধারনা দেন। তিনি বলেন
“A number of crystals were shaped into invered pyramids, with four to six sides, were infused with various shades of pink or rose, which created a light beam for surgery, by changing molecular structure, and for soothing pain, particularly in the delicate areas of the brain, the eyes, the heart and reproductive organs. Gold or yellow crystals changed colours to deeper hues in the presence of disease or bodily vibrational disorders. Ruby and purple stones helped cure emotional and spiritual problems; and black crystals, no longer in existence, were powerful protectors.
তিনি আরও বলেন যে আটলান্টিয়ানরা ক্রিস্টালকে একটি বিশেষ ডিম্বাকার ভবনের উপরিভাগে রাখতো এবং ক্রিস্টালটির শক্তির উৎস অনুযায়ী দিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছিল।ভবনের অভ্যন্তরভাগ অপরিবাহী ধাতু এবং পাথর দিয়ে সজ্জিত থাকত। ক্রিস্টালটিকে তিনি Tuaoi Stone, বা Firestone দ্বারা অভিহিত করেন। তার ধারনা অনুযায়ী ক্রিস্টালটি বিশাল ঘনকের মত লম্বা এবং আকৃতি প্রিজমের মতো। এর ৬ টি তল ছিল। ধারনা করা হয় ক্রিস্টালটি সৌর, চান্দ্র, নাক্ষত্রিক, বায়ুমণ্ডলীয় এবং অন্যান্য অজানা রহস্যময় শক্তি উৎস হতে শক্তি সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে একত্রীত বা ঘনীভূত করতো। মজার ব্যাপার হল অনেকের ধারনা ক্রিস্টালের ঘনীভূত এবং সঞ্চিত শক্তিকে নিজেদের পরিবহনের কাজে ব্যবহার করত। অবিশ্বাস্য!! হয়তো পুরটাই আজগুবি ধারনা বা কল্পনা বা ফ্যান্টাসি কিন্তু চলুননা এই ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড এ একটু ঘুরে আসি শুধুমাত্র ইন্টারেস্ট নিয়ে, বিশ্বাস অবিশ্বাস কিছুই করার দরকার নেই। গবেষকদের ধারনা অনুযায়ী আটলান্টিয়ানরা ক্রিস্টালের শক্তি ব্যবহার করে কোন বস্তুকে বা body কে Dematerialized করতো আবার রিসিভার ক্রিস্টাল তাকে materialized করতো। ধরুন আপনি কোন স্থানে যেতে চাচ্ছেন। ক্রিস্টালের ঘনীভূত প্রচণ্ড শক্তির দ্বারা আপনার দেহকে Dematerialized করে শক্তি বা তরঙ্গে পরিণত করা হবে এবং একে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এবং কম্পাঙ্কে নিক্ষিপ্ত করা হবে অপর একটি দূরবর্তী ক্রিস্টাল এ যা রিসিভার হিশেবে কাজ করে শক্তিকে পাঠিয়ে দেবে storage ক্রিস্টাল এ যেটি আপনাকে energy থেকে পরিবর্তন করে বা materialized হিউম্যান বডি তে রূপান্তরিত করবে। !! ??? কল্পনা, fantasy, imagination যা ইচ্ছে বলতে পারেন একে। হয়ত এসব শুধুই কল্পনা আবার এও হতে পারে যে সময়ের সাথে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে এসব প্রমানিত হবে। বিজ্ঞানের বড় বড় আবিস্কারের পেছনেই কিন্তু এই “Imagination “ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটি অনেকটাই Teleportation এর মতো যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন, যেটাকে বলা হচ্ছে future transportation.আবার অনেকে ধারনা করেন যে , আটলান্টিয়ানদের ব্যবহৃত এই রহস্যময় ক্রিস্টালের ধবংসাশেষ এখনো বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এ যা কোন বস্তুকে Dematerialized করে ফেলে। কে জানে? হয়তো ঠিক আবার হয়তো না।
ক্রিস্টালের এই শক্তিকে আটলান্টিয়ানরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতো। প্রথম প্রথম এই শক্তিকে শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক কাজে ব্যবহার করা হতো এবং এর নিয়ন্ত্রক থাকতো একজন দক্ষ লোক, অনেকটা মঙ্ক এর মতো। ধারন করা হয় এই শক্তি ব্যবহার করে আটলান্টিয়ানরা তাদের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে তারা ৭০০ থেকে ৮০০ বছর বেঁচে থাকত। পরবর্তীতে তারা ক্রিস্টাল কে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে শুরু করল। ক্রিস্টালের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিভিন্ন শক্তিকে তারা বিভিন্ন কাজে যেমন কথা ছবি আদান প্রদান এ ব্যবহার করত। অনেকটা আমাদের রেডিও এবং টেলিভিশনের মতো। কিন্তু আস্তে আস্তে আটলান্টিয়ানরা আরও ক্ষমতা অর্জনের জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী হল। ক্রিস্টালের নিয়ন্ত্রক হতে থাকল অদক্ষ লোক যাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান ছিল কম। তারা ক্রিস্টালের শক্তি ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকলো এবং উচ্চ শক্তি সংগ্রহ করতে থাকলো। এই শক্তি ব্যবহার করে তারা পাহাড় গলানো, অগ্নুৎপাত, জলোচ্ছ্বাস এসব ভূতাত্ত্বিক ঘটনা সমুহ ঘটাতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে শিখল। কিন্তু তারা ক্রিস্টালের শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হল। ক্রিস্টালের বিবর্ধিত প্রচণ্ড শক্তির প্রভাবে ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি ঘটতে লাগলো। ধারনা করা হয় যে এই শক্তির প্রভাবে পৃথিবীর অক্ষের পরিবর্তন হয়। এসব ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের দ্বারা আটলান্টিস ধ্বংস হয়ে মিশে যায় সাগর তলে। একটি উন্নত সভ্যতা হারিয়ে যায় পৃথিবী হতে। কিন্তু এর কথা উপকথা বা মিথ হয়ে এখনো পৃথিবীতে রয়ে গেছে।

আটলান্টিস।রহস্যনগরী বা রহস্যঘেরা এক স্বপ্নপুরী। আকারে নাকি মহাদেশের মতোই বিশাল ছিল। বিস্ময়করভাবে উন্নত। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিক্ষায়-কৃষ্টিতে, ঐশ্বর্যে-সামরিক শক্তিতে অতুলনীয়। ফুলে-ফলে ভরা ছিল এর উর্বর মাটি। দলবদ্ধ হাতিরা ঘুরে বেড়াত আটলান্টিসের গভীর অরণ্যে। খনিগুলো ভরা ছিল সোনা, রুপা, আর তামার আকরিকে।

এর দক্ষিণে আটলান্টিসের রাজারা গড়ে তুলেছিলেন অনুপম এক শহর। তার নামও আটলান্টিস। একের পর এক সাজানো জলপথ আর স্থলপথ দিয়ে ঘেরা ছিল এই শহর। আর এই নগরের প্রধান আকর্ষণ ছিল রাজপ্রাসাদটি। ছোট্ট একটি টিলার উপর গড়ে তোলা হয়েছিল এই সুরম্য প্রাসাদ। প্রাসাদ ঘিরে ছিল তিনটি খাল। প্রাসাদ চত্বরের একেবারে কেন্দ্রে ছিল একটি মন্দির।

এই মন্দিরে নিয়মিত বসতেন আটলান্টিসের মহাক্ষমতাধর রাজা এ্যাটলাস আর তার নয় ভাই । পাঁচ-ছয় বছর পর পর তারা আসতেন এখানে। তাদের গায়ে থাকতো কালো রংয়ের পবিত্র পোশাক। প্রথমে দেবতাদের উদ্দেশ্যে বুনো ষাঁড় বলি দিতেন তারা। দেবতাদের তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতেন ষাঁড়ের রক্ত। আর তারপর শুরু হত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় আলোচনা। সবশেষে আলোচনার সারসংক্ষেপ লিখে নেওয়া হত সোনার ফলকে আর তা সংরক্ষণ করা হত পরের বৈঠকের জন্য।

এই রাজাদের সুশাসনে দীর্ঘদিন সুখে-শান্তিতে বসবাস করে আটলান্টিসবাসী। আর তারপর একদিন হঠাৎ ধ্বংস হয়ে যায় আটলান্টিস। আকস্মিক দুর্বিপাকে নিমেষে গায়েব হয়ে যায় আটলান্টিসের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ। শক্তিশালী ভূমিকম্প দু-টুকরো করে দেয় আটলান্টিসকে। পাহাড় সমান ঢেউ এসে ভাসিয়ে দেয় আটলান্টিসের নগরগুলোকে। ভেসে যায় ক্ষেত-খামার আর বন-বনানী।

সবার শেষে যে ভূমিকম্পটি হয়েছিল, সেটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। আর সেই ভূমিকম্প মহাদেশটিকে ডুবিয়ে দেয় সাগরতলে। মাত্র একদিন একরাতের মধ্যে গোটা মহাদেশ বিলীন হয়ে যায় সাগরের গভীরে।

কিংবদন্তীর এই বিশাল দ্বীপ আটলান্টিক মহাসাগরে তলিয়ে যাওয়ার পর আর দেখা যায়নি কোনো দিন। এরও প্রায় নয় হাজার বছর পর প্রথমবারের মতো আটলান্টিসের গল্প বলেন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো।

তখন এসব খটমট বই খটমট ভাষায় লেখা হত না; নাটকের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলাই রীতি ছিল। এই নাটকগুলোকে বলা হত ‘ডায়ালগ’। প্লেটোর প্রথম ডায়ালগটির নাম ‘রিপাবলিক’। পরবর্তীতে তিনি আরও দুটি ডায়ালগ রচনা করেন— কাক ‘টিমিউস’ এবং ‘ক্রিটিয়াস’। এ দুটি ডায়ালগেই তিনি বিশদভাবে বর্ণনা দেন আটলান্টিসের। তবে ক্রিটিয়াসের বর্ণনায়ই আটলান্টিসের ছবি সবচেয়ে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সেই বর্ণনা অনেকটা এরকম।

সে একদম সৃষ্টির শুরুর দিকের কথা। দেবতারা তখন পৃথিবী ভাগাভাগি করে নিচ্ছিলেন। এসময় সাগরদেবতা পসাইডন ভাবলেন, তিনি নেবেন বিশাল এক মহাদেশ আর তার চারপাশে ছড়িয়ে থাকা কতগুলো দ্বীপ। যেমনি ভাবা, তেমনি কাজ। তার ছিল পাঁচ জোড়া যমজ সন্তান। প্রথম সন্তানের নাম রাখেন এ্যাটলাস। এই বিশাল ভূ-খণ্ডের নামও রাখলেন এই এ্যাটলাসের নামেই— আটলান্টিস। রাজা পসাইডন আটলান্টিসকে মোট দশ ভাগে ভাগ করলেন। সবচেয়ে বড় আর ভালো অংশটির প্রধান বানালেন এ্যাটলাসকে।

কেবল প্লেটোই যে এই হারিয়ে যাওয়া আটলান্টিসের বর্ণনা দিয়েছেন, তা কিন্তু নয়। পরে আরও অনেকেই এর উল্লেখ করেছেন। যেমন মাদাম বাভাৎস্কি।
রাশিয়ান এই মহিলা ছিলেন অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি আটলান্টিস নিয়ে আস্ত একটি বই-ই লিখেছেন— ‘দ্য সিক্রেট ডকট্রিন’।

দুই খণ্ডের বইটিতে লেখক প্রাচীন আটলান্টিসকে উল্লেখ করেন হারিয়ে যাওয়া লেমুরীয় সভ্যতার উত্তরসুরী হিসেবে। মাদাম বাভাৎস্কি ও তার অনুসারীরা বিশ্বাস করতেন, সৃষ্টির শুরুতে সাতটি মূল জাতি ছিল। আর লেমুরীয়রা তাদের মধ্যে তৃতীয়। দক্ষিণ গোলার্ধ জুড়ে ছিল তাদের মহাদেশ। কথাও বলতে পারত না তারা। তবে তাদের চোখ ছিল তিনটি। তাদের এই তিন নম্বর চোখের এক বিশেষ ক্ষমতা ছিল। সেই ক্ষমতার মাধ্যমেই তারা যোগাযোগ করত একে অপরের সঙ্গে। বাভাৎস্কির মতে, আটলান্টিসবাসীরা এই লেমুরীয়দেরই বংশধর, চতুর্থ মূল জাতি। লাখ লাখ বছর আগে ডুবে যায় লেমুরীয়দের মহাদেশ। উত্তর আটলান্টিকে কেবল জেগে ছিল সামান্য একটু অংশ। পরবর্তীতে সেখানেই গড়ে ওঠে আটলান্টিস সভ্যতা। একদিন ডুবে যায় সেটিও।


অস্ট্রিয়ার দার্শনিক রুডলফ স্টাইনারও বলে গেছেন আটলান্টিসের কথা। তিনি গবেষণা করে দেখান, আটলান্টিসবাসীরা উড়তেও শিখেছিল। তবে ওদের আকাশযানগুলো এখনকার পৃথিবীতে ওড়ার উপযোগী নয় মোটেও। কারণ, তখনকার দিনে বাতাস ছিল অনেক ঘন আর ভারি।


আটলান্টিসকে নিয়ে লিখেছেন উইলিয়াম স্কট-এলিয়ট-ও। আর তার বর্ণনা প্লেটোর চেয়েও নিখুঁত। দিব্যজ্ঞান পেয়েছিলেন তিনি। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তার বই ‘দ্য স্টোরি অফ আটলান্টিস’। ওই বইয়ের তিনি লিখেছেন, আটলান্টিস শাসন করত এক শ্রেণীর অভিজাত মানুষ। তাদের সমাজ ছিল সর্বগ্রাসী, সর্বনাশা। সব কিছুকেই নিজেদের আয়ত্তে নিতে চাইত তারা। প্রযুক্তির দিক থেকেও উৎকর্ষতা লাভ করেছিল আটলান্টিয়ানরা। ঘণ্টায় একশ মাইল গতিতে চলতে পারে এমন উড়োজাহাজ আবিষ্কার করেছিল তারা। আর সেই উড়োজাহাজ চালান হত ‘ভ্রিল’ নামের এক ঘরনের জ্বালানি দিয়ে। যার সঙ্গে মিল আছে আজকের জেট ফুয়েলের।

পরে ১৯০৪ সালে প্রকাশিত হয় তার আরেক বই ‘দ্য লস্ট লেমুরিয়া’। ১৯২৫ সালে দুইটি বই একত্র করে প্রকাশ করা হয় ‘দ্য স্টোরি অফ আটলান্টিস এন্ড দ্য লস্ট লেমুরিয়া’ নামে।

এরপর গড়িয়ে যায় বেশ কিছুদিন। এরপর আবার আটলান্টিস নিয়ে কথা বলেন ড. জার্মেন স্প্যানুথ।
তিনি ১৯৫৩ সালে জানান, প্লেটো মাদাম বাভাৎস্কি আর স্কট-এলিয়ট যে আটলান্টিসের কথা বলেছেন, তা সত্যিই আছে। তিনি ইউরোপের মূল ভূখণ্ড এবং ব্রিটেনের মাঝামাঝি উত্তর সাগরে অভিযান চালান। আশানুরূপ সাফল্যও পান। তাঁর অনুসন্ধানী দলের এক ডুবুরি সাগরতলের ত্রিশ ফুট নিচে বিস্ময়কর এক দেয়াল খুঁজে পায়। দেয়ালটি ১,০১২ গজ বৃত্তাকার সীমানা ঘিরে রয়েছে। প্রায় দশটা ফুটবল মাঠের সমান। আড়াআড়ি ৩২৮ গজ।
সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে ডুবুরিরা পরে আরও কিছু জিনিস নিয়ে আসে। এক ডুবুরি নিয়ে আসে চকমকি পাথর। ড. স্প্যানুথের ধারণা, এগুলো সবই আটলান্টিসের কোনো রাজপথের ভগ্নাংশ। আর চকমকি পাথরটি সম্ভবত ব্যবহৃত হত হাতিয়ার হিসেবে।এই অভিযানে অবশ্য নিশ্চিত করে প্রমাণ হয় না যে, উত্তর সাগরের এই ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিসই। তবে সম্ভাবনাটুকুও তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না,

১৯৬৮ সালে এগার ক্যাচি তার বই On Atlantis এ দাবি করেন ,তিনি মিসরের নীলনদ এবং স্ফিংসের মুরতির মাঝে Hall of records আবিস্কার করেন , যা তিনি দাবি করেন আটলান্টিস এর ধংসাবশেষ।
আসলেই কি আটলান্টিসের অস্তিত্ব ছিল?? এই নিয়ে Maxine Asher ১৯৭৩ সালে ইউপিআই (United Press International) এবং আরো কিছু বিখ্যাত সংস্থাকে জানান তার অনুসন্ধান দলের স্কুবা ডাইভাররা সমুদ্রের তলদেশ থেকে আটলান্টিসের নিদর্শন উদ্বার করতে সক্ষম হয়েছেন।এই নিদর্শন গুলোর মাঝে ছিল প্লুটোর ব্যাখা করা সর্পিল রাস্তা আর স্তুম্ব।
তিনি বলেন-
"The divers had found evidence of roads and large columns , some with concentric spiral motifs , in the exact place descrived by the Greek philosipher Plato.This is probably the greatest in world history."
কিছু কিছু ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতত্তবিদরা বিশ্বাস করে ,আটলান্টিসের অস্তিত্বের কারন মায়া পুরাণেও আছে, তারা এক প্রলয়ের পর তাদের মাঝখানের সমুদ্রের দেশ থেকে এখানে আসে ।

১৯৭০ সালে Dr. Ray Brown বাহামাসের কাছ থেকে কিছু ধাতব বস্তু এবং ক্রিস্টাল আবিষ্কার করে , যার মধ্যে দিয়ে শক্তি প্রবেশ করিয়ে তা বহুগুনে বাড়ানো যায় ।
বিভিন্ন পুরোনো যেসব ম্যাপ আছে তাতে আটলান্টিস নামের ভুখন্ড দেখানো হয়েছে , সবচেয়ে আকৃষ্টকর তথ্য হল কলম্বাস আমেরিকা যাবার পথ অনুসন্ধানের জন্যে যে প্রাচীন গ্রিক ম্যাপ ব্যবহার করেছিলেন তাতে আটলাণ্টিসের ভুখন্ড দেখানো হয়েছে। (কলম্বাস হলেন আমেরিকা মহাদেশের আবিস্কারক , উপরে তার ম্যাপের ছবি দেওয়া আছে)
মায়া, মিশর , আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপের পুথিতে এবং পুরাণে সমুদ্র মাঝের ভুখন্ডের সাথে বানিজ্যের কথা আছে।
১৯৭৭ সালে Ari Marshall তার বাহামা দ্বিপপুঞ্জে ১৫০ ফিট পানির নিচে একটি বিশাল পিরামিড খুজে পান যা প্রায় ৬৫০ ফিট দীর্ঘ।আর রহস্যময় ব্যাপার হচ্ছে পিরামিডের চারিপাশের পানির বর্ণ সবুজ , যেখানে একই গভীরতায় অন্য পাশের পানির রঙ কালো।
Heinrich Schilemann ট্রয় নগরীর ধংসাবেশ আবিস্কার করেন । ফলে ট্রয় নগরীর কাহিনীর কিছু প্রমান পাওয়া যায় যা আগে মিথ(myth) হিসেবে ভাবা হত। তিনি তার অভিযানের মধ্যে পাওয়া কিছু জিনিসের মাঝে একটা ব্রোঞ্জের বাক্স পায় , যাতে কিছু ধাতব বস্তু খুজে পান।বাক্সে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী - আটলান্টিসের রাজা ক্রোনোসের পক্ষ থেকে ট্রয়ের রাজা প্রিয়ামের জন্যর উপহার।

আটলান্টিসের গল্পঃ সোলনের মতে আটলান্টিসের ইতিহাস সূচনা হয় পৃথিবীর শুরুর দিকে। এটা সে সময় যখন পৃথিবীতে বিচরণ ছিল অমর দেবতাদের। তাঁরা সমগ্র পৃথিবীকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিলেন। দেবতা পসেডিয়ানের ভাগে পড়েছিল আটলান্টিস, যে ভুখন্ড কিনা লিবিয়া এবং এশিয়ার মিলিত ভূখন্ডের চেয়েও বৃহৎ ছিল। তিনি স্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন একজন সাধারণ মানবীকে নাম ক্লিয়েটো এবং এই ক্লিয়েটোর মাধ্যমেই পত্তন ঘটে আটলান্টিসের রাজপরিবারের।
দেবতা পসেডিয়ান তাঁর প্রিয়তমা পত্নী ক্লিয়েটোর জন্য দ্বীপের ঠিক মাঝখানে পাহাড়ের উপর গড়েন এক সুরম্য অট্টালিকা। সেই অট্টালিকাটিকে সুরক্ষিত করার জন্য তিনি ওটার চারপাশে গড়ে তোলেন পাঁচটি জল ও স্থলের চক্র। সৃষ্টি করলেন উষ্ণ এবং শীতল পানির ঝরনা। অর্থাৎ ভবিষ্যত নগরায়নের সব ব্যবস্থা তিনি সম্পন্ন করে রাখেন।
ক্লিয়েটোর কোল আলো করে আসে দেবতা পসেডিয়ানের পাঁচ জোড়া সন্তান। এটলাসকে, যিনি ছিলেন প্রথম জোড়ার প্রথম জন, তার পিতা এ সমগ্র ভূখন্ডের রাজা হিসেবে নিয়োগ করেন। তাঁর অন্য সন্তানেরা হন রাজকুমার এবং তাদেরকে দ্বীপটির বিভিন্ন অংশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটলাসেরো অনেকগুলো সন্তান ছিল এবং রাজমুকুট বংশ পরম্পরায় জেষ্ঠ্য সন্তানের মাথাতেই উঠত।
বহু বছর ধরেই আটলান্টিসের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং উন্নয়নশীল। অধিবাসীদের অধিকাংশ চাহিদাই দ্বীপের খনি, চাষের জমি এবং বন থেকেই মিটে যেত। অবশিষ্টাংশ রপ্তানী হত দ্বীপটির বাইরে থেকে।
দেবতা পসেডিয়ান আটলান্টিসের জীবনযাত্রাকে সুশৃঙ্খল জন্য কিছু আইন তৈরী করেন। কোন একক শাসক নয় বরং দশ জনের এক শাসকগোষ্ঠি পরিচালনা করত এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে (এটলাস এবং তার বাকি নয় জন ভাই, যারা পরাক্রমশীলতার সাথে রাজত্ব করেছিলেন)। শাসকচক্রের সব সদস্য নিয়মিত মিলিত হত দেবতা পসেডিয়ানের মন্দিরে। সেই প্রাচীন বৈঠকের শুরুতে তারা একে অপরকে সম্ভাষন করতেন। তারপর একটি তেজী ষাঁড়কে ধরে প্রথমে সেটাকে হত্যা করে রক্ত সংগ্রহ করা হত এবং পরবর্তীতে ষাঁড়টিকে স্বর্গের দেবতাদের উদ্দেশ্যে পুরানো হত আগুনে । ষাঁড়ের রক্ত ওয়াইনের সাথে মিশিয়ে কিছুটা ছিটানো হত আগুনের উপর। আর বাকি ওয়াইনের স্থান হত দশটি স্বর্ণ পাত্রে। প্রত্যেকে সেই পাত্র আগুনের সামনে উচিয়ে পিতৃদেব প্রদত্ত আইন সঠিকভাবে পালনের শপথ করতেন। শপথ গ্রহণ ও পাণীয় পানের পর স্বর্ণ পাত্রগুলো উৎসর্গ করা হত মন্দিরে।
এভাবে ভালই কাটছিল দিন। বিচক্ষণ পসেডিয়ানের প্রদর্শিত পথে আটলান্টিস হয়ে উঠছিল স্বর্গের জন্যেও ইর্ষণীয়। কিন্তু পসেডিয়ানের বংশধরদের রক্তে যে মানুষেরও সংমিশ্রণ ছিল, আর মানুষ যে ভুলেরই সমার্থক। তারা যখন ধীরে ধীরে পসেডিয়ানের নিয়মকানুন ভুলে যেতে বসল তখনই শুরু হল বিপত্তি। বেশির ভাগ শাসকই সাধারণ মানুষকে বিয়ে করল। তাদেরর আচরণ হয়ে উঠতে লাগল নির্বোধের মত। তাঁরা দেবতাদের কথা ভুলে হয়ে উঠতে লাগল স্বেচ্ছাচারী ও ক্ষমতালোভী। লালায়িত হতে লাগল আরো বৃহৎ ক্ষমতার জন্য।
দেবরাজ জিউস উপর থেকে সবই পর্যবেক্ষণ করলেন...... দেখলেন কিভাবে মানুষেরা কিভাবে দেবতাদের অনুশাসন ভুলে হয়ে উঠেছে শয়তানের দাস। অলিম্পাসে বসল দেবতাদের বৈঠক আর ঘোষিত হল আটলান্টিসের ভাগ্য......... এরপরের ইতিহাস সবারই জানা।




আটলান্টিয়ানদের প্রযুক্তিঃ

আটলান্টিয়ানদের প্রুযুক্তি, জ্ঞান এবং ধ্যানধারণা অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতা থেকে ভিন্ন ধরনের ছিল। তারা চতুর্মাত্রিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ের উপর পারদর্শী ছিল। সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় প্রযুক্তিগত ভাবে আটলান্টিয়ানরা অনেক উন্নত ছিল। ধারনা করা হয় কিছু কিছু ব্যাপারে তারা এখনকার পৃথিবীর চেয়েও অগ্রগামী ছিল।
তাদের অর্জিত প্রযুক্তির মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হল ‘আবহাওয়া নিয়ন্ত্রন’, যার দ্বারা তারা প্রচুর খাদ্যশস্য উৎপাদনে সক্ষম ছিল। তারা পুরো বছরই প্রচুর খাদ্যশস্য উতপাদন করত। কোন কিছুরই অভাব ছিলনা তাদের। দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র, ক্ষুদা ইত্যাদি তাদের স্পর্শ করতনা। কিন্তু এত প্রাচুর্যের মধ্যে থেকেও তাদের জীবনটাকে একঘেয়ে লাগতে শুরু করল। জীবনে পরিবর্তন আনতেই তারা অভিযান করে নতুন কিছু জানার নেশায়।
ভূতাত্ত্বিক ঘটনা যেমন অগ্নুৎপাত, জলোচ্ছ্বাস এসব কিছু তারা প্রভাবিত করত বলে ধারনা করা হয়। কিন্তু একসময় তারা তাদের চিত্তবিনোদনের জন্য অগ্নুৎপাত, জলোচ্ছ্বাস, লাভার ঝর্না এসব ইচ্ছেমত পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকল। ধারনা করা হয় যে এভাবে একসময় তারা ভূতাত্ত্বিক এসব বিষয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং ধ্বংসের মুখে পরে।
আটলান্টিয়ানদের মধ্যে ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের ব্যবহার বেস ব্যাপক ভাবে ছিল। তারা ক্রিস্টাল এর প্রতিসরণ, বিবর্ধন এবং সংগ্রহণ ক্ষমতার উপর প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছিল। ক্রিস্টাল এর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি কোন শক্তিকে বিবর্ধিত করে। এটি এর ভেতর দিয়ে গমনকারী শক্তিকে বিবর্ধিত করে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে নিয়ে আসে এবং এরপর তাকে স্থানান্তরিত বা ট্রান্সমিট করে বা বিক্ষিপ্ত করে। অপর একটি অনুরূপ ক্রিস্টালকে সংগ্রাহক বা রিসিভার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরপর সেই রিসিভার ক্রিস্টালটি ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে যা অপর একটি ক্রিস্টালে শক্তি স্থানান্তর করে। আটলান্টিয়ানরা এমন একধরনের ক্রিস্টালের তৈরি বিশাল পিরামিডগুলোকে শক্তি নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করত।। বিষয়টা একটু গভিরভাবে ভেবে দেখুন। যখন পৃথিবীর একপ্রান্ত শক্তির উৎসের দিকে মুখ করে থাকে তখন ঐ প্রান্তের পিরামিডটি শক্তিটিকে বিবর্ধিত করে দূরবর্তী এবং সঠিক গননার মাধ্যমে স্থাপিত আরেকটি পিরামিডে শক্তি ট্রান্সমিট করে যা রিসিভার হিশেবে কাজ করে। এভাবে পর্যায়ক্রমে তারা শক্তি স্থানান্তরিত এবং ব্যবহার করত। এ পদ্ধতিতে যখন কোন পিরামিডে শক্তির ঘাটতি হয় তখন অপর পিরামিডগুলো তার প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। খুবই সহজ সরল এবং কার্যকরী পদ্ধতি। কিন্তু নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে না চলায় পরে এ পদ্ধতি তাদের ধংসের কারন হয়েছিল।
ধারনা করা হয় এক বিশেষ ধরণের বিভিন্ন মাপের এবং আকৃতির ক্রিস্টাল ব্যবহার করতো। কিছু ক্রিস্টাল প্রায় ২৫ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট ব্যাসের এবং এর ১২ টি তল ছিল। এসব ক্রিস্টালকে শক্তি সংগ্রহ এবং স্থানান্তরের কাজে ব্যবহার করা হতো।এছাড়াও ছিল ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা ছোট ছোট বিভিন্ন বর্ণের ক্রিস্টাল।
এসব ক্রিস্টাল বড় ক্রিস্টাল গুলোর সাহায্যকারী হিশেবে কাজ করত। বড় ক্রিস্টাল গুলোর শক্তি ব্যবহার করে ছোট ক্রিস্টাল গুলো দ্বারা আটলান্টিয়ানরা কোয়ান্টাম হিলিং, মেডিটেশন, মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়ন, যোগাযোগ, পরিবহন , Dematerialization ইত্যাদি কাজ করতো। এভাবে তারা আধ্যাত্মিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং চতুর্মাত্রিক জ্ঞান অর্জন করেছিল। ক্রিস্টালের শক্তির উৎস ছিল সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, পৃথিবীর নিজস্ব গ্রিড ইত্যাদি। Edgar Cayce আটলান্টিয়ানদের রহস্যময় কিছু ধারনা দেন। তিনি বলেন
“A number of crystals were shaped into invered pyramids, with four to six sides, were infused with various shades of pink or rose, which created a light beam for surgery, by changing molecular structure, and for soothing pain, particularly in the delicate areas of the brain, the eyes, the heart and reproductive organs. Gold or yellow crystals changed colours to deeper hues in the presence of disease or bodily vibrational disorders. Ruby and purple stones helped cure emotional and spiritual problems; and black crystals, no longer in existence, were powerful protectors.
তিনি আরও বলেন যে আটলান্টিয়ানরা ক্রিস্টালকে একটি বিশেষ ডিম্বাকার ভবনের উপরিভাগে রাখতো এবং ক্রিস্টালটির শক্তির উৎস অনুযায়ী দিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছিল।ভবনের অভ্যন্তরভাগ অপরিবাহী ধাতু এবং পাথর দিয়ে সজ্জিত থাকত। ক্রিস্টালটিকে তিনি Tuaoi Stone, বা Firestone দ্বারা অভিহিত করেন। তার ধারনা অনুযায়ী ক্রিস্টালটি বিশাল ঘনকের মত লম্বা এবং আকৃতি প্রিজমের মতো। এর ৬ টি তল ছিল। ধারনা করা হয় ক্রিস্টালটি সৌর, চান্দ্র, নাক্ষত্রিক, বায়ুমণ্ডলীয় এবং অন্যান্য অজানা রহস্যময় শক্তি উৎস হতে শক্তি সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে একত্রীত বা ঘনীভূত করতো। মজার ব্যাপার হল অনেকের ধারনা ক্রিস্টালের ঘনীভূত এবং সঞ্চিত শক্তিকে নিজেদের পরিবহনের কাজে ব্যবহার করত। অবিশ্বাস্য!! হয়তো পুরটাই আজগুবি ধারনা বা কল্পনা বা ফ্যান্টাসি কিন্তু চলুননা এই ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড এ একটু ঘুরে আসি শুধুমাত্র ইন্টারেস্ট নিয়ে, বিশ্বাস অবিশ্বাস কিছুই করার দরকার নেই। গবেষকদের ধারনা অনুযায়ী আটলান্টিয়ানরা ক্রিস্টালের শক্তি ব্যবহার করে কোন বস্তুকে বা body কে Dematerialized করতো আবার রিসিভার ক্রিস্টাল তাকে materialized করতো। ধরুন আপনি কোন স্থানে যেতে চাচ্ছেন। ক্রিস্টালের ঘনীভূত প্রচণ্ড শক্তির দ্বারা আপনার দেহকে Dematerialized করে শক্তি বা তরঙ্গে পরিণত করা হবে এবং একে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এবং কম্পাঙ্কে নিক্ষিপ্ত করা হবে অপর একটি দূরবর্তী ক্রিস্টাল এ যা রিসিভার হিশেবে কাজ করে শক্তিকে পাঠিয়ে দেবে storage ক্রিস্টাল এ যেটি আপনাকে energy থেকে পরিবর্তন করে বা materialized হিউম্যান বডি তে রূপান্তরিত করবে। !! ??? কল্পনা, fantasy, imagination যা ইচ্ছে বলতে পারেন একে। হয়ত এসব শুধুই কল্পনা আবার এও হতে পারে যে সময়ের সাথে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে এসব প্রমানিত হবে। বিজ্ঞানের বড় বড় আবিস্কারের পেছনেই কিন্তু এই “Imagination “ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটি অনেকটাই Teleportation এর মতো যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন, যেটাকে বলা হচ্ছে future transportation.আবার অনেকে ধারনা করেন যে , আটলান্টিয়ানদের ব্যবহৃত এই রহস্যময় ক্রিস্টালের ধবংসাশেষ এখনো বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এ যা কোন বস্তুকে Dematerialized করে ফেলে। কে জানে? হয়তো ঠিক আবার হয়তো না।
ক্রিস্টালের এই শক্তিকে আটলান্টিয়ানরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতো। প্রথম প্রথম এই শক্তিকে শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক কাজে ব্যবহার করা হতো এবং এর নিয়ন্ত্রক থাকতো একজন দক্ষ লোক, অনেকটা মঙ্ক এর মতো। ধারন করা হয় এই শক্তি ব্যবহার করে আটলান্টিয়ানরা তাদের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে তারা ৭০০ থেকে ৮০০ বছর বেঁচে থাকত। পরবর্তীতে তারা ক্রিস্টাল কে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে শুরু করল। ক্রিস্টালের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিভিন্ন শক্তিকে তারা বিভিন্ন কাজে যেমন কথা ছবি আদান প্রদান এ ব্যবহার করত। অনেকটা আমাদের রেডিও এবং টেলিভিশনের মতো। কিন্তু আস্তে আস্তে আটলান্টিয়ানরা আরও ক্ষমতা অর্জনের জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী হল। ক্রিস্টালের নিয়ন্ত্রক হতে থাকল অদক্ষ লোক যাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান ছিল কম। তারা ক্রিস্টালের শক্তি ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকলো এবং উচ্চ শক্তি সংগ্রহ করতে থাকলো। এই শক্তি ব্যবহার করে তারা পাহাড় গলানো, অগ্নুৎপাত, জলোচ্ছ্বাস এসব ভূতাত্ত্বিক ঘটনা সমুহ ঘটাতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে শিখল। কিন্তু তারা ক্রিস্টালের শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হল। ক্রিস্টালের বিবর্ধিত প্রচণ্ড শক্তির প্রভাবে ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি ঘটতে লাগলো। ধারনা করা হয় যে এই শক্তির প্রভাবে পৃথিবীর অক্ষের পরিবর্তন হয়। এসব ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের দ্বারা আটলান্টিস ধ্বংস হয়ে মিশে যায় সাগর তলে। একটি উন্নত সভ্যতা হারিয়ে যায় পৃথিবী হতে। কিন্তু এর কথা উপকথা বা মিথ হয়ে এখনো পৃথিবীতে রয়ে গেছে।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×