somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাইম ম্যানেজমেন্ট: সময় গেলে সাধন হবে না!

২১ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লেখা চোখে পড়ে, কিছু পড়াশোনাও করেছি। একটা লেখা পেলাম, সম্ভবত The Art of Laziness বই থেকে—সেখানে কয়েকটা টিপস ছিল টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। বইটা এখনো পড়িনি, তবে পড়ে দেখার মতোই মনে হয়।

টিপসগুলো শেয়ার করছি, হুবহু না। কিছু মতামত ও অন্যান্য বিষয় যোগ করলাম।

১. পুরা দিনের পরিকল্পনা থাকতে হবে আগে থেকে।

এটা খুবই বেসিক টাইম মেনেজমেন্টের জন্য। যে কেউ এই টিপস আগে দেয়। সারাদিন কী কী কাজ করবো তার একটা তালিকা থাকতে হবে। যেটাকে টুডু লিস্ট বলে। এইটা হলে কাজ কী করলাম, কী করার কথা ছিলো, আর কী করলাম না তার একটা হিসাব থাকে।

যে কোন লিস্টই গুরুত্বপূর্ণ। টুডু লিস্ট তো অবশ্যই। এ ব্যাপারে আরেকটা লেখা আছে এখানে

২. দিনের এই টুডু লিস্ট বা পরিকল্পনা এটা শুধু মাথায় থাকলে হবে না। লিখে ফেলতে হবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লিখে ফেললে ঐ কাজ শেষ করার স্পৃহা অনেক বেড়ে যায়।

যাদের প্রচুর কাজ করতে হয় বা বিভিন্ন কাজ করতে হয় তাদের জন্য এই অভ্যাসটা গড়ে তোলা দরকার। আমরা মনে করি “লেখা লাগবে না, মনে থাকবে”। কিন্তু বাস্তবে সব কাজের কথা মনে থাকে না। মিস হয়ে যায় দুয়েকটা। ডেডলাইনের আগে হয়ত মনে পড়ে। তখন মাথা খারাপের মত অবস্থা হয়।

অনেকেই অফিসে বা বাড়িতে টুডু লিস্টের জন্য বা মেইন কাজের অবস্থা চোখের সামনে রাখার জন্য হোয়াইট বোর্ড ব্যবহার করেন। সেখানে লিখে রাখেন। এটাও ভালো পদ্ধতি।

হোয়াট বোর্ড বা খাতায় যেখানে ইচ্ছা লেখেন। কিন্তু লিখতে হবে।

৩. ৮০/২০ রুল জানেন ও মানেন

এই এইটি-টুয়েন্টি রুল সম্পর্কে আগেও বিভিন্ন লেখাই বলেছি। এইটা বোঝা জরুরি। এই রুলের আরেক নাম পারেটো প্রিন্সিপাল।

এই রুলের মূল কথা হলো- কোন কাজের ৮০ ভাগ ফলাফল বা প্রোডাক্টিভিটি আসে ২০ ভাগ কাজ বা ইনপুট থেকে। বাকি ২০ ভাগ ফল আসে ৮০ ভাগ কাজ থেকে।

এই ঘটনা প্রায় সব জায়গায় খাটে। আপনি সারাদিন ১০ ঘন্টা কাজ করলে ২ ঘন্টায় করে থাকেন মোট কাজের ৮০%। বাকি ৮ ঘন্টায় করা হয় বাকি ২০%।

জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে, প্রতিটা ব্যবসায় এটা ঘটে।

৪. মাল্টিটাস্কিং না করা

মাল্টিটাস্ক করলে কোন কাজই পূর্ণ মনোযোগ পায় না। এইজন্য টাইম চাংক করে প্রতি চাংকে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কাজ করতে হবে। টাইমের বিভিন্ন চাংকে বিভিন্ন কাজ করলে সমস্যা নাই। কিন্তু একই চাংকে অর্থাৎ একইসময়ে একাধিক কাজ করলে ঐ কাজ ভালো হয় না।

পোমোডোরো টেকনিক অনুযায়ী টাইম চাংক ২৫ মিনিট, ৩০ মিনিট, বা ৪৫ মিনিটের হতে পারে।

একজন জিগেস করছিলেন, বর্তমান সময়ে মাল্টিটাস্কিং ছাড়া টিকতে হবে কীভাবে!

সেখানে যা বলছিলাম সেটা নিচের ছবিতে-




৫. যে কাজটি এখন করতেছেন এটা শেষ করে অন্য কাজে যাওয়া উচিৎ। বিশেষত কাজ যদি ছোট হয় বা দু-এক ঘন্টার হয়।

তবে বড় কাজ হলে একটানা করতে খারাপ লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে টাইম চাংক করে দিনের ভিতর এক বা দুইটা চাংকে অন্য কাজ করা যাইতে পারে। এতে মনোটোনাস ফিলটা আসবে না।

৬. এক চাংকে সেটা ২৫, ৩০, ৪৫ মিনিট যাই হোক না কেন কাজ করার সময় মোবাইল আলাদা জায়গায় রাখতে পারলে ভালো। হাতের কাছে মোবাইল রাখলে কল, মেসেজ বা নোটিফিকেশনের জন্য কাজে ব্যাঘাত ঘটবে এবং একটানা মনোযোগের বিষয়টা ব্যাহত হবে।

চাংক শেষে মোবাইল চেক করা যেতে পারে।

৭. কাজ করতে করতে বিরক্তি আসলে ব্রেক নিন। নট উইথ মোবাইল। এই সময় ব্রিদিং করতে পারেন। পাঁচ মিনিটের মেডিটেশন ও করা যায়।

বেটার কল সল টিভি সরিজে কিম ওয়েক্সলার দেখবেন কোন একটা মিটিংয়ে যাচ্ছে। গাড়িতে থেকে নামার আগে টাইমার সেট করে শর্ট টাইমে একটা মেডিটেশন করে। প্রাকটিকালি ঐরকম করলে দেখবেন এইটা খুব কাজের জিনিস।

মেডিটেশনের অভ্যাস না থাকলে ছোট্ট একটা ন্যাপ নেওয়া যায়। তবে মেডিটেশন করার বেসিক শিখে নেওয়া ভালো।

৮. কোন কাজের ব্যাপারে বা কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বাই ডিফল্ট উত্তর হওয়া উচিৎ “না” বলা। না বললে নিজের প্রায়োরিটির লিস্ট ঠিক থাকে। হঠাৎ হ্যাঁ বলে দিলে যেটা আগে করার কথা সেটা পিছনে পড়ে যায়।

প্রাসঙ্গিক আরেকটা বিষয় আগে লিখেছি তা হলো-

সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় সব সময় “না” কে প্রায়োরিটি দিতে হবে। অথবা কোনো সিদ্ধান্তই তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া যাবে না। যে কোনো সিদ্ধান্তে “হ্যাঁ” বললে নিজের প্রায়োরিটি লিস্টের কাজগুলো পিছনে পড়ে যাবে।

কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে “হ্যাঁ” বা “না” সিদ্ধান্ত যেটাই হোক, সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। এই সময়টা ২ মিনিট ও হতে পারে বা ২ দিন ও হতে পারে। সময় কতটুক নিবেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপূর্ণ হলো “সময় নেওয়া”-টা।

৯. সব কাজ নিজে করতে চাওয়ার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। কাজ ডেলিগেট করে কাজ আদায় করা একটা বড় স্কিল। বিশেষত: কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ডেলিগেট করে দিতে হবে। যার কাছে ডেলিগেট করা হবে কাজ দেওয়ার সময় তাকে তার সুবিধানুযায়ী যুক্তিসংগত সময় বেধে দিতে হবে। মোট কথা কাজ শেষ করার টাইম লিমিট ঠিক করে নিতে হবে।

১০. কোন কাজ শুরু করার জন্য উপযুক্ত সময় বলতে কিছু নেই। উপযুক্ত সময় যা আমরা প্রত্যাশা করি বা কল্পনা করি তা কখনো ঐভাবে আসে না।

কোন কাজ শুরু করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল “এখন”।

১১. এমন কিছু কাজ ঝুলে থাকে যা করতে ২ মিনিট থেকে ৫ মিনিট লাগে। এই কাজগুলো মনে পড়ার সাথে করে ফেলতে হবে। এখনে করে ফেলতে পারেন।

১২. Eat that Frog বইয়ের নাম শুনেছেন হয়ত। এখানে ফ্রগ বলতে সবচেয়ে বড়, অপছন্দের বা টায়ারসাম কাজটারে বুঝায়। দিনের মধ্যে এমন কাজ থাকলে ঐ কাজটাই আগে করতে হবে। ইট দ্যাগ ফ্রগ হলো দিনের মধ্যের সবচেয়ে অপছন্দের কাজটা আগে খাওয়া বা করা।


১৩. সব কাজের জন্য ডেডলাইন সেট করতে হবে। এটা আবশ্যক। ডেডলাইন সেট না করলে প্রচুর সময় নষ্ট হয়।

পারকিনসন ল অনুযায়ী কোনো কাজের জন্য যত সময় বরাদ্দ থাকে, ঐ কাজ শেষ করতে ঠিক অত সময় বা তার বেশি সময় লাগে।

“Work expands to fill the time available for its completion”

যে কাজ করতে স্বাভাবিকভাবে আধাঘন্টা লাগে সে কাজের জন্য যদি ১ ঘন্টা সময় বরাদ্দ করা হয়, তাহলে সে কাজ করতে ১ ঘন্টাই লাগবে। বেশিও লাগতে পারে।

আর কাজের জন্য যদি কোন ডেডলাইন সেট না করা হয়, তাহলে আধাঘন্টার কাজ শেষ হতে ১ মাস ও লাগতে পারে।

১৪. আপনার মূল যে লক্ষ্য বা মূল যে কাজ সেটা সম্পন্ন করতে এ বিষয়ের সাথে অপ্রাসাঙ্গিক কোন বিষয়ের উপর মনোযোগ দিবেন না। যা লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে না তার উপর মনোযোগ বা সময় দেয়া বন্ধ।

১৫. কোন কাজই হান্ড্রেড পারসেন্ট পারফেক্টলি করা যায় না এবং এটা স্বাভাবিক। অনেক সময় দেখা যায় কাজে পারফেকশান আনার জন্য অনেক সময় নষ্ট হয়। এজন্য পারফেকশানের চিন্তা না করে কাজ করতে হবে। কাজ শেষ করার পর লিমিটেড টাইম নিয়ে রিভিউ করতে হবে, এ সময় যতটুক পারা যায় পারফেকশান নিয়ে আসতে হবে।

পারফেকশান গুরুত্বপূর্ণ না। কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। পারফেকশানের জন্য কোন জোরাজুরি নাই।

১৬. যারা সব কাজে খুত ধরে এবং যে কোন কিছু থেকে জোর করে নেগেটিভিটি বের করে নিয়ে আসে এই টাইপের লোকের সঙ্গ যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।



আমার সব লেখা পাওয়া যাবে সাবস্ট্যাকে। সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×