চাকুরীতে 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' তৈরী সময়ের দাবি =
আমার জীবনের প্রথম দশ বছরের শৈশব বাদ দিলে অবশিষ্ট অংশের অর্ধেক বাংলাদেশে বাকি অর্ধেক ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় কেটেছে। বাংলাদেশে যেভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ইগো বা, মুই কি হনুরে, ধাঁচের আচার আচরণ দেখেছি পৃথিবীর কোন উন্নত দেশে তা দেখিনি। তাই বলে ওসব দেশে প্রশাসন চলছে না তা কিন্তু না, বরং বাংলদেশের চেয়ে বহুগুনে ভালো চলছে। তার প্রমান এখানে, বিদেশের প্রায় বিশ বছরে আমাকে কোন সরকারি দফতরের সাহায্য নিতে গিয়ে কাউকে দিয়ে কোন প্রকার তদবির করাতে হয়নি, বা কোন অফিসারকে অন্যভাবে 'খুশি'ও করতে হয়নি; এমনকি পুলিশের অফিসেও না। আমার পরিচিত কেউও তেমন কিছু করেছেন বলে শুনিনি।
উন্নতদেশের সরকারি অফিসগুলোতে এতটা উন্নত সার্ভিসের অন্যতম প্রধান কারণ হলো এখানে ক্যাডার বৈষম্য ঘটিয়ে একে অন্যকে ছোট-বড় ভাবার কোন পরিবেশ তৈরী করা হয়নি; এমনকি অফিস আদালতে কেউ কাউকে স্যার সম্বোধনও করে না। সবাই নিজেকে জনগণের সেবক মনে করে, প্রশাসক নয়। মজার বিষয় হলো, কানাডা বা এ পর্যায়ের দেশগুলোতে সরকারি চাকরিও প্রাইভেট চাকুরীর মতোই অস্থায়ী। সরকারি চাকুরী হয়েছে তো তা কখনোই যাবে না এমনটি কেউ ভাবে না। নিচের পদের কেউ কেবল চাকুরীতে প্রবীণ বলে তাঁকে টেনে সিনিয়র পদে বসিয়ে দিতে হবে তাও কিন্তু না। পদ খালি হলে ডিপার্মেন্টের ভেতরের বাইরের আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্য হতে ইন্টারভিউ নিয়ে তা পূরণ করা হয়। তাই, আপনার অফিসের সিনিয়র আপনাকে ন্যায়-অন্যায় যাই নির্দেশনা দিন তা আপনাকে মেনে চলতে হবে এমন কথা নেই। আমি কিন্তু ডিফেন্সের কথা বলছি না; সেখানে নিয়ম আলাদা।
বাংলাদেশের সরকারি চাকুরীতে যাঁরা প্রভাবশালী তাঁদের বেশিরভাগ চলমান 'মুই কি হনুরে' ধাঁচের অরাজক অবস্থা বজায় রাখতে চাইবেন, এ স্বাভাবিক। কারণ, এতে তাঁদের অন্যায় ক্ষমতাপ্রয়োগ ও জমিদারিভাব প্রকাশের অনুকূল পরিবেশ অক্ষুন্ন থাকে। এ ধরণের বৈষম্যমূলক জনপ্রশাসন ব্যবস্থায় সরকরি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিংহভাগ মুষ্টিমেয় কিছু প্রভাবশালীর হাতে জিম্মি হয়ে প্রভু-ভৃত্য সম্পর্কে বন্দি হয়ে আছেন আজ বহুদিন। অধিকন্তু, প্রভাবশালী চক্রটি নিজেদের জনগনের সেবক না ভেবে শাসক ভাবতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করেন বেশি। এ অবস্থার উত্তরণে দেশ হতে সরকারি চাকুরীর ক্যাডার ব্যবস্থা অবলুপ্ত করে সকল স্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটা 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' তৈরী সময়ের দাবি। এটা করা সম্ভব হলে দেশের সাধারণ মানুষেরও সরকারী অফিস নিয়ে ভয়ভীতি কেটে যাবে।
ML Gani
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৯