তমিজউদ্দিনের হজ্ব কবুল হবে তো? =
তমিজউদ্দিন মানুষটা উচ্চশিক্ষিত তবে লোভী প্রকৃতির। পঁচিশ বছর টানা সংসার করেও স্ত্রীকে মাঝে মাঝে শ্বশুর বাড়ির ভাগের জমিজমা বেচে নগদ টাকা নিয়ে আসার তাগিদ দেন। এতে তাঁর স্ত্রী তাঁর উপর ভীষণ বিরক্ত। তারপরও ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ ভেবে সংসারের ঘানি টেনে চলেছেন।
অবশেষে একদিন পবিত্র হজ্ব পালনে গেলেন তমিজউদ্দিন। সেখানে কেউ একজন তাঁকে বললেন স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করে তাঁর কাছে মাফ চেয়ে না নিলে হজ্ব কবুল নাও হতে পারে। কথাটা তমিজুদ্দিনের মনে ধরে। ভীষণ চিন্তায় পড়ে যান তিনি। এতো টাকাপয়সা খরচ করে হজ্ব করে তা যদি আবার কবুল না হয় তবে তো উদ্বিগ্ন হবারই কথা!
কথাটা শোনার পর ঘুম ভালো হয়নি সে রাতে। পরদিন সকালেই স্ত্রীকে ফোন দিয়ে হাঁউমাঁউ করে কেঁদে উঠলেন তমিজউদ্দিন। কান্না শুনে তাঁর স্ত্রী তেমন বিচলিত হননি। কারণ, কথায় কথায় কান্নার স্বভাব শুধু তমিজউদ্দিনের নয়, তাঁদের পুরো পরিবারের। তারপরও স্বামীর কাছে এভাবে অঝোরে কান্নার কারণ জানতে চাইলেন তিনি।
কান্নার ফাঁকেই তমিজউদ্দিন কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অনুতপ্ত আসামির মতো ক্ষমা চাইতে লাগলেন স্ত্রীর কাছে। বললেন, 'দেনমোহরের সব টাকা আমি হজ্ব থেকে ফিরেই তোমাকে সুদে-আসলে দিয়ে দেব, আমাকে মাফ করে দাও। তুমি আজ এক্ষুনি মাফ না করলে আমার হজ্ব কবুল হবে না।' স্বামীর মনের কাতর অবস্থা দেখে স্ত্রী তাঁকে মাফ করলেন। - - -
সেই তমিজউদ্দিন পবিত্র হজ্ব পালন শেষে দেশে ফিরেছেন আজ পাঁচ বছর। দেন মোহরের টাকা দেয়া তো দূরের কথা, তিনি বরং আগের মতোই স্ত্রীর পৈতৃক জমিজমার অংশের টাকা কেন তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছেন না তা নিয়ে স্ত্রীকে বারবার তাগাদা দিয়ে চলেছেন। তারমানে, 'কান্নার ভান করে তাৎক্ষণিক স্ত্রীর ক্ষমা পেয়েই তমিজউদ্দিন ভেবেছেন কাজ তো হয়ে গেছে, এখন আর চিন্তার কি?' লোকটি খুব চালাকই বটে! তাঁর চালাকি হতে স্বয়ং ভগবানও রেহাই পাননি।
তমিজুদ্দিনদের হজ্ব রাব্বুল আলামীন কবুল করবেন তো?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১:২৭