কন্যার বয়স তখন সাত।
কানাডায় আমরা নতুন। তার মানে, নতুন অভিবাসীর সংগ্রামী দিনগুলো পার করছিলাম।
বাসার কোথাও একটা ডলার খুঁজে পেয়ে দৌঁড়ে এসে কন্যা আমাকে ডলারটা হাতে দিলো। আমি তা যত্নে রেখে দিলাম।
যেখানেই যেতাম সেও আমার হাত ধরে সাথে যেত। ব্যাংকে গেলেও সাথে নিতাম। ব্যাংকে টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়টা আগ্রহভরে দেখতো সে। ও বুঝেছে, ব্যাংকে টাকা দিলে ব্যাংকও বিনিময়ে টাকা দেয়, যা থেকে আমরা দৈনন্দিন খরচ চালাই।
কয়েকমাস পর কন্যা নিজেই একটা ব্যাংক একাউন্ট খোলার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি বলি, আরেকটু বড়ো হও, তারপর।
তার প্রশ্ন, আমি তাহলে টাকাপয়সা জমাবো কিভাবে?
বললাম, আপাততঃ তুমি আমাকে দিও, পরে তোমার নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলে জমা দেব।
দু-তিনদিন পর আরেকটা ডলার আমার হাতে দিয়ে ওটা জমাতে বললো। সপ্তাহখানেক পর আরো একটি ডলার। চলছেই ...
বাসায় কক্ষ ছিল মাত্র দুটো। একটি বেডরুম, আরেকটি রান্নাঘর। মাত্র দুটি কক্ষেই এভাবে ডলারের ছড়াছড়ি দেখে আমি বিস্মিত হই; কেননা, সে সময়ে আমাদের আয় বলতে তেমন কিছুই ছিল না। তারপর, একটা কাগজে ডলার খুঁজে পাবার তারিখ, ডলার এর পরিমান, এবং সেই ডলার কোথা থেকে কিভাবে পাওয়া গেলো তার বর্ণনা লিখে দিতে তাকে পরামর্শ দিলাম। এও বললাম, ব্যাংকে ডলার জমালে তারাও এ তথ্য চাইবে। তাই, এখন থেকে তালিকাটা তার বানানো দরকার।
সেই তালিকা হাতে দেবার পর সে আর কোনোদিন কোথাও কোন ডলার খুঁজে পায়নি।
[পুনশ্চ: সেই কন্যা এখন কানাডায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২২ রাত ১০:০৩