somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুতুম প্যাঁচার বিয়েতে এলিজি

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাল হুতুম প্যাঁচার বিয়ে। হুতুম প্যাঁচা- আমার অনেক লালিত স্বপ্নের অনেক সাধনার অনেক প্রতীক্ষার অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার হুতুম প্যাঁচা। কোনোএক অবারিত পূর্ণিমার রাতে চাঁদ যখন হেলে পড়ছিল পশ্চিমের আকাশে- আমি তাকে অস্ফুট স্বরে বলে ফেলেছিলাম ‘হুতুম প্যাঁচা’! আমার রাতজাগা হুতুম প্যাঁচা। সচরাচর কপোত-কপোতীদের মতন ভোরের আভা চোখে আসা অবধি আলাপ- অভিমান কিংবা বুকভরা ভালোবাসার পসরা দিয়ে সাজানো সেইসব রাত। জীবনে অনেকগুলো ফাগুন একা ছিলাম বলে; মায়াহরিণীর প্রতীক্ষায় অবগুণ্ঠিত ছিলাম বলে- আমি না বলার আগেই ‘ভালোবাসি’ শুনতে পাওয়া ছিল মেঘ না চাইতে বৃষ্টির চেয়েও অনেক বেশী! রাগ-অনুরাগে, মান-অভিমানে, মায়া-মমতায়-ভালোবাসায় দিনগুলো রঙিন ছিল, যার পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিল হাজার রঙের স্বপ্ন-প্রত্যাশা!

কিন্তু হঠাত করেই হুতুম প্যাঁচার রাজ্যে হানা দিল অসুরীয় সূর্য। আমার কাছে আচমকা ঘূর্ণিঝড়ের মত হলেও এটিই প্রকৃতির আজব ধর্ম। যার তাপ হুতুম প্যাঁচার চোখকে ঝলসে দেয়, তার দেখার উন্মত্ততাকে খাঁচা বন্দী করে ফেলে, তার উড়ার স্বাধীনতা হরণ করে, সে হয়ে যায় অন্যের ইচ্ছা-অনিচ্ছার নিছক পুতুল, যার চলৎশক্তি অদৃশ্য সুতোর টানে সুনির্দিষ্ট!

আমি কী তাকে পেতে পারতাম না? সে কী আমার হতে পারতো না? তাহলে কেন হলো না? এর জন্য কে দায়ী? আমি না সে? এমন অনেক প্রশ্ন এখন আমাকে সারাদিন সারারাত মরা গরুকে শকুন যেভাবে খায় ঠিক তেমনভাবে খুবলে খুবলে খাচ্ছে। তাহলে অবশ্যই এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতেই হয়। নতুবা নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী করে রাখাই হবে আজীবন! তবে এটি সত্য যে আমি নিজেকে কিংবা নিজের নিয়তিকে কখনোই ক্ষমা করতে পারব না। তবুও পণ্ডশ্রমের মতন এসব পেছনে ছুটে চলা- অন্তত এটুকু সান্ত্বনা যে, তাকে নিয়ে ভাবতেছি, সে আমার প্রতি মুহূর্তের অনুভবে, প্রতি মুহূর্ত তার সাথে কাটানো সেইসব সুখময় দিনগুলোর স্মৃতি আমার নিউরনে অনুরণন করছে! তবে হ্যাঁ, প্রশ্নগুলোর উত্তর মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু আবেগ তাকে আটকে দিচ্ছে।

হুতুম প্যাঁচা বলেছিল- চল পালায়, আমার বেশী কিছুর চাহিদা নেই, খুববেশী চাওয়াও নেই, তবুও আমার তোমাকে চাই, আমি তো জীবনে আর কাউকে ভাবি নি, কোথাকার কোন এক অজানা অচেনা পুরুষ- তার সাথে কি না কাটাতে হবে সারাজীবন- আমি তো ভাবতেই পারি না, প্লিজ আমাকে নিয়ে চল, এই ঘরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, প্রতি মুহূর্ত যেন হাজার বছরের মতন সুদীর্ঘ- যেখানে আমার ইচ্ছার কোনও মুল্য নেই সেখানে আমি কিভাবে সুখি থাকবো বলো- তুমিই না বলো আমার সুখের জন্য সব করতে পারবে, যেকোনো মুল্যে আমাকে সুখি দেখতে চাও- আমার বেদনা তোমার সহ্য হয় না- আমার অশ্রু তোমার কাছে ভয়ঙ্কর- এখন তো সারাজীবনই কাঁদতে হবে- তবে কেন তুমি সাঁই দিচ্ছ না- প্লিজ আমাকে নিয়ে চল- আমি সত্যি তার সাথে রাত কাটাতে পারবো না, পারবো না তার আঙ্গুল ধরে হারিয়ে যেতে- সে তো কোনদিনই আমার হবে না- তবে শুধু শুধু কেন তার সাথে প্রতারণা করবো- উত্তর দিচ্ছ না কেন- বলো, বলো না- তুমি কাঁদছ কেন- জানো না পুরুষের কান্নার মুল্য নেই, পুরুষের চোখে অশ্রু মানায় না, কাপুরুষেরাই কাঁদে- সময় খুবই সংকীর্ণ- কিছু একটা করো- চুপ কেন, মৌনতা ভাঙো- তোমাকে ছাড়া কীভাবে বাঁচবো- তুমি যদি এতই ভীতুই হও তাহলে আমাকে মিথ্যের বেসাতি দিয়ে তছনছ করে দিলে কেন- কেন করে দিলে আমার জীবনকে লণ্ডভণ্ড- এতটুকু প্রতারণা না করলে কী হোতো না- ঠিক আছে, তুমি চুপই থাকো, তোমার কিচ্ছু বলার না-ই থাক- আমি চাই তুমি এভাবে সারা জীবন মূক থাকো- ভেবে নেবো, আমার কেউ ছিল না- কেউই- আমার কোনও স্বপ্ন ছিলনা আশা ছিল না প্রত্যশা ছিল না ভাললাগা ছিল না ভালোবাসা ছিল না- জীবনে কখনোই ফাগুন আসে নি- সবসময় চৈত্রের আগুনে দগ্ধই ছিলাম- আর কিছু- কিছুই তো মনে পড়ছে না- যাই হোক, তোমার সাথে বকবক করে নিজেকে বিষিয়ে তুলতে চাই না আর- ভালো থেকো সবসময়- আর কষ্ট করে হলেও আমাকে ভুলে যেও- যদিও পারবে না জানি- তোমার মতন প্রতারক কাপুরুষেরা কখনোই পারে না, শুধুই কাঁদতে পারে- ভালো থেকো- নিজের নিয়মে ভালো থেকো- আবার নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেবদাস হতে যেও না- জানো, এখন এসবের কোনও মূল্যই নেই- ঠিকঠাক মতো পড়িও- আশা করি জীবনে অনেক বড় হবে- আমার চেয়ে সুন্দর একটা বউ পাবে- তোমার বউটা অনেক বেশী লক্ষ্মী হবে- তোমাদের বাবু হবে- আর কিছু কী বাকি আছে- হ্যাঁ, আমার যত স্মৃতিচিহ্ন আছে সব মুছে ফেলিও; এটা নিতান্তই অনুরোধ- না করলেও আমার কিচ্ছু যায় আসে না- তোমার যেমন ইচ্ছা করিও, এক্ষেত্রে তুমি স্বাধীন- বিদায়, বিদায়!!

তারপর কল কেটে যায়, আমার নিউরনের অনুরণনের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে- রক্তগুলো যেন হিম হয়ে আসছে, কে যেন আমার চলৎশক্তি কেড়ে নিচ্ছে- এমন অনুভূতি যা এই কীবোর্ডে ধরে না- আমি তো কখনোই ভাবিনি সে আমার জীবন থেকে এইভাবে হারিয়ে যাবে- আমার ভাবনা দিয়ে তো আর জীবন চলে না! সে তার প্রয়োজনে কক্ষপথকে ঘুরিয়ে দেয়- এবার এমন ভাবেই ঘুরালো যে, টাইফুনে আমাকে করে দিয়ে গেলো লণ্ডভণ্ড!

হুতুম প্যাঁচা অনেককিছুই তো বলেছিল, আমি তখন একটা শব্দও তো উচ্চারণ করি নি- আমি কী তাকে কিছুই বলতে পারতাম না? হয়তোবা বলতে পারতাম, কিন্তু বলা হয়ে উঠে নি, তাকে বলার মতন আমার কোনোকিছুই যে অবশিষ্ট ছিল না, অধিকন্তু সে যা বলেছে সব ঠিকই বলেছিল, শুধু তার চেয়ে যে সুন্দর এবং ভালো বউ পাবো এটা বাদে!

সত্য বড়ই কঠিন, তবুও আমাদের মেনে নিতেই হয়! আমি তাকে নিয়ে ঘর বাঁধতে পারতাম, কিন্তু হত কী- দুজনের জীবনই তছনছ হয়ে যেত- আবেগ দিয়ে কী সংসারের মতন কঠিন যুদ্ধে জেতা যায়? তাই আমি নিজেকে আগাম ঘুটিয়ে নিয়েছি- আমি জানি, আমার খুব বেশী কষ্ট হচ্ছে, আমি মেনে নিতে পারছি না, কিন্তু দিনশেষে যা হয় ভালোর জন্যই হয়- আমার মতন বেকার এক যুবকের জন্য সরে আসাই উত্তম ছিল!

হুতুম প্যাঁচা, জানি তুমি আমাকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না- তাই আমি তোমার কাছে ক্ষমাও চাইছি না, জানি তুমি আমাকে ভুলতে পারবে না- তাই ভুলতেও বলছি না, তবুও সবসময় ভালো থেকো! ভালো থেকো! আমি তোমার হই নি বলে তুমি যে আমার নও তা তো হতে পারে না- তুমি আমার ছিলে, আছো, থাকবে- সয়নে স্বপনে জাগরনে অস্থিত্বে অনুভূতিতে জীবনে প্রতিটি ক্ষনে তুমি আমারই! তুমি শুধুই আমারই!

দিলওয়ালে হতে পারি নি বলে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে উঠিয়েও আনতে পারবো না, তবে দেখবে সেখানে আমিও আছি, সানাইয়ের সুরে সুরে আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হয়ে যাবে! হুতুম প্যাঁচা, শাদি মুবারক! নতুন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের জন্য শুভ কামনা! ‘শাদি মুবারক হ রহি দিলমে খুশি আতি রহি’
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×