somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বই পড়া

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০০৬সালে আমি যখন স্কুলে ভর্তি হব, তখন আমরা প্রথম মফস্বল শহরে বাসা নেই। তার আগে আমরা গ্রামে দুই রুমের টিনশেডওয়ালা দালানে থাকতাম। ওই ইউনিয়নেই আমার মায়ের জব আজ প্রায় ২০বছর। আমার খুব আবছাভাবে মনে পড়ে, ওই বাসায় থাকাকালীন সময়ে আমার একটি গল্পের বই ছিল, ‘লাশকাটা ঘর’। ভূতের গল্পের বই। কাহিনি কিছুই মনে নেই তেমন, তবে বইটি যে আমাকে পড়ে শোনানো হতো তা আমার মনে পড়ে। এছাড়াও হয়তোবা দু’একটা বই তখন পড়েছি কি পড়িনি তা ঠিক মনে নেই।

ক্লাশ টু’তে পড়ার সময় আমি সুকুমার রায় সমগ্র গোগ্রাসে গিলতাম। আমার স্মৃতির পাতায় এটি জলছবির মতো স্পষ্ট। কারণ, বাল্যকালে সেই ছিল আমার প্রথম বই পড়ার শুরু। পাগলা দাশুর গল্পগুলো সবচেয়ে বেশি ভালোলাগত। আর ভালোলাগত সুকুমার রায়ের লেখা ছড়াগুলো। তাঁর ‘সৎ পাত্র’ কবিতাটি এতই ভালোলাগত যে পড়তে পড়তে আমার পুরোটা মুখস্ত হয়েছিল। আমি একা একাই কবিতাটা আবৃত্তি করতাম। তাঁর ‘ওয়াসিলিসা’ গল্পটিও দু’বার স্কুলে গল্পের ক্লাসে বলেছিলাম। আর পড়তাম বিবিধগুলো ওই সমগ্রের। মোটামুটি আমার বাল্যকালের একটা সময় যাবত আমি শুধু সুকুমারের বইটা নিয়েই কাটিয়েছি।

এরপর যখন আরেকটু বড় হলাম, বাসায় কেউ না থাকলে আমি এই বই সেই বই বইয়ের র‌্যাক থেকে নামিয়ে পড়তাম। কারো সামনে পড়তে আমার কেমন যেন লাগত। কারণ সেই বইগুলো প্রাইমারি স্কুলের স্টুডেন্টের পড়ার মতো ছিল না। সবই বড়দের বই- হিমুর রূপালী রাত্রি, নীল অপরাজিতা, যুবরাজ, পরিণীতা, দেবদাস...! বাসায় ছোটদের বই একেবারে ছিল না বললেই চলে। আমারো কিনতে চাইতে ভয় লাগত। কখনো সাহস করে বলিনি কিনে দেওয়ার জন্য। কেন যেন মনে হতো বই কেনার কথা বললেই বকা শুনতে হবে।

তখন ভীষণ চুপচাপ ছিলাম। আমার প্রথম গল্পটা যখন লিখি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়, লিখে ডাইরিটা পুরোনো খাতা-ডাইরির মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলাম। মা একদিন গোছগাছ করতে গিয়ে ওটা পেয়েছিল। আমার সামনেই পড়তে শুরু করলেন। আমি কেন যেন ভয়ে ঘেমে একাকার হয়ে গেছিলাম ওই ফাগুন মাসে! কিন্তু মা যখন গল্পটা পড়ে কোথাও কোথাও দাঁড়িকমা ঠিক করে দিয়ে বললেন যে, তুই আরো লিখবি, যা ইচ্ছে হয় সেটাই লিখবি, তখনই আমি লেখালেখির ভরসা পেলাম। একটু একটু করে লিখতে থাকলাম। কিন্তু তাও বই কেনার কথা বলতে পারলাম না। ওই পুরোনো বই আর আমার শ্রদ্ধেয় আজিজুল স্যারের থেকে পাওয়া শরৎ রচনা সমগ্র লুকিয়ে লুকিয়ে পড়েই দিন কাটতে লাগল।

বই কেনা শেখা শুরু করলাম, ক্লাস সেভেনের বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে। তখন থেকে যখন যেভাবে সুযোগ হতো একটা দু’টো বই কিনিয়ে নিতাম। বান্ধবীদের থেকে ধার নিয়ে পড়তাম। জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে পড়লাম হিমু, নবম শ্রেণিতে পরিচিত হলাম মিসির আলীর সাথে। ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে পড়লাম সাতকাহন-১। তখন থেকেই আমি নিয়মিত বই পড়ি। মা বলতেন ভালো ভালো পুরোনো লেখকের বই পড়তে। কিন্তু আমার ভালোলাগত হুমায়ুন আহমেদের জোছনা মাখা গল্প আর বৃষ্টিতে ভেজা উপন্যাস। তাই কলেজে ওঠার আগে হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বইগুলো নিয়েই থাকতাম। এসএসসি দিয়ে পড়লাম বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল- হুমায়ুন আহমেদের প্রেমের উপন্যাস সমগ্র।

কলেজে এসে যখন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করলাম, তখন পরিচিত হলাম তারাশঙ্কর-বঙ্কিমসহ দেশবিদেশের সেরা লেখকের লেখাগুলোর সাথে।অনুধাবন করলাম, কেন মা সবসময় এদের লেখা পড়তে বলতেন। এরপর আবার শুরু করলাম গোয়েন্দা সমগ্র পড়া- ফেলুদা-ব্যোমকেশ-কাকাবাবু।

আমি বুঝতে পারলাম, আমার জীবনের এই ছোট্ট পরিসরে আমি আগের কাজ আগে আর পরের কাজ পরে করতে পারিনি। যখন আমার কিশোর সমগ্র পড়ার কথা, তখন পড়েছি প্রেমের উপন্যাস। তাই আমার বই পড়ার পদ্ধতিটা ঠিক ছিল না। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে না এলে হয়তো আসল সাহিত্যরস উপভোগও করতে পারতাম না কখনো। এর কারণ একটাই, আমি পরিবার থেকে সবসময় উৎসাহ পেয়েছি, কিন্তু কখনো ‘গাইডেন্স’টা পাইনি। আমার পরিবার আমাকে বই পড়তে বলেছে, কিন্তু ভালো একটা বই কিনে এনে আমার হাতে দেয়নি। হয়তো তারা আমাকে বরাবরের মতো বই পড়ার ক্ষেত্রেও পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে চেয়েছেন, কিন্তু পূর্ণ মানসিক বিকাশের জন্য সময়ানুযায়ী যে বই পড়ার একটা থিওরি, এটা যে গুরুত্বপূর্ণ এটাও অস্বীকার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

তাই আমার মনে হয়, আমাদের উচিৎ আমাদের ছোটভাইবোনগুলোর দায়িত্ব নিজেদের বহন করা। ওদের আনন্দের দিকে লক্ষ্য রেখেই ওদের বয়সোপযোগী বই ওদের হাতে তুলে দেওয়া, বই পড়তে উৎসাহিত করা। আর বাবা-মায়েরও তার সন্তানদের প্রতি একই ভূমিকা পালন করার আবশ্যকতা যে তীব্র, তা আমি অনুভব করতে পারি। নতুন প্রজন্মকে সঠিক পথে চালিত করতে হলে তার হাল আমাদেরই ধরিয়ে দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:৩২
১৬টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×