শুধুমাত্র মেয়ে ডাক্তার হওয়ার কারণে আজ বাইচ্চা গেলাম । নাহলে আজ খবরই ছিল আমার ।ঘটনা খুলে বলি -
ইদের লম্বা বন্ধ পাওয়ায় আজ চেম্বারে বেশ ভীড় ছিল । আমি একবার আল্ট্রা তে বসা আরেকবার রোগী দেখা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি ।
বাসা থেকে একবার বড় কন্যা একবার ছোট কন্যা ফোন দিচ্ছে । সবার ছুটি হয় তোমার কেন এখনো ছুটি হয় না ?
কথা তো সত্যই । সবার ছুটি হয় ডাক্তারদের কেন হয় না ?
কোনরকম ওদের আম জাম বুঝিয়ে ফোন রাখলাম । এর মধ্যে ইর্মাজেন্সি থেকে ফোন করে একজন রোগী পাঠালেন আমার কাছে আল্ট্রার জন্য ।
খুব ইর্মাজেন্সি , রিপোর্ট করে এখনি পাঠাতে হবে ।
রোগীনি আসলেন । তীব্র পেট ব্যথা । ব্যথার কারণে তিনি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছেন না ।
ইর্মাজেন্সি থেকে তাকে ব্যথানাশক ইনজেকশন দেয়া হয়েছে । কিন্তু রোগীর লোকজনের ভাষ্যমতে ব্যথা তো কমেই নাই বরং বাড়ছে ।
এবার রোগীনির দিকে তাকালাম । বয়স কত আর হবে ? ৪২ বা ৪৫ বছর বড়জোর ।
কিন্তু দেখতে আরো বেশি লাগে ।তার পরণে একটা পুরানো সুতির শাড়ি । তাও এক প্যাঁচ দিয়ে কোনরকমে পরা ।
গ্রামের মানুষ , কাজ কর্ম নিয়েই থাকেন সবসময় । নিজের দিকে তাকানোর অত সময় কই তাঁদের ?
রোগীনিকে জিজ্ঞেস করলাম - কখন থেকে ব্যথা আপনার ?
বহু কষ্টে উত্তর দিলেন - ২ দিন ধরে । আইজ সকাল থেকে বেশি ।
সাথে আসা একজন জানালেন - তার ছোট পোলার বিয়া ইদের পরের দিন । বাড়ির সব কাম কাজ করতে করতে আর ঠিকমত না খাইয়া পেটে ব্যথা হইছে ।
আমি আর কথা বাড়ালাম না । সিস্টারকে বললাম আল্ট্রারুমে নিয়ে রেডি করতে ।
আল্ট্রার বেডে শোয়াতেই পেটের সাইজ দেখে আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম - ইনি তো প্রেগন্যান্ট ।
রোগীনি তো পারলে আমারে কাঁচা খেয়ে ফেলে । সাথে আসা এটেন্ডডেন্ট রাও । ধমকের সুরে বলতে লাগলেন -
আপনি পাগল হৈছেন ? কয়দিন আগে মেয়ের ঘরের নাতীন বিয়া দিলাম । ৩ পোলার ঘরে নাতি - নাতনী আছে আমার । সবার ছোট পোলার বিয়া ইদের পরের দিন । এহন কোন থিকা বাইচ্চা অইব ?
রোগীর এটেনডেন্ট প্রায় মারমুখী । বলতে লাগলেন - বয়স অইয়া গেছে কত…। ১ বছর ধরে শরীর খারাপ অয় না ..বন্ধ অইয়া গেছে গা ।আর হে কয় বাচ্চা অইব । পেট টা আগে থেকেই বড় তার । চর্বি জমছে ঐগুলা !
আমি কোন কথা না বাড়িয়ে ডরে ডরে আল্ট্রা করার প্রোবটা হাতে নিলাম ।হুম .. যা ভাবছি তাই ।
একদম ফুল টার্ম …
পেশেন্ট ব্যথায় এসির মধ্যে ঘেমে নেয়ে অস্থির ।
উনার পেটে বাচ্চা এটা এখন কোন সাহসে মুখ দিয়ে বলব সেটা ভেবে ভেবে আমিও ঘেমে অস্থির !
অনেক সাহস সন্চয় করে কোনমতে বললাম - এই যে দেখেন আপনার পেটে বাচ্চা …..
এই কথা শুনে রোগী তড়াক করে উঠে বসে পড়ল ..সংগে সংগে পানি ভেংগে বেড ভিজে গেল ! বাচ্চার মাথা বের হয়ে গেছে ..
আল্ট্রার বেডে এখন আমার বেবি ডেলিভারি করাতে হবে । কিচ্ছু করার নাই । অভিজ্ঞ সিস্টার দ্রুত আমাকে দুই জোড়া গ্লাভস দিল ।
এক জোড়াই ঠিকমত পরতে পারলাম কি পারলাম না বেবি প্রায় চলে এসেছে ।
রোগীর অভিজ্ঞ এটেনডেন্ট দের দিকে যে একটু তাকিয়ে দেখব সে সময়ও নাই । উনারা লজ্জিত মুখে বের হয়ে গেলেন আল্ট্রারুম থেকে ।
কোনরকম প্রস্তুতি ছাড়া আল্ট্রা বেডে বেবি ডেলিভারির মত ঘটনা আমার জীবনে এটাই প্রথম ।প্রস্তুতি বলতে ডেলিভারি করতে যে সমস্ত প্রস্তুতি লাগে সেসব আর কি !
রুমের বাইরে রোগীনির স্বামী , যে পুত্রের বিবাহ সে , বিবাহ উপলক্ষ্যে আসা মেয়ে ,মেয়ের জামাই , নাতীন সহ আরো অনেকে অপেক্ষমাণ ।সবাই একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন নি:শব্দে ।
শেষমেষ রোগীনি একজন রেডিমেড পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন ।
পুরো সময়টাতে তার দু চোখ জুড়ে ছিল অবিশ্বাস ! চোখের ভাষার যদি অনুবাদ করি সেটা এমন হবে - “ এইডা কোথ্থে আইলো “????
আমার দিকে তিনি এখনো অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন ।তখনি মনে হল - ভাগ্যিস আমি লেডি ডাক্তার !!
পুরুষ ডাক্তার হলে এতক্ষনে তিনি হয়তো বলেই ফেলতেন - এইডা ডাক্তারের বাচ্চা ….ষড়যন্ত্র কইরা আমারে গছাইয়া দিছে….
মূল লেখাঃ Click This Link