বিদেশে আছি আজ ৭/৮ বছর হবে। এর আগে দেশে থাকাকালীন সময়ে ভিবিন্ন ব্লগারদের সাথে টুকিটাকি কথা হতো। এদের মধ্যে দু একজনকে ভালো লাগতো বা একটু বেশিই মতের মিল ছিলো। সেসময়টা চরম একটা বিপর্যয়ের মধ্যে ছিলো ব্লগাররা। একটা গোষ্ঠী তখন ব্লগ দিয়া ইন্টারনেট চালাতো। আর ব্লগার মানেই তখন নাস্তিক!!! তখনকার সময়ে ব্লগার মাফিয়া ফারাবী ছিলো ডন। তার উষ্কানিতে আসিফ মহীউদ্দীন, থাবা বাবা, অভিজিৎ রায়, বন্যাদের উপর হামলা হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেসময়টাতে শিবসেনা থেকে ৮৪ জন ব্লগারদের হিটলিস্ট তৈরি হলো যাদেরকে নাস্তিক ঘোষণা করা হলো।
ব্লগার এবং সমকাল সাংবাদিক শামীমা মিতু আপুর জন্মদিনে। উনি বর্তমানে ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন।
বলে রাখা ভালো, সেসময়ে আওয়ামী পন্থী কিছু ব্লগার ছিলো যারা সকাল বিকাল জামাত বিরোধী লেখার কারণে কৌশলে এদেরকে নাস্তিক বানিয়ে দিলো। আসলে তাদেরকে নাস্তিকতার কখনো নাস্তিকতা প্রমোট করতে দেখিনি। যেমনঃ অমি রহমান পিয়াল, সে নাস্তিকতা নিয়ে লিখতোনা। সে ব্যাক্তিগত ভাবে নাস্তিক কিনা তা আমার জানা নাই। ঠিক তেমনি নির্ঝর মজুমদার তখন সে সুইডেনে ছিলো। সে আওয়ামী পন্থী ব্লগার ছিলো, জামাত বিরোধী ছিলো কিন্তু নাস্তিক ছিলোনা। পরবর্তীতে নির্ঝর মজুমদারকে খুব একটা ব্লগিঙের জগতে দেখা যায়নাই। নির্জর, অমি পিয়ালরা আওয়ামী পন্থী ব্লগার হয়েও তাদের দল ক্ষমতায় থেকেও তারা বিদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
সমমনা কিছু ব্লগার এক্টিভিস্টদের সাথে আফতাব নগরে জলের গানের কনসার্টে একটা গেট টুগেদার করেছিলাম।
আর কিছু ব্লগার ছিলো শাখের করাত! এরা নাস্তিক হওয়ার কারণে জামাতিদের টার্গেট ছিলো আবার একই সাথে আওয়ামী বিরোধী লিখতো বলে অমি পিয়ালদেরও টার্গেট ছিলো। তো, যখন হিটলিস্ট বের হলো ব্লগারদের মধ্যে দেশে ছাড়ার হুড়োহুড়ি লেগে গেলো। কেউ এমেনেস্টির মাধ্যমে, কেউ স্টুডেন্ট ভিসায়, কেউ ভিজিটর ভিসায়, আবার কেউ বা স্পাউস ভিসায় দেশ ছাড়তে লাগলো। এর মধ্যে বড় একটা অংশ গেলো জার্মানিতে। তো সেরকম একজনের নাম শাম্মি হক। সেসময়ে অনন্য আজাদের(হুমায়ুন আজাদের পুত্র) সাথে তার সম্পর্ক ছিলো আর তিনিই তাকে জার্মানির টিকিট ধরতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন বলেই আমার মত অনেকের বিশ্বাস। সেসময়ে জার্মানিতে শাম্মির যাবতীয় শেল্টার অনন্য দিয়েছে। সে যাই হোক এখন আসি এত ব্লগার থাকতে আমি কেন শাম্মি হকে এসে আসলাম।
ছবিঃ ব্লগার শুভজিত ভৌমিকের সাথে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে দেখা হয়েছিলো। উনি অভিজিত রায়ের খুব কাছের মানুষ ছিলেন। ওনার হসপিটালিটি আমার আজীবন মনে থাকবে।
গতকাল জার্মানির একটি শহরে মসজিদের স্পিকারে আজান দেয়ার অনুমতি দিয়েছে। সেখানকার মেয়র এটাকে ডাইভার্সিটির চিহ্ন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নিউজের লিংক নিচে একসাথে দিয়ে দিচ্ছি। এখন আমাদের গুনধর শাম্মি হক কি করছে জানেন? ওখানকার একটি মিডিয়াকে ইন্টারভিউ দিয়েছেন উনার নাকি আল্লাহ আকবারে সমস্যা। তার লেখাটি কোট করছি "Please think of us and community of ex Muslims in Cologne, we want to live without 'Allahu Akbar' in Germany. That's why I have been in exile for six years, couldn’t visit my home country and see my family and friends." আচ্ছা আল্লাহ আকবরে উনার সমস্যা কোথায়? আমার একটা ধারণা নাস্তিকরা বাংলাদেশে লড়েছে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য। মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য।
এর এই কলাম পড়ে আমি শুধু মনে মনে ভাবছি। যে ধর্মীয় স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে বিদেশে আশ্রয় নিলি বিদেশে বসে তাদেরই স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চাস। আমি জানি শাম্মি হকের মত ছাগলের কথায় জার্মান সরকার তাদের পলিসি চেঞ্জ করবেনা। কিন্তু এই মহিলার কথা শুনেত মনে হচ্ছে উনিই সবচেয়ে বড় কট্টরপন্থী। উনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, উনি নাস্তিকরা যদি পৃথিবীতে কখনো তালেবানের মত সশস্ত্র জংগীবাদি সংগঠন গড়ে তুলে উনি এটার হেড হবে। ক্রিটিসিজম এক জিনিস আর শাম্মি হকের মত ধর্মীয় স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া আরেক জিনিস। আমারত মনেহয় শাম্মি হকের মত লোকেরা যদি কোনদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যায় তারা সবার আগে মুসলমানদের টার্গেট করবে। ধরে ধরে তাদের কল্লা কাটবে। আমি তালেবান, বিজেপি, আর শাম্মি হকের মধ্যে পেশি শক্তি ছাড়া কোন পার্থক্য দেখতে পাইনা।
বিঃদ্রঃ বিদেশে অনেক ব্লগার আছে যারা ইসলাম নিয়ে সমালোচনা করে। তাদের এই সমালোচনাটুকু আমি স্বাভাবিকভাবেই নিই। কিন্তু আপনি যখন কারো স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চাইবেন সেটা আর স্বাভাবিক থাকেনা। তাতে স্পষ্ট হয় আপনি অন্য কোন এজেন্ডা নিয়ে আগাচ্ছেন। আর আফসুস বিদেশে বসে আমাদের এই চুতিয়া গিরি গুলা হজম করতে হচ্ছে।
ব্লিন্ডে শাম্মির সাক্ষাৎকার; Click This Link
শাম্মি হকের কলাম স্থানীয় সংবাদ পত্রেঃ Click This Link
আজানের অনুমতির সংবাদঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:৪০