somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আমিই সাইফুল
আমি একজন ইউরোপ প্রবাসী, জীবনের ঝড়-ঝাপটায় পাক খেয়ে গড়ে ওঠা আজকের এই আমি। ব্লগে তুলে ধরি মনের গভীরে লুকানো আবেগের রং, যা সোশ্যাল মিডিয়ার চটকদার আলোয় মেলে না। আমি অনুভূতির এক ফেরিওয়ালা, শব্দে বুনে যাই জীবনের অলিখিত গল্প…

সাইন্স ফিকশন গল্প: তরঙ্গের নতুন খেলা

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গুলশানের সেই অদ্ভুত ঘটনার পর কয়েক সপ্তাহ কেটে গেছে। রাফি, তানিয়া আর রিয়াদের জীবন যেন আবার স্বাভাবিক ধারায় ফিরে এসেছে। রিয়াদ তার গবেষণাগারে এখন একটু সাবধানে কাজ করে, তবে তার মাথা থেকে নতুন নতুন আইডিয়া যাওয়ার নয়। তানিয়া বারবার বলে, “এবার থেকে এমন কিছু নিয়ে কাজ করো, যা মানুষের কাজে লাগে।” কিন্তু রিয়াদের উত্তর সবসময় একই, “মজার জিনিস না হলে গবেষণার মানে কী?”
রাফি এখনো প্রায়ই তানিয়ার বাসায় আসে। তার কাছে রিয়াদের গবেষণাগারটা একটা রহস্যময় জগত। সেদিনও সে এসেছিল সময় কাটাতে। টিভি দেখতে দেখতে হঠাৎ তার চোখ পড়ল বাইরের দিকে। তাদের বাসার পোষা পাখিগুলো আবার অদ্ভুত আচরণ করছে। এবার তারা ডাকছে না, বরং এক জায়গায় বসে মাথা ঘোরাচ্ছে—যেন কিছু খুঁজছে।
“এটা আবার কী ব্যাপার?” রাফি ভাবল। সে দ্রুত উঠে রিয়াদের গবেষণাগারের দিকে গেল। দরজায় ধাক্কা দিতেই রিয়াদ দরজা খুলল। তার মুখে সেই পরিচিত হাসি—যে হাসি সফলতার ইঙ্গিত দেয়।
“কী হয়েছে, রাফি? এমন তাড়াহুড়ো কেন?” রিয়াদ জিজ্ঞেস করল।
“ভাইয়া, পাখিগুলো আবার অদ্ভুত কাণ্ড করছে। তুমি কি নতুন কিছু শুরু করেছ?” রাফি উত্তেজিত হয়ে বলল।
রিয়াদ হেসে বলল, “আয়, ভেতরে আয়। তোকে একটা নতুন জিনিস দেখাই।”

গবেষণাগারে ঢুকে রাফি দেখল, টেবিলের ওপর একটা নতুন যন্ত্র। এটা আগের “এইচএমআর”-এর চেয়ে ছোট, কিন্তু এর থেকে বেরিয়ে আসা তার আর এন্টেনাগুলো দেখে মনে হচ্ছে এটা আরো শক্তিশালী। পাশে একটা কাচের বাক্সে দুটো পাখি বসে আছে। তারা মাথা ঘোরাচ্ছে, ঠিক যেমনটা রাফি বাইরে দেখেছে।
“এটা কী, ভাইয়া?” রাফি জিজ্ঞেস করল।
“এটার নাম ‘এমএসডি’—মাইন্ড সার্চ ডিভাইস। এটা দিয়ে আমি পাখিদের মনের মধ্যে কী চলছে, সেটা ধরার চেষ্টা করছি।” রিয়াদ উৎসাহ নিয়ে বলল।
“মানে? তুমি পাখিদের মন পড়তে পারো?” রাফি অবাক হয়ে তাকাল।
“একদম তা নয়। আমি তাদের মনের তরঙ্গ ধরছি। দেখ, পাখিরা যখন কিছু খুঁজে বা কিছু নিয়ে চিন্তা করে, তখন তাদের মস্তিষ্ক থেকে একটা নির্দিষ্ট তরঙ্গ বের হয়। আমি সেই তরঙ্গটা ধরে তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। এই যন্ত্রটা তাদের মনে একটা প্রশ্ন জাগিয়ে দেয়—‘আমার খাবার কোথায়?’ তাই তারা মাথা ঘুরিয়ে খুঁজছে।” রিয়াদ বোঝাল।
“কিন্তু এটা কী কাজে লাগবে?” রাফি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল।
“এটা শুধু শুরু। আমি চাই মানুষের মনের তরঙ্গ ধরতে। কল্পনা কর, যদি আমরা জানতে পারি কেউ কী ভাবছে, তাহলে কত কিছু করা যায়! মানুষের মনের গোপন চিন্তা, ভয়, আশা—সব বোঝা যাবে।” রিয়াদের চোখে উত্তেজনা ঝিলিক দিল।
“কিন্তু ভাইয়া, গতবারের মতো যদি এটা আবার মানুষের ওপর কাজ করে?” রাফি চিন্তিত হয়ে বলল।
“এবার আমি সাবধান। এই তরঙ্গ শুধু পাখিদের জন্য তৈরি। মানুষের ওপর কাজ করবে না।” রিয়াদ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল।

কিন্তু রাফির মনে খটকা লাগল। সে বাইরে এসে দেখল, শুধু তাদের বাসার পাখিই নয়, পাশের বাড়ির পাখিগুলোও একইভাবে মাথা ঘোরাচ্ছে। সে দ্রুত টিভি চালাল। একটা নিউজ চ্যানেলে লাইভ সম্প্রচার চলছে। একজন সাংবাদিক বলছে, “আমরা লাইভ বলছি গুলশান থেকে। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, এখানকার লোকজন অদ্ভুত আচরণ করছে। তারা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে মাথা ঘোরাচ্ছে, যেন কিছু খুঁজছে। এর কারণ এখনো জানা যায়নি।”
রাফি দৌড়ে রিয়াদের কাছে গেল। “ভাইয়া, এটা আবার তোমার যন্ত্রের কাজ! টিভিতে দেখো!”
রিয়াদ টিভির দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল। তার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। “এটা কীভাবে সম্ভব? আমি তো মানুষের জন্য তরঙ্গ তৈরি করিনি!”
“কিন্তু গতবারও তো তুমি বলেছিলে মানুষের ওপর কাজ করবে না। তবু কাজ করেছিল।” রাফি বলল।
রিয়াদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। “আমার বোঝা উচিত ছিল। মানুষের মনেও তো খুঁজে পাওয়ার প্রবৃত্তি আছে। হয়তো এই তরঙ্গটা তাদের মনের সেই অংশটাকে জাগিয়ে দিয়েছে।”

তখনই তানিয়া ঘরে ঢুকল। “তোমরা আবার কী করেছ? বাইরে লোকজন পাগলের মতো মাথা ঘোরাচ্ছে। এটা কি তোমার গবেষণার কাণ্ড?”
রিয়াদ সব খুলে বলল। তানিয়া রেগে গিয়ে বলল, “তোমার এই উদ্ভট কাজ কবে বন্ধ হবে? গতবারের পরও তুমি শিক্ষা নাওনি?”
“আমি এবার ঠিক করে দেব।” রিয়াদ দ্রুত উঠে যন্ত্রটার কাছে গেল। “আমাকে তরঙ্গটা বন্ধ করতে হবে।”
কিন্তু যন্ত্রটা বন্ধ করার পরও বাইরে কিছু বদলাল না। টিভিতে খবর চলছেই। রাফি বলল, “ভাইয়া, এটা কেন থামছে না?”
রিয়াদ চিন্তায় পড়ে গেল। “হয়তো তরঙ্গটা এত শক্তিশালী হয়ে গেছে যে এখন আর আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। আমাকে নতুন কিছু ভাবতে হবে।”

রাত হয়ে গেল। রিয়াদ, রাফি আর তানিয়া মিলে আলোচনা করতে লাগল। রাফি বলল, “ভাইয়া, তুমি যদি পাখিদের মনে খুঁজে পাওয়ার তরঙ্গ জাগিয়ে থাকো, তাহলে এবার কি মানুষের মনে কিছু ভুলে যাওয়ার তরঙ্গ ছাড়া যায়?”
রিয়াদ চোখ বড় বড় করে তাকাল। “তুই ঠিক বলেছিস! আমি যদি একটা বিপরীত তরঙ্গ ছড়িয়ে দিই, যেটা মানুষের মন থেকে এই খুঁজে পাওয়ার চিন্তাটা মুছে দেয়, তাহলে হয়তো সমস্যা মিটে যাবে।”
তানিয়া বলল, “তাড়াতাড়ি করো। লোকজন এখনো পাগলের মতো ঘুরছে।”

পরের দুই দিন রিয়াদ দিন-রাত কাজ করল। রাফি আর তানিয়া তার পাশে থেকে সাহায্য করল। অবশেষে রিয়াদ একটা নতুন যন্ত্র বানাল—নাম দিল “এমএফডি”—মাইন্ড ফরগেট ডিভাইস। যন্ত্রটা চালু করার পর ধীরে ধীরে গুলশানের লোকজন স্বাভাবিক হতে শুরু করল। টিভিতে খবর এল, “গুলশানের অদ্ভুত ঘটনা আবার থেমেছে। কারণ এখনো অজানা।”
রাফি হেসে বলল, “ভাইয়া, তুমি আবার বাঁচিয়ে দিলে।”
রিয়াদ বলল, “হ্যাঁ, কিন্তু এবার থেকে আরো সাবধানে কাজ করব।”
তানিয়া চোখ পাকিয়ে বলল, “দেখি কতদিন এই সাবধানতা থাকে।”
তিনজনেই হাসতে লাগল। গুলশান আবার শান্ত হল, কিন্তু রাফি জানে, রিয়াদের মাথায় নতুন কোনো আইডিয়া ঘুরছে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×