somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাহনি

২৬ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ঈদের দিন দু'য়েক আগের কথা। মেঘো আষাঢ়ে মাঝ-দুপুরী গরম। তার সাথে জ‍্যাম আর ইঞ্জিনের তাপের যোগফলে বাসের ভেতরের পরিবেশটা যারপরনাই প্রায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তবে গত ক'দিনে ঠিকঠাক ঘুমের অভাবে চোখ জোড়ায় তখন আমার ঘুমের বাম্পার ফলন। সেখানে কোনো অভাব নেই। এমনকি এই অসহনীয় গরমেও!
___'বস! ভাড়াটা...!' কনডাক্টরের হাঁকে তন্দ্রা-ভাবটা ছুটে গেল।
___'পরে নাও।' খানিকটা বিরক্তি আর ধাতস্থ হতে সময় নেয়া আর কি।
___'কোই যাবেন?'
___'মোহাম্মদপুর।' এ বাসের প্রায় শেষ গন্তব‍্য।

___'কাকা, আপনারটা?' বসেছিলাম ড্রাইভারের পাশের দু' সারি সিটের পেছনেরটায়। ভদ্রলোক আমার সামনের সিটে। দূরত্ব বজায় রাখতে বাসগুলো শহরের ভেতরে দু'সিটে একজন নিয়ে চলছে সেটা তো জানা কথাই কিন্তু তাতে যে অতিরিক্ত ভাড়াটা, তা তো যাত্রীকেই দিতে হচ্ছে! এই যেমন ঈদের দিন ও তার পরদিন পরিবহনগুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করেছে তেমনি ভাড়াও নিয়েছে "বর্ধিত-ভাড়া"র চেয়ে বেশি। চল্লিশের ভাড়া লেগেছে নব্বই। আর বাসে তো চড়ে ছা-পোষা মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তরা।

___'মোহাম্মদপুর বাসস্ট‍্যান্ড কত?' পকেট থেকে মানিব‍্যাগ বের করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন মাঝ বয়েসি সেই ভদ্রলোক।
___'ষাইট টাকা।'
___'ষাট টাকা!' অবিশ্বাস মিশিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে চাইলেন। বাস কন্ডাক্টর আমার সিটের পাশে দরজার কাছে দাঁড়ায়ে। 'এত তো ভাড়া না। চল্লিশ টাকা তো!' (আসলেই ভাড়া চল্লিশ টাকা ছিল)।
___'দুই সিটে একজন নিয়ে যাচ্ছি; দেখচেন না?' যুক্তি দেখায় কন্ডাক্টর। 'সরকারি আদেশ। নইলে দু'সিটের ভাড়া আশি টাকা। চুখা বিশ টাকা লচ্।' স্পষ্ট বিরক্তি তার চোখে-মুখে।
___'দশটা টাকা অন্তত কম নাও!' অনুনয় করলে লোকটা।

এরপরের ঘটনায় লোকটা কিছু কম দিবে আর কন্ডাক্টর তো কম নেবেই না। রোজকার মতই তর্কাতর্কি। শেষ অবধি ষাট টাকাই সে দিল। কিন্তু তার সে চোখের চাহনিতে কিছু একটা যেন ছিল যা আমাকে ভাবতে এক প্রকার বাধ‍্যই করল বলা চলে। সরাতে পারিনি সে চাহনী মন থেকে।

(খ)
মিরপুর ১২'র কাছাকাছি কোথাও থেকে "আল্লা'র ঘরের জন‍্য' সাহায্য প্রার্থী উঠল। খেয়াল করিনি। খেয়াল হল তার নেমে যাবার সময়। আর খেয়াল হতেই সারা গা আমার শিউরে উঠল। লোকটাকে কয়েকজন সাহায্য দিয়েছিল। তারপর তিনি অ‍্যাজ ইউজুয়াল দোয়া করা শুরু করলেন।

____'আল্লা' তুমি রিজিকে বরকত দিয়ে দাও, জান-মালের বৃদ্ধি করে দাও। পরিবার পরিজনের গুণা মাফ কর। হাশরের দিনে হিসাব সহ...' বলতে বলতে নেমে গেল।

একটা অবস্থা কল্পনা করেন__।
ভাবেন, আপনার কাছে কেউ একজন অন‍্যের হয়ে সাহায্যের সুপারিশ নিয়ে এসেছে। আপনার সাধ‍্যের মধ‍্যে আছে এমন। সুপারিশ করার এক পর্যায়ে মাঝ পথেই সেই সুপারিশকারী যদি আপনাকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে অন‍্য কাজে মন দেয় তো আপনার কেমন লাগবে?
সেটাকে কী অপমানের সামিল ভাববেন?

স্রষ্টার কাছে দোয়ার শেষ না করেই লোকটা অন‍্য কাজে মন দিল! ____'আল্লা' তুমি রিজিকে বরকত দিয়ে দাও, জান-মালের বৃদ্ধি করে দাও। পরিবার পরিজনের গুণা মাফ করে দাও। হাশরের দিনে হিসাব সহ...।' রাস্তায় পা দিয়েই চুপ! কথা শেষ করলে না!

তখন একটা হিসেব পরিষ্কার হল, লোকে বলে, 'মধ‍্যযুগের পর থেকেই ঈশ্বর আশ্চর্য রকমভাবে নিশ্চুপ!__ সেইটা।

নিজের কথায় ব‍্যস্ত সবাই স্রষ্টা তাই আর শুনছে না'
নামাজ-রোজা, ধূপে-পূজা কোনাে দাওয়াই কাজ করছে না।

আমার তখন মাঝ-বয়েসি ওই ভদ্রলোকের চেহারার ভাবের অর্থ বুঝি বুঝে এল। সামনের সিটে খেয়াল করলাম। ভদ্রলোক নেই, নেমে গেছেন হয়তো। চিন্তা জুড়তে লাগলাম। ___এই করোনায় খুব দরকার না হলে মাঝবয়সী কারো বেরুবার সম্ভাবনা কম। বাসে চড়েন__মধ‍্যবিত্ত। দশটা টাকা কম দিতে জোরাজুরি___কঞ্জুষতাও হতে পারে কিন্তু বেশ-ভূষায় পোষ‍্য ভারাক্রান্ত হওয়ার রাজ সাক্ষী। আর এই শাট-ডাউনে সবচাইতে বিপদে আছে ছা_পোষা মধ‍্যবিত্তই। রুজি-রোজগার বন্ধ। সংসারের খরচ, ছেলে-মেয়েদের আবদার-প্রয়োজন, ঈদের বাজার! না পারে চাইতে, না পারে সংসারের ভার বইতে!

পাঁচ/দশ টাকায় মধ‍্যবিত্তের অনেক... অনেক কিছুই হয়।
কিন্তু কেউ কী তা পড়ছে?
কেউ কী নিজেরটা বাদে কারো কথা শুনছে? নিজে কখন বলবে__সেই সময়ের খোঁজে ছাড়া অপরের কথা কী শুনছে? আপনি শুনছেন?
নিজের বাইরে কেউ কি কারো কথা ভাবছে? আপনি ভাবছেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:২৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×