somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এমজেডএফ
পেশা ব্যবসা ও চাকরি। জ্ঞানভিত্তিক জীবনদর্শনে বিশ্বাসী। নির্জনে ও নীরবে প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ উপভোগ করতে ভালোবাসি। বই পড়তে, ভ্রমণ করতে, একলা চলতে এবং জটিল চরিত্রের মানুষ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি। –এম. জেড. ফারুক

ভারতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের বাঙালি

০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভারতীয় উপমহাদেশের সকল ধর্মের সকল এলাকার মানুষ বৃটিশ অধীনতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করেছিল। দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষার পর ইংরেজদের থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার প্রাকমুহুর্তে গুটি কয়েক রাজনৈতিক নেতার হঠকারিতা তথা ধর্ম ভিত্তিক দেশ প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে এই উপমহাদেশে শুরু হয়েছিল দাঙ্গা-হাঙ্গামার এক নারকীয় তান্ডব। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা এবং পাঞ্জাব। ভিন্নধর্মাবলম্বী হওয়ার পরও শত শত বছর ধরে যারা পাশাপাশি ভাই ও বন্ধুর মতো বাস করেছিল এক রাতেই তারা একজন আরেকজনের শত্রু হয়ে গেল। ইসলাম ধর্মের রাজনৈতিক লেবাস পড়ে পূর্ব বাংলা হয়ে গেল মুসলমানদের আবাসস্থল পাকিস্তানের একটি প্রদেশ পূর্ব পাকিস্থান এবং একইভাবে হিন্দুধর্মের রাজনৈতিক লেবাস পড়ে পশ্চিম বাংলা হয়ে গেল হিন্দুদের আবাসস্থল হিন্দুস্থানের একটি প্রদেশ। পশ্চিম বাংলার মুসলমানেরা পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি ছেড়ে পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্থানে উদ্বাস্তু হলো। একইভাবে পূর্ব বাংলার হিন্দুরা সব হারিয়ে রক্তাক্ত শরীর ও ক্ষতবিক্ষত হৃদয় নিয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য পশ্চিম বাংলায় ঠাঁই নিল। দাঙ্গা-হাঙ্গামা তুলনামূলকভাবে পশ্চিম বাংলায় কম হয়েছিল। তাই পশ্চিম বাংলা থেকে খুব বেশি মুসলমান পূর্ব পাকিস্তানে আসেনি। যারা এসেছিল তাদের মধ্যে সামান্য কিছু শিক্ষিত লোক থাকলেও বেশিভাগ ছিল শরৎচন্দ্রের মহেশ গল্পে উল্লেখিত অশিক্ষিত দরিদ্র কৃষক গফুর-আমিনাদের মতো মানুষ আর কিছু মৌলবাদী মুসলমান। আর পূর্ব পাকিস্তান থেকে যারা ভারতে চলে গেলেন তাদের বেশির ভাগই ছিল শিক্ষিত, মেধাবী ও উচ্চ বর্ণের হিন্দু। অর্থাৎ দেশ ভাগের কারণে সৃষ্ট উদ্বাস্তু বিনিময়ে দেশের মেধাবী ও শিক্ষিত একটি প্রজন্মকে হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশ।


সে সময় হিন্দুরা শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য সবদিক দিয়ে মুসলমানদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। পূর্ব বাংলার শিক্ষিত, ব্যবসায়ী ও উচ্চবর্ণের বেশিরভাগ হিন্দু ভারতে চলে গেলেও সহায়সম্বলহীন নিম্নবর্ণের হিন্দু তথা কবি শামসুর রাহমানের কবিতায় উল্লেখিত সুধাংশুরা পূর্ব পাকিস্তানে রয়ে গেল। এই অসহায় দরিদ্র সুধাংশুদের অন্য কোনখানে যাবার কোনো উপায় নেই। ১৯৪৭ সালে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সিরিজ এখনো চলছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ঘটনার অজুহাতে, সোস্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে কিংবা ভোটে জেতার আনন্দ বা ভোটে হারার প্রতিক্রিয়ায় সুধাংশুদের ওপর বারবার হামলা হয়, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়ে ওদের বিতাড়িত করা হয়। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন এসব দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও হত্যাকান্ডের কোনো বিচার হয় না। তাই নিরুপায় হয়ে এদের অনেকেই মাথা গুঁজার শেষ জমিটুকুও নামে মাত্র টাকায় বিক্রি করে অনিশ্চিত গন্তব্যে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। আর যাদের কোথাও যাওয়ার সেই সামর্থ্যটুকুও নেই সেইসব সুধাংশুরা সব হারাবার পরও অশ্রুসিক্ত নয়নে পোড়া ভিটেতে আবার ফিরে এসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নতুনভাবে বাঁচার যুদ্ধ শুরু করে। ভারতেও প্রায় একই অবস্থা! উগ্র হিন্দুবাদী মাস্তানেরা গোমাংস ভক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে নীরিহ মুসলমানদের উপর জুলুম-অত্যাচার করে। আধুনিক সভ্যতার চরম উৎকর্ষতার এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মন্দির-মসজিদ, পুজা-গোমাংস ইত্যাদি নিয়ে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশে একই সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষ দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়িয়ে পড়ার কলঙ্কজনক অধ্যায়ের শেষ হবে কবে!



সুধাংশু যাবে না
শামসুর রাহমান

লুণ্ঠিত মন্দির, আর অগ্নিদগ্ধ বাস্তুভিটা থেকে
একটি বিবাগী স্বর সুধাংশুকে ছুঁলো
‘আখেরে কি তুলি চলে যাবে?’ বেলা শেষে
সুধাংশু ভস্মের মাঝে খুঁজে
বেড়ায় দলিল, ভাঙা চুড়ি, সিঁদুরের স্তব্ধ কৌটা,
স্মৃতির বিক্ষিপ্ত পুঁতিমালা।

স্বর বলে, ‘লুটেরা তোমাকে জব্দ ক’রে
ফেলে আশে পাশে
তোমার জীবনে নিত্যদিন লেপ্টে থাকে
পশুর চেহারা সহ ঘাতকের ছায়া,
আতঙ্কের বাদুড় পাখার নিচে কাটাচ্ছ প্রহর,
তবু তুমি যেও না সুধাংশু।’

আকাশের নীলিমা এখনো
হয়নি ফেরারি, শুদ্ধাচারী গাছপালা
আজও সবুজের
পতাকা ওড়ায়, ভরা নদী
কোমর বাঁকায় তন্বী বেদিনীর মতো।
এ পবিত্র মাটি ছেড়ে কখনো কোথাও
পরাজিত সৈনিকের মতো
সুধাংশু যাবে না



বিশেষ করে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় সাবেক পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) অনেক হিন্দু বাঙালি স্থায়ীভাবে ভারতে পাড়ি জমান। তাঁদের অনেকেই ভারত তথা পশ্চিম বাঙলার শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্পকলা, ক্রীড়া, সমাজকল্যাণ ও জনকল্যাণমূলক কাজ, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, শিল্প-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে বিশেষ অবদানের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। পূর্ববঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া ভারতের এসব গুণী বাঙালিদের সংক্ষিপ্ত তালিকা এখানে দেওয়া হল।

০১। অদ্বৈত মল্লবর্মণ (১৯১৪–১৯৫১) : গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ()
বাঙালি ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক। তৎকালীন কুমিল্লা জেলার অধীনে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মহকুমার গোকর্ণঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিতাস একটি নদীর নাম শিরোনামের একটিমাত্র উপন্যাস লিখে তিনি বাংলা সাহিত্যের চিরস্মরণীয় ও অমর প্রতিভা হিসেবে সবিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেন।

০২। অমর্ত্য সেন (১৯৩৩ – ) : অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক ()
অমর্ত্য সেনের জন্ম শান্তিনিকেতনে মাতামহ ক্ষিতিমোহন সেনের 'পর্ণকুটীরে'। তার আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মানিকগঞ্জে। দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্রের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

০৩। অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর (১৮৮৮–১৯৬৯) : বাঙালি ধর্মগুরু ()
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ নামক সংগঠনের প্রবর্তক। তিনি ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুরে জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত। ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে মৃত্যুবরণ করেন।

০৪। উৎপল দত্ত (১৯২৯–১৯৯৩ ) : অভিনেতা এবং নাট্যকার ()
তার জন্ম অবিভক্ত বাংলার বরিশালে। গণনাট্য আন্দোলন ছিল মূলত রাজনৈতিক আদর্শের প্রতিফলন, মার্ক্সবাদ থেকে প্রণীত এক ধারা যেখানে মঞ্চ হয়ে ওঠে প্রতিবাদের মাধ্যম তিনি মঞ্চের কারিগর ,বাংলা মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন।

০৫। উদয়শঙ্কর (১৯১৪–১৯৫১) : বিশ্বখ্যাত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য পরিচালক। ()
জন্ম. কালিয়া গ্রাম, যশোহর। উদয়শঙ্করের আকর্ষণীয় অভিনয়কলা দক্ষিণ এশিয়ার ধ্রুপদী লোকনৃত্য ও সঙ্গীতের সমৃদ্ধি সম্পর্কে পাশ্চাত্য জগতে এক নতুন ধারণার জন্ম দেয়। ১৯৩৭ সালে কলকাতায় উদয়শঙ্করকে প্রদান করা হয় এক বীরোচিত সংবর্ধনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

০৬। ঋত্বিক ঘটক (১৯২৫–১৯৭৬ ) : চলচ্চিত্র পরিচালক (↱)
তার জন্ম পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশের) ঢাকা শহরের ঋষিকেশ দাস লেনে।[২] ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের পরে তার পরিবার কলকাতায় চলে যায়। বাংলা চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে তিনি সত্যজিৎ রায় এবং মৃণাল সেনের সাথে তুলনীয়।

০৭। কাজী আবদুল ওদুদ (১৮৯৪- ১৯৭০) : শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ (↱)
তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর (বর্তমান) রাজবাড়ী, পাংশা, একটি নিম্ন - মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি অজ্ঞতা থেকে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন কিছু তরুণ লেখকদের সঙ্গে। পশ্চাদপদ বাঙালি মুসলমান সমাজে মুক্তচিন্তা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত করার ক্ষেত্রে কাজী আবদুল ওদুদের অবদান বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। মুক্তচিন্তার কারণে তাঁর উপর মুসলিম লীগের নেতারা বিরাগভাজন হন। ফলে জন্মসূত্রে মুসলিম হয়েও পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন।

০৮। কালিকারঞ্জন কানুনগো (১৮৯৫–১৯৭২) : ইতিহাসবেত্তা (↱)
চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়া গ্রামের এক জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। প্রফেসর কানুনগোর গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র ছিল উপমহাদেশের মধ্যযুগের ইতিহাস। মুসলমান শাসক, রাজপুত এবং মারাঠাদের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল। ১৯৭২ সালের ২৯ এপ্রিল লক্ষ্ণৌর নিজস্ব বাসভবনে কালিকারঞ্জন কানুনগোর মৃত্যু হয়।

০৯। কুসুমকুমারী দাশ (১৮৮৮–১৯৬৯) : বাঙালি মহিলা কবি (↱)
জন্ম‎: ‎১৮৭৫; ‎বরিশাল, পিতা-মাতা‎: ‎চন্দ্রনাথ দাশ এবং ধনমানী দাশ। বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাশের মায়ের নাম। তিনি খুব বেশি লিখে যাননি কিন্তু যেটুকু রেখে গেছেন তাতে তার প্রতিভার ছাপ সুস্পষ্ট। ১৯৪৮ সালে কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউ এর বাড়িতে তার মৃত্যু হয়।

১০। গীতা দত্ত (১৯৩০–১৯৭২ ) : সঙ্গীতশিল্পী (↱)
গীতা দত্ত একটি ধনী জমিদার পরিবারে বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মূলত ১৯৫০ এবং ১৯৬০এর দশকে হিন্দি ছবিতে নেপথ্য সঙ্গীত এবং বাংলা আধুনিক গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত।

১১। গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য (১৮৯৫–১৯৮১) : পতঙ্গবিশারদ ও উদ্ভিদবিদ। (↱)
জন্ম বৃহত্তর ফরিদপুরের শরীয়তপুর জেলার লোনসিং গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে। পিঁপড়ে, মাকড়সা, চামচিকা, টিকটিকি, আরশোলা, কাঁকড়াবিছা, শুঁয়াপোকা, ব্যাঙাচি, প্রজাপতি ইত্যাদি প্রাণীর জীবনপ্রণালী ও স্বভাব-চরিত্র বিষয়ক তাঁর পর্যবেক্ষণ ও লিখিত নিবন্ধগুলি দেশ ও বিদেশে মৌলিক গবেষণা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় তাঁর অবদান অতুলনীয়।

১২। গোপাল হালদার (১৯০২–১৯৯৩) : সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ (↱)
তাঁর জন্ম ঢাকা-বিক্রমপুরের বিদগাঁও গ্রামে ১৯০২ সালে। শৈশব কেটেছে অনুরূপ গহন মফস্বল নোয়াখালি শহরে। সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ গোপাল হালদার বিশেষভাবে পরিচিত কমিউনিস্ট আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ বামপন্থী চিন্তাবিদ ও প্রাবন্ধিক হিসেবে।

১৩। জগদীশ গুপ্ত (১৮৮৬–১৯৫৭) : ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার (↱)
তার পৈতৃকনিবাস ফরিদপুর জেলার খোর্দ মেঘচারমি গ্রামে। পিতার কর্মসূত্রে জগদীশ গুপ্ত কুষ্টিয়া জেলার আমলাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ভারত উপমহাদেশের অন্যতম বাঙালি ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার ছিলেন।

১৪। জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯–১৯৫৪) : আধুনিক বাঙালি কবি (↱)
জীবনানন্দ দাশ বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার নিবাসী ছিলেন। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন।

১৫। তারাপদ চক্রবর্তী (১৯০৮–১৯৭৫) : কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীতাচার্য। (↱)
ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়ায় এক সঙ্গীতশিল্পী-পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা, পিতামহ এবং প্রপিতামহ তিন পুরুষ ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত হন।সঙ্গীতাচার্য, সঙ্গীতার্ণব, সঙ্গীতরত্নাকর। ১৯৭৩ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করে। ব্যক্তিগত কারণে তিনি খেতাব গ্রহণে অসম্মতি প্রকাশ করেন।

১৬। তুলসী লাহিড়ী (১৮৯৭–১৯৫৯) : নাট্যকার, অভিনেতা, সুরকার (↱)
তার জন্ম বর্তমান গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামে। নাটক রচনা ও অভিনয় দিয়ে নাট্য আন্দোলনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছিলেন।

১৭। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার (১৮৭৭–১৯৫৭ ) : রূপকথার প্রখ্যাত রচয়িতা এবং সাংগ্রহক (↱)
ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় উলাইল এলাকার কর্ণপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রধানত ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ শীর্ষক অবিস্মরণীয় গ্রন্থের জন্য বাঙালি পাঠকসমাজে তিনি সমধিক পরিচিত। লোক-সাহিত্যের সংগ্রাহক ছড়াকার, চিত্রশিল্পী, দারুশিল্পী এবং কিশোর কথাকার হিসেবেও দক্ষিণারঞ্জন বিশিষ্ট অবদান রেখে গেছেন।

১৮। দেবব্রত বিশ্বাস (১৯১১-১৯৮০) : রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী (↱)
তাঁর জন্ম বাংলাদেশের বরিশালে। এক স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি রবীন্দ্রসংগীত গায়ক ও শিক্ষক। পিতামহ কালীমোহন বিশ্বাস ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করলে নিজগ্রাম ইটনা থেকে বিতাড়িত হন।

১৯। দেবীপ্রসাদ রায় চৌধুরী (১৮৯৯-১৯৭৫) : চিত্রশিল্পী (↱)
রংপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দেবীপ্রসাদ অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন। ভারতের আধুনিক শিল্পীদের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্রোঞ্জ মূর্তি নির্মাণ করেন।

২০। নরেন্দ্রনাথ মিত্র (১৯১৬-১৯৭৫) : কথাশিল্পী (↱)
বাংলাদেশের ফরিদপুরের সদরদিতে জন্মগ্রহণ করেন। পাঠককে নিমগ্নচিত্তে গল্পপাঠে মুগ্ধতার সাথে ধরে রাখার এক অসামান্য শিল্পশক্তির আধার তাঁর গল্পমালা। শান্ত-নিস্তরঙ্গ পল্লীজীবন, নগরমুখী মফস্বল শহরের ভাসমান মধ্যবিত্ত এবং মহানগরী কলকাতার সীমায়িত এলাকার অভিজ্ঞতা তার উপন্যাসগুলির মূল উপজীব্য।

২১। নলিনীরঞ্জন সরকার (১৮৮২-১৯৫০) : অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ (↱)
নলিনীরঞ্জন বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার অদূরে সাজিউড়া নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭এর দেশভাগের সময় নলিনীরঞ্জন ভারতে চলে যান। বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার সাধনে তিনি ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।

২২। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯১৮-১৯৭০) : কথাসাহিত্যিক (↱)
প্রকৃত নাম তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, 'নারায়ণ' তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম। দিনাজপুর জেলার বালিয়াডিঙ্গিতে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বরিশাল জেলার বাসুদেবপুরের নলচিরায়। ইতিহাসবোধ ও স্বাদেশিকতা তাঁর রচনার উপজীব্য। বাংলার নিসর্গ ও নদনদীর তরঙ্গমালা, বাঙালির আদিম ও আরণ্যক জীবন তাঁর উপন্যাসে রোম্যান্টিকতার নিরিখে মনোজ্ঞভাবে চিত্রিত হয়েছে।

২৩। নিবারণ পন্ডিত (১৯১৫-১৯৮৪) : গণসঙ্গীত রচয়িতা (↱)
ব্রিটিশ ভারতে ময়মনসিংহ জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পরিবার মূলত কৃষিভিত্তিক হলেও পিতা ভগবানচন্দ্র শিক্ষকতা করার জন্য পন্ডিত উপাধি পেয়েছিলেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগের পরপরই তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে আসেননি। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে আনসার বাহিনী তাকে কারারুদ্ধ করেন এবং তিনি কারাগারে অত্যাচারের সম্মুখীন হন। এরপর কারাগার থেকে মুক্তি পেলে সেখান থেকে ছোট-বড় নয়টি পরিবারকে নিয়ে তিনি ভারতে চলে আসেন।

২৪। নির্মলেন্দু চৌধুরী (১৯২২-১৯৮১) : পল্লীগীতি গায়ক (↱)
বাংলাদেশের সিলেটের সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। সুরমা থেকে গঙ্গা জয় করে নেওয়া এক নিভৃতচারি সঙ্গীত সংগ্রামী। চল্লিশের দশকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে যাঁরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে গণজাগরণ সৃষ্টি করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সঙ্গীত শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী।

২৫। নীহাররঞ্জন রায় (১৮৮২-১৯৫০) : ইতিহাসবিদ ও সাহিত্য সমালোচক (↱)
ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাচীন ভারতে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। দেশবরেণ্য ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মনীষী ছিলেন তিনি।

২৬। পি. সি. সরকার (১৯১৩-১৯৭১) : জাদুকর ও লেখক (↱)
ভারতবর্ষের বিখ্যাত জাদুকর। তার পুরোনাম প্রতুল চন্দ্র সরকার। টাঙ্গাইল জেলার অশোকপুর গ্রামে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি অন্যতম একজন আন্তর্জাতিক জাদুকর ছিলেন যিনি ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তার জাদু দেখিয়েছেন।

২৭। প্রবোধচন্দ্র সেন (১৯১৫-১৯৮৪) : ছন্দবিশারদ, ঐতিহাসিক, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ (↱)
জন্ম কুমিল্লার মনিয়ন্দ গ্রামে। আদিনিবাস ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার সরাইলের চুন্টা গ্রামে। প্রবোধচন্দ্র সেনের ছন্দবিষয়ক এ প্রবন্ধ পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ‘ছান্দসিক’ বলে অভিহিত করেন। ছন্দচর্চা ও ইতিহাসচর্চার সঙ্গে রবীন্দ্রচর্চা প্রবোধচন্দ্র সেনের আরেক সাধনা। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তিনি বহু প্রবন্ধ ও গ্রন্থ রচনা করেন।

২৮। প্রমথনাথ বিশী (১৯০১-১৯৮৫) : সাহিত্যিক, গবেষক (↱)
নাটোরের জোয়াড়ি গ্রামে জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। একজন সৃজনশীল লেখক ও মননশীল গবেষক হিসেবে প্রমথনাথ বিশীর সমান খ্যাতি আছে। গবেষণার ক্ষেত্রে প্রধানত রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন।

২৯। প্রিয়দা রঞ্জন রায় (১৮৮৮–১৯৮২) : রসায়নশাস্ত্রবিদ (↱)
চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া গ্রামে ১৮৮৮ এর ১৬ জানুয়ারি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে প্রিয়দা রঞ্জন রায়ের জন্ম। ১৯৪৭ সালে তিনি ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটির সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৫১ সালে বিশুদ্ধ ও ফলিত রসায়নের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্যোগে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত নব প্রতিক্রিয়া কমিশনের সদস্য পদে নির্বাচিত হন।

৩০। বিজন ভট্টচার্য্য (১৯০৬–১৯৭৮) : নাট্যকার, অভিনেতা (↱)
ফরিদপুর জেলার খানখানাপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বিজন ভট্টাচার্য মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা ও বাঁচবার কথা তার নাটকগুলির মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে তিনি এই ভাবনা থেকে সরে যান।

৩১। বিজয়চন্দ্র মজুমদার (১৮৬১–১৯৪২) : কবি, লেখক, অনুবাদক (↱)
ফরিদপুর জেলার খানাকুল গ্রামে তাঁর জন্ম। সংস্কৃত, পালি, তামিল, তেলেগু, উড়িয়া, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল। অতিরিক্ত পড়াশোনার জন্য ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অন্ধ হয়ে যান। তার স্মৃতিশক্তিও ছিল অসাধারণ । অন্ধ হয়েও তিনি যে অক্লান্ত ও অবিশ্রান্তভাবে সাহিত্য ইতিহাস বিজ্ঞান সম্পর্কে গবেষণা করেছেন।

৩২। বুদ্ধদেব বসু (১৯০৬-১৯৭৮) : সাহিত্যিক, সমালোচক, সম্পাদক (↱)
১৯০৮ সালের ৩০ নভেম্বর কুমিল্লায় জন্ম। তাঁর পরিবারের আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুরের মালখানগরে। তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক, সম্পাদক ও সাহিত্য-সমালোচক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর বিশ ও ত্রিশের দশকের নতুন কাব্যরীতির সূচনাকারী অন্যতম কবি হিসেবে তিনি সমাদৃত।

৩৩। বেণীমাধব বড়ুয়া (১৮৮৮–১৯৪৮) : চলচ্চিত্র পরিচালক (↱)
চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার মহামুনি গ্রামে তাঁর জন্ম। বেণীমাধব বহু গ্রন্থ ও গবেষণা নিবন্ধ রচনা করেন। অধ্যাপক বড়ুয়া Royal Asiatic Society of Bengal-এর Fellow, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য, কলকাতার মহাবোধি সোসাইটি ও ইরান সোসাইটির কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন।

৩৪। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯২০-১৯৮৩) : জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা (↱)
ভানু জন্মেছিলেন মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে ১৯২০ সালের ২৬শে অগাস্ট। কলকাতায় বসে তার শিল্পের সব উত্তরণ ঘটালেও বাংলাদেশের দর্শক-শ্রোতার কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন 'ঢাকার ভানু'।

৩৫। মনোজ বসু (১৯০১-১৯৮৭) : কথাসাহিত্যিক (↱)
যশোহর জেলার ডোঙ্গাঘাটা গ্রামে বিখ্যাত বসু পরিবারে মনোজ বসুর জন্ম। কর্মজীবনে শিক্ষকতা করলেও দেড় শতাধিক গল্প-উপন্যাসের রচয়িতা তিনি। তাঁর প্রথম গল্পসংকলন 'বনমর্মর'। সশস্ত্র বিপ্লবীদের ব্যক্তিজীবন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে রচিত 'ভুলি নাই' তাঁর সমচেয়ে জনপ্রিয় কাজ।

৩৬। মেঘনাদ সাহা (১৮৯৩-১৯৫৬) : শিক্ষাবিদ ও জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী (↱)
ঢাকা জেলার তালেবাদ পরগনার অন্তর্গত সিওরাতলী গ্রামে ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর মেঘনাদ সাহা জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞানে তাপীয় আয়নীকরণ তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে খ্যাত। তার আবিষ্কৃত সাহা আয়নীভবন সমীকরণ নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মাবলি ব্যাখ্যায় ব্যবহৃত হয়।

৩৭। যদুনাথ সরকার (১৮৭০-১৯৫৮) : ইতিহাসবিদ (↱)
বর্তমান নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার কড়চমারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ইতিহাস শাস্ত্রে অসাধারণ ও প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন যদুনাথ সরকার। তাকে ইতিহাস-চর্চায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন ভগিনী নিবেদিতা, যিনি সিস্টার নিবেদিতা নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি ঐতিহাসিক গবেষণা-গ্রন্থ রচনার জন্য বাংলা, ইংরেজী, সংস্কৃত ভাষা ছাড়াও উর্দু, ফারসী, মারাঠীসহ আরও কয়েকটি ভাষা শিখেছিলেন।

৩৮। যোগেশচন্দ্র বাগল (১৯০৩–১৯৭২) : লেখক, ইতিহাসবিদ (↱)
জন্ম পিরোজপুরের কুমিরমারা গ্রামে। উনিশ শতকের বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার নবজাগরনের ইতিহাস কৃতি বাঙালিদের জীবন-চরিত রচনা করে খ্যাতি অর্জন।

৩৯। রমেশচন্দ্র মজুমদার (১৯০৬-১৯৭৮) : ইতিহাসবিদ (↱)
জন্ম ফরিদপুরের খন্ডপাড়া গ্রামে। ১৯৩৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর নিযুক্ত। ভারতের জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাস রচনার জন্য ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটির ডাইরেক্টর নিযুক্ত হয়েছিলেন।

৪০। রাধাগোবিন্দ বসাক (১৮৮৫–১৯৮২) : ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ববিদ (↱)
ঢাকা শহরের নবাবপুরে তাঁর জন্ম। প্রাচীন ইতিহাস, লিপি ও লেখাতত্ত্ব , পালি-প্রকৃত ও সংস্কৃত ভাষা এবং পুরাতত্ত্ব বিষয়ের একজনখয়াতনামা পন্ডিত। তাঁর বিখ্যাত ঐতিহাসিক গ্রন্থ 'কৌটিল্যীয় অর্থশাস্ত্র'।

৪১। শচীন দেববর্মণ (১৯০৬-১৯৭৫) : শিল্পী, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক (↱)
স্থায়ী বসতি আগরতলায়, জন্ম কুমিল্লায়।আশিটির অধিক বাংলা ও হিন্দি ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৪২। সতীশ রঞ্জন খাস্তগীর (১৮৯৮-১৯৭৩) : পদার্থবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ (↱)
জন্ম চট্টগ্রামে। কালক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডীন এবং পরবর্তীতে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের পদার্থবিজ্ঞান শাখার প্রধান নিযুক্ত হয়েছিলেন।

৪৩। সুচিত্রা সেন (১৯৩১-২০১৪) : অভিনেত্রী (↱)
সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার অন্তর্গত সেন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রাম সুচিত্রার মাতামহ পঞ্চকবির অন্যতম রজনীকান্ত সেনের বাড়ি। সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক নিবাস পাবনা জেলার সদর পাবনায় সুচিত্রা সেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর জন্মগত নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। তিনি মূলত বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

৪৪। সত্যেন সেন (১৯০৭-১৯৮১) : সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ (↱)
বর্তমান বিক্রমপুরের সোনারঙ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চিরকুমার সত্যেন সেন বাংলাদেশের বামপন্থি রাজনীতির এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

৪৫। সন্তোষ সেনগুপ্ত (১৯০৯-১৯৮৪) : সঙ্গীত শিল্পী (↱)
ঢাকার বিক্রমপুরে জন্ম। আকাশবাণীর সংগীত শিক্ষার আসরে কিছুদিন রবীন্দ্রসংগীত শেখান। এইচ. এম. ভি. ও কলম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানিতে প্রযোজক হিসেবে কাজ করেন।

৪৬। সমরেশ বসু (১৯২৪-১৯৮৮) : লেখক (↱)
ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের রাজানগর গ্রামে সমরেশ বসু জন্মগ্রহণ করেন। কালকূট ও ভ্রমর তার ছদ্মনাম। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে।

৪৭। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৩৪-২০১২) : প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক (↱)
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম মাদারীপুর জেলায়,কালকিনি থানার মাইজপাড়া গ্রামে। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাংলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন।

৪৮। হেমাঙ্গ বিশ্বাস (১৯১২–১৯৮৭) : সঙ্গীতশিল্পী এবং সুরকার (↱)
হেমাঙ্গ বিশ্বাস বর্তমান বাংলাদেশের সিলেটের মিরাশির বাসিন্দা ছিলেন। মূলত লোকসঙ্গীতকে কেন্দ্র করে গণসঙ্গীত সৃষ্টির ক্ষেত্রে তার অবদান উল্লেখযোগ্য।

৪৯। বিজয় সরকার (১৯০৬-১৯৭৮) : ইতিহাসবিদ (↱)
নড়াইলের ডুমদি গ্রামে জন্ম। বাংলাদেশের কবিগানে বিশেষ উৎকর্ষ সৃষ্টিতে তাঁর অবদান অতুলনীয়।

৫০। হেমেন্দ্র প্রাসাদ ঘোষ (১৮৭৬–১৯৬২) : সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক (↱)
যশোহরের চৌগাছা গ্রামে তাঁর জন্ম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক। সংবাদপত্রের কাটিং দিয়ে বিষয়ানুগ বিন্যাসের সূত্রপাত সর্বপ্রথম তিনিই শুরু করেন।

৫১। সন্তোষকুমার ঘোষ (১৯২০–১৯৮৫) : সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক (↱)
বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরের রাজবাড়ীর বাসিন্দা ছিলেন। কিনু গোয়ালার গলি তার একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার বার্তা-সম্পাদক হিসাবে যোগ দিয়ে বাংলা সাংবাদিকতায় নতুনত্ব আনেন।

৫২। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৪০– ) : অভিনয়শিল্পী (↱)
তিনি বাংলাদেশের যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের একজন খ্যাতনামা শিল্পী।

৫৩। তারাপদ রায় (১৯৩৬–২০০৭) : কবি, ছোটগল্পকার ও প্রাবন্ধিক (↱)
তারাপদ রায়ের জন্ম অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে। বাংলার প্রসিদ্ধ কবি, ছোটগল্পকার ও প্রাবন্ধিক। বাংলা সাহিত্যে হালকা হাস্যরসের সাথে পরিমিত তিক্তরস মিশ্রণের পারঙ্গমস্রষ্টা তিনি।

তথ্যসূত্র:
১। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান
২। বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান
৩। বাংলাপিডিয়া
৪। উইকিপিডিয়া
৫। সাধারণ জ্ঞান ডট কম
৬। ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৫
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×