বাংলাদেশে বেশকিছু আহাম্মকের আবির্ভাব ঘটেছে। এই ছাপোষা ছাগলেরা নিজেদেরকে রাতারাতি মুক্তিযোদ্ধা ভাবতে শুরু করায়, আজকাল সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানীটা সহজ ব্যাপারে পরিনত হয়েছে।
এই ধরনের ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছে শাহবাগের তথাকথিত স্বঘোষিত মুক্তিযোদ্ধাদের আবির্ভাবের পরে। শুধু তাই না মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের অরগাইনাইজিং পাওয়ারের জন্য আলাদা বাহিনী তৈরীর মাধ্যমে আর্মস স্ট্রাগল করার ইতিহাস আছে তাদেরকেও শত্রু শিবিরের মানে পাকিস্থানের চর বলে গালি দেয়া হচ্ছে। জিয়াউর রহমানের পরে এবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখায় আওয়ামী লীগের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রীর কপালে ঠিক একই ধরনের খেতাব মিলিছে। হীনমন্যতা এবং পছন্দের ব্যক্তিদের ইতিহাসের কেন্দ্রে স্থান দিতে না পারলে এক ধরনের আক্রোশ সৃষ্টি হয় এই সদ্য স্বঘোষিত উদীয়মান বিলুপ্ত প্রায় মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মুক্তিযোদ্ধাদের।
কিন্তু কি আর করা, এদের অনর্থক বকাবাজি উৎপাদন ব্যতীত আর কোন কাজ অবশিষ্ট নেই। এখন মুক্তিযোদ্ধা কে আর কে রাজাকার এই সার্টিফিকেট বিতরন করে বেড়াতে চাইছে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে জঘন্য নিম্নমানের ক্যারেক্টার এ্যাসাসিনেশন এবং নিম্নমানের প্রপাগান্ডা চালাবার কসরত দেখে মনে হয় এদের গন্ডির বাইরে যেন আর কোন জগত নেই।
ইতিহাস নির্মানের টেন্ডারিটা এরাই পেয়েছে আর কারো সাধ্য নেই ইতিহাস নির্মানের। নিজের কলাম থেকে নিজের কলাম পর্যন্তই এদের রেফারেন্স পয়েন্ট। এবং ইতিহাসের পয়েন্ট অব ডিপারচারও যে বিন্দু থেকে শুরু সেইখানে এসেই শেষ। তাতে অবশ্যিই একখানা অশ্বডিম্ব উৎপাদন হয়েছে বৈকি ইতিহাস নির্মান হয়নি।
এই ব্লগে কিছু হীনমন্য সস্তা গালগল্প ভরা আহাম্মকের ইতিহাস নিয়ে কথা বলার আগে ড পিয়াস করিমকে নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন মনে করছি। ব্যক্তিগতভাবে পিয়াস করিমকে চেনার সুযোগ হয়েছে। রাজনৈতিক মতবিরোধকে তিনি কিভাবে এনগেজ করতেন তা সম্পর্কে অনেকের মত আমিও কিছুটা জানি। বাংলাদেশে মতবিরোধকে ম্যানেজ করার অনেক আদর্শ নমুনা নিয়েও কথা বলতে পারি। যেমন মনে থাকবার কথা নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান এক টকশো আলোচনায় প্রতিপক্ষের চোখ উপড়ে ফেলার কথা বলেছিলেন। এটা একধরনের সংস্কৃতি যা থেকে কিছু শিখবার তো দূরের কথা, তীব্র ঘৃনা জানানোর ভাষাও অনেক সময় প্রয়োজনের তুলনায় কম হয়ে উঠে। প্রফেসর পিয়াস করিমের ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয় তিনি লিবারেল ডেমোক্রেটিক কাঠামোর মধ্যে থেকে নিজেকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। যুক্তিকে যুক্তিতে মোকাবিলা করার চেষ্টার জন্য তিনি সমাদৃত হয়েছেন। শুধুমাত্র তার বিরুদ্ধবাদীদের কাছ থেকেই শোনা যায় ভিন্ন গালগল্প।
তার ব্যাপারে কিছু বামদলের ছাত্র সংগঠনের আক্রোশ থাকা স্বাভাবিক কারন বাংলাদেশে সুবিধাবাদী বামপন্থীদের তিনি ছেড়ে কথা বলেন নি। তেল গ্যাস বন্দর রক্ষা কমিটির মুক্তাগনের এক সভায় আমার মত তিনিও উপস্থিত ছিলেন। সেসময় ফ্যাসিবাদি সরকার পরিকল্পিতভাবে তেল গ্যাস বন্দর রক্ষা কমিটির মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ করিয়ে আনু মোহাম্মদের পা ভেঙ্গে দেয়। ড পিয়াস করিম সহ আমরা কয়েকজন একটি গলিতে আশ্রয় নেই। এই ঘটনার পরে বামদলগুলোর আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় ড পিয়াস করিম অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত হন। সেখানে তিনি প্রশ্ন রাখেন কিভাবে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়া সরকারের সাথে এবং তেল গ্যাস বন্দর রক্ষা কমিটির উপর লাঠিচার্জ করার পরেও কিছু বামদল আওয়ামী লীগের সাথে মহাজোটে থাকতে পারে?
এটা কোন অস্বাভাবিক প্রশ্ন না, আজকে এই প্রশ্ন মার্ক্সবাদ লেনিনবাদের রাজনীতিকে যারা আকড়ে ধরে আছেন তারাও করেন। পিয়াস করিম করেছিলেন অনেক আগেই। কিন্তু তার উপর চড়াও হয় কিছু মহাজোট সুবিধাভোগী বাম সংগঠন। তারপরও বিভিন্ন সময়ে তিনি আনু মোহাম্মদের সাথে বিভিন্ন সভা সেমিনারে অংশগ্রহন করেছেন।
আজকে এক বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে নুরুল কবীরকেও বলতে শুনলাম ড পিয়াস করিম কোন ধরনের মানুষ ছিলেন সে ব্যাপারে। নুরুল কবির একধারে একজন সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক পন্ডিতজন। পিয়াস করিম তার বন্ধু মানুষ। রাজনৈতিক মতের বিরোধ তাদের দুজনের মধ্যেও ঘটেছে নানাবিধ কারনে। নুরুল কবীর খোলামেলা সেটা আলোচনা করেছেন। কিন্তু যে প্রসঙ্গে এসে তিনি ক্ষুদ্ধ হলেন তাহল পিয়াস করিমকে রাজাকার প্রমানের আহাম্মকদের আহাম্মকি চেষ্টা করার প্রসঙ্গে। জানি না নুরুল কবীরকে কোট করে নুরুল কবীরের ক্ষতি করলাম কিনা, কারন এই আহাম্মকরা আবার আগামীকাল নুরুল কবীরের গুষ্টি উদ্ধার করবে কিনা কে জানে।
সরকারের বিরোধিতা করায় এবং বিভিন্ন সময়ে টকশোতে সরকারের সমালোচনা করায় নুরুল কবীর এবং প্রফেসর পিয়াস করিম দুজনের জীবনের উপর হুমকি এসেছে। নুরুল কবীরের বাচ্চাকে স্কুল থেকে কিডন্যাপ করার কথা বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে অন্যদিকে পিয়াস করিমের বাসার দারোয়ানকে গুলি এবং বোমা হামলা চালানো হয়েছে।
যাই হোক এই ঘটনাগুলোর সাথে সম্ভাব্য যোগসাজশ যাদের থাকতে পারে এদের প্রথম কাজটাই হবে প্রফেসর পিয়াস করিমকে রাজাকার প্রমান করা। দ্বিতীয়ত, যেহেতু সাংবাদিক বন্ধু-বান্ধব থাকা সত্ত্বেও পিয়াস করিমের পারিবারিক ইতিহাস যেহেতু কোন সংবাদপত্রের শিরোনাম হয় নি রাজাকার হিসেবে তাই এরা নিজের লেখা থেকেই কোট করতে চাইবে। তবে বাংলাদেশের মুক্তিকামী ফ্যাসিবাদ বিরোধি মানুষের মন থেকে প্রফেসর পিয়াস করিমকে সরানো যাবে না। এদের রাজাকার বানানোর প্রজেক্ট যেভাবে শাহবাগে মার খেয়েছে, ইতিহাসের একটি পেজও এদেরকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেবার জন্য খরচ হবে না।
"দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা" দাবীদারদের ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। নির্বাচনী বৈতরনী পার হবার পরে এদেরকে যেমন টিস্যুপেপারে মত ছুড়ে ফেলেছে এদের স্রষ্টারা তেমনি দেশের মানুষ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানি করবার ধৃষ্টতার জন্য এদেরকে ক্ষমা করবে না।