somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ একটি ভূতের গল্প!

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সিনেমা বানাবো, ভুতের সিনেমা। শুধু এটুকুই মাথায় আছে যে আমি একটি সিনেমা বানাবো। গল্প কোথায় পাব, স্ক্রিপ্ট কিভাবে লেখবো,তা আর মাথায় আসছে না।
সেলিম কে ফোন দিলাম। আজব! তার কোনো রিএকশনই নাই। বলে কি না,বানাবি তো বানা!
আরে ভাই গল্প তো পাওয়া লাগবে! শুধ বানা বললেই বানানো হয়ে গেল?
আজব এক সমস্যার মধ্যে পড়ে গেলাম। কিছু থেকেই ব্যাপারটি মাথা থেকে সরানো যাচ্ছে না।
রাতে ঘুমানোর সময় ভাবলাম, নাহ! সিনেমা বানানোর কোনো দরকার নেই ।
কিন্তু তারপরও সারারাত গল্প কি হবে তা নিয়ে ভাবতে থাকলাম। কোনোমতেই মাথা থেকে এটাকে সরাতে পারলাম না। শেষে চিন্তা করলাম, গল্প নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ি। এই ফাকে যদি স্বপ্নেই কোনো আইডিয়া পেয়ে যাই!
মহাপুরুষরা তো স্বপ্নে অনেক কিছুর সন্ধান পায়। আমি মহা পুরুষ না হলেও পুরুষ তো!
রাত প্রায় ৩টার দিকে চোখে ঘুম আসলো।
হঠাৎ মনে হল আমি যেন আমার রুমে নেই। অন্য কোথাও! বুঝতে পারলাম, এটা আমাদের গ্রামের বাড়ির বেডরুম। আমার বয়স যেন ১০ বছর কমে গেছে। আমি শুয়ে আছি আমার মায়ের পাশে। মাকে বললাম, মা একটা ভুতের সিনেমা বানাবো। একটা গল্প বলোতো!
- চুপ ঘুমা! এতো রাত হয়ে গেছে, এখনোও ঘুমানোর নাম নেই।

আমি ওইপাশে ফিরে বাবার দিকে তাকালাম। দেখি বাবা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রাগী বাবার বড় বড় চোখ দেখে ভয়েই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো
উঠে বসলাম আমি। স্বপ্নের কথা চিন্তা করতে লাগলাম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে স্বপ্নে আমাকে গল্প বলার পরিবর্তে সিনেমা বানানো থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। হাই তুলে আবার বিছানায় পড়ে গেলাম।

সকাল সাতটা ত্রিশে একটা ইন্টারভিউ ছিল। ভালো হয়নাই।
ইন্টাভিউতে আমাকে জিজ্ঞেস করল, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
- ভুতের ছবি বানানো।
বেচারা ভড়কে গেলো।
- অবসরে কি করেন?
- ভুত নিয়ে ভাবি।
- আপনি এখানে কি মনে করে এসেছেন? ভূতুরে পরিবেশে কাজ করার জন্য?
আমি চুপ করে রইলাম।
কিছুক্ষন পর ঐ ভুতের বাচ্চা ভুত বলল কিনা, আপনার জায়গা এটা না, আপনি পাবনার পথ ধরেন।

আসলেই কি আমার কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি? আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা।
ইন্টারভিউ থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামার পর থেকে আর কাউকে মানুষ লাগছে না।সব জায়গায় খালি মনে হচ্ছে ভুত। চোখেও ঘোলা দেখছি। তাহলে কি আমাকে সত্যিই পাবনা যেতে হচ্ছে?

বাসায় ফিরার পর কাজের মেয়ে চিল্লিয়ে উঠলো, ভাইজান আপনেরে এরকম লাগতাছে কেন?
-কিরকম? ভুতের মতো? চমকিয়ে উঠলাম আমি।
- অসুখ অসুখ লাগতাছে। মুখ ফুইলা গেছে। শরীর লাল হয়ে গেছে।
- অহ! দে, তারাতারি এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম আমি।
- কারেন্ট নাই।
-কারেন্ট নাই তো কি হইছে? ফ্রিজে পানি এখনোও ঠান্ডা আছে। অইটাই দে।

পাচ মিনিট ঘটর ঘটর করার পরে কাজের মেয়েটা পানি এনে দিল। পানিটা খেয়ে পরম প্রশান্তি নিয়ে মুখের ভিতর আটকে থাকা শ্বাসটা ছাড়লাম।

বারান্দায় রাখা দোলনায় বসে আছি। কিছুক্ষন পর তিনতলার ছোট মেয়ে এসে ঢুকল। মেয়েটির বয়শ মাত্র ষোল।

-কি ব্যাপার ভাইয়া কেমন আছেন?
- হ্যাঁ ভাইয়া, আছি ভালো।
- কই কি নিয়া ভাবতাছেন মনে হইতাছে।
- হ্যা ভাবতাছি। সিনেমা বানাবো। শর্টফিল্ম । তাই সিনেমার জন্য গল্প লাগবে ভুতের গল্প। কিন্তু গল্প মাথায় আসছে না।
- এককাজ করেন। চক্রে বসেন।
-চক্রে?
-হ্যা চক্রে।
-তো চক্রে কিভাবে বসতে হয়?
তারপর সে আমাকে বর্ননা করলো কিভাবে চক্রে বসতে হয়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এসব তুমি কোথা থেকে শিখছ?
সে জবাব দিল, জাফর ইকবালের বই থেকে।ওইখানে কয়েকজন ছেলে মেয়ে চক্রে বসছিল।
তারপর আরোও কিছু কথা হওয়ার পর সে চলে গেল।

চক্রে বসা একটা খারাপ আইডিয়া। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আরেকটা আইডিয়া মনে পড়ল। ইউরেকা বলে চিৎকার দিয়ে গল্প লেখতে বসে গেলাম ।

একটি ষোল বছরের মেয়ে চক্রে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। উদ্দেশ্য, তার প্রতিবেশী কে ভুতের গল্প উপহার দিবে। চক্রে বসতে তো কয়েকজন মানুষ দরকার পরে। তার সাথে আর কেউ নেই। তাই সে কল্পনায় কয়েকজনকে ধরে নিয়ে চক্রে বসলো। তারপর মন্ত্র পড়তে লাগলো সে। আশ্চর্য, ভুত আসছে। সে বুঝতে পারছে। জানালা নড়ছে। রুমের দরজা লাগানো। রুমের ভিতর বাতাসে ভর্তি হয়ে আছে।বাহিরে তার মা শঙ্কিত হয়ে পড়ল। কি ব্যাপার? ভিতরে কি হচ্ছে? সে তার মেয়ের নাম ধরে কয়েকবার ডাক দিল। মেয়ের কোনো সাড়াশব্দ নেই। আরোও মানুষ জড় হয়ে গেলও। তারা সবাই ধাক্কাধাক্কি করে দরজা ভাঙল। ভিতরে ঢুকে তারা দেখলো ঘর ধোয়ায় পরিপুর্ন। মেয়েটি মেঝেতে পড়ে আছে। একজন হার্টবিট চেক করে দেখলো মেয়েটি মারা গেছে। মেয়েটির পাশে একটি চিরকুট। লেখা "আমি আজ শিবলী ভাইয়াকে ভুতের গল্প দেওয়ার জন্য চক্রে বসছি। কোনো কিছু যদি হয় তাহলে শিবলী ভাইয়া দায়ী। হাহাহা মজা করলাম। আমার কিছুই হবে না।"
এখান থেকেই আমাদের গল্পের কাহিনী শুরু।

এটুকু লেখেই আমি থামলাম। তারপর কিভাবে শুরু করবো বুঝতাছিনা।
হঠাৎ নিচ থেকে কান্নার আওয়াজ আসতে লাগলো। ভয় পেয়ে গেলাম । বাসার দরজা খুলে সিড়ির নিচে তাকালাম, দেখলাম কান্নার আওয়াজ তিনতলা থেকেই আসছে। একটা ছেলেকে উপরে উঠে আসতে দেখে থামিয়ে বললাম কি হয়েছে। সে বলল তিনতলার মেয়েটা মারা গেছে। কিভাবে মারা গেছে বুঝা যাচ্ছে না। তবে নোটে লেখে গেছে চক্রে না কিসে জানি বসছিলোও সে।

মুখ আমার শুকিয়ে গেল। বাসায় ঢুকে দরজা আটকে দিলাম। বেডরুমে ঢুকে বিছানায় বসে পড়লাম।। মাথাটা জ্যাম হয়ে রয়েছে। কি করব বুঝতেছিনা।
হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দ হলো।
আমি চুপ করে বসে আছি। হাত কাপছে। শরীর দিয়ে ঘাম পড়ছে।
আবারোও ঠক ঠক ঠক শব্দ হলো। এ হতে পারে পুলিশ, নাহয় চক্রের ভূত। আর নাহয় মেয়েটির প্রেতাত্মা,এসেছে আমাকে একটি ভূতের গল্প দেওয়ার জন্য।

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×