somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলেবেলা – তৃতীয় পর্ব ( কাক ও চড়ুইয়ের গল্প )

১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্ব - ছেলেবেলা (২য় পর্ব)

গৃহস্তের উঠানে শুঁকোতে দেয়া ধান খাচ্ছে, এক কাক আর চড়ুই।
দুষ্ট কাক চড়ুইকে বলল, দোস্ত, চল, বাজি ধরি।
তোমার সামনে অল্প কয়েকটা ধান আর আমার সামনে অনেক বেশী।
চল দেখি, যে আগে তার সামনের ধান খেয়ে শেষ করতে পারবে, সে জিতবে। আর যে জিতবে, সে আরেকজনের গায়ের মাংস খাবে।

চড়ুই বোকাসোকা পাখি।
সাত পাঁচ না ভেবেই রাজী হয়ে গেল।
ধান খাওয়া শুরু করে দেখল তার ছোট ঠোঁটে সে বেশী খেতে পারছিল না, কিন্তু কাক খুব তাড়াতাড়ি খেয়ে যাচ্ছে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই কাক তার ভাগের ধান শেষ করে, চড়ুইকে বলল – দোস্ত, তুমি হেরে গেছ। আমি এখন তোমার গোশত খাব।
চড়ুই, অবাক হয়ে বলল – আমি তো ভেবেছিলাম, আমরা মজা করছিলাম! আর, আমি যে ছোট, তুমি ঠোকর দিলে তো আমি মরেই যাব।
কাকের কথা একটাই, সে বাজিতে জিতেছে, তাই শর্ত মোতাবেক তাকে এখন চড়ুইয়ের গোশত খেতে দিতেই হবে।

শেষমেশ কোন কথাতেই কাককে নিবৃত্ত না করতে পেরে, চড়ুই বলল - আচ্ছা, বাজিতে যখন হেরে গেছি, তোমার শর্ত মতই হবে।
তুমি আমার গোশত খাবে। তবে, আমার একটা অনুরোধ আছে। সেটা হল – ঐ ঠোঁট দিয়ে তুমি কত ময়লা আবর্জনা খাও। আমার গোশত খাওয়ার আগে, দয়া করে তোমার ঐ নোংরা ঠোঁট নদীর পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে এসো।

চড়ুই এঁর অনুরোধ শুনে কাক মহাখুশী। সে এই অনুরোধ রাখতে রাজী হয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে, নদীকে বলল –
নদী ভাই, নদী ভাই,
দিবা পানি, ধোব ঠোঁট,
তবে খাব চড়ুইর গোশত।

নদী কাকের কথা শুনে বলল – তোর এই নোংরা ঠোঁট পানিতে ডোবালে, আমার পানি নোংরা হয়ে যাবে।
তুই কুমারের কাছ থেকে একটা ঘটি নিয়ে আয়। ঘটিতে পানি ভরে, পাড়ে বসে ঠোঁট ধুয়ে নিস।

কাক তখন উড়াল দিয়ে কুমোরের বাড়ি গিয়ে, কুমোরকে বলল-
কুমোর ভাই, কুমোর ভাই,
দিবা ঘটি, ভরব জল, ধোব ঠোঁট,
তবে খাব চড়ুইর গোশত।

কুমোরের কাছে বানানো ঘটি ছিল না। তাই, কাককে মাটি নিয়ে আসতে বলল। সেই মাটি দিয়ে সে ঘটি বানিয়ে দিবে।
মাটি খোঁড়ার জন্যে ধারালো কিছু না পেয়ে, মাঠে এক মোষ দেখে ভাবল – মোষের শিং হলে মাটি খুঁড়তে সুবিধা হবে। তাই, মোষের কাছে গিয়ে বলল –
মইষ ভাই, মইষ ভাই,
দিবা শিং, খুঁড়ব মাটি, বানাব ঘটি,
ভরব জল, ধোব ঠোঁট,
তবে খাব চড়ুইর গোশত।

মোষ সব শুনে রাজী হল। কিন্তু সমস্যা হল, শিং ভাঙ্গা নিয়ে। আরেকটা মোষের সাথে লড়াই করে, শিং ভেঙ্গে কাককে দিতে হবে। তাই, সে কাককে বলল, ঘাস নিয়ে আসতে। সেই ঘাস খেয়ে, তার শক্তি বাড়বে। তারপর, লড়াই করে শিং ভেঙ্গে কাককে দিবে। ঘাস কাটতে কাঁচি লাগবে। তাই কাক তখন গেল কামারের কাছে। গিয়ে বলল-
কামার ভাই, কামার ভাই,
দিবা কাঁচি, কাটব ঘাস,
খাবে মইষ, করবে লড়াই, পড়বে শিং,
খুঁড়ব মাটি, বানাব ঘটি,
ভরব জল, ধোব ঠোঁট,
তবে খাব চড়ুইর গোশত।

কামার বলল, আচ্ছা। তুই এখনই গৃহস্থের কাছ থেকে আগুন নিয়ে আয়। আমি লোহা পুড়িয়ে তোকে কাঁচি বানিয়ে দিব। কাক গৃহস্থের বাড়িতে উড়ে গিয়ে বলল-
গিরস্ত ভাই, গিরস্ত ভাই,
দিবা আগুন, বানাব কাঁচি, কাটব ঘাস,
খাবে মইষ, করবে লড়াই, পড়বে শিং,
খুঁড়ব মাটি, বানাব ঘটি,
ভরব জল, ধোব ঠোঁট,
তবে খাব চড়ুইর গোশত।

গৃহস্থ সব শুনে রাজী হল, আগুন দিতে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল, আগুন নেয়া নিয়ে। কাক কিভাবে আগুন নিবে?
প্রথমে ঠোঁট দিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। এরপরে বলে, পায়ে বেঁধে দাও। বাঁধার সময়, গরম লাগাতে বলে, পাখায় দিয়ে দাও। তখন, গৃহস্থ কাকের পাখায় আগুন বেঁধে দিল।
কাক যেই না উড়াল দিয়েছে, সেই আগুন দপ করে জলে উঠে কাকের গায়ে ধরে গেল, আর কাক পুড়ে মরল।

চড়ুইয়ের খুশী দেখে কে।
লাফাতে লাফাতে বলতে লাগল-
খা কাউয়া খা,
আমার ধোক্করডা খা।

এসব মনে করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম, মনে করতে পারিনি

ছবিঃ গুগল মামার সৌজন্যে।

শেষ অংশ - ছেলেবেলা - শেষ পর্ব ( যাত্রার শুরু)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:৩৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×