somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইডেন কন্যা ফরজানা হোক ‍বাংলার যৌতুক ‍বিরোধী প্রতীক-

১৫ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বোন ফারজানা! তোমায় কখনও দেখিনি, শুধু নাম শুনেছি। আজ ১৫/১১/১১ তারিখ সন্ধায় পথে যেতে যেতে এবিসি-র মিঠেকড়ায় তোমার সক্ষাৎকার শুনছিলাম। বক্তব্য একপেশে হলেও তোমায় সন্দেহ করার মত তেমন কিছু আমার কাছে ধরা পড়েনি। তাই বাসায় গিয়ে চা খেতে খেতে ভাবুক মন নিয়ে কি-বোর্ডে আঙ্গুল ছোঁয়ালাম। জানিনা, কেন যেন নিজেকে বেশ আবেগপ্রবণ লাগছিল। হয়ত কেউ কেউ আমার এই আবেগী অন্তরকে অন্য চোখে দেখতে পারে। সে দেখুক-গে। যে বিষয়গুলোকে আমি খুবই খারাপ চোখে দেখি, জ্ঞানত অত্যন্ত নিচ কাজ বলে মনে করি, সব সময় প্রতিবাদ করার চেষ্টা করি, নিজে তো বটেই সেই সাথে কাছের মানুষদের সাবধান করি- সেই স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর মধ্যে অন্তত একটি যেন তোমার কথা ও কর্মে অন্য এক মাত্রা পেল। জানতাম, তোমার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তারপরও তোমার প্রতিবাদী ভাষায় নুতন এক সাহস ও সম্ভাবনার ইংগিত ছিল। মহান স্রষ্টার প্রতি তোমার যে অগাধ আস্থা রযেছে, তা বুঝতেও আমার কষ্ট হয়নি। বিশেষ করে এমন একটি কঠিন মুহুর্তকে যখন তুমি আল্লাহতায়ালার পরীক্ষা হিসেবে অকপটে স্বীকার করে নিলে, তখন তোমাকে আবারও নুতন করে চিনতে পারলাম। সুশিক্ষিত স্বচ্ছ অন্তর ও স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস আছে বলেই যথাসময়েই তুমি ভবিষ্যতকে আঁচ করতে পেরেছিলে।

তুমি ইডেন কলেজ থেকে সমাজকল্যাণ বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছ। পড়াশুনার ফাঁকে পার্টটাইম জবও করতে। ঢাকা কলেজে অধ্যয়নরত ছোট ভাইকে লেখাপড়ার খরচ চালাতে মাঝে মধ্যে সাধ্যমত সাহায্য করতে। এগুলো তো একজন বিচক্ষণ ও বিবেকসম্পন্ন মানুষেরই পরিচয় বহন করে। তুমি তোমার বাবা-মার যোগ্য সন্তান বটে। তোমাকে দেখে অনেকেরই অনেক কিছু শিখবার আছে। শুধু উচ্চশিক্ষা গ্রহণই নয়, যথাযথভাবে তুমি তা কাজেও লাগিয়েছ। অনেকেই যা পারেনি। বিয়ে পড়ানোর পরেও যৌতুকের বলি হবার হাত থেকে মুক্তির লক্ষে তুমি যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছ (প্রথম আলো- ২৪ পৃষ্ঠা- কলাম- ২ "কন্যা সাহসিকা") তা ভেবে প্রথমে অবাক হলেও পরক্ষণে মনে হলো- ভালই হয়েছে। বিয়ের পিরিতে যে অশান্তি ও দন্দ দানা বেধেছে, তা সারা জীবনময় বয়ে বেড়ানোর কোন মানেই হয়না।। মনে হচ্ছিল নারীদের অবলা বলার দিন শেষ হলো বলে। যদিও পথটি বন্ধুর, তথাপি সেই অন্ধকার পথটি এতদিনে যে কিছুটা আশার আলো খুঁজে পেল, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। তোমার নামে লোকে যে যাই বলুক- তোমার প্রতি রইল আমাদের লাল ছালাম। তোমার উদ্দেশ্য যদি সত্যিই সৎ হয় এবং অন্তর হয় স্বচ্ছ, তবে জেনে রেখ, 'তোমার হার নেই।' তুমি শুধু তোমার নয়, বাবা-মা, পরিবার, এমনকি গোটা নারী সমাজের কথা ভেবেছ। সবার ব্যথাকে তুমি তোমার প্রতিবাদী ভাষায় প্রকাশ করেছ। তুমি যে সাহস দেখিয়েছ তা কজনে পারে? তবে আমি বিশ্বাস করি যে, এখন থেকে অনেকেই এমনটি পারতে শিখবে। আমার নিজের বোন নেই, তাই বোনের অভাব এবং কদর আমি হারে হারে অনুভব করি। তোমার সাথে দেখা হলে ভাল হত, আরও অনেক কথা হত। জানিনা হবে কিনা। তোমার সুন্দর ভবিষ্যৎ ও শুভকামনা করছি। ভবিষ্যৎ সাক্ষাতের আশা রেখে, তোমার সাথে সুর মিলিয়ে আজ মনের কিছু কথা বলতে চাই।

নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে এবং বাস্তবে যারা অধিক নির্যাতিত, তাদের একজনের পক্ষে মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছি। হতে পারেন তিনি ফারজানা নামের একজন বা অন্য কেউ। তাদের পাশে থাকার এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য।

সুখময় বন্ধন রচনাই বিয়ের মূল উদ্দেশ্য। এর জন্য প্রথমত চাই সহমর্মী দুটি অন্তর। তারপর অন্যসব হিসেব-নিকেশ, মান-অভিমান, টানা-পড়েন; মনের প্রশান্তির জন্য এসব অবশ্যই গৌণ জ্ঞান করা চাই। তাই পাত্রী এবং পাত্রীপক্ষ উভয়কেই মনে রাখা উচিত, যে পুরুষ যৌতুক চায় বা নেয় তার মন মানসিকতা কখনই ভাল হতে পারে না। কারন সেই পুরুষটি জীবন সঙ্গিনী পাবার জন্য সম্পর্ক করেনা, বরং টাকা-কড়ি, ধন-সম্পদের লোভে বিয়ের ফাঁদ পাতে। নিঃসন্দেহে এরা স্বার্থপর, ছোট মনের মানুষ ও পুরুষ জাতির কলঙ্ক। স্বভাবগত কারনেই এরা নিজেরা যেমন সুখী হতে পারেনা, তেমনি অন্যকেও সুখী করতে পারেনা। অনেকের ক্ষেত্রে বিষয়টি তাড়াতাড়ি প্রকাশ পায়। আবার অনেকে ধীরে-সুস্থে প্রকাশ করে। যখনই প্রকাশ পাক না কেন তাদেরকে প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়। একবার প্রশ্রয় পেলে এরা মাথায় চড়ে বসে। তাদের লোলুপ দৃষ্টির ছোবল থেকে নিস্তার পাওয়া তখন বেশ কঠিন হয়ে পরে। যৌতুকের কালো থাবা যে দিন দিন বিস্তার লাভ করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন নারীর যৌতুকের মর্মান্তিক স্বীকারে পরিণত হওয়ার ঘটনা থেকে তা সহজেই অনুমান করা যায়। শুধু অশিক্ষিত বা গরীব ঘরে নয়, অনেক নাম করা শিক্ষিত মহলও এই কুৎসিত মানসিকতা থেকে মুক্ত নয়।

তাই যারা যৌতুক নেয় তারা যে 'খুব নিকৃষ্ট মানসিকতার' এই প্রচার চালাতে হবে এবং তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সেই সাথে যারা যৌতুক চাইবে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো 'মেয়েদেরকে সচেতন হতে হবে এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে'। যে সব পুরুষ বা পরিবার যৌতুকের ইংগিত দেয়, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক না করে বরং পাত্রী ও পরিবার উভয়ের পক্ষ থেকে সরাসরি না বলার মত সৎ সাহস রাখতে হবে। নারী সমাজ যতদিন আত্মনির্ভরশীল ও সচেতন না হবে, ততদিন পরিবার বা পাত্রী কেউই এই সৎ সাহস দেখাতে পারবে না।

আরকেটি বিষয়। উভয় অভিভাবকের পক্ষ থেকে বিয়ের কথা পাকাপাকি করার আগে ছেলে-মেয়ের মাঝে কিছু সময়ের জন্য সাক্ষাৎ ও ভাব বিনিময়ের ব্যবস্থা করা উচিত বলে আমি মনে করি। তবে এ সময় আশেপাশে একটু ব্যবধানে ভাই-বোন বা কোন নিকট আত্মীয় উপস্থিত থাকা চাই। বিচক্ষণ পাত্র-পাত্রী হলে এ সময়ের মধ্যেই তারা একে অপরকে কিছুটা হলেও জেনে নেবার সুযোগ পায়। তাদের মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে যা খুবই জরুরী। অভিভাবকের জন্যও এটি একপ্রকার স্বস্তির বিষয় হতে পারে।

সবশেষে একটা কথা না বললেই নয়, যৌতুক প্রথাকে নির্মূল করতে চাইলে অন্তত বিয়ের সময় গিফট্-টিফট্ লেন-দেনের ব্যাপারে হিসেব-নিকেশের কালচারটাও দয়া করে বন্ধ করা দরকার বৈকি। কারন এসব কালচারই শেষে সমাজের অন্ত্রে আলসার হয়ে দেখা দেয়। ধীরে ধীরে তা ক্যন্সারের রূপও ধারন করতে পারে বৈকি। কথাটা ভেবে দেখবেন কিন্তু।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×