somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও সুচিকিৎসা সম্পর্কিত কিছু কথা-

২৮ শে জুন, ২০১২ রাত ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথায় কথায় ওষুধ খাওয়ার পক্ষপাতি আমিও নই। কিন্তু এমন কিছু অসুখ আছে, যখন রোগীকে ওষুধের উপরে নির্ভর করতেই হয়। কিন্তু তাই বলে শুধু ওষুধের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়াও ভাল নয়।

চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দেবার সময় প্রায়ই অনেকে প্রশ্ন করেন- ”এই ওষুধটির সাইড এফেক্ট নেই তো? কিংবা ঐ ওষুধটির সাইড-এফেক্ট আছে কি?” এক কথায় এর উত্তর হলো- অবশ্যই আছে। এতে ভয় পাবার কিছু নেই। কারন সব ওষুধেরই কম-বেশি সাইড-এফেক্ট/ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকে। কিন্তু তারপরও অসুখ হলে তা নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধটি চিকিৎসকের পরামর্শ মত নিয়ম মেনে ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। শুধুমাত্র ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে সঠিক ওষুধ প্রয়োগে গড়িমসি করলে অর্থাৎ রোগ নিরাময়ের জন্য উপযুক্ত ওষুধটি সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ না করতে পারলে বা রোগী কিংবা রোগীর অভিভাবক নিজেই কিছুটা হেরফের করে নিলে তাতে রোগীরই ক্ষতি হতে পারে। কারন ওষুধের মাত্রা বেশি হলে যেমন ক্ষতি হতে পারে। তেমনি মাত্রা কম হলেও হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষ করে এন্টিবায়ওটিকের মাত্রা কম হলে বা কোর্স কমপ্লিট করা না হলে ড্রাগ-রেজিটেন্স গ্রো করতে পারে। সেল্ফ প্রেস্কিপশন ও ওষুধের দোকনির পরামর্শে সঠিক মাত্রা ও কোর্স না মেনে দু-চার-দশটা এন্টিবাওটিক কিনে খেলে সাময়িকভাবে হয়ত রোগের কিছুটা উপশম হতে পারে। কিন্তু এর সুদূরপ্রশারি ক্ষতির বিষয়টি হয়ত অনেকেই জানেন না। এ কারনে আমাদের দেশে ড্রাগ-রেজিস্টেন্সের হার যে ক্রমেই বেড়েই চলেছে এবং ভবিষ্যতে এর জন্য আমাদেরকেই ভুগতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে ন। আবার রোগ নির্ণয়ের ব্যর্থতার কারনে ভুল ওষুধ প্রয়োগ করা হলেও সেই ক্ষতির প্রভাব মূলত রোগীর উপরেই পড়বে। সেই সাথে রোগীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকেই কম-বেশি ভুগতে হবে। তাই চিকিৎসা প্রদান ও গ্রহণের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকেই সচেতন থাকতে হবে। কিন্তু তাই বলে কোন বিষয় সম্পর্কে অল্প কিছু জেনে অহেতুক খুঁতখুঁতে মনোভাবের কারনে চিকিৎসা গ্রহণের ব্যাপারে দোটানায় ভুগলে বিড়ম্বনার স্বীকার হওয়াটাই স্বাভাবিক।

যেমন, ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলোর সাইড-এফেক্ট সম্পর্কে এখন আমরা মোটামুটি সবাই কম-বেশি জানি। কিন্তু তারপরও ক্যান্সারের মত প্রাণঘাতি রোগের চিকিৎসার স্বার্থে এটি প্রয়োগ না কোরে উপায় নেই। তেমনি রিউমেটিক ফিভার হলে দীর্ঘদিন ওষুধ সেবন বা ইনজেক্সন নেবার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ওষুধ গ্রহণ বন্ধ রাখলে ভবিষ্যতে হৃদপিণ্ডের কপাটিকার রোগ হবার সম্ভবনা এত বেশি যে তখন ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কথা না ভেবে হৃদরোগ ঠেকানোই মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। আবার ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পার। কিন্তু তারপরও এ রোগ হলে, বিশেষ করে সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া হলে জীবন রক্ষার স্বার্থে ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কথা না ভেবে আগে তা প্রয়োগ করা জরুরী হয়ে যায়। সুতরাং এ ধরনের পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করে মন্দের ভালকে বেছে নেয়াই উত্তম।

চিকিৎসা প্রদানের কাজটি অত্যন্ত সেন্সেটিভ। চিকিৎসকের সামান্যতম গাফিলতি কোন রোগীর জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারন হয়ে দেখা দিতে পারে। একজন বিচক্ষণ ও মানবিকতা সম্পন্ন চিকিৎসক কোন রোগীর ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন না। তিনি সব সময়ই রোগীর ভালোর জন্য নিবেদিত হবেন। তবে কদাচিৎ অনিচ্ছাকৃত ও অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। কারন একই ওষুধ এক জনের দেহে কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করলেও বা সামান্য কিছু করলেও, অন্য আরেক জনের ক্ষেত্রে সেই একই ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কিরূপ হবে তা বলা মুশকিল। অর্থাৎ কোন্ রোগীর শরীরে কোন্ ওষুধটি কি ধরনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আগে থেকে জানা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই অনেক সময় রোগ নিরাময়ের স্বার্থে কোন ওষুধ প্রয়োগ করা হলেও কারো কারো ক্ষেত্রে ওষুধটির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া প্রকট হয়ে দেখা দিতেও পারে। তবে এর হার খুবই কম এবং এরূপ অনাকাঙ্খিত সংকটের মূহুর্তে চিকিৎসক, রোগী ও রোগীর ঘনিষ্টজন সহ অন্যান্য সকলকেই ধৈর্য সহ তা মোকাবেলা করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।

চিকিৎসাসেবার ময়দানে সবার ভূমিকা একই রকম না হলেও পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত বটে। একজন চিকিৎসককে যেমন রোগীর রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারনা নেবার ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে, তেমনি রোগী বা তার অভিভাবককেও চিকিৎসকের কাছে সঠিক তথ্যটি দেবার প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কারন সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা- উভয় ক্ষেত্রে এটি বেশ বড় ভূমিকা রাখে। তাছাড়া সঠিক তথ্য পেলে অযথা খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে রোগীর ওষুধ ও পথ্য সরবরাহ করা না হলে ভাল ফল মিলবে না। তাই রোগীর সেবার কাজে নিয়োজিত সকলকেই নিজ নিজ পরিসরে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, সুচিকিৎসার সুফল পেতে হলে ডাক্তার, রোগী, নার্স ও অভিভাবকদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সুসম্পর্ক, শ্রদ্ধাবোধ ও দায়বদ্ধতা থাকা অত্যন্ত জরুরী।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১২ দুপুর ২:২৯
৯টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×