somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

:: হঠাৎ দেখা আকাশ ::

২৭ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদে বাড়ি ফিরবো। ট্রেনের টিকিট পাই নি। যাও পেলাম বাসের টিকিট তার উপর, বাবার সাবধানী হুকুম, ‘’একা একা আসতেছিস। দিনকাল ভাল না। সিট দুইটা নিবি।‘’ মানুষ একটাই পায় না, আর আমি কিনা দুইটা সিট দখল করে আসব!!

‘’জি, বাবা।‘’

বাসের টিকিটটা হাতে নিয়ে ওয়েটিং রুমে বাসের অপেক্ষা করছি আরও অনেকের সাথে।
এক যুবক হন্তদন্ত এসে কাউন্টারে জিজ্ঞেস করল, ‘’ভাই, একটা টিকিট দেন না। খুব জুরুরি যেতে হবে। আশেপাশের সব বাসের কাউন্টারে গেছি, আগামী তিন ঘণ্টার মধ্যে কোন বাস নেই। এই বাসটাই নাকি আছে। প্লিজ ভাই, আমার খুব জরুরী যেতে হবে।‘’

‘’সরি স্যার, বুঝতে পারছি। এই সময় সবার টাই জরুরী। কিন্তু কোন সিট-ই খালী নাই। সব বুকড। বাস- যাত্রী সব চলে এসেছে। আমি দুঃখিত।‘’
যুবকটি মাথার চুল টানছে ক্রমাগত। এক্ষণই মনে হয় কেঁদে ফেলবে এই অবস্থা!
‘’এক্সকিওউজ মি! আমি একা যাচ্ছি। আমার কাছে দুটো টিকিট। আপনার মনে হয় খুব প্রয়োজন। আপনি আমার সাথে যেতে পারেন,‘’ আগ বাড়িয়ে বললাম।

‘’যাক,বাচালেন!’’ বলেই টিকিটটা আমার হাত থেকে নিয়ে হনহন করে বাসে চেপে বসল।
কি ছেলে রে বাবা! ধন্যবাদের কোন বালাই নাই !

বাস চলতে শুরু করল। হাতের ম্যাগাজিন পড়ে শেষ করলাম। এখন কি করব? মোবাইলের চার্জের অবস্থা ও বেশী ভাল না। টানা গানও শোনা যাবে না। বাসা থেকে কিছুক্ষণ পর পরই যোগাযোগ করতে হচ্ছে। জার্নির মাত্র তিন ঘণ্টা গেল। কমপক্ষে আরও পাঁচ ঘণ্টা লাগবে। জার্নিতে আবার ঘুমও যেতে পারিনা। জানালার দিকে অবারিত প্রশস্ত ভূমির দিকে তাকিয়ে আছি। পাশের যুবকটি কানে একটা হেড ফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। গত তিন ঘণ্টা ধরে আমরা পাশাপাশি বসে আছি। অথচ কোন বাক্য বিনিময় হয়নি। আমার কি দায়, হায়- হ্যালো করার!

আশ্চর্য হল, ছেলেটিকে বাস কাউন্টারে যতটা চিন্তিত, বিপদগ্রস্ত লাগছিল; চেহারা বা তার কর্মকাণ্ডে এখন তার ছিটে ফোঁটাও নেই ! কিছুক্ষণ পরপরই সে তার হেড ফোনে শুনতে থাকা গানের ছন্দে মাথা দোলাচ্ছে। থাই তে হাত দিয়ে মাঝে মাঝে তাল ও দিচ্ছে! তবে কি জরুরীর দোহাই দিয়ে মিথ্যা বলল!? অবশ্য একটা ব্যাপার আগের মতোই, চুলে হাত দেওয়া। মনে হয় মুদ্রা দোষ।

খুব বৃষ্টি শুরু হল। বাসটা খুব স্লো যাচ্ছে। আরও বিরক্তকর! পথ যেন এগুচ্ছেই না!
হঠাৎ কাঁধের মধ্যে একটা কিছু একটা অনুভব করি। ছেলেটা আমার কাঁধে মাথা দিয়ে রীতিমত ঘুমাচ্ছে!!

আমি পুরো হকচকিয়ে গেছি। কি করা উচিত বুঝতে পারছি না! মাথাটা সরিয়ে দিলাম। এই প্রথম ছেলেটাকে কাছ থেকে দেখলাম। মাথা ভর্তি চুল। পেটানো একটা রঙ। চোখ টা বন্ধ, তাই দেখতে পারছি না। তবে কেন জানি মনে হচ্ছে বাদামী রঙের হবে। দেখতে হবে খেয়াল করে। হেলেদুলে কিছুক্ষণ পর আবার মাথা দিল আমার কাঁধে। এবার কেন জানি সরাতে ইচ্ছে করল না। আমি ছেলেটার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। সময় যায়। এখন আমি ছেলেটার গায়ের গন্ধও পাচ্ছি। কেমন যেন ঝড়ের মত একটা গন্ধ।

আরে, ঝড়ের কি গন্ধ হয় নাকি ?!!

আমি বাইরের বৃষ্টি দেখছি। বাস চালকের একটা ব্রেক এ চৈতন্য ফিরে পেয়ে ছেলেটা মাথা সরাল আমার কাঁধ থেকে।
‘’কিভাবে যে গাড়ি চালায় স্টুপিড গুলা!’’

তারপর ব্যাগ থেকে ল্যাপটপটা বের করে যন্ত্রের মাঝে ডুবে গেল। কি ছেলে! যেন কিছুই হয়নি! আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাবে, এ যেন হবার ই ছিল! এটাই যেন স্বাভাবিক!!
সাথে একটা মানুষ বসে আছে। অথচ একটা বাক্য বিনিময় পর্যন্ত করল না। কি দাম্ভিকতা ! বিরক্তিকর!

আচ্ছা, আপনার নাম কি? কি করেন? কোথায় থাকেন? কোথায় যাচ্ছেন? কেন যাচ্ছেন? কি কি করতে পছন্দ করেন? কি অপছন্দ করেন? আপনার শৈশব, বন্ধুদের গল্প বলুন............ এরকম কত শত বিষয় নিয়েই তো কথা বলা যায়। সময়টাও কত সুন্দর কেটে যেত! ছেলেটা ফিরেও তাকাচ্ছে না। যেন তার পাশে আদৌ কোন প্রাণের অস্তিত্ব নেই।

আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম, ছেলেটা ফেসবুক এক্সেস করছে। চ্যাটের টুং টুং শব্দ হচ্ছে। মেইল চেক করছে, কি সব কঠিন কঠিন ব্যাপার দিয়ে রিপ্লে দিচ্ছে। ধুর,আমার কি দায় পড়েছে তার গতিবিধি দেখার! কিন্তু আর কি ই বা করব!?

ছেলেটা ল্যাপটপ বন্ধ করে দিয়েছে। আবার চোখ বন্ধ করল। এত ঘুম! ব্যাটা কুম্ভকর্ণ!!
‘’যদি কিছু মনে না করেন, আমি কিছুক্ষনের জন্য আপনার ল্যাপটপটা ব্যাবহার করতে পারি? জাস্ট সময়টা কাটানোর জন্য।‘’ খুব বলতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু কেমন যেন হ্যাংলামো হয়ে যাবে না!!

তার চেয়ে ঢের ভালো এই নীরবতা।

কুলিল্লার যাত্রা বিরতিতে। হাত মুখ ধুয়ে একটা টেবিলে বসলাম সবে। ছেলেটাকে দেখতে পারছিনা। কিন্তু বাস থেকে তো নামতে দেখলাম! কি জানি।

হঠাৎ-ই ধপ করে আমার পাশের একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল। আশ্চর্য!! পাশের এতগুলো টেবল খালি পড়ে আছে, ওগুলো তে না বসে আমার সাথে বসল কেন?! আমাকে কি ফলো করছে নাকি?

‘’ওয়েটার, এখানে দু কাপ চা দিন। একটা রং চা, আরেকটা দুধ চা। ‘’
যাক, দুধরনের চা যখন অর্ডার করেছে; এবার মনে হয় কথা বলবে!

দু ধরনের দুটো চা এল। কিন্তু এখনও কথা শুরু করার কোন বালাই নাই।

এবার আরও অবাক হওয়ার পালা। প্রথমে সে দুধ চা খেল। তারপর চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে বলল,’’ উফ, কি বাজে জার্নি। কখন যে পৌছাব? মাথা ব্যথা করছে।‘’ এরপর লিকার দেওয়া চা টা খেল।

আবার চুল টানছে। যতই সময় যাচ্ছে, এই ছেলে আমাকে ততই অবাক করছে!

মনে মনে ধ্যাত বলে ওঠে এলাম।

ছেলেটাও আমার পিছু পিছু।

বাস বেশ ভাল গতিতেই এগুচ্ছে এখন। পথ আর বেশী কিছু নাই। এ কেমন সহযাত্রী।! এতটা পথ একসাথে যাচ্ছি। অথচ কেও কোন কথা বলিনি। কেও কারও নাম পর্যন্ত জানিনা। আমার কি দায় পড়েছে, এরকম একটা অকৃতজ্ঞ ছেলের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলব।

ছেলেটা ব্যাগ থেকে একটা বই বের করল। ‘’শেষের কবিতা।‘’ আমিও খুব পছন্দ করি রবি ঠাকুরের লেখা। কয়েক পাতা উল্টিয়ে রেখে দিল পাশে। বইটা ঠিক আমার সাথেই লেগে আছে। খুব সহজেই নিয়ে পড়া যায়। কিন্তু নিলাম না।

‘’এই সুপারভাইজার, আমি তোমাদের সামনের কাউন্টারে নামব। খেয়াল করে নামিয়ে দিও প্লিজ।‘’
বলে এই প্রথম আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। ছেলেদের হাসি এত সুন্দর হয় নাকি? ও হ্যাঁ, ছেলেটার চোখ গুলো বাদামী।

‘’স্যার, আপনার নামার জায়গা চলে এসেছে। সামনে এগিয়ে আসুন।‘’ সুপারভাইজারের গলা।
আমি জানালায় তাকিয়ে আছি।

‘’ওয়েল, নীরা। টিকিটটাতে আপনার নাম লিখা ছিল। ওটা আমার কাছেই ছিল। এবং আমি কৃতজ্ঞ যে, আপনার টিকিটটি আপনি আমার সাথে শেয়ার করেছেন। আপনার সাথে চমৎকার সময় কাটল। আর, আপনার কাঁধে ভর করে ঘুমানোর জন্য লজ্জিত। তবে, আপনার গায়ের গন্ধ টা কিছুটা বেলি ফুলের মত। হা হা হা হা.........। ও হ্যাঁ, একটা কথা; আপনি রেগে গেলে আপনাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। আসি। দেখা হবে।‘’

গরগর করে কথাগুলো বলে ছেলেটি বাস থেকে নেমে গেল।
আরে! আমার হাতের নিচে শক্ত এটা কি? বই ! ছেলেটা বই টা ফেলে গেল!?

উল্টিয়ে দেখি ওখানে লেখা ---------

‘’ নীরা-র জন্য পুরো একটা আকাশ!’’

আর তার নিচে----------

‘’ আমি শুধুই জানি
ওর ভাবখানি গুপ্ত
ও ভাবল- আমি ভাবছি
আমি ভাবলাম- ও ভাবুক আমায় সুপ্ত।‘’

আকাশ (ফোন নম্বর)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৪৩
৮৭টি মন্তব্য ৮২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×