নিউটন মণ্ডল: সমাজের উন্নয়নের জন্য নিজের বাড়ি বন্ধক রাখার ঘটনা ইতিহাসে বিরল। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই কাজটিই করেছিলেন দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্বর্গীয় ডানিয়েল কোড়াইয়া। ১৬ জানুয়ারী ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ কর্তৃক আয়োজিত স্বর্গীয় ডানিয়েল কোড়াইয়ার স্মরণ সভায় বলছিলেন সোসাইটির বর্তমান চেয়ারম্যান মিঃ আগষ্টিন পিউরীফিকেশন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন তেজগাঁও ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার আলবাট টমাস রোজারিও। সহভাগিতায় তিনি বলেন, ‘ডানিয়েল কোড়াইয়া সমাজের মানুষের উন্নয়নকল্পে অনেক সেবা কাজ করে গেছেন। যার মধ্যে হাউজিং সোসাইটি, কালব্, তেজতুরীবাজার কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ এবং বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ প্রতিষ্ঠার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন উল্লেখযোগ্য।’খ্রিস্টযাগের শেষে সোসাইটির সেক্রেটারী মিঃ ইম্মানুয়েল বাপ্পী মণ্ডলের ঘোষণায় ডানিয়েল কোড়াইয়ার জীবনাদর্শ ও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে একটি স্লাইড শো এবং একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
স্বাগত ও শুভেচ্ছা বক্তব্যে সোসাইটির বর্তমান চেয়ারম্যান মিঃ আগষ্টিন পিউরীফিকেশন বলেন, ‘ডানিয়েল কোড়াইয়া ছিলেন দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। স্বাধীনতাত্তোর সমাজকে পুর্নবাসনের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কর্মযজ্ঞের মধ্যে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল নিজ গৃহে ২৭ জন সদস্য-সদস্যা নিয়ে দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ প্রতিষ্ঠা ছিল অন্যতম। সোসাইটির মহাখালী প্রকল্প গ্রহণের অর্থসংস্থানের জন্য ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজের বাড়ি বন্ধক রেখে কারিতাস থেকে ঋণ গ্রহণ করে জমির বায়না টাকার ব্যবস্থা করেন। এটি ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। কর্মজীবনে তিনি ৫ বার সোসাইটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৩ সালের ১৩ জানুয়ারী তিনি পরলোকগমন করেন।’ সোসাইটিতে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ মানপত্র পাঠ করেন সোসাইটির সিনিয়র পাবলিক রিলেশন কর্মকর্তা মিঃ যোসেফ ডি’রোজারিও। এরপর সোসাইটির পক্ষ থেকে মরণোত্তর স্বর্ণপদক ও মানপত্র পরিবারের হাতে তুলে দেন সোসাইটির কর্মকর্তাবৃন্দ।
সুনীল সেলেষ্টিয়ান কস্তা সহভাগিতায় বলেন, ডানিয়েল কোড়াইয়া’র প্রতিষ্ঠিত সোসাইটি সমাজে আবাসন সমস্যা সমাধানকল্পে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। নেতৃত্ব সৃষ্টি করাই ছিল তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য। তিনি আমাদের আদর্শ। আমরা চাই তিনি অনন্ত অনন্তকাল তাঁর সৃষ্ট কর্মের দ্বারা আমাদের মাঝে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।
প্রাক্তন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে সোসাইটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমার সমাজ সেবা করার পিছনে যাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হচ্ছেন স্বর্গীয় ডানিয়েল কোড়াইয়া। নতুন, প্রতিভাবান, সম্ভাবনাময়ী নেতৃবৃন্দকে সব সময় তিনি উৎসাহ ও উদ্দীপনা প্রদান করে গেছেন।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের পক্ষে মিঃ জেমস রোজারিও বলেন, দানিয়েল দা ছিলেন আমার রক্ষা কবচ। তাঁর বাড়ি থেকে আমি আমার পড়াশোনা চালিয়েছি। তিনি সমাজের উন্নয়নের জন্য সব সময়ই সচেষ্ট ছিলেন।
কাক্কোর প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব মিঃ নির্মল রোজারিও বলেন, স্বর্গীয় ডানিয়েল কোড়াইয়া এই সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর কাছে সোসাইটি ছিল ছেলের মতো। তাঁর স্বপ্ন ছিল ‘ভাড়ার টাকায় বাড়ির মালিক’ তৈরী করা। তিনি ছিলেন স্বপ্নচারী ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একজন মানুষ। তাঁর উদ্যোগেই ঢাকা ক্রেডিটের মাসিক পত্রিকা ‘সমবার্তা’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ-এর প্রেসিডেন্ট মিঃ বাবু মার্কুস গমেজ বলেন, ছাত্র থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলকে নিয়ে কাজ করার বিশেষ ক্ষমতা ছিল স্বর্গীয় ডানিয়েল কোড়াইয়ার । আজকে যে সম্মাননা ও স্বীকৃতি তাঁকে দেওয়া হলো তা যেন ধারাবাহিক হয়। ডানিয়েল কোড়াইয়ার সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে তাঁর পরিবারের ত্যাগস্বীকার ও অবদান ছিল সব থেকে বেশি।
সোসাইটির চেয়ারম্যান মিঃ আগষ্টিন পিউরীফিকেশন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেন, কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। তিনি ছিলেন, তিনি আছেন, তিনি আমাদের মাঝে থাকবেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বটছায়ায় অনেক মানুষ উপকৃত হয়ে আসছেন। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি সোসাইটির জন্য নতুন যে বিল্ডিংটা তৈরী করা হবে সেখানে স্বর্গীয় ডানিয়েল কোড়াইয়া’র নামে একটি ট্রেনিং সেন্টার উৎসর্গ করা হবে। যার মাধ্যমে তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন চিরদিন।
পরিবারের পক্ষ থেকে ডানিয়েল কোড়াইয়ার বোন মিসেস্ তেরেজা রিবেরু বলেন, আমরা ছিলাম ৫ বোন ও ১ ভাই। আমাদের বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল সে একদিন সমাজে অনেক অবদান রাখবে। বাবা-মায়ের বিশেষ আশীর্বাদে আমার ভাই সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে।
মিসেস্ রিনা দাশ তাঁর সহভাগিতায় বলেন, স্মরণ সভার অর্থ হচ্ছে অতীতকে নিয়ে চিন্তা করা, বর্তমানকে দেখা এবং ভবিষ্যতের জন্য অঙ্গীকার করা। আজ তাঁর মহান কর্মের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি ও তাঁর আদর্শগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।
অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য পরিবারের পক্ষে স্বর্গীয় ডানিয়েল কোড়াইয়ার ছেলে মিঃ ডেভিড কোড়াইয়া সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
সোসাইটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন সোসাইটির সম্মানিত ভাইস প্রেসিডেন্ট মিঃ অনিল লিও কস্তা।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন সোসাইটির সেক্রেটারী মিঃ ইম্মানুয়েল বাপ্পী মণ্ডল।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪২