somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘আমাদের গল্প’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

১১ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিউটন মণ্ডল: বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরামের উদ্যোগে ১০ জুলাই সন্ধ্যা ৭ টায় ঢাকা ক্রেডিটের বি, কে গুড কনফারেন্স হলে ৩৯ জন লেখকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রকাশিত “আমাদের গল্প” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরামের সভাপতি দিলীপ ভিনসেন্ট গমেজের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের নব নিযুক্ত সহকারি ধর্মপাল বিশপ ফ্রান্সিস শরৎ গমেজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফাদার জয়ন্ত এস, গমেজ (সম্পাদক, সাপ্তাহিক প্রতিবেশী), সিস্টার শিখা গমেজ, সিএসসি (অধ্যক্ষা, হলিক্রস কলেজ), নির্মল রোজারিও (মহাসচিব, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশন), ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিও (প্রাক্তন পরিচালক, কারিতাস বাংলাদেশ), বাবু মার্কুস গমেজ (প্রেসিডেন্ট, দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা), আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরামের সদস্য-সদস্যাবৃন্দ।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র বাইবেল পাঠ ও প্রার্থনা পরিচালনা করেন সিস্টার স্বপ্ন বি, গমেজ। এরপর বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরামের পক্ষ থেকে নব অভিষিক্ত বিশপ ফ্রান্সিস শরৎ গমেজ কে ফুলের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়।

বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরামের পক্ষে স্বাগত ও শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ফোরামের সভাপতি মি. দিলীপ ভিনসেন্ট গমেজ। তিনি তার সহভাগিতায় বলেন, ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়। লেখক ফোরাম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল খ্রিস্টান লেখক তৈরী, লেখকদের উৎসাহ প্রদান এবং বই প্রকাশনার কাজে সহযোগিতা করা। তিনি আরও বলেন, লেখকরা সম্মানি চাই না, সম্মান চাই। বইটি প্রকাশ করতে অনেকে পরিশ্রম ও সহযোগিতা করেছেন। এই মাহেন্দ্রক্ষণে তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের এবারের বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে খ্রিস্টান সমাজের নান্দনিক কথাসাহিত্যিক, উপন্যাসিক এবং গীতিকার প্রয়াত নিধন ডি’রোজারিও কে। আমাদের প্রত্যাশা আপনারা সবাই বইটি পড়বেন।

এরপর বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, প্রয়াত নিধন ডি’রোজারিও-এর সহধর্মিনী ও অতিথিগণের সহযোগিতায় বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

‘আমাদের গল্প’ বইয়ের মূল্যায়ন করে সি: কল্পনা কস্তা, সিএসসি বলেন, গল্প শুধু গল্প নয়। গল্প জীবনের কথা বলে। পারিপার্শ্বিক চিন্তার বর্হিপ্রকাশও ঘটে গল্পের মাধ্যমে। ‘আমাদের গল্প’ বইটি খ্রিস্টান সমাজের নামকরা ৩৯ গল্পকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টার একটি ফসল। এটি খ্রিস্টান সমাজের মূল্যবান সম্পদ। বইটিতে গরীবদের ভালোবাসা, অন্যায়ের প্রতিবাদ, সামাজিক, ধর্মীয় এবং মা-লিক মূল্যবোধ প্রকাশ পেয়েছে। লেখক ফোরামের প্রথম বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ খ্রিস্টাব্দে। ‘আমাদের গল্প’ বইটি ফোরামের দ্বিতীয় প্রকাশনা। আশাকরি বইটি পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে এবং সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

বিশিষ্ট গল্পকার খোকন কোড়ায়া সহভাগিতায় বলেন, বই সমাজ বদলের হাতিয়ার। আকাশ সংস্কৃতির যুগেও বইয়ের আবেদন এতটুকু ম্লান হয়নি। যার প্রমাণ ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে ‘অমর ২১শে বই মেলা’। বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক নিধন ডি’রোজারিও সম্পর্কে তিনি বলেন, তাঁর রচিত গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, সাহিত্য, উপন্যাস বিভিন্ন পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে ছাপা হতো। ‘ইছামতির জোয়ার ভাটা’ লেখাটি ইত্তেফাক পত্রিকায় ছাপানোর পর পাঠক সমাজে তা ব্যাপক সমাদৃত হয়।

মি: বাবু মার্কুস গমেজ বলেন, মননশীলতা পরিচর্যার জন্য যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরাম সেজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। আকাশসভ্যতা ও ভার্চুয়াল জগতের কারণে সাহিত্যের প্রতি ঝুঁকছেনা বর্তমান যুব সমাজ। অত:পর আমি মনে করি বইটি সকলে পড়বে এবং পাঠক সমাজে তা সমাদৃত হবে। ঢাকা ক্রেডিটের পক্ষ থেকে তিনি ১০০ কপি বই সংগ্রহের ঘোষণা দেন। যা ঢাকা ক্রেডিটের সমবায় বাজারের স্টলে বিক্রির উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করা হবে। বইটির মূল্য ২৫০ টাকা। এ ছাড়াও বইটি প্রতিবেশী প্রকাশনীতে পাওয়া যাবে বলে ফোরামের সভাপতি জানান।

মি: নির্মল রোজারিও বলেন, খ্রিস্টান লেখক ফোরামের পক্ষ থেকে বই প্রকাশ করাটা গর্ব করার মতো একটা ব্যাপার। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক গল্পকার, লেখক, কবি, সাহিত্যিক রয়েছে। অসাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ বিরোধী, মানবতার লেখা, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে এখন লেখকদের কলম ধরতে হবে। লেখকরা পর্দার আন্তরালে থেকে সমাজকে পরিচালনা ও পরিবর্তন করে। প্রিন্ট, সোশ্যাল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে যারা লেখালেখি করছে তাদের সকলের সমন্বয় থাকা দরকার। ফোরাম যেন তাদের সকলকে এতত্রিত করে।

হলিক্রস কলেজের অধ্যক্ষা সিস্টার শিখা গমেজ, সিএসসি বলেন, সাহিত্যের মধ্য দিয়ে আমরা আলোকিত সমাজ গড়তে চাই। লেখকদের সামাজিক দায়বদ্ধতা, সৃজনশীলতা আছে। সমাজকে পরিবর্তনের আমন্ত্রণ জানান একজন লেখক তার লেখনীর মধ্য দিয়ে। যীশু তাঁর শিক্ষা দিয়েছেন গল্পের মধ্য দিয়ে। গল্পের মধ্য দিয়ে সাহিত্য রচনা করে সমাজকে পরিবর্তন করতে হবে। একজন লেখক অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে। কল্পনাকে যখন ধারণ করতে পারবো তখন নতুন সমাজ গড়ে উঠবে। কলম অনেক শক্তিশালী। লেখক কথা বলেন কলমের মাধ্যমে। প্রতিটি লেখক সৃজনশীল প্রগতিশীল লেখা উপহার দিক সমাজকে।

সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর সম্পাদক ফাদার জয়ন্ত গমেজ গবেষণধর্মী লেখা অনুশীলনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, খ্রিস্টান সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গবেষণাধর্মী লেখার গুরুত্ব ও তাৎপর্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই বর্তমান লেখকদের আহ্বান জানাই গল্প, কবিতা লেখার পাশাপাশি গবেষণাধর্মী লেখালেখির অনুশীলন করতে।

কারিতাস বাংলাদেশ-এর প্রাক্তন পরিচালক ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিও সহভাগিতায় বলেন, এটা ফোরামের পক্ষ থেকে প্রকাশিত দ্বিতীয় বই। আমি এটির ফাইনাল প্রুফ দেখার সময় তিনটি জিনিস পেয়েছি আর তা হলো বিশ্বস্ততা, সফল হওয়ার চেয়ে সরল হওয়ার প্রবণতা এবং অসৎ আনন্দের চেয়ে পবিত্র আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা।

বিশপ শরৎ গমেজ তাঁর বক্তব্যে সকল লেখকদের অভিনন্দন ও সম্মান জানিয়ে বলেন, লেখালেখি হচ্ছে একটা শিল্প। লেখালেখি একটা কঠিন কাজ। লেখালেখির মাধ্যমে লেখক নিজে আলোকিত হন এবং সমাজকে আলোকিত করতে সহযোগিতা করেন। একজন লেখক সামগ্রিকতাকে ধারণ করে তা নিজের জীবন ও বাস্তবতার আলোকে অথবা কল্পনার শৈল্পিক আঁচড়ে তা সমাজের কাছে তুলে ধরেন। বই প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মণ্ডলির পক্ষ থেকে বিশপ মহোদয় বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরামকে শুভেচ্ছা জানান।

প্রকাশনার কাজে সহযোগিতা ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য ফোরামের সহ-সভাপতি যোসেফ রায় পল্টু সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

সবশেষে অতিথি ও সুধীজনদের সাথে লেখকদের পরিচয় করিয়ে দেন সভাপতি দিলীপ ভিনসেন্ট গমেজ।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×