০১।
যে বিকেল গুলোকে মিথ্যে করেছ দানবীয় ছলনায়,
সেই বিকেলে দক্ষিন দিক দিয়ে প্রবাহিত স্নিগ্ধ বাতাসে আমাদের
শৈশব এর নদীর তীর ঘেষে বেহালার মাতাল সুরে প্রনয়ের দাবী নিয়ে
এগোতাম।
তুমি হাসতে!
ফাদ তো পাতাই ছিল গোপনে।
এই ভেবে!
আমি সেই বিকেলে আমার শৈশবের মায়াঘেরা নদীটি বড় অচেনা হয়ে
ঊঠেছিল।
আগে কখনো নিষ্ঠুর ছিলনা এই নদী, জল!
আমার বিষাদ হয়েছিল অর্থহীন।
লক্ষ লক্ষ বছর ধরে উত্তপ্ত অনলে নিক্ষিপ্ত হয়েছি আমি।
যে বিকেলে -------
আমি আমার পোড়া চামড়া লুকিয়েছি পোষাকের নিচে ভাজে।
আমার হাসি মিশিয়েছি তার সঙ্গে।
এখন আমি শহরের সুউচ্চ ছাদে দাড়িয়ে তোমার যুক্তি দেখি, শুনি।
দুনিয়া কি খুশী হাসছে!
শুধু এক বিকেলে আমি আমার বুকে একে নিলাম "ক্ষত "
হেসে নাও পাগলী,
আমি ক্ষত আকতে শিখিনি!
০২।
শিয়রের কাছে কবিতার ডায়েরী তোমার অভিশাপে অভিশপ্ত।
সিড়ি কোঠায় তোমার আলতা পা এর ছাপ কবিতা না হওয়ায় ডায়েরী অশ্রুসিক্ত!
কে থামাবে তাকে?
সে তো একবুক কবিতা চায়।
এসো জলপদ্ম, কবিতার ডায়েরীর নিসঙ্গতা ঘুচাও
তুমি হয়ে ওঠো আমার নির্জন দুপুরের এক চিলতে বারান্দা।
অন্তহীন শাড়ী উড়ে শেষে প্রকাশিত সুর!
তুমি হয়ে ওঠো ঝিমধরা যান্ত্রিক শহরের নিরেট আনন্দ।
খরকুটা কুয়াশার গন্ধে জলস্মৃতিময়তা।
তুমি হয়ে অম্রপল্লব ছুয়ে চিরসবুজ।
ঘুমিয়ে পড়া শহর বাসীর আনন্দ শ্রাবন।
তুমি হয়ে ওঠো গ্রামপ্ললীর প্রথম বরষার "কাদাগন্ধে নিঝুম সুখের জীবন "!
এসো,
দেখ, আধার ভেঙ্গে আলোক হত্যা করে সিড়িঘরে একা দাড়িয়ে আমি।
এসো জল, শব্দরাশি দিয়ে পুনরায় তোমার গভীরে জড়াও আমায়!
০৩।
হাসপাতাল এর পাশের অন্ধকার গলি।
বাতি নিভে গেছে বহু আগে।
সারাদিনের বৃষ্টি তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আমাদের ভিজিয়ে দিচ্ছে।
আমি হাটি!
পিছনে সে!
আমার কাধে চিরচেনা এক হাত এসে পড়ে!
মাংসের ভিতর মোচড় দিয়ে উপরে তাকাই আমি।
উকি দেয় বজ্র দেবতা।
আমি দেখে নেই তাকে।
আমার চীরজীবনের ভীতু স্বভাব হারিয়ে গেছে এই অন্ধকার গলিতে।
রাস্তার মাঝে মাঝে জমে থাকা পানিতে!
নিরন্তর পরিবর্তন ঘটে মস্তিকের স্নায়ুতে।
মেতে উঠি,
তীব্র ত্যাগের উতসবে।
আমার বাবার হাত আমার কাধে।
আমরা অভাবের গল্প করে রাঙিয়ে তুলি অন্ধকার গলি!
০৪।
আমার মা গল্প জানত প্রচুর।
বারান্দায় হারিকেন জ্বলত,
কেরোসিন এর দাম প্রচুর বলে সলতে নিচু করতে রাখতে বলতেন দাদা।
আলো কমে গিয়ে আর ও অদ্ভুত সুন্দর হত বারান্দা টা!
বাইরে বৃষ্টি ছিল টুপ টুপ।
জাম গাছ টা উঠোন এর উপর দাড়িয়ে, তেতুল গাছ টা তার সঙ্গী হতে ভিজে চুপচুপ।
হারিকেনের শান্ত আলোয় সেই সব পরিবেশে মা গল্প বলতেন।
অন্ধকার মশারির মধ্যে মায়ের কোল ঘেষে শুয়ে আমি চোখ বড় বড় করে গল্প শুনতাম!
কাদতাম।
শুন্যতার গভীর থেকে জন্ম নিয়ে উন্মুখ হয়ে থাকতাম গল্পের জন্য!
রুপকথার জন্য।
গরমের দিনে জানালা খুলে দিয়ে ঘুমাতাম আমরা।
হাওয়ার জন্য।
সেইসব রাতেও এক খন্ড পাটি নিয়ে উঠোনের এক কোনায় শুয়ে গল্পের আসর জমাতাম মা ছেলে।
মধ্যরাতে উঠোনের এক কোনে তেতুল গাছের দিক তাকালেই যেন দেখতাম কোন এক রাজকন্যা কাদছে!
আমার ব্যাক্তিগত আকাশে উড়ত অজস্র পক্ষীরাজ ঘোড়া।
বাতাবি কাটায় ছেড়া শাড়ির আচলে চোখ মুছতে মুছতে ঘুমাতে যেতাম আমি!
মা এখন ও গল্প বলে,
ঈদে, পুজায়,
ছুটিতে বাড়িতে গেলেই গল্প বলে!
এখন আর রুপকথা রা বেচে নেই।
বেচে আছে আমার মায়ের শৈশব এর গল্প!
আমি তাই শুনি!
আমার একাকী দেহের ভাজে কাপন ধরে।
আমার থেকেও সাংঘাতিক একার শৈশব শুনে।
ভাঙনের শব্দ ওঠে।
ধ্বস নামে অভ্যন্তরে।------ (সংক্ষেপিত)
০৫।
আমি জেগে থাকতে চেয়েছিলাম
তোমার হৃদয় পেয়ালায় এক আকাশ জীবন হয়ে।
আমি জেগে আছি,
আমার অশ্রুর ইতিহাস হয়ে।
আমার জীবন গোঙায় এখন!
তবুও অন্য নারীর হাসির খোপায় ঠোট গুজতে আমরন ছুটছি আমি।
আমি আর ষোড়শী চাইনা!
অষ্টাদশী চাইনা!
চাইনা পায়রা ওড়া ভোরের ন্যায় মাতাল যৌবন।
আমি এবার "নারী" চাই।
যে নারী মানে পৃথিবী।
যে নারী অন্য কোন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত নয়।
সবুজ নীরব সৌন্দর্য উপচে পড়া প্রেমের অনন্ত আধার এর নারী!
তবে আর চুপি চুপি কান্নার বিকেল নয়।
যেটুকু পরমায়ু আছে
যতটুকু বেচে থাকা সত্য।
আমি খুজে যাই সেই নারীকে।
আমার আন্দোলিত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ভেতর ডুবে থাকা শরীরী কোষ খুজে যাবে সেই নারীকে!
যে নারী আমাকে টেনে নেবে তার সুগভীর জলরাশিতে।