somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"হঠাৎ ঝড়"

০৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনি ছোট থেকেই প্রচন্ড সিনেমা পাগল একটা ছেলে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতি বৃহঃস্পতিবার এবং জুম্মা'আবার দুপুরের পরেই টিভির সামনে বসে যেতেন সিনেমা দেখার জন্য। এসএসসি পাশ করার পর শোনার চামচ হাতে পেয়ে গেলেন। আপনাকে একটা পিসি কিনে দেওয়া হোল। এখন আর পায় কে! বন্ধুর পেন ড্রাইভ নিয়ে প্রতিদিন মুভি বোঝায় করছেন আপনার ডেস্কটপে। এখন অবশ্য একটু জাতে উঠেছেন আপনি। এখন আর সেই ফ্যাচফ্যাচে বাংলা সিনেমা দেখেননা। এখন হলিউডে বব প্রিট, টম ক্রুজ, ভিন ডিজেল, উইল স্মিথ আপনার প্রিয়র তালিকায়। কিন্তু এখন একটু সমস্যা তৈরী হোল। যেহেতু পরিবার থেকে নামাজের প্র্যাক্টিস আছে তাই মসজিদে অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রায়শই যেতে হয়। এবং অধিকাংশ সময় এইসব নাটক, সিনেমা ছাইপাস দেখা মুসলিমের উচিৎ নয় টাইপ বয়ান শুনতে হয়। এতে নাকি পর্দার বিধানে খেলাপ করা হয়। কিন্তু আপনিত আর নাটক, সিনেমা দেখেননা। আপনি দেখেন মুভি। আর আপনি প্রচন্ড যুক্তিবাদী একজন মানুষ হিসাবে নিজের মুভি দেখার সপক্ষ্যে বেশ কিছু পয়েন্ট দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন।
১। হলিউডের একশন মুভিতে নারী ক্যারেক্টার থাকেনা বললেই চলে, দুই একটা থাকে তাও ৫-১০ মিনিটের সিনে।
২। নারী চরিত্র থাওকলেও বা কি। ঐ সময়টা কি-বোর্ডের রাইট এরো কি চেপে ৫-৭ মিনিট ফরওয়ার্ড করে নিলেই হোল।
৩। অন্য দেশ এবং অন্য দেশের উন্নতি সম্পর্কে জানতে হলে বহিঃবিশ্বের মুভি দেখার বিকল্প নেই।
৪। অতোটা নেশা করেতো আর দেখা হচ্ছেনা। মাঝেমাঝে এক আধটু না দেখলে আধুনিক হওয়া যায়না।

এখন আপনি ভার্সিটিতে। এখন আপনি ডেইলি রাত দশটায় একটা মুভি দেখা শুরু করেন এবং রাত তিনটা চারটা পর্যন্ত দেখেন। এবং আরও এক ঘন্টা এটা ওটা দেখে সময় কাটান কারন ফজরের নামাযটা পড়তে হবে যে। দুপুরে ক্লাশে ঢুলতে ঢুলতে যান। খাতা নিয়ে যেতে ভুলে গেলেও পেন ড্রাইভটা নিতে মিশ হয়না। পেনড্রাইভ বন্ধুর কাছে ফেরত দেওয়ার সময় বিস্তর আলোচনা হয় গত রাতে দেখা মুভির বিষয়বস্তু নিয়ে। আপনি চিন্তা করেন একটু গঠনমুলক আলোচনা করে সবাইকে ভড়কে দিতে। ক্যাপ্রিওর হেয়ার কাটিংটার জন্য তাকে বেশ লেগেছে, নায়িকার পোশাকের কালারটা অমুক সিনের সাথে খুব এডজাস্ট করেছে। স্ক্রিপ্টটা সুপার লেভেলের ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি ইনফরমেশন দিয়ে আপনি একটা বিশাল মুভিবোদ্ধার ভাব ধারন করেন। এখনতো পরিবারের চোখ রাঙানির ভয় নেই তাই নামাযটাও শিকেয় উঠেছে।

কিন্তু হঠাৎ কারন ছাড়া একটা ঝড় এল আপনার জীবনে। প্রতিদিন রাত জেগে পরেরদিন যাচ্ছেতাই করে ক্লাশ করতে কেমন যেনএক ঘেয়ে লাগা শুরু করল। কিছুটা চেঞ্জ দরকার আসলে। ভাবতে বসলেন হঠাৎ, মনে করার চেষ্টা করলেন আজ পর্যন্ত দেখা সবগুলো মুভির নাম। কিন্তু হায় কপাল হাতেগোনা দুই একটা ছাড়া কিছুই মনে পড়ছেনা। কিছু মুভির কিছু কিছু কাহিনী মনে পড়ছে। কিছু মুভির জাস্ট নামটাই মনে পড়ছে। একজন প্রোডাক্টিভ পুরুষের মত ভাবতে বসলেন। যদি প্রতিদিন দুই ঘন্টার একটা মুভি না দেখে দুই ঘন্টা রিক্সা চালাতেন তাহলে কত টাকা জমত! কিংবা অনলাইনে কোন কোর্স করলে কতগুলো স্কিল আয়ত্ত্ব করা যেত। কিংবা বই পড়ে কাটালে কতগুলো বই পড়ে শেষ করা যেত। আমুল বদলে গেলেন আপনি। সময়কে প্রোডাক্টিভ করতে শিখলেন। কোর'আন আর ইসলামি সাহিত্য পড়তে পড়তে না ঘুমালে আপনার ঘুম আসেনা।

হঠাত একদিন ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে আপনার টাইমলাইনে একটা মুভি নিয়ে বেশ হাইপ দেখতে পেলেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বারবার কেউ না কেউ মুভিটা নিয়ে কিছুনা কিছু বলছে। আপনার পুরাতন আনপ্রোডাক্টিভ সত্ত্বা মাথা চাড়া দিচ্ছে। বলছে আরে কালকে অফ ডে আছে রাতে শুয়ে শুয়ে দেখেনিব। নামাজটা পড়ে একবারে বেলা পর্যন্ত ঘুমাব। তখন আপনি নিজেকে একটা ঝাকি দিলেন। আপনি বুঝে ফেলেছেন শয়তানের সাথে এখন আপনাকে খেলতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ আপনি আপনার শত্রুকে চিনেছেন। আপনি এবার মোবাইলটা চোখের সামনে থেকে সরিয়ে কোর'আন হাতে নিয়ে বসলেন। যদিও মোবাইলে আপনার কোর'আন মাজীদ এপটা আছে কিন্তু তবুও আপনি ছাপানো কোর'আনটাই নিলেন। আলহামদুলিল্লাহ স্বাগতম আপনাকে। আপনি গুরাবাদের কাতারে আছেন। আপনি এখন একজন মুজাহিদ। আপনি নফসের বিরুদ্ধে জিতে গেছেন। শয়তানকে আপনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পেরেছেন। কি এখন মনে হচ্ছেনা নিজেকে একটা ট্রিট দেওয়া দরকার এই সাফল্যের জন্য? চলুন এখন আমরা নিজেকে ট্রিট দেই। চলুন আগামীকালই নান্নার একটা কাচ্চি সাবাড় করে আসি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১০:৩৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×