আপনারা কি জানেন যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা কত?বর্তমানে যুক্তরাজ্যের জন সংখ্যা ৬ কোটি ৭০ লক্ষ প্রায়।সামাজিক অর্থনৈতিক সব অবস্থানের দিক দিয়ে যুক্তরাজ্য বিশ্বের শুরুর কাতারে।যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম সেরা চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা সিস্টেম কে বলা হয় ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস।এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরোটাই সরকারি এবং সকল নাগরিক হেলথ ইন্সুইরেন্সের আওতাধীন। এত উন্নত যে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা সেখানে কর্মরত আছে প্রায় ৩ লক্ষ ডাক্তার।
অপরদিকে বাংলাদেশে এযাবত কালে ডাক্তার তৈরি হয়েছে সর্বসাকুল্যে ১ লক্ষের কিছু বেশি।এর মাঝে অনেকেই মারা গেছেন অনেকে বিদেশে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন আবার অনেকে চিকিৎসক হিসেবে অবসর ও নিয়েছেন।সব কিছু বাদ দিয়ে হিসেব করলে দেখা যাবে প্রায় সত্তর হাজারের মত ডাক্তার কর্মরত আছেন।
এই ৭০ হাজারের মধ্যে আবার ২০ হাজার একেবারেই তরুন ও নবীন যাদের বাংলাদেশের মানুষ কোনো ভাবেই চিকিৎসক হিসেবে মনে করে না।অপরদিকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এই সতের কোটি জনগণের জন্য ডাক্তারের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার।আরো যদি সুনির্দিষ্ট হিসেব করে বলি তাহলে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছে প্রায় ২০ হাজারের মত চিকিৎসক। তার মানে দাড়ায় ১৭ কোটির জন্য সরকারি চিকিৎসক ২০ হাজার জন মাত্র।
এখন আপনারই বলুন এই সামাজিক প্রেক্ষাপটে অবস্থান করে ইংল্যান্ডের চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে নিজেদের অবস্থান তুলনা করা কতটা যৌক্তিক?
ইউকের হিসেব মতে তাদের চিকিৎসক সংখ্যা হওয়া উচিত প্রায় সাত লক্ষ। তাহলে হিসেব করেন আমাদের দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে কত জন চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন?আর শুধু প্রয়োজন হলেই হবে না সেই পরিমাণ চিকিৎসক তৈরি করতে কত বছর সময় লাগবে?
একটা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা শুধুমাত্র চিকিৎসক নির্ভর নয়।নার্স,ওয়ার্ডবয়,আয়া,সুইপার সকলে নিজ নিজ অবস্থান হতে সমান গুরুত্ব বহন করে।চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগীর সেবায় প্রত্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
যেখানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি চিকিৎসকের বিপরীতে ৩ জন নার্স থাকার কথা বাংলাদেশে আছে ০.৪ জন।একটি স্যান্ডার্ড স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য যে জনবল প্রয়োজন তার কত পার্সেন্ট বাংলাদেশের আছে তা অনুমান করতে হয়তো কস্ট হওয়ার কথা নয়।
যদি স্বাস্থ্য বাজেটের দিকে তাকাই তাহলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মোট জিডিপির (বাজেট নয় জিডিপি) নূন্যতম আবার বলছি নূন্যতম ৫% স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া উচিত।যেখানে বাংলাদেশের ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট স্বাস্থ্য বাজেট ছিলো ২৯,৪৬৪ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ১.০২ শতাংশ যা শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভারত,পাকিস্তান, সুদান সহ আরও অনেক দেশের চেয় কম।
একদিক দিয়ে জনবল অপ্রতুলতা অপরদিকে অর্থনৈতিক স্বল্পতা আর লাগামহীন দুর্নীতি আমাদের স্বাস্থ্যখাত ভংগুর করে তুলেছে।আগামী ১০ বছর পর আমাদের জনসংখ্যা কেমন হবে সেই তুলনায় আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত সে ব্যপারে নাই কোনো দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা। নীতি নির্ধারক পার্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত ব্যক্তির পরিবর্তে আমলাদের পদ দখল এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কে আরও অনেক পথ পিছিয়ে দিয়েছে।
দুর্নীতি যে কোনো জাতির উন্নতির অন্তরায়।সীমিত সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে দুর্নীতি আমাদের সীমিত সম্পদ কে আরও সীমিত করে তুলেছে।ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হচ্ছে জন মনে অসন্তোষ আর এই দুস্ট চক্রের সর্বোচ্চ ভুক্তভোগী বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ।
এমন একটি সমাজে বসবাস করে অন্য উন্নত দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে নিজেদের তুলনা করা চিকিৎসক দের উপর চাপ বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই না।যতদিন এই জাতির মুল্যবোধের উন্নয়ন না হবে,দূর্নীতি যতদিন এই জাতির আষ্ঠ-পৃষ্ঠ হতে দুর না হবে ততদিন যতই চিৎকার করেন না কেন কোনো প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।তারপরেও এত নাই নাই এর ভেতরে যারা আপনার স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে নূন্যতম সম্মানের তারা দাবিদার। যত কসাই বলে গালি দিন না কেন এমডিজি গোল কিন্তু তারাই সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।প্রায় সব দিক দিয়ে ভারতের থেকে পিছিয়ে থাকলেও গড় আয়ু,মাতৃ মৃত্যু হার শিশু মৃত্যু হার সহ স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যার পিছনে অবদান আপনাদের নাম দেয়া কসাই দের ই।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২০ রাত ১১:৫৪