কুরআন নিসন্দেহে এক বিষ্ময়কর গ্রন্থ , আসমানি কিতাব।আজ কুরআনের সুরা নিসার ৫৬ নম্বর আয়তের দিকে খেয়াল করবো।এ আয়াতে আল্লাহ তায়লা বলেন, "নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করে তাদেরকে আমি অচিরেই আগুনে প্রবিষ্ট করব।যখনই তাদের চর্ম দগ্ধ হবে, তখনই ওর স্থলে নূতন চর্ম সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করতে থাকে।নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।"
এই আয়াতের সরল অর্থ করলে দাঁড়ায় আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত করবেন যে আগুনে তার চামড়া পুড়ে যাবে এবং তাকে পুনরায় চামড়া দেয়া হবে এবং বারবার তাদের চামড়া পুড়বে আবার নতুন চামড়া দেয়া হবে এভাবে তারা অনন্তকাল শাস্তিভোগ করবে।
সরল অর্থ সরল হলেও এর গূঢ় অর্থ ব্যপক। আর এই গূঢ় অর্থই ব্যখ্যা করে বিজ্ঞান বিশেষ করে মেডিকেল সাইন্স।আর এই অর্থ বুঝতে হলে জানতে হবে আমাদের চামড়ার গঠন এবং পুড়ে যাওয়ার ফলে তার প্রভাব।
মূলত পুড়ে যাওয়ার ফলে ব্যাথার অনুভূতি তা স্নায়ু বা নার্ভের মাধ্যমে আমাদের মমস্তিষ্কে পৌছে।আর এই ব্যথার অনুভূতি গ্রহনের জন্য রিসেপ্টার যা ফ্রি নার্ভ এনডিং নামে পরিচিত তা আমাদের চামড়ায় রয়েছে।মূলত এর আধিক্য চামড়ার উপরিভাগে সবচেয় বেশি এই জন্য কেই চিমটি কাটলে বা মশা বসলে বা কেউ স্পর্শ করলে আমরা অতি দ্রুত বুঝতে পারি।
আমাদের চামড়ার মূলত দুইটি স্তর রয়েছে।এপিডার্মিস এবং ডার্মিস।অনুভূতির স্নায়ু গুলো এই দুই স্তরেই অবস্থান করে।আর এই দুই স্তরের নিচে চর্বি জাতিয় কিছু টিস্যু থাকে যাকে সাবকিউটেনিয়াস টিস্যু বলে।এবং এই সাবকিউটেনিয়াস টিস্যু নিচেই মাংশ পেশী এবং তার নিচে হাড় থাকে।
এখন আমরা খেয়াল করবো এই পোড়ার ফলে চামড়ার প্রভাব কি হয়? আমি সবাই জানি সাধারণ জ্ঞানে মানুষের অল্পও পুড়তে পারে আবার বেশিও পুড়তে পারে।মূলত পোড়ার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে বার্ণ বা পোড়াকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম,দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ ডিগ্রি।
শুধু এপিডার্মিস পুড়ে গেলে তাকে ফার্স্ট ডিগ্রি বলে।এপিডার্মিসের সাথে ডার্মিস পুড়লে তাকে সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন বলে।যদি সাবকিউটেনিয়াস টিস্যু পর্যন্ত পুড়ে যায় তাকে তৃতীয় ডিগ্রি বার্ন বলে। আর যদি মাংশ পেশী বা হাড় পর্যন্ত পুড়ে যায় তাকে চতুর্থ ডিগ্রি বার্ন বলে।
জাহান্নামের আগুনে যে লেলিহান শিখার কথা বলা আছে তার মাঝে নিক্ষিপ্ত করলে ফোর্থ ডিগ্রি বার্ন হবে বলা অপেক্ষা রাখে না।কিন্তু চতুর্থ ডিগ্রি বার্নের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পোড়ার শুরুতে ব্যথা অনুভব হবে কিন্তু পোড়ার পর আর ব্যথা অনুভূত হয় না।কিন্তু অন্য ডিগ্রি গুলোতে পোড়ার পরেও ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। এখন যদি জাহান্নামে মানুষ কে নিক্ষেপ করার পর নতুন চামড়া না দেয়া হয় তাহলে যে যন্ত্রণা হবে তা একবার মাত্র।কিন্তু বার বার চামড়া বদলের ফলে বার বার যন্ত্রনা হতে থাকবে যা আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে।
অনেকে কুরআন কে সেকেলে বলে থাকে কিন্তু বার্ন এর বিভিন্ন স্তরের পোড়া সম্পর্কে ১৫০০ শতকে ফ্রেন্স সার্জন এমব্রিসো পারে সর্বপ্রথম ধারণা প্রদান করেন।পরবর্তীতে ১৮৩২ সালে গুইজম ডুপুট্রেন বিভিন্ন ডিগ্রি বার্ন ও তাদের তীব্রতা সম্পর্কে বিষদভাবে বর্ণনা করেন।
অথচ ১৪০০ বছর আগে নাজিলকৃত কুরআনের আয়াত বৈজ্ঞানিক আর সুস্পষ্ট।এমন এক সময় এই কুরআন নাজিল হয়েছে যে সময় মানুষ এই বিষয়ে তেমন ধারণা ছিলো না।
এই জন্যই আল্লাহ সুরা ইয়াছিন এ বলেছেন,'অল কুরআনিল হাকিম।'
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৬