২৭ রমজান মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্য পূর্ণ দিন।মূলত রমজানের শেষ দশকে বিজড় রাত্রিতে শবে কদর হলেও ২৭ রমজানের রাত্রিতে তা হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি।সেই দিন আমার বন্ধুর জন্মদিন ছিলো তাই তার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে দিনটি বিশেষ ছিলো।
শবে কদরের গুরুত্ব আর আল-আকসায় নামাজ পড়ার ফজিলতের হিসাব করলে জন্মদিনটি আল আকসা মসজিদে কাটানোর চেয় উত্তম হতে পারে না।বলে রাখা ভালো তার জন্ম স্থান ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে। তার বাসা থেকে আল-আকসা শহর বেশ দূরে।সবচেয় বড় কথা চাইলেও আর সেখানে ইচ্ছামত যাওয়া যায় না।
শেষ যে বার গিয়েছিলো তা প্রায় বছর পাচেক আগে।তখন রমজানে আল-আকসায় যাওয়ার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হতো না।এখন আল-আকসা শহর পুরোটাই ইসরাইলী দের নিয়ন্ত্রণে। মূলত যে সকল মুসলমানদের জন্ম ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলে তাদের জন্য বিশেষ ইসরায়েলি আইডি কার্ড আছে যা দেখিয়ে তারা সহজে যাতায়াত করতে পারে।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে তার জন্ম ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলের বাইরে তাই তার কোনো কার্ড নেই।
কিন্তু আল- আকসা মসজিদের জন্য তার হৃদয়ে এক অপ্রকাশিত ভালবাসা আছে।তার চাচা জন্মদিনের উপহার স্বরুপ তাকে আল- আকসা মসজিদে যাওয়ার দায়িত্ব নিলেন।যদিও তাতে ঝুঁকি আছে। তারা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এমন ট্যাক্সি ঠিক করলেন যার ড্রাইভারের ইসরায়েলি আইডি আছে।কিন্তু ভয় একটা আছে যদি চেক পোস্টে তাদের আইডি চায় তাহলে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
যাই হোক সন্ধ্যার আগে আগে তারা রওনা হলেন আল-আকসার দিকে।আযান দিয়ে দেয়ায় গাড়িতেই তারা ইফতার করে নিলেন।অতঃপর এবার ইসরায়েলি অংশে প্রবেশের পালা। সামনে চেকপোস্টে গাড়ি থামানো হলো।ড্রাইভারের কাছে আইডি চাওয়া হলো।তাদের বুক দুরু দুরু। এর পরেই যদি তাদের আইডি চায়।কিন্তু ইসরায়েলি আর কারও আইডি চেক না করে গাড়ি ছেড়ে দিলো।
অবশেষে মসজিদুল আল- আকসার পথে।অবশেষে ট্যাক্সি তাদের বাব আলখলিলে নামিয়ে দিলো যা পুরাতন জেরুজালেমের অংশ।সেখন হতে হেটে তারা আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ করলো। কিন্তু পাচ বছর আগে দেখা আল- আকসার পথঘাট আর এখন এক নয়।অসংখ্য ইসরায়েলি বাহিনী সাথে অসংখ্য দখলদার জুইশ। শেষবার যেখানে হাতেগোনা কিছু লোক দেখেছিলেন সেইখানে আজ সেটেলারদারা লোকে লোকারণ্য।
অবশেষে আল-আকসায় আসতে পেরে তার মন প্রফুল্ল। মসজিদে প্রবেশ করেই নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো।কিন্তু সেই প্রফুল্লতা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।হঠাৎ চার পাশে বিকট শব্দ।ধোয়ায় চারদিকে ছেয়ে যাচ্ছে।গ্রেনেডের তীব্র শব্দ, মানুষের গগনবিদারী চিৎকার আল-আকসার ধোয়াটে আকাশ সব কিছু মিলে মিশে এককার। দখলদার বাহিনী নির্মম অত্যাচার শুরু করেছে।ড্রেনের নোংরা পানি মসজিদের ফ্লোরে ঢেলে দিচ্ছে। তারা জানে অপবিত্রার মাঝে নামাজ হয় না।
অবস্থা বিপদজনক দেখে চাচা তাকে নিয়ে দ্রুত বাব আলকাতানিন এর দিকে অগ্রসর হয়।মূলত যে দিক হতে আক্রমণ করেছে তার বিপরীত দিক এটি।সেখান হতে তারা দ্রুত ট্যাক্সি নিয়ে স্থান ত্যাগ করে।
যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিলো নিচের পিতৃভূমিতে নিজেরাই আজ পরবাসী। এই আল-আকসা তো শুধু ফিলিস্তিনিদের না সমগ্র মুসলমানদের তার পরেও আরব নেতারা আজ নিরব।এর কারন তার জানা নেই তবে এটা সে জানে একদিন এই আল-আকসা তাদেরই হবে।উপরে একজন আছেন যিনি সব দেখেন তিনি ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।