ছবি- সংগৃহীত
ততকালীন মদীনায় অসংখ্য খেজুরের বাগান ছিলো। ঝড় বা বৃষ্টির পর কার বাগানের ঝরে যাওয়া খেজুর বুঝতে কষ্ট হতো। এক ইয়াতীম শিশু তার বাগানের চারপাশে দেয়াল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। দেয়াল দিতে গিয়ে দেখা গেলো পাশের বাগানের এক খেজুর গাছের জন্য দেয়াল সোজা করা যাচ্ছে না। উক্ত খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন আবু লুবাবা। ইয়াতীম শিশু আবু লুবাবা কে গিয়ে বললেন, আপনার একটি খেজুর গাছের জন্য আমার দেয়াল সোজা করা যাচ্ছে না। আপনি খেজুর গাছটি আমাকে দিয়ে দিন।
আবু লুবাবা অস্বীকৃতি জানালেন। অতঃপর গাছটি ক্রয় করার কথা জানালেন। আবু লুবাবা তাতেও অস্বীকৃতি জানালেন।
উপায়ন্তর না পেয়ে তাকে প্রতিবেশীর অধিকার ও হকের কথা জানালেন তাতেও কোনো কাজ হলো না।
অবশেষে ইয়াতীম শিশু হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।সবকিছু বলার পর হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আবু লুবাবা কে ডেকে পাঠালেন।
আবু লুবাবা কে বললেন তুমি তোমার গাছটি তোমার ভাই কে দিয়ে দাও।
আবু লুবাবা তাতেও রাজি হলো না।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বললেন, আমি তোমার এই গাছের বিনিময়ে জান্নাতে একটা গাছের জিম্মাদার হবো।
কিন্তু আবু লুবাবা ততেও অনড়।
তখন চারপাশে উপস্থিত সাহাবিদের মধ্য হতে আবু দাহদাহ (রাঃ) বললেন, যে এই খেজুর গাছ ক্রয় করে দিবে তার জন্য কি জান্নাতে খেজুর গাছের ব্যবস্থা করা হবে?
নবী কারিম (সাঃ) বললেন, যে এই গাছ এর ব্যবস্থা করে দিবে তার জন্য জান্নাতে খেজুর গাছের ব্যবস্থা করা হবে।
আবু দাহদাহ (রাঃ) এর একটি খেজুর বাগান ছিলো। বাগানটি ছিলো মদীনার ভেতর সবচেয় আকর্ষণীয় বাগান।বাগানে ৬০০ শত খেজুর গাছ ছিলো। বাগানে উন্নত জাতের খেজুর গাছ ছিলো যার চাহিদা বাজারে অনেক ছিলো। এবং ওই বাগানে একটা ঝর্ণা ছিলো। মরুভূমির মাঝে বিশাল বাগান এবং বাগানের মাঝে ঝর্ণা যার জন্য বাগানটি সবার কাছে লোভনীয় ছিলো। সেই বাগানে ঘর করে আবু দাহদাহ (রাঃ) বসবাস করতো।
আবু দাহদাহ (রাঃ) আবু লুবাবা কে বললো,তুমিতো আমার বাগান চেনো?
আপনার বাগান মদীনার কে না চেনে?
আমি যদি আমার বাগান দিয়ে দেই তোমাকে তাহলে কি তুমি আমাকে তোমার গাছটি দিয়ে দিবে?
আবু লুবাবা নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, তিনি বললেন দেখ আবু দাহদাহ কি বলছে? অবশেষে সকল মানুষের সাক্ষীর মাধ্যমে আবু লুবাবা বললেন আমি আমার গাছের বিনিময়ে আপনার বাগান গ্রহন করলাম।
আবু দাহদাহ (রাঃ) এবার ইয়াতীম কে বললেন আমি আমার গাছ তোমাকে দিয়ে দিলাম। এবার তোমার দেয়াল সোজা করতে আর বাধা রইলো না।
আবু দাহদাহ (রাঃ) এবার হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে বললেন আমি কি জান্নাতে খেজুর গাছের মালিক হয়েছি?
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বললেন, আবু দাহদাহ এর জন্য জান্নাতে কত বড়ো খেজুর বাগান অপেক্ষা করছে।
এবার আবু দাহদাহ (রাঃ) নিজ খেজুর বাগানের দিকে রওনা হলেন। বাগানে দরজায় গিয়ে তার স্ত্রী উম্মে দাহদাহ কে ডাকতে লাগলেন। বললেন, তার সন্তানদের কে নিয়ে বের হয়ে আসতে কারন তিনি বাগান বিক্রি করে দিয়েছেন।
উম্মে দাহদাহ জিজ্ঞাসা করলেন, কার কাছে বাগান বিক্রি করেছেন? কততে বাগান বিক্রি করেছেন?
আবু দাহদাহ (রাঃ) বললেন, জান্নাতের একটি বাগানের বিনিময়ে আমি এ বাগান বিক্রি করে দিয়েছি ।
উম্মে দাহদাহ বললেন, আল্লাহ আকবর। আপনি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা করেছেন।
কত উত্তম ছিলো সে সময়। একটি গাছের জন্য উত্তপ্ত মরুভূমির ঝর্ণাসহ, ৬০০ খেজুর গাছের বাগান বিনিময় তাও আবার একজন ইয়াতীম শিশুর জন্য।অথচ এখন কতো ইয়াতীম শিশুর হক মারা হয়, দানের পর কতো শো-অফ করা হয়। আজ তথাকথিত উন্নত আধুনিক সমাজে এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া দুষ্কর।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:২৯