somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইয়াহুচরিতঃ বাল্যখিল্যদের দেশে

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইয়াহুচরিতঃ বাল্যখিল্যদের দেশে

ভূমিকাঃ একটা বোকা প্রশ্ন মাথাটা কুরেকুরে খাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সেবায় এলাকা, দেশ কিংবা বিশ্বব্যাপী কত প্রচেষ্টা চলে। যার জন্য বা যাদের জন্য ক্ষতি তাদের থেকেই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করলে কেমন হয়। এরকম আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করলে হয়তো সাধারণ মানুষ একটু শান্তি পেত আর পাঁজি লোক কয়েকবার ভাবত। কী ? একেবারে বাল্যখিল্য ভাবনা মনে হচ্ছে ? আমায় ক্ষমা করবেন পাঠক। আমি কিন্তু লিমুয়েল গালিভারের লেখা ভ্রমণ কাহিনীতে আভাস পেয়েছি, কোন কোন দেশে এ ধরণের আইন বা প্রথা রয়েছে। হুবহু না হলেও আইনের মর্ম কিন্তু তাই বলে।

লিমুয়েল গালিভার ছিলেন এক মহাপণ্ডিত। ইয়াহু জাতির বৈশিষ্ট নিয়ে ভয়ানক নাক সিটকাতেন। এজন্য তাকে অনেকে মঙ্গল গ্রহের মানুষ বলতো। মনুষ্য সমাজে তিনি জোনাথন সুইফট নামে পরিচিত ছিলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করে উদ্ভট চিন্তাধারা আর আজব সব প্রথা সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করেন। তাঁর ভ্রমণ কাহিনী ১৭২৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তাঁর বিচিত্র পর্যবেক্ষণ বিদগ্ধ গ্রন্থকীটদের জন্য উপাদেয় বিবেচিত হতে পারে।

ইয়াহুচরিত
মূলঃ লিমুয়েল গালিভার
তস্কর সংস্করণঃ পুরোদস্তুর বাঙ্গাল

আকারে ক্ষুদ্র হলেও বাল্যিখিল্যরা স্তুতি করতে জানে। সম্রাটের আগমন বার্তায় সেটি ভালই বোঝা যায়-

গোলবাস্টো মোমারেন এভলেস গুরডিলো শেফিন মুলি উলি গিউ
লিলিপুটদের সর্বশক্তিমান সম্রাট যিনি একই সাথে বিশ্বের আনন্দ ও ভীতি, পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত যার সাম্রাজ্য, যিনি রাজার রাজা, মানব সন্তানদের থেকেও উঁচু, যাঁর পদভারে জমিন কাঁপে, যাঁর মস্তক সূর্যকে স্পর্শ করে এবং যার আঙ্গুলের হালকা ইশারায় পৃথিবীর সমস্ত রাজার হাঁটু কাঁপে, যিনি বসন্তের মত মনোরম, গ্রীষ্মের মত আরামপ্রদ, শরতের মত ফলপ্রসু কিন্তু শীতের মত ভয়ংকর । এ হেন মহামহিম, আমাদের স্বর্গরাজ্যের রাজাধিরাজ সম্রাট দরবারে আসছেন। হুশিঁয়ার...

বাল্যখিল্য আইন ও প্রথা

বাল্যখিল্যদের দেশে কিছু অযৌক্তিক আইন ও প্রথা আছে। সে ব্যপারে তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যাও আছে। কিছু উদাহরণে বিষয়টি খোলাসা হবে।

ঈশ্বরকে বিশ্বাসীকে চাকুরীতে নেয়া হয় কারণ সম্রাট ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন। সেই ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব যে বিশ্বাস করেনা সে সম্রাটেরও বিশ্বাসভাজন হতে পারে না।চাকরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা, নৈতিক চরিত্র ও সততার উপর জোর দেয়া হয় । জনগণের জন্যই সরকার। জনগন যেন সরকারী কাজকর্ম সহজ ও সরলভাবে বুঝতে পারে । অতি বুদ্ধিমান কাউকে নিযুক্ত করলে সে যদি অন্যায় করে তবে চতুরতার আশ্রয় নেয়। কিন্তু সরল একজন দোষ করলে সঙ্গে সঙ্গে তা স্বীকার করে। সরল মানুষকে বোঝা অনেক সহজ। ক্রিড়াকৌশলে প্রার্থীর দক্ষতার পরীক্ষা নেয়া হয় যাতে কারচুপির সুযোগ না থাকে।

বাল্যখিল্যরা চুরির চাইতে ঠকবাজিকে বড় অপরাধ মনে করে। এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যুক্তিটা হচ্ছে- সাবধান থাকলে আর নিজের জিনিসের উপর নজর রাখলে চোর চুরি করতে পারে না কিন্তু ঠক বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে মানুষকে বিপদে ফেলে। ঠক ব্যক্তি সততা ভঙ্গ করে। জিনিস কেনা বেচার সময় অসাধু ব্যবসায়ী যদি নির্দোষ লোকদের ঠকাতে থাকে, তাকে যদি প্রশ্রয় দেয়া হয় এবং তাকে ঠেকানর মত আইন না থাকে তা হলে অসাধুতা বাড়তেই থাকবে আর নির্দোষ ব্যক্তি ঠকের শিকার হবে।

রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে কোন অপরাধে কঠোর শাস্তি দেয়া হয় কিন্তু অভিযুক্ত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলে মিথ্যা অভিযোগকারীকে সাথে সাথেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। খালাস পাওয়া আসামী তখন অর্থ ও সময় অপচয়ের জন্য , বিপদের ঝুকিঁ অপভোগ করার জন্য, কারাগারে অযথা কষ্ট স্বীকার করা এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় যে মনোকষ্ট তাকে সহ্য করতে হয়েছে , এ সবের জন্য তাকে চারগুণ ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। এটি দেয়া হয় সেই মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত অভিযোগকারীর ধন সম্পদ থেকে। কিন্তু তার যদি সে পরিমান সম্পদ না থাকে তবে রাজকোষ থেকে সবকিছু মিটিয়ে দেয়া হয়। মুক্তি পাওয়া আসামীকে সম্রাট কিছু আনুকুল্য বা সম্মানী দেন এবং তার নির্দোষিতা সারা রাজ্যে প্রচার করা হয়।
বাল্যখিল্যদের দেশে অকৃতজ্ঞতাকে মস্ত অপরাধ গণ্য করা হয়। যে অকৃতজ্ঞ সে মনুষ্যজাতির শত্রু এবং তার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
সন্তানের জন্ম , লালন পালন বিষয়ে বাল্যখিল্যদের চিন্তা অন্যরকম। তারা বলে-পশুপ্রবৃত্তির ফলে মানুষ সন্তানের জন্ম দেয়। সন্তান তার অজান্তেই পৃথিবীতে এসছে অতএব পিতামাতার প্রতি তার দায় দায়িত্ব না ও থাকতে পারে। তাই সন্তানদের শিক্ষার ভারও পিতামাতার উপর ছেড়ে দেয়া যায় না। রাষ্ট্র বিষয়টি দেখবে। কিন্তু খরচপাতি পিতামাতাকেই দিতে হবে। জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় শিক্ষা তাদের স্কুলেই দেয়া হয়।

প্রত্যেক সরকারের পুরস্কার ও তিরস্কারের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু প্রয়োগ কম। তিরস্কার বা শাস্তি প্রদানে সরকার অনেক ক্ষেত্রে অনেক উদার কিন্তু পুরস্কারের বেলায় মহাকঞ্জুস। এ ব্যাপারে বাল্যখিল্যরা নমস্য। যদি কোন নাগরিক প্রমাণ করতে পারে যে, সে ৭৩ চাঁদ ধরে দেশের আইন শৃংখলা কঠোর ভাবে মেনে চলেছে তাহলে তার জীবনযাত্রার মান অনুসারে আর্থিক পুরস্কার দেয়া হয়। সেটি সে ইচ্ছা মত খরচ করতে পারে। এছাড়া তাদের আইনমান্যকারী উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তবে এই উপাধি পুরুষানুক্রমে ভোগ করা যায় না। বিলাতি ফৌজদারী দণ্ডবিধিতে শাস্তির বিধান আছে কিন্তু পুরস্কারের ব্যবস্থা নেই। এটা শুনে তারা খুব অবাক হত। আমাদের ন্যায় দেবীর চোখ বাঁধা কিন্তু তাদের ন্যায়দেবীর ৬টি চোখ। ২টি সামনে, ২টি পিছনে আর ২টি দুইপাশে। তিনি সব দিক দেখেন। তাঁর ডান হাতে একথলি সোনার মোহর আর বাম হাতে খাপে ভরা তলোয়ার। শাস্তির চাইতে পুরস্কারের ব্যবস্থা বেশি।


রাজনীতি
লিলিপুটদের দেশে দুইটি রাজনৈতিক দল আছে। ট্রামেকসান বা হাইহিল পার্টি এবং স্লামেকসান বা লোহিল পার্টি। ট্রামেকসানদের জুতার গোড়ালি উঁচু। তারা দেশের প্রাচীন সংবিধানে বিশ্বাসীএবং সংখ্যায় বেশি। কিন্তু সম্রাট লোহিল পার্টিকে পছন্দ করেন। তাঁর জুতার গোড়ালি নিচু। লোহিল পার্টির লোকজন বেশি সুযোগ সুবিধা পায়। দুই দলের মনোমালিন্য চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। তারা এক সাথে কিছু খায় না বা পান করে না। এমন কি কথাও বলে না। অথচ এমনটি ছিল না। মনোমালিণ্যের সূত্রপাত ঘটে যখন সম্রাটের পিতামহ ছোট বেলায় প্রাচীন রীতি অনুযায়ী ডিমের মোটা দিক ভাঙ্গতে গিয়ে আঙ্গুল কেটে ফেলেন। তখন তাঁর পিতা ডিমের সরু দিকে ভাঙ্গার আদেশ দেন। এ বিষয় নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। কারণ এর ফলে নাকি তাদের মহান ধর্মনেতা লুসট্রগ পবিত্র গ্রন্থ ব্লুণ্ডেগাল -এ যে মতবাদ প্রচার করেছেন তা ভঙ্গ করা হয়েছে। ধর্মাচরণে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মহান ধর্মনেতার অপমান করা হয়েছে। কিন্তু মূল গ্রন্থের বিষয়টি আসলে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়। সেখানে শুধু লেখা আছে-
" সকল সৎ ব্যক্তি তাদের সুবিধামত দিকে ডিম ভাঙ্গবেন।"
সুবিধামত শব্দটির ব্যাখ্যা নিজের নিজের সুবিধামত করে নিয়ে যত বিপত্তি।

একটা বোকা প্রশ্নঃ অর্থ পিশাচ কিছু হালজমানার দাসব্যবসায়ীর (পোশাক শিল্প মালিক) কারণে যে কয়েক হাজার আদমসুরত দগ্ধ পিষ্ট হতাহত হয় তাদের পরিবারে বাল্যখিল্য ক্ষতিপূরণ দিলে কেমন হত ?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×