সন্তানের ছবি নিয়ে এ প্রতিক্ষা কখনো শেষ হবার নয়
মাত্র ১ কোটি টাকা পাওয়া গেলে শিরশ্ছেদ হওয়া আট বাংলাদেশীকে বাঁচানো সম্ভব ছিল। আর এই টাকা দরিদ্র বাংলাদেশী শ্রমিকদের কাছে শুধু সোনার হরিণই নয় জীবন বিক্রি করলেও যোগার সম্ভব নয়। কিন্তু গতকাল শিরচ্ছেদ হওয়া শফিকুলের মামাতো ভাই শাহজাহান প্রচারমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার সকালেও ফোন করেছিলেন শফিকুল। তিনি বুঝতে পারেননি যে আর কোনো দিন কথা বলার সুযোগ পাবেন না। কাঁদতে কাঁদতে শফিকুল বলেছিলেন, 'দোয়া কোরো। শুক্রবার আস্লেই ভয় লাগে।'
এরপর শাহজাহান অভিযোগ করে বলেন, 'গত কয়েকটা বছর সরকারের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি। প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী_কারো সঙ্গে দেখা করতে পারি নাই। কত জনরে বলছি, একজন আইনজীবী নিয়োগ দেও। হ্যারা একতরফা রায় পাইতাছে। একজন আইনজীবী পাওয়ার অধিকার কি নাগরিক হিসেবে আমাদের ছিল না?'
শাহজাহান বলেন, 'আমরা আপস করতে চাইছি। ওই পক্ষ বলেছে, এক কোটি টাকা লাগব। আমরা এত টাকা পাব কই? ২০০৯ সালে ওই টাকার জন্য আমরা সংবাদ সম্মেলনও করছি। কিন্তু টাকা দিচ্ছি, দেব করে আর দেয় নাই।' শাহজাহান বলেন, 'আমরা নিজেরাই সৌদিতে উকিল ঠিক কইরা আপসের উদ্যোগ নিছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে শিরশ্ছেদ কইরা দিল।' বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে শাহজাহান বলেন, নিম্ন আদালতের রায়েই তাঁদের শিরশ্ছেদ হয়েছে। আদালতে ওই রায় আইনগতভাবে পুনর্বিবেচনার সুযোগটুকুও তাঁরা পাননি।
অথচ প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই সরকারী মেথর থেকে মন্ত্রী সচিবের হাজার কোটি টাকার দুর্নিতির খবর দেখা যায়। সরকারী টাকায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সহ অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে বিদেশ সফর করে। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া জাতিসংঘের অধিবেশন, যার জন্য রাষ্ট্রের খরচ হয়েছে মাত্র ২০ লাখ ডলার। আর আপনি সচ্চল হুমায়ুন আহমেদের বাসায় গিয়ে তার হাতে টাকার চেক তুলে দিলেন, কিন্তু অসচ্চল শফিকুলের মায়ের কথা ভাবলেন না? আর আমাদের বাকপটু পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশ সফরের রেকর্ড করে এখন গিনেজ বুকে নিজের নাম তোলার জন্য অপেক্ষায় আছেন। অন্যদিকে সরকারি ও প্রজেক্টের টাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পোষ্যদের বিদেশ সফরের হিড়িক পড়েছে। কোটি কোটি টাকার এসব সরকারী সফর পরিণীত হয় প্রমোদভ্রমণ হিসেবে। যার মাধ্যমে দেশের দু পয়সারও লাভ হচ্ছেনা।
আর সেই দেশের আট আটজন নাগরিক ৩ বছরে সৌদি জেলে থেকে মাত্র ১ কোঁটি টাকার প্রতিক্ষা গুনে নিজেদের জীবন হারালো?? এই আটজনতো অন্তত কিছু হলেও দেশের জন্য করেছে, আপনারা কি করেছেন। আর মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে বলছি, সস্তা মিডিয়া কাভারেজের জন্য বেহুদা খেউ খেউ না করে নিজের দিকে তাকান। যাদেরকে আগে একটু নজর দিলেই বাচানো যেত এখন তাদেরকে নিয়ে আপনাদের মায়াকান্নার মানে কি?
**শফিকুলের মামার সাক্ষাৎকার সুত্র- View this link
**আমার লেখার সাথে রিলেটেড কলাম- ব্যর্থ কুটনীতির ’শিরচ্ছেদ’