somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাতরুল

০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ক্লাস নাইনের কথা বলছি। পিঠে পাখা গজিয়েছে মাত্র। স্যার- ম্যাডামেরা রাগ করে বলতেন পাখা কাটতে নাকি তাদের সময় লাগবে না। এই পাখা কাটার কথা শুনে নতুন গজানো পাখাকে যত্ন করতে লাগলাম।
আমাদের পাখার মধ্যে অনেক কিছু ছিলো। এই মনে করেন স্কুলে বুক ফুলিয়ে চলা,অযথা এরে ওরে ধরে নাকানি চুবানি দেওয়া, ম্যাডামের বাসায় টিনের ওপর ইট ছোড়া, স্যারের বাসায় প্রাইভেট পড়তে যেয়ে বিলাতি আমগাছের বড় বড় আমগুলো গায়েব করে দেওয়া ,স্কুলের গ্যারাজের ভেতর ঢুকে দপ্তরির সাইকেলের পাম্প ছেড়ে দেওয়া।এগুলো নৈমত্তিক বেপার।
আমাদের এক বন্ধুর নাম আরিফ। বন্ধুটা এখনো ৫ ফিট। ওপরের দিকে আর বাড়েনি। বন্ধুর নাম আরিফ হলেও আমরা একটা নাম দিয়েছিলাম ''মাতরুল ''। স্ক্রু ড্রাইভারকে আমরা বাংলা স্থানীয় ভাষায় বলি মাতরুল।
এই নামের একটা শানে নুযুল আছে, সেই গল্পটা বলছি তবে।
বন্ধু আমার নতুন একটা হিরো রয়েল সাইকেল কিনেছিলো ক্লাস নাইনে ওঠার পর। সকালে স্কুলে এসে স্বাভাবিক ভাবেই তার সাইকেল গ্যারাজে রেখেছিলো। বিপত্তি হলো ছুটির সময়। গ্যারাজে যেয়ে দেখে নাই। নাই নাই নাই।
সাইকেল থেকে কে যেন সাইকেলের বেল খুলে নিয়ে গেছে। বন্ধু তো রেগে ফায়ার। তারপর আর তেমন কিছু বললো না, সাইকেল নিয়ে সোজা চলে গেলো সাইকেলের দোকানে আর নতুন একটা বেল কিনে লাগিয়ে নিলো।
বাড়িতে যাওয়ার আগে সবাইকে বলে গেলো কালকে সবাইকে গরুর গোস্তের চাপ খাওয়াবে। মাথায় ঠিক ঢুকলো না তার কথা। ভাবলাম বেল চুরি হওয়ার শোকে আবার পাগল টাগল হয়ে গেলো কিনা।
পরদিন সবাই স্কুলে গেলাম সকালে। এসেম্বলির আগে আমরা মাঠে বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা করতাম, যেমন উড়ে এসে লাত্থি, টেনিস বল দিয়ে বোমা ব্লাস্টিং, সাত পিট্টু, বরফ পানি আরো কত কি। সবই ঠিক ছিল কিন্তু আরিফ কে কোথাও দেখলাম না। এসেম্বলি শেষ করে ক্লাসে এসে দেখলাম সে নেই। ভাবলাম হয়তো মন খারাপ তাই আসে নি। তখন তো আমাদের মোবাইল ছিলো না যে কল করে খোঁজ নিবো। যাই হোক, ভুলে গেলাম তার কথা কারণ আমাদের স্কুলে আরো অনেক কাজবাজ থাকতো।
স্কুল ছুটির পর আমরা সবাই যেতাম নুরজাহান হোটেলে। হোটেলটা এখন নেই। মালিক মনে হয় লস খেয়ে উঠে গেছে ব্যবসা থেকে। ৬ টাকায় দুই টুকরো গরুর গোস্ত দিয়ে এক প্লেট বিরিয়ানি দিতো ওই হোটেলে। যথারীতি ছুটির পর গেলাম হোটেলে। যেয়ে দেখি আমাদের আরিফ বসে আছে চুপ চাপ। অবাক হয়ে গেলাম সবাই। তার পরবনে স্কুল ড্রেস আর ব্যাগ টা টেবিলের ওপর রাখা । জিজ্ঞেস করা হলো তুই এখানে ? বন্ধু একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো তোদেরকে খাওয়ানোর কথা ছিল তাই বসে আছি।
বললাম মামা ঘটনা কি আগে তাই বল। ও বললো আগে খাওয়া তারপর কথা। ওকে ঠিকাছে। গেলাম গরুর চাপের দোকানে। অর্ডার দেওয়া হলো, খাবার এলো, খেয়ে শেষ করলাম। এরপর বের হয়ে একটা স্প্রাইটের দুই লিটার বোতল নিয়ে খাওয়া হলো সবাই মিলে।
এবার বল তুই কেন খাওয়াইলি ? আর স্কুলে যাসনি কেন ?
বন্ধু তার ব্যাগ থেকে একটা স্ক্রু ড্রাইভার বের করে বললো এই যে 'মাতরুল"। আমরা দেখে বললাম তো কি হয়েছে ? ও বললো সকালে সে স্কুলের পেছন দিয়ে এসে ক্লাসে না এসে সোজা গ্যারাজে ঢুকেছিলো। তারপর সেই স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে সবগুলো সাইকেলের যত বেল ছিল সব একের পর এক খুলে তার ট্রাভেল ব্যাগে ভরেছে। এরপর আবার স্কুলের পেছনের দরজা দিয়ে সোজা ভাংড়িপট্টি যেয়ে সব গুলো বিক্রি করে প্রায় হাজার খানেক টাকা পেয়েছে। সেই টাকায় আমাদের সবাইকে খাইয়েছে। শুনেতো আমরা অবাক। জিজ্ঞেস করলাম তোর ভয় লাগে নি ? বললো প্রথমে লেগেছিলো তারপর আমার নতুন সাইকেলের বেল চুরি যাওয়ার কথা মনে হতেই সব ভয় ভীতি দূর হয়ে গেছে।
বন্ধুর নাম দিলাম ''মাতরুল''। সেও খুশি হয়ে বললো আকিকার খাবারটাও ও গরুর চাপ দিয়ে সারিয়ে ফেললো।
২০০৭ থেকে এখন অবধি আর তাকে আরিফ বলে ডাকা হয়নি, মাতরুল দিয়েই চালাচ্ছি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:৪২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×